somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

ফ্রিদা কাহলো এক ব্যতিক্রমী মানুষ

০৭ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নীল বাড়ির দূরন্ত মেয়েটি
"লা কাসা আসুল" যার অর্থ নীল ঘর। ১৯০৭ সালের ছয় জুলাই জার্মান বাবা আর স্প্যানিস মায়ের রক্তের সমন্বয়ে একটি মেয়ের জন্ম হয় ম্যাক্সিকো সিটির শহরতলীর একটি গ্রামে । মেয়েটির নাম রাখা হয় ফ্রিদা কাহলো । জার্মান ভাষায় ফ্রিদা অর্থ শান্তি।
শান্তি নামের মেয়েটির জীবনের অধিক সময় কেটেছে অশান্তিপূর্ণ দূর্ভোগ আর কষ্টের মধ্যে কিন্তু সব কষ্ট ছাপিয়ে ছোট গ্রামের সেই ছোটখাট মেয়েটি আজও বিশ্ব বিখ্যাত হয়ে আছে তার কর্ম দিয়ে। তার জীবনের কিছু ঘটনার গল্প বলব আজ।
অজনার পথে উত্তরসূরী:-
সৎমার সাথে বনিবনা না হওয়ায় জার্মানির ফ্রাঙ্কফ্রুট থেকে উইলহেলম ১৮৯১ সালে মেক্সিকোতে আসেন পড়ালেখার উদ্দেশ্য। মেক্সিকোয় অভিভাসন নিয়েন নেন উইলহেলম এবং নিজের স্প্যানিস নাম রাখেন গিলার্মো কাহলো । মেক্সিকোতে অভিবাসনের পর মৃগী রোগে আক্রান্ত হন সাথে হয় একটি দুর্ঘটনায় যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখায় বাঁধা পরে যায়। ক্রমে পড়া লেখা বন্ধ হয়ে যায় গিলার্মোর। জীবন চালানোর জন্য ফটোগ্রাফি শুরু করেন।
জীবন প্রতিমুহুর্তে নতুন পথে নিয়ে যায়। জীবনের মোড় পরিবর্তন হয়ে সংসার পেতে বসেন উইলহেলম অথবা নতুন নামের গিলার্মো কাহলো, ম্যাক্সিকোতে মারিয়াকে বিয়ে করে । দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেয়ার সময় উইলহেলমের প্রথম স্ত্রী মারিয়া মারা যান। এরপর উইলহেলম বিয়ে করেন মেটিল্ডা কার্ডনা কে।
জার্মান বাবা উইলহেলম এবং স্প্যানিশ বংসদ্ভুত আদিবাসী মা মেটিল্ডা কার্ডনার তৃতীয় সন্তান ফ্রিদা কাহলো। আদ্রিয়ানা বড় এবং ক্রিস্টিনা ছোট বোন। ফ্রিডার জন্মের আগে, একটি ছেলে শিশু হয়ে মারা যায়। যখন ফ্রিদার জন্ম হয় মা মিটেল্ডা ঐ শিশু হারানোর দুঃখবোধ থেকে তখনও বেরিয়ে আসেননি । শিশু হারানো মায়ের মনে রক্তক্ষরণ চলছিল মৃত শিশুর জন্য কিন্তু জীবিত শিশুটি যে অবহেলিত হচ্ছে মায়ের সে ধারনা হয়নি।
ফ্রিদার জন্মের আগে জন্ম নেয়া শিশু হারানোর বেদনাহত মা মেটেল্ডা, ফ্রিদাকে বুকের দুধ খাওয়াতে অক্ষম ছিল অথবা অনিচ্ছুকও ছিল। বর্তমান শিশুটির যত্ন করার চেয়ে মৃত শিশুর স্মৃতি নিয়ে দুঃখ আক্রান্ত হয়ে থাকতো মা।
