somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

ফ্রিদা কাহলো এক ব্যতিক্রমী মানুষ

১০ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পর্ব তিন

স্বপ্নের মৃত্যু



দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পরে গলার হাড় মেরুদণ্ড আর পায়ের হাড় ভাঙ্গার সাথে পেটের ভিতর লোহার রড ঢুকে যাওয়ায় পেলভিক এরিয়ায় দারুণ ক্ষতি করে দিয়েছিল। ফ্রিদাকে সন্তান জন্মদানে অক্ষম করে দেয় এই আঘাত।
যেহেতু ছবি আঁকার জন্য দিয়াগোকে সব সময় বিভিন্ন দেশে বিদেশে যেতে হয়। কাজের জন্য তাদের সব সময় ভ্রমণের উপর থাকতে হতো এবং ফ্রিদার শারীরিক অবস্থা ছিল ভীষণ রকম দূর্বল তাই দিয়াগো চায়নি, তাদের বাচ্চা হোক। কিন্তু নিজের শারীরিক কষ্ট উপেক্ষা করে ফ্রিদা মা হতে চেয়েছিল। মাতৃত্বের স্বাদ পেতে চেয়ে ছিল মনে প্রাণে।
নিজের শিশু বয়স মায়ের অবহেলায় বড় হওয়া ফ্রিদার মধ্যে শিশুর প্রতি দূর্বলতা তাকে আদর যত্নে বড় করার আকাংখা ছিল প্রবল।
কিন্তু অনেক আকাংখা পূরণ না হওয়ার মতন মেয়েটির এই আকাংখাটিও অপূর্ণ রয়ে গেলো।
ফ্রিদা এবং রিভেরা ১৯৩১ সালের গ্রীষ্মকাল কাটানোর জন্য মেক্সিকোতে ফিরে আসে। পরে নিউইয়র্ক সিটিতে ভ্রমণ করে। আধুনিক শিল্পের মিউজিয়াম উদ্বোধনের জন্য। এপ্রিল ১৯৩২ সালে, তারা ডেট্রয়েটের যায়, যেখানে দিয়াগো ফোর্ড মোটর কোম্পানির ডেট্রয়েট ইনস্টিটিউট অফ আর্টসের জন্য ছবি অঙ্কনের জন্য চুক্তি বদ্ধ হয়।


ডেট্রয়েটে ফোর্ড কোম্পানিতে করা দিয়াগোর কাজটি আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল।
প্রথমবার গর্ভপাতের পরে ফ্রিদা আবারো গর্ভ ধারন করে।
এই সময় দম্পতি ডেট্রয়েটে ছিল। এই সময়ও গর্ভাবস্থা জটিল ছিল। ডাক্তার গর্ভপাত করার জন্য বলে। অনিচ্ছাকৃতভাবে সম্মত হতে হয় ফ্রিদাকে। গুরুতর রক্তক্ষরণ হয়, তখন দুই সপ্তাহের জন্য হাসপাতালে থাকতে হয় সে সময়।
কঠিন এই কষ্টের অবস্থা মা, না হতে পারার অসহনীয় বেদনা সহ্য করে অবশেষে নিরুপায় হয়ে মেনে নিতে হয় ফ্রিদাকে, তার স্বাস্থ্য তাকে গর্ভাবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে দেবে না । গর্ভধারন করলেও বারে বারে গর্ভপাত হবে। সম্পূর্ণ একটি শিশু তৈরি হবে না কখনোই তার ভিতরে।
সানফ্রান্সিসকোতে যাওয়ার পর ডাক্তার লিও এলয়েসার সাথে পরিচয় হয় ফ্রিদার। দিয়াগোর সাথে আগে থেকেই পরিচিত ছিলেন এই ডাক্তার। তখন থেকে লিও এলয়েসা ফ্রিদার আজীবন চিকিৎসক শুধু ছিলেন না বন্ধুও ছিলেন।
ফ্রিদা নিজের শারীরিক অবস্থার সাথে মানসিক অবস্থার বর্ণানা করে অনেক চিঠি লিখে ডাক্তারকে।
গর্ভপাতের কিছুদিন পরে ডাঃ এলয়েসরকে লিখেছিল, প্রিয় ডাক্তার, আমি অনেক দিন ধরে লিখতে চেয়েছিলাম। আমি অনেক কান্নাকাটি করেছি, তবে এটি শেষ, মা হতে না পারা, সহ্য করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই।
চিঠিগুলিতে, গর্ভাবস্থার প্রথম দিনগুলিতে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছে। একটি শিশু নিজের ভিতর বেড়ে উঠার আনন্দটুকু পাওয়ার ইচ্ছা তার খুটিনাটি সব কিছুই ডাক্তারের সাথে চিঠিতে লিখত।
প্রথম গর্ভধারন এবং গর্ভপাত থেকে দূর্ঘটনার কারণে তার সর্বক্ষণ পিঠে ব্যথা। ঘাড় সোজা করে বেশিক্ষণ থাকতে না পারা। পায়ের ব্যাথা যাবতীয় বিষয়ে মন খুলে লিখত। সেই সাথে মনের যন্ত্রনাগুলো খোলাখুলি ভাবে ডাক্তারের কাছে বলত।
চিকিৎসকের প্রতি আস্থা বাড়তে থাকে এবং এক সময় লিখে, রিভেরার প্রথম স্ত্রী এবং তাঁর দুই কন্যার মা, গুয়াদালাপে মেরিনের প্রতি ঈর্ষা হচ্ছে।
দয়া করে আমি যা বলতে চাইছি তাতে আমার সম্পর্কে ক্ষিপ্ত হবে না, আমি তোমার সাথে খোলামেলা কথা বলতে পছন্দ করি, কারণ আমি জানি, আমাকে বুঝতে পারবে। দিয়াগোর বাচ্চার মা হতে পারল না কিন্তু মেরিন মা হয়েছে এটাই ঈর্ষার বিষয় ছিল।

