#পাঠ প্রতিক্রিয়া#
বই: দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট
লেখক: অ্যালেক্স মাইকেলিডিস
বইটি পড়ে কিছুক্ষণ থম মেরে থাকলাম। লেখক যে শেষদিকে এতবড় টুইস্ট রেখেছেন সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। থ্রিলার হলেও পুরো বইটি লেখা হয়েছে ভালোবাসাকে উপজীব্য করে। একাধারে নারী-পুরুষের ভালোবাসা, নারী-পুরুষের দ্বিচারিতা আর ঘৃণা, মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন আর প্রতিশোধ গ্রহণের এক অদ্ভুত কাহিনি নিয়ে।
নারী- স্রষ্টার সৃষ্টির এক অপার রহস্য! এই রহস্য ভেদ করতে গিয়ে অনেক বিদ্বান-পণ্ডিত, অনেক জ্ঞানী-মহাপুরুষ ফেল মেরেছেন। নারীর সামনে অনেক মুনি-ঋষি, অনেক তপস্বীর বহুকালের সাধনা ও তপস্যা ভেস্তে গেছে। নারী শান্তিদায়ী, নারী আরাধ্য সম্পদ, আবার নারী প্রলয়ঙ্করী, ধ্বংসাত্মক।
বইটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে অ্যালিসিয়া বেরেনসন নামক এক নামকরা নারী চিত্রশল্পী আর তার সাথে সম্পর্কিত কয়েকটি চরিত্র নিয়ে। তার প্রচন্ড ভালোবাসার মানুষ, তার প্রাণপ্রিয় ফ্যাশন ফটোগ্রাফার স্বামীকে চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় মৃত পাওয়া যায়। মাথা ও সারা শরীরে মোট পাঁচটি গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তাকে। পাশেই হাতে ও ঘরের মেঝেতে রক্তমাখা অবস্থায় পাওয়া যায় অ্যালিসিয়াকে। যে বন্দুক দিয়ে গুলি করা হয়েছে সে বন্দুকে হাতের ছাপও অ্যালিসিয়ার। স্বামীকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
গ্রেপ্তারের পর স্বামীকে নিজ হাতে খুনের অভিযোগ স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করে না সে। মুখে কুলুপ এঁটে একেবারে বোবা হয়ে যায়। পুলিশ বা বিচারক কেউ তার মুখ থেকে টুঁ শব্দটিও বের করতে পারেনি। বিচারে মানসিক ভারসাম্যহীন আখ্যা দিয়ে তাকে একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর সেখানে আসে একজন ক্রিমিনাল সাইকোথেরাপিস্ট। কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে টুইস্টের দিকে। সামনে আসে অবিশ্বাস্য এক কাহিনী। নারী-পুরুষের ভালোবাসা ও দ্বিচারিতার এক অভাবনীয় উপাখ্যান।
বইটির কিছু সংলাপ মনে রাখার মত।
'প্রায় ক্ষেত্রেই ভালোবাসার মধ্যে নাটকীয়তা খুঁজতে চাই আমরা। যেন বারবার একে অপরের জন্য নাটুকে কিছু করাই ভালোবাসার নিদর্শন। কিন্তু প্রকৃত ভালোবাসা নীরব, নির্লিপ্ত। ভালোবাসা হচ্ছে গভীর প্রশান্ত একটা অনুভূতি; ধ্রুব।'
'সবসময় একজনকে খুশি করার অবিরাম চেষ্টা। এমন একটা মানুষ, যার মধ্যে মায়া বা আবেগের ছিটেফোঁটাও নেই- তার ভালোবাসার পাত্র হবার চেষ্টা।'
'খুব পছন্দের কেউ আমাদের পাল্টা ভালবাসে না, এই সত্যটা স্বীকার করে নেওয়া প্রচণ্ড কষ্টের, অসহ্য একটা অনুভূতি।'
সবশেষে বলব, সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের ওপর অসাধারণ একটি বই। বইটিকে ব্যক্তিগত রেটিং দিতে হলে ৯/১০ দেব আমি।
সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের প্রতি কারো আগ্রহ থাকলে বইটি পড়তে পারেন। আশা করি সময়টা নষ্ট হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৪৬