জন্ম থেকেই ফ্রিদার ভাগ্য যেন বেঁধে দেয়, না পাওয়া ভালোবাসা, অনাদর অবহেলা। শোকাচ্ছন্ন মায়ের কাছে ফ্রিদা তেমন আদর ভালোবাসা পায়নি। মায়ের ভালোবাসা না পাওয়া অবহেলায় বেড়ে উঠতে থাকে ফ্রিদা।
নীল বাড়িটিতে তিনটি পরীর মতন মেয়ে থাকলেও ঘরের ভিতর সংসার জুড়ে ছিল অশান্তি। মেটিল্ডা কার্ডনার ছিল ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বি এবং অনেক বেশী ধার্মিক। খুব নিয়ম মেনে চলার প্রবনতা ছিল তার মধ্যে। সংসারে স্বামী এবং স্ত্রী দুজন মানুষের মনের সীমানা ছিল দুই জায়গায়। মাতা পিতার মধ্যে প্রেম ছিল না। সংসার ছিল টানাপুড়েনের, ১৯১০ থেকে ১৯২০ সালে ম্যাক্সিকোর বিপ্লবের জন্য, বাবার ব্যবসা চলছিল ঢিমে ভাবে। অত্যন্ত সতর্ক হিসাবী মায়ের জন্য কষ্টকর ছিল সংসার চালানো। ফলে দ্রারিদ্রতা হতাসা বাকবিতণ্ড নিষ্টুরতা ঝগড়া চলত সব সময় বাড়ির মধ্যে। দুঃখের বাতাসে ভরপুর হয়ে উঠত সংসার। মেয়েরাও মায়ের উত্তেজনায় আঁচে পুড়ত। তাছাড়া বাবা মা দুজনই অসুস্থ থাকত প্রায় সময়।
ফ্রিদার বয়স যখন তিন সেই সময় থেকে দশ বছর হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ লেগে ছিল দেশে। অনেক পরিবর্তনের মধ্যে অনেক ভয় গোলাবারুদের গন্ধে, শব্দে বড় হয়ে উঠা একটি শিশুর খাদ্যভাবও ছিল প্রচুর যুদ্ধের কারণে। দিনের পর দিন তাদের একই পরিজ, বা সবজী সিদ্ধ খেয়ে থাকতে হয়েছে।
এমন শিশুটির ছয় বছর বয়সে হয় পলিও। পরে থাকতে হয় দিনের পর দিন বিছানায় একাকী নিঃসঙ্গ। ডান পা হয়ে যায় বাম পা থেকে ছোট এবং চিকন অসুস্থতার কারণে। খুঁড়িয়ে হাঁটতে হতো ভালো হওয়ার পরও। কষ্টবোধের জীবনে যোগ হয় আরেকটি বৈষম্য শারীরিক বৈসাদৃশ্য অবস্থা শিশু বয়সেই। যার কারণে সব সময় নিজের মনে এক ধরনের মনস্তাত্বিক কষ্ট বোধে জড়িয়ে থাকত ফ্রিদা। সাথে সমবয়সী থেকে সব মানুষের বৈষম্যমূলক আচরণ তার প্রতি, যেন সে নিজেই শরীরের এমন অবস্থার জন্য, এই শারীরিক ত্রুটির জন্য দায়ী। অন্যরা তাকে নিয়ে মজা করত। চারপাশ থেকে একরাশ অসম চিন্তার প্রভাব তাকে রুদ্ধ করে ফেলতে চায়, ঠেলে দিতে চায় অন্ধকার গর্তে। যেন দুঃখবোধ নিয়ে থাকে মেয়েটি কিছুতেই মাথা সোজা করে তাকাতে না পারে শারীরিক ভাবে অসমর্থ এবং বৈসাদৃশ্য দেখতে মেয়েটি। তাতেই যেন সব সুখ সাধারন মানুষের। কতটা মনস্তাপে, কষ্টে পুড়ে মন মেয়েটার সেদিকে কেউ ভ্রুক্ষেপও করে না। আপন মনে যা খুশি তাই বলে যায় মানুষ।