ডাক্তারকে লেখা চিঠিগুলি ফ্রিদার মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পর জনসম্মুখে আসে। তার বাড়িতে রাখা ৩০০০০ অন্যান্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে এবং বর্তমানে মেক্সিকো সিটিতে তার বাড়িতে আর্টিসের ছবি, নোট, স্কেচ, ম্যাগাজিন, বই এবং পোশাক এবং যাবতীয় ব্যবহার্য বস্তু প্রদর্শিত হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আশি ভাগ ব্যবহৃত বস্তু এবং শিল্প প্রথমবারের জন্য জনগণের কাছে প্রদর্শিত হচ্ছে। তাঁর জন্মের শতবর্ষ উপলক্ষে প্রদর্শনের জন্য অন্যান্য আইটেমগুলির মধ্যে রয়েছে কাহলোর ভাঙা পিঠের এক্স-রে, একটি বাসের টিকেট এবং লিপস্টিকের দাগে চুম্বনযুক্ত একটি নোট।
ফ্রিদা ১৯৪০ সালে ডাক্তার এলয়েসারের কাছে একটি স্ব-প্রতিকৃতি উৎসর্গ করেছিল। লিখেছিল, "আমি আমার ডাক্তার এবং আমার সেরা বন্ধু ডাঃ লিও এলয়েসারের জন্য আমার প্রতিকৃতি এঁকেছি, আমার সমস্ত ভালবাসার সাথে। ফ্রিদা কাহলো। '
১৯৩২ সালে ফ্রিদা, মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে মেক্সিকোতে ফিরে আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি এক অভিমানে মাকে শেষবারের মতন দেখতে যায় না মায়ের মৃত্যু হলে। এক অভিমান বুকে ধারন করে ছিল মায়ের উপর আজীবন।

ফ্রিদার কাছে আমেরিকার মানুষ যেমন
দিয়াগো আমেরিকায় চিত্রশিল্পী হিসাবে ছবি আঁকার আমন্ত্রণ পায় তারা ১৯৩০ শে সানফ্রান্সিসকতে চলে যায় । ফ্রিডা দিয়াগোর সাথে সময় কাটানো আনন্দ আর আমেরিকান লেভিস পার্টিতে ঘুরে ফিরে সময় কাটায়। এ সময় ফ্রিদা তেমন ছবি আঁকে নাই। আমেরিকার জীবনযাত্রার উন্নতি এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলাপমেণ্ট ফ্রিদাকে আকৃষ্ট করে কিন্তু পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষের দরিদ্র সীমার নিচে জীবন যাপন। তাদের খাবার নেই শোয়ার জায়গা নেই অন্য দিকে ধনীরা দিন রাত্রি পার্টি করছে। এসব দেখে বোর হয়ে যায় ফ্রিদা । সমাজের চিত্র ওর চোখে পরে কেউ খুব ধনী এবং অন্য দিকে খুব গরিব তাদের কঠিন জীবনযাপন। ওদের সবার চেহারাও একই রকম মনে হয় ওর কাছে, আন বেইকড রুটির মতন।
সানফ্রান্সিস্কো ও নিউইয়র্ক সিটি পরিদর্শন উপভোগ করেছে, তবে আমেরিকান সমাজের মানুষের ব্যবহার মানসিকতা বেশ কিছু দিক অপছন্দ করেছে, যা ফ্রিদা উপনিবেশবাদী মনে করে, এবং বেশির ভাগ আমেরিকানকেও "বিরক্তিকর" বলে মনে করে।
ফ্রিদা হেনরি এবং এডেল্ড ফোর্ডের মত পুঁজিপতিদের সাথে মেলামেশা করা অপছন্দ করেছে। বৈষম্য ফ্রিদার পছন্দ ছিল না। ডেট্রয়েটের অনেক হোটেল ইহুদি অতিথিদের থাকতে দিতে অস্বীকার করেছিল। এসব বিষয় তার অপছন্দের । একজন বন্ধুকে একটি চিঠিতে লিখেছিল, যদিও আমি যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত শিল্প ও যান্ত্রিক বিকাশে খুব আগ্রহী, কিন্তু অনুভব করি এখানে সব ধনী লোকেদের বিরুদ্ধে সাধারন মানুষদের একটি রাগ আছে। আমি হাজার হাজার ক্ষুধার্ত এবং মাথার উপর ছাদ