somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

পাখি কথা স্মৃতি কথা

০৯ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গাছে পাতা নেই কিন্তু রোদের আলো রাঙিয়ে দেয় প্রতি বেলায়। পাতা ফুলেরা এখনো চোখ মেলেনি। কিন্ত্র ফিরে এসেছে পাখিরা। প্রতি ভোরে চোখ মেলে শুকনো ডালে পাখির নাচানাচি অবলোকন করি। কখনো হামিংবার্ড কখনো মৌটুমি কখনো চাতক ফিঙ্গে, হলুদ পাখি( ফিজেন্ট), ব্লুজেস, কাটঠোকরা, ঘুঘু, চড়ুইর মতন দেখতে অসংখ্য ভিন্ন প্রজাতির ছোট পাখি সবার নাম জানা নেই। আর র্স্টলিংদের ঝাঁক বেঁধে উড়াউড়ি।



প্রথম যখন এই র্স্টলিংদের দল বেঁধে উড়াউড়ি দেখেছিলাম। তখন ট্রেনে চড়ে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছিলাম সেদিন। ট্রেনের সমান লম্বা পাখির ঝাঁক ঢেউ তুলে ক্রমাগত উড়ছিল সাথে সাথে। নায়েগ্রা ব্রীজ পার হওয়া পর্যন্ত সাথে ছিল। কি কারণে সীমান্ত পারি দিল না কে জানে। এত্ত সুন্দর ঢেউ তোলা পাখির ঝাঁক আগে কখনো দেখিনি। খুব চেষ্টা করছিলাম ভিডিও করতে। তখনকার সদ্য কেনা সনি ক্যামকর্ডার এ্যারিজনার ফিনিক্স থেকে নর্থ বে পর্যন্ত দীর্ঘ ভৌগলিক সৌন্দর্য, আমার চোখে জীবন্ত করে রাখছিল প্রতিদিনের ভ্রমণ । অথচ কিছুতেই র্স্টলিংদের ঢেউটা ধরতে পারছিলাম না, ট্রেনের বন্ধ জানালার ভিতর থেকে।
সেই প্রথম নর্থ আমেরিকার ট্রেনে চড়া আর ট্রেনের জানালা খোলা যায় না সিল মারা লক করা যদিও বিষয়টা খুবই সর্তকতার প্রতীক। কিন্তু ব্যাপারটা ভালোলাগল না আমার পরিচিত ট্রেনের জানলা খুলে বাইরে হাত বাড়িয়ে বাতাস ছোঁয়া। মাথা বের করে ট্রেনের বাঁক দেখা। পরিচিত অভ্যস্ত এ বিষয়টা আজকের নয়, সেই কয়লার ইঞ্জিনের ধূয়া তোলা ট্রেন চলা থেকেই অভ্যস্ত। বড়দের কথা না শোনে মাথা বের করে রেখে। কয়লার গুড়োয় মুখ, হাত কাপড় কত কালো করেছি। আর স্টেশনে থামলেই নানা রকম ফেরিওয়ালার থেকে বিস্কুট, চানাচুর, শশা, খিড়া, বাদাম, সিদ্ধ ডিম, চা আরো কত কিছু কেনার চির চেনা ট্রেন চড়ার সাথে ভীষণ রকম বেমানান, পরিচ্ছন্ন বগিতে এয়ারকণ্ডিশনে বসে বাইরের পৃথিবী ট্রেনের ভিতরের প্রতিচ্ছবির সাথে দেখাটা প্রথমে একটা ধাক্কার মতনই মনে হয়েছিল সেই আশির দশকে। বর্তমানে কত দেশে কত দ্রুতগামি জানলা না খোলা ট্রেন চড়লাম, এখন অভ্যস্থ হয়ে উঠেছি এবং এই পরিবেশটাই ভালো, মেনে নিয়েছি।
কিন্তু ছবি তোলার জন্য খুব খারাপ। যেতে যেতে পথে কত সুন্দর দৃশ্য পেরিয়ে যাই যার সবটাই রিফ্লেকশনের সাথে জড়িয়ে যায়।
একসাথে উড়ন্ত কয়েকশো এমনকি হাজার হাজার পাখির ঘূর্ণায়মান, সদা পরিবর্তিত প্যাটার্নে একসাথে র্স্টলিংদের উড়াকে মুরুমার বলে । প্রকৃতির এমন একটি অসাধারন দৃশ্য প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার সৌভাগ্যটাকে আরো অনেককে দেখানোর জন্য ধরতে পারলাম না এইটাই আনন্দের সাথে কষ্ট হয়ে রইল ট্রেনের বন্ধ জানালার জন্য।