বন্ধু বান্ধবহীন একাকী সময়ে অশান্তিপূর্ণ পারিবারিক জীবনে বড় হতে থাকে ফ্রিদা নামের মেয়েটি অসহায়ের মতন। একটি চিকন, একটি মোটা পায়ের অসমতা লুকিয়ে মানুষের সামনে সহজ চলার জন্য লম্বা স্কার্ট পরা শুরু করেফ্রিদা। যেন কেউ ওকে নিয়ে হাসাহাসি, মজা করতে না পারে। ছোটবেলাই সে বুঝে গিয়েছিল সে আর সবার মতন নয় এবং তাকে নিয়ে মানুষ হাসাহাসি মজা করবে। যা তাকে খুব দুঃখি করে তোলে কিন্তু অন্যরা সবাই আনন্দ পায়।
শারীরিক অসুবিধার জন্য স্কুলে যাওয়া শুরু হয় দেরীতে। স্কুলে প্রায় সময় অনুপস্থিত থাকতে হতো শারীরিক অসুস্থতার জন্য। সব কিছু থেকে পিছিয়ে পরার সাথে অর্ন্তমুখি এক কষ্টের জীবন শুরু হয় সেই বাচ্চা বয়সে।
বাবাও যেহেতু অসুুস্থ হয়ে ঘরে থাকত বেশীর ভাগ সময়। এ সময়ে বাবা মেয়ের এক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠে। জীবনের আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্য উৎসাহিত করতেন বাবা। ঘরে বাবার কাছে নানা বিষয়ে শিক্ষা পেত। ছবি তোলা, ছবি আঁকা শেখানোয়, সময় কাটানোর সাথে দর্শন বিজ্ঞান, সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডারের রূপ বৈচিত্র তুলে ধরেন শিশু ফ্রিদার মনে, ফ্রিদার বাবা অনেক যত্নে।
বিষন্ন মায়ের মন ছোট শিশুটিকে ঠিক মতন দেখ ভাল করতে পারত না। দুঃখবোধে জড়িয়ে থাকত। সেই সাথে মানুষের কটুক্তি এক মাত্র বাবা অনেক আশা, অনেক ভরষা, স্বপ্ন দেখানো রাজা রাজকন্যাকে রাজ্য এনে দিত মানসিক শক্তি যুগিয়ে। বাবার সাথে এক গভীর মমতার বন্ধনে জড়িয়ে ছিল ফ্রিদার ছোটবেলার সময়টা। উজান বেয়ে এগিয়ে যাওয়ার এক ভীত. রচনা হয়ে যায় সেই সময় দূর্বল মেয়েটির মাঝে।
শারীরিক ভাবে যে কাজ গুলো করা দারুণ কষ্টের বাবা সে কাজ করার জন্য উৎসাহীত করতেন। ফটোগ্রাফি চিত্রাঙ্কান এবং ব্যায়াম, খেলাধূলায় ঠেলে দিতেন ফ্রিদাকে। সাহিত্য প্রকৃতি, দর্শন নিয়ে আলোচনা করতেন। যে সমস্যাগুলো কঠিন ফ্রিদার জন্য ওর শারীরিক অবস্থার জন্য এবং সে সময়ে মেয়েদের জন্য অনুপোযুক্ত ভাবা হতো মেক্সিকোর সামাজিক অবস্থায়, তেমন সব কিছুতেই আগ্রহী করে তুলতেন অসুস্থ মেয়েটিকে বাবা। খেলতে বা ব্যায়াম করতে উৎসাহীত করতেন। জীবনের অসমর্থ শৈশব, দূর্বল সময়কালটি ঘরে বসে অসাধারন হয়ে উঠেছিল ফ্রিদার কাছে শুধু বাবার জন্য। বাবা হাতে ধরে ফটোগ্রাফি শিখাতেন। বাবার সাথের সময়গুলো ফ্রিদার জীবনে অসম্ভব প্রভাব ফেলেছিল। নিজের সকল ব্যর্থতা দূর্বলতাকে ছূঁড়ে ফেলে দূরন্ত হয়ে উঠার চেষ্টা ছিল তার দূর্বল শরীরে। মানসিক শক্তি গড়ে উঠেছিল প্রচণ্ড।
