নিজের দেশে যখন ছিলাম। কি খেলাম কেমন থাকলাম। খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা এসব বিষয়ে রাষ্ট্র থেকে কখনো কোন সহযোগিতা ছিল না। প্রতিটি মানুষ নিজের পরিবারের অভিভাবক, বাবা মার দিকে থাকিয়ে থাকত। যাদের মা বাবা নাই, বড় ভাই বোন নয় তো চাচা, মামা, আত্মিয়র দিকে নজর থাকত। সাহায্য পাওয়ার।
যার কোন উপায় নেই, মানুষের কাছে চেয়ে চলাই তাদের জীবন। অনেকের অভ্যাস হয়ে যায় অন্যের থেকে পাওয়ার। যেন এটাই নিয়ম।
বিদেশে এসে জানলাম আমি একজন নাগরিক। আমার অনেক কিছুর দায় ভাড় রাষ্ট্রের। অনেক বছরের নাড়ীর টান ছিল যে দেশে, সে দেশ থেকে এমন কোন আশ্বাস কখনো পেয়েছিলাম বলে মনে করতে পারি না। সব চাওয়া ছিল বাবা মার কাছে। মানসিকতাই গড়ে উঠেছিল তেমন ভাবে। আমাকে সুযোগ দেয়া হলো স্কুলে যেয়ে নিজেকে আপগ্রেট করার। এইদেশে চলার মতন ভাষা, নৈতিকতা, নিয়ম কানুন শেখার।
বন্ধু এবং পরিচিতি বাড়ল। অন্যদেশের মানুষ চেনার সুযোগ হলো। নিজের পছন্দের পড়ালেখা শুরু করে দিলাম বয়সের কথা চিন্তা না করে নতুন করে। জানলাম বাচ্চাদের স্কুলে না পাঠালে অপরাধ গন্য হবে। বাচ্চারা স্কুলে যায় ফ্রি পড়ালেখা করে বারো ক্লাস পর্যন্ত।
এক দেশে সারা পৃথিবীর মানুষ। কত রকমের আচাড়, লৌকিকতা, অভ্যাসে জড়িত তারা। অথচ সবাইকে এমন ভাবে প্রধান্য দেয়া হচ্ছে সবারই মনে হয় আমার জন্যই এই দেশটি।
বাড়ি ভাড়া কত দিব এসবও দেখি বাড়িওয়ালার নিয়ন্ত্রনে নাই। একবার হুট করে ভাড়া কমে গেল। আহা কি শান্তি লাগে এমন হলে। ভাড়া না বেড়ে কমে গেলে। কোন কাজ করতে গেলে লাইন দিয়ে নিজের সিরিয়াল পেলেই হয়। কাউকে ধরা ধরি করতে হয় না। রেফারেন্স লাগে না। এখন তো অনেক কাজ ঘরে থেকে সেরে ফেলা যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
ডাক্তার দেখানো, চিকিৎসার জন্য কোন চিন্তা নেই। সমস্যা হলেই ডাক্তারখানা হাসপাতালে চলে যাই। চিকিৎসা সেবা নিয়ে হাসতে হাসতে চলে আসি। শুধু স্বাস্থ কার্ডটা আপডেট থাকতে হয়। সাথে কোন আত্মিয় বন্ধু না থাকলেও অসুবিধা হয় না। বিদেশি মানুষগুলো বড় যত্নে দেখাশোনা করে হাসপাতালে থাকলে। ঘড়ি ধরে ওষুধ পথ্য এবং চেকাপ করতে থাকে। কোন বীল ধরিয়ে দেয় না । জিজ্ঞেস করে না আমি কে। টাকা আছে কিনা চিকিৎসা করার। মাঝে মাঝে তাগদা দিয়ে চিঠি আসে তোমার এই পরীক্ষাটা ডিউ হয়ে আছে। আমার শরীর আমার খবর নাই ওরা মনে করিয়ে দিচ্ছে চেকাপ করে আপ টু ডেট থাকার জন্য।
বেড়াতে যাব। কোন দেশে যাব। কতটা নিরাপদ সে দেশ, যাওয়া উচিত কিনা তার লিস্ট সাজিয়ে রেখেছে রাস্ট্র, নাগরিকদের জন্য। খুব বিপদ সংকুল জায়গা গুলো লাল দাগ দেয়া আছে। খুব প্রয়োজন না হলে বেড়ানোর জন্য গিয়ে নাগরিক যেন বিপদে না পরে। তার জন্য সাবধান বাণী রাখা আছে । যদি বা যেতেই হয় তা হলে কি ভাবে কোথায় থাকলে সমস্যা এড়ানো যাবে। প্রয়োজনে কাদের সাথে যোগাযোগ করে সাহায্য নেয়া যাবে টেলিফোন নাম্বার দেয়া আছে।