র্স্টলিংদের ঝাঁক বেঁধে উড়ার ছবি এখন অনেক তুলেছি। সকাল হতে না হতেই মাঝে মাঝে দল বেঁধে তারা মিটিং করে কোন একটা গাছ পছন্দ করে। কখনো হঠাৎ করে উড়ে যায় অন্য গাছে সেখান থেকে মাঠে।
পাখিরা গাছের ডালে নাচানাচি শেষ করে উড়ে আর উড়তে গিয়ে অনেক সময় জানলায় ধাক্কা খেয়ে পরে। কদিন আগে ধাম করে শব্দ শুনে গেলাম গিয়ে দেখি ম্যাগপাই রবিনের বাচ্চা ধাক্কা খেয়ে পরেছে তবে মরেনি। নিজেকে গাছের গুড়ির নিচে লুকিয়ে ফেলছে।
আগে ঘরের জানলা দরজা খুলে রাখতাম গ্রীষ্মকালে। আর পাখিরা ঢুকে পরত ঘরে তারপর আর বেরুনোর পথ খুঁজে পেত না। তাদের ধরে বাইরে নিয়ে উড়িয়ে দিয়েছি। তবে একবার দেখলাম সন্ধ্যার দিকে ঘরের ভিতর একটা বাদুর চক্কর মারছে। জানলা দরজা খুলে দিয়ে বহু কষ্টে তাকে বের করে দিলাম। বেশ কদিন ঘরে বসবাস করেছিল যাওয়ার আগে। তাই এখন আর দরজা খোলা রাখার নিয়ম নাই বাড়িতে। ইচ্ছে মতন সবাই ঢুকে পরলে চলবে না। কাউকে ভালোবাসি কিন্তু কাউকে এড়িয়েও চলতে হয় সাবধানতায়।



ধারনা ছিল পাখিরা শুধু গাছে থাকে। উপরে উপরে উড়ে বেড়ায় কিন্তু এখন দেখছি তারা মাটির সাথে ভালোই যোগাযোগ রাখে।
সকাল হলেই এক পা দু পা করে মাটিতে নাচে। পোকা, কীট পতঙ্গ খাওয়ার জন্য মাটিতে নেমে আসতেই হয় তাদের। আরো একটা মজার বিষয় পেলাম। কৃষকরা যখনই মাঠে লাঙ্গল অবশ্যই মেশিন লাঙ্গল; প্লাও চালান শুরু করেন, গাঙচিল, দাঁড়কাক, বাজ, চিল, প্যাঁচা জাতিও পাখিগুলো চক্কর দিয়ে উড়তে থাকে মাঠের উপর। আর ছূঁ দিয়ে তুলে নেয় মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে পরা কীট পতঙ্গ, ইঁদুর এমন কিছু যা ওদের খাদ্য। পাখিরা কৃষকের লাঙ্গল চালানোর জন্যও অপেক্ষা করে।


কাল বাইরে গিয়ে ছিলাম একটা কাজে। হাইওয়ের ফাঁকা রাস্তায় হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা তিতির রাস্তা পার হওয়ার পায়তারা করছে। আমার গাড়ির সাথে প্রায় ধাক্কা লেগে যাচ্ছিল। দ্রুত স্পিড কমালাম। আর সেও রাস্তা থেকে সরে পাশে গেলো। আমি এবং আমার পেছনে অন্য গাড়িটা পার হওয়ার পরই সে রাস্তা পেরিয়ে অন্য পারে গেলো রেয়ার ভিউতে চেয়ে দেখলাম। মনে হয় সঙ্গী সাথী, পরিবার অন্যপারে ছিল। পাখির চোখ শুধু সেদিকেই ছিল।
আমার মনে পরে গেল, খুব ছোটবেলার কথা। যখন হ্যাণ্ডেল ঘুড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট করা হতো, যে সব গাড়িকে আমরা এখন মুড়িরটিন বলি। তাই ছিল একমাত্র যান পথ চলার। এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়ার।
মুড়ির টিন বাস যাচ্ছে পিছনে ধূলার সমুদ্র। সামনে গ্রামের মানুষ ছাতা হাতে যাচ্ছে পিছনে বোরখা পরা পরিবার অনুসরন করছে স্বামীকে। হঠাৎ বাসের শব্দ পেয়ে স্বামী এক দৌড়ে রাস্তা পেরিয়ে যায় আর বোরখা পরা পরিবার যার মুখের চারপাশ ঢাকা স্বামীকেও দেখতে পায় না কোন দিকে গেলো। পেছনে গাড়ি আসছে তাও দেখতে পায় না। গতান্তর না দেখে, মাঝ রাস্তায় গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পরে। ড্রাইভার বহু কসরত করে ব্রেক করে গাড়ি থামায়। গাড়ির ভিতরে সব মানুষ বিশাল, ঝাঁকি খায় জাম ঝাঁকানোর মতন। আমার মতন ছোট বাচ্চারা ধুপধাপ পরে যায় সিট থেকে পাকা কাঠালের মতন। আব্বা দ্রুতর সাথে পরন্ত আমাকে ধরে ফেলতেন।



বাড়ি ফিরে দেখলাম কাক পরিবারের মধ্যে ভীষণ ঝগড়া লেগেছে। একজন কুই কুই করে কাঁদছে। আর তিনজন সমানে চিৎকার করছে। ভাষা না বোঝার জন্য তাদের ঝগড়ার কারণটা জানা গেল না। ওদের ঝগড়া শুনতে শুনতে একটা কথা মনে এলো এখানে তো কোকিল নেই কাকের বাসায় ডিম পেরে যাবে । ওদের ঝগড়ার কারণটা জানার খুব ইচ্ছা করছিল কিন্তু কোন সুযোগ হলো না।
দুদিন আগে বাজপাখি চুপচাপ বাড়ির উঠোনে এসে বসে ছিলেন। কদিন ধরে দেখছিলাম ডানা ছড়িয়ে উড়াউড়ি তার।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:১৪
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×