বাবাকে খুব ভালোবাসতো ফ্রিদা কিন্তু মায়ের জন্য অনুরূপ অনুভুতি আছে বলে কোথাও প্রকাশ পায়নি।
ফ্রিদা এক সাক্ষাতকারে স্পষ্ট ভাবেই বলে, ”আমার যা কিছু শেখা বাবার কাছে, মা আমাকে কিছুই শেখায়নি”। ফ্রিদা এমনটাই মনে করে, মা সম্পর্কে। পুত্র শোকে আক্রান্ত মা, ছোটবেলায় ফ্রিদার প্রতি অন্যমনস্ক এবং অবহেলা করার প্রভাব ফ্রিদার মনে প্রবল ভাবে ছিল। অপরপক্ষে ফ্রিদা পরিবারে শেষ পর্যন্ত যেন পুত্রের ভূমিকায় রয়ে গেল।


বিদ্যা----অধ্যায়ন
পোলিওর জন্য স্কুল শুরু করতে পারে না ফ্রিদা সময় মতন। ছোট বোন ক্রিস্টিনার সাথে এক ক্লাসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু হয় । ষষ্ঠ শ্রেণীতে ক্রিস্টিনা কনভেন্টে ভর্তি হলেও ফ্রিদা বাবার ইচ্ছায় জার্মান বৃত্তিমূলক একটি স্কুলে শিক্ষা নিতে যায়। স্কুলে পড়া শুরু করে সেখানে শরীর চর্চা শিক্ষিকার সমকামিতায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ফ্রিদা। জার্মান স্কুলে থাকা কালীন সময়ে নাবালিকা বয়সে, এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল ফ্রিদা।
অস্থির চিত্ত এবং অসুস্থ অবস্থায় দুঃখি মনোভাবের ফ্রিদা স্কুলের সব নিয়ম মেনে চলতে পারে না। অথচ অবাধ্য ব্যবহার যা স্কুলের নিয়মের পরিপন্থি এমন অভিযোগ করে তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয় অনিয়মের জন্য। কঠিন ভাবে চেষ্টার পর দূর্ভোগের গঞ্জনা মাথায় সে স্কুল পাঠের পরিসমাপ্তি হয়।
সৌভাগ্যক্রমে, মেক্সিকান বিপ্লব এবং শিক্ষা নীতি পরিবর্তিত হয়, যুদ্ধত্তর সময়ে এবং ১৯২২ থেকে মেয়েদের ন্যাশনাল প্রিপারেটরি স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়। ন্যাশনাল প্রিপাইটরি স্কুলে দুহাজার ছাত্র এবং পঁয়ত্রিশজন ছাত্রীর মধ্যে একজন ফ্রিদা।
ঔষধ, উদ্ভিদবিদ্যা এবং সামাজিক বিজ্ঞান অধ্যায়ন করতে থাকে ফ্রিদা সেই স্কুলে চিকিৎসক হওয়ার আশা নিয়ে । একাডেমিক দক্ষতা অর্জনের সাথে, মেক্সিকান সংস্কৃতিতে খুব আগ্রহী হয়ে উঠে, এবং সক্রিয় রাজনীতিতে কমিউনিজমের সাথে জড়িত হয়ে যায় ফ্রিদা।
র‌্যাভুলেশন পরবর্তি নতুন দেশ গড়া এবং ইতিহাস, আন্দোলন মেক্সিকান সংস্কৃতি, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক ন্যায় বিচারের বিষয়ে গভীরভাবে পরিচয় করানো ছিল স্কুলটির কার্যক্রম। স্কুলটি আদিবাসীবাদকে মর্যাদায় উন্নীত করে, যা মেক্সিকান পরিচয়ের একটি নতুন ধারনা শুরু হয়। যা দেশটির আদিবাসী ঐতিহ্যের নিয়ে গর্ব করে এবং মেক্সিকো থেকে ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করে। এই সময়ে ফ্রিদা বিশেষভাবে প্রভাববিত ছিল সহপাঠীর দ্বারা। "ক্যাচুকা" নামে একটি অনানুষ্ঠানিক দল গঠন করে তাদের মধ্যে অনেক মেক্সিকান বুদ্ধিজীবী শ্রেণির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব তাদের সাথে কাজ করছিল। তারা রক্ষণশীল সকলের বিরুদ্ধে, বিতর্কিত দর্শন এবং রাশিয়ান ক্লাসিকদের বিরুদ্ধে ছিল। মেক্সিকান কমিউনিষ্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে নিজেকে "বিপ্লবের কন্যা" বলতে পছন্দ করত ফ্রিদা। ১৯১০ সালে মেক্সিকান বিপ্লব শুরু হয়ে ছিল, কিন্তু সারা জীবন ধরে চলতে থাকবে উন্নতির প্রগতিধারা।
ফ্রিদার জীবনে, রক্ষা কবচের মতন জড়িয়ে গিয়েছিল নিয়ম বিরুদ্ধ এবং যা করা উচিৎ নয় বলে সবাই মনে করে, তেমন কাজ করে নিজেকে উপস্থাপন করা। দূর্বল ছোটখাট শরীর এবং খুঁড়িয়ে হাঁটা বা দেহের খুঁত ঢাকার জন্য নিজেকে অন্য ভাবে উপস্থাপন করে দৃষ্টি আকর্ষন করার প্রবনতা ছিল ওর মধ্যে।
ফ্রিদা সেই সময়ে মেয়েলিপনার ধারনা থেকে বেরিয়ে এসে, র্স্কাট টপস পরে চুল ছোট করে কেটে, সার্ট প্যান্ট পরে নিজের মতন চলতে শুরু করে।

রেভুলেসনের পর, যুদ্ধ শেষে নতুন মেক্সিকোর রাজনৈতিক ধারা ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানোর উদ্যোগে । স্কুলের অডিটোরিয়ামে, দেশ এবং দেশের ইতিহাস ভিত্তিক মোরাল তৈরি, দেয়াল ছবি অঙ্কনের একটি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সে সময়ের মেক্সিকান বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ডিয়েগো রিভেরাকে নিয়ে আসা হয়।
ফ্রিদা তখন সেই স্কুলের ছাত্রী। কোন এক অদ্ভুত কারণে দিয়াগোকে সেই সময় নানা ভাবে উত্তাক্ত করে মজা পেত ফ্রিদা। ওর লাঞ্চবক্সের খাবার খেয়ে ফেলত। বন্ধুদের নিয়ে হৈ চৈ করত ছবি আঁকার জায়গায়। আড়াল থেকে চিৎকার করে কথা বলত। এ সব অত্যাচারে, দিয়াগো মোরাল তৈরি করার কাজ ছেড়ে দিতে চেয়েছিল সে সময়। ফ্রিদার বয়স ছিল তখন পনের বছর। পিছন থেকে উত্যাক্ত করে মজা পেত কিন্তু কখনো দিয়াগোর সামনে আসত না।
দিয়াগো এবং অন্যান্যদের ছবি আঁকার কাজ কাছে বসে দেখতে চেয়েছিল ফ্রিদা। তাই একদিন সব বন্ধু মিলে ঠেলে ফ্রিদাকে চিত্রঙ্কনের জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। যদিওর সংকোচ ছিল সামনে আসার কিন্তু রুমে ঢুকে পরার পরে ফ্রিদা সাবলীল জিজ্ঞেস করেছিল তোমাদের আঁকা কি দেখতে পারি কাছে থেকে? তাকে অনুমতি দিয়েছিল শিল্পী।
তিনঘণ্টা সময় ক্লান্তিবিহীন বসে ছবি অঙ্কনের কাজ দেখেছিল ফ্রিদা সে দিন। তার চোখ নড়ছিল তুলির প্রতিটি টানের উঠা নামার সাথে। দিয়াগো তার এক লেখায় এভাবেই ফ্রিদাকে বর্ণনা করে। সে সময় ছোট একটি কিশোরী আগ্রহ এবং তার চোখের তীক্ষ্ণ, ত্যাজদীপ্ত চোখ মেলে গিলছিল যেন আঁকার কৌশল। তাকে মনে হয়ে ছিল আর সকলের চেয়ে আলাদা অন্যরকম মানুষ।
ভাগ্য বিড়ম্বনা নাকি গতি পথ এঁকে দিয়েছিল।
উচ্ছ্বল আনন্দময় জীবন যাপন করতে চায় ফ্রিদা কিন্তু ভাগ্য বারবার হাত ধরে তাকে যেন দুঃখের মাঝে ঠেলে দিতে চায়।
ফ্রিদার কিশোর বয়সের প্রথম বন্ধু আলেজান্দ্রো গোমেজ আরিয়াস। একজন স্কুল বন্ধু যার সাথে রোমান্টিক ভাবে জড়িত, সদ্য কিশোরীর রোমান্সের মধুময় সময়, আনন্দে উচ্ছাসে আহলাদিত। বৃষ্টি ভেজা এক শরতের দিনে ১৯২৫ সনে দুজনে বাড়ি ফিরছিল একটি বাসে চড়ে।
বাসে একটি লোক যাচ্ছিল সোনার গুড়া নিয়ে। কৌতুহলি ফ্রিদা লোকটার কাছে জানতে চায় এটা কি সত্যি সোনা। লোকটি ফ্রিদার হাতে একটু সোনার গুড়ো ঢেলে দেয়। আনন্দময় যাত্রা মূহুর্তে ভয়ংকর হয়ে উঠে।
বাসটি দূর্ঘটনায় পরে। একটি ট্রলি অন্য রাস্তা থেকে এসে ধাক্কা মারে বাসটিকে। বাসটি ধাক্কা খেয়ে রাস্তার মানুষকে ধাক্কা দিয়ে এবং চাপা দিয়ে উল্টাপাল্টা গতিতে ছুটতে ছুটতে হাজার টুকরা হয়ে ভেঙ্গে যায় কিন্তু ট্র্রলিটি ঠিক ভাবেই চলে যায় বাসটিকে ধাক্কা দিয়ে।
বাস দূর্ঘটনায় বাসের হাতল ফ্রিদার পেটের একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্য দিকে বের হয় যায়। শরীর প্রায় উলঙ্গ আর সারা শরীরে সোনার গুড়া মাখানো অবস্থায় রাস্তার উপর রক্তাক্ত ফ্রিদার দেহ পরে থাকে। রাস্তার পাশে একজন টেনে রড়টি বের করে ওর শরীর থেকে। হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তাররা তাকে দেখে সে ভালো হবে কিনা এ আশা দিতে পারেনি সে সময়। তার ডান পা এগারো টুকরো হয়ে ভেঙ্গেছে। গলার হাড় দুই টুকরা হয়েছে। পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে যায় কয়েকটি। মেরুদণ্ডে হয় ফাটল। বেঁচে উঠার আশা ছিল খুব ক্ষীণ। একমাস হাসপাতালে থাকার পর বাসায় এসে বিছানার জীবন যাপন শুরু হয় ফ্রিদার আবার।

চলবে
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:০৫
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×