সব তথ্য রাষ্ট্রর কাছে জানা যায়। বিদেশ বিভূঁইয়ে কোন বিপদে পরলে, এদেশের এ্যাম্বেসি সাহায্যের হাত বাড়ায়। কোন কাজের জন্যই কোন মামা চাচা পরিচিতর সাহায্য প্রয়োজন পরে না। স্বভাব বসত অনেকে পরিচিত বা আগে আসা অনেকের সাহায্য নিতে গিয়ে সাহায্যের পরিবর্তে নাকানুচুবানি খেয়েছেন এমন উদাহরণও আছে ভুড়ি ভুড়ি। এই হলো দেশিও মানসিকতা।
কি খাব তার তালিকাও তৈরি করে দেয় রাষ্ট্র।
এ বছর খাবারের তালিকা থেকে ফলের তৈরি জুসও বাদ দিয়েছে, চিনি থাকে বলে।। চিনি স্বাস্থের জন্য ভালো নয় । তৈরি দোকানে বানানো খাবার না খাওয়ার উপর জোড় দিয়েছে। সারাক্ষণ গবেষণা চলছে, ভালোটি রেখে খারাপ বাদ দেয়া হচ্ছে। গবেষনারও ভুল ত্রুটি সংশোধন হচ্ছে সব সময়।
এত স্বাস্থ সম্মত তালিকা দিয়ে রেখেছে অথচ আমরা নিজেদের রসনা তৃপ্তি নিয়ে যা খেলে খারাপ হবে তেমন খাবার খাই। দেশে যাই খাবার সাথে নিয়ে আসি। আর কোন দেশ থেকে ফিরে আসলে ইমিগ্রেশনে জানতে চায় না খাবার আনছি কিনা কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আসলে জানতে চায় কি খাবার এনেছি ।
আমরা দেশে যাই বিপদ মাথায় করে। কোন সমস্যা হলে এদেশের সরকারকে বলি উদ্ধার করো। দেশে গিয়ে খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পরি। বাচ্চারা সাধারনত বেশি এফেক্টড হয়ে যায়। তারপরও নিষেধ সত্যেও আমরা খাবার লাগেজে ভর্তি করে নিয়ে আসি।
দেশি দোকান থেকে দেশি শাক, সবজী মাছ, শুটকি, তেল, গুড়, মুড়ি কিনি।একবার সবুজ সিগন্যাল পাওয়া খাদ্য সাধারনত সব সময় স্বাস্থ বিভাগ পরীক্ষা করে না, কোন স্বাস্থ ঝুঁকি না হলে বা কমপ্লেইন না পেলে। দোকানিরা মেয়াদ উত্তির্ণ খাবার বিক্রি করেন। ব্লগ মাছের বাক্সে উপরে সাজানো কয়েক টুকরা ভালো মাছের নিচে ভাঙ্গা কাটা বা পচা মাছ দিয়ে বরফে সাজিয়ে রফ্তানি করেন দেশের ব্যবসায়ি। কয়েক বার ইলিশ মাছের ভিতর শিশার টুকরা পেলাম।
বাঙালিরা দেশের খাবার ছাড়া খেতে পারেন না। ঘরে যেমন দেশি খাবার খান, বাইরে খেতে গেলেও বাঙালি বা ইণ্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের খাবার খান। খুব বেশি হলে চাইনিজ।
কেউ সাধারনত কমপ্লেইন করেন না, গ্রোসারি দোকানে জিনিস খারাপ পেলে। এই সুযোগে ব্যবসায়িরা বেশি দামে খারাপ জিনিস গছিয়ে দেন আমাদের। চাইনিজদের একটা গ্রোসারি দোকান ছিল, শহরে বেশ কয়েকটা শাখা ছিল ঐ গ্রোসারীর। ঢুকলেই বিশ্রী গন্ধ লাগত নাকে। তারপরও সবাই যেতেন নানা বৈচিত্রের শাক সবজী ফল, মাছ, খাবার পাওয়া যেত এবং দামও তুলনামূলক কম ছিল। চাইনিজ ছাড়াও সব দেশের মানুষ যেতেন।
একবার কেউ একজন স্বাস্থ বিভাগে অভিযোগ করেন খাবারের প্যাকেটের মধ্যে তেলাপোকা পাওয়ার। ব্যাস রমরমা ব্যবসা সব কটা শাখা সিলগালা দিয়ে বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশি গ্রোসারী এবং রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বাড়ছে কিন্তু তাদের মেয়াদ উত্তির্ণ জিনিস বিক্রি এবং পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। দেশীয় মানে নয় এখানকার মান অনুযায়ী চলা দরকার নিজের স্বার্থে।
দেশে আগে যেখানে সেখানে রাস্তার খাবার খেয়েছি। শরীরে কোন সমস্যা হয়নি। আগে হয় তো দেশের খাবারের মান, এত খারাপ ছিল না। কিন্তু এখন শরীরে সহ্য হয় না। শরীর পরিবেশ অনুযায়ী পরিশোধিত হয়ে গেছে। পরিবেশ পরিস্থিতি খাবারের প্রভাব শরীর অনেক ভাবে প্রভাবিত হয়। এটা খারাপ না কিন্তু অনেকে হয় তো ভাবেন, বিদেশ থেকে এসেছে জন্য, দেশের ভাত হজম হচ্ছে না বলতে হবে।
গত বছর আমেরিকা, কানাডা, লণ্ডনের অধিবাসী এক সাথে জমা হয়েছিলাম ঢাকায়। বিদেশ থেকে যাওয়া, সবাই একে একে অসুস্থ হয়ে গেলেন, খাবার সহ্য হলো না। দেশের মানুষের কোন সমস্যা হয়নি একই খাবার খেয়ে।
দেশে এখন নানা রকম খাবারের দোকান হয়েছে। ফাস্টফুড নানা রকমের, নানাদেশের যত উঁচ্চ দামে এবং গুণে ততই নিম্নমানের খাবার তারা পরিবেশন করেন।
মানুষের খুব ঝোঁক বাইরের খাবার খাওয়ার। যত দামী রেস্টুরেন্টে খেলাম কোনটাই সহ্য করল না শরীর। কিছু দিন আগে দেখলাম স্টার কাবাব কে জরিমানা করা হয়েছে, ।
আমি ওদের খাবার ফিরিয়ে দিয়েছিলাম ভালো মতন রান্না না করেই পরিবেশন করে ছিল।
হাজীর বিরিয়ানি এবং কাবাব ফেক্টরির খাবার খেয়ে কোন সমস্যা হয়নি। এই ভালোটা বলতে হয়। হাজীর বিরিয়ানি আমার বরাবর প্রিয়। একবার বন্যার সময় পুরানো ঢাকার ডুবে যাওয়া রাস্তা দিয়ে স্টার হোটেল পুরান ঢাকায়, খেতে গিয়েছিলাম অনেক আগে। রিকসা থেকে লাফিয়ে নেমেছিলাম হোটেলের ফ্লোরে। বন্যার থৈ থৈ পানির উপর বসে বিরিয়ানি খেয়েও সমস্যা হয়নি তখন।
দেশে খেয়ে এসে বা দেশি খেয়ে সমস্যা হলে আমরা এদেশের বিনামূল্যের স্বাস্থ সেবা নেই। তবে সুযোগ সুবিধা সব নেয়ার পরও নিজের ইচ্ছাকে জলাঞ্জলি দিতে পারি না বলে, নানারকম অপরিশোধিত খাবার খেয়ে ফেলি লোভে পরে। নিষেধ না মানার জন্য বাচ্চাদের শাসন করি কিন্তু বড়দের শাসন কে করবে, নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রন না করলে। দেশে গেলে সবাই খুব যত্ন করেন, অনেক আদরে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ান। আমি শুধু ঘরে তৈরি খাবার খাই দেশে গেরে। আত্মিয়, বন্ধুরা অনেক যত্নে নিজে রান্না করে খাইয়েছেন। খুব মজার খাবারের সাথে আন্তরিকতা এবং ভালোবাসা পেয়েছি সবার কাছে।
কারো বিশেষ অনুরোধে দু একবার বাইরে খেয়ে সাথে সাথেই সে খাওয়া যে কোন কাজে লাগল না শরীরের বরং খারাপ করল তা টের পেয়েছি। মিষ্টি এবং দুধ একদম এড়িয়ে যাই দেশের খাওয়ায়।
আর পোটলা বেঁধে নিয়ে আসার একদম প্রয়োজন পরে না। ইমিগ্রেশনে কখনো আমার কাছে কিছু না পেয়ে একটু অবাকই হয়েছে। সব খাবারই তো এখানে পেয়ে যাই। নিজে তৈরি করে নেই। কাজেই কোন আফসোস হয় না আমার।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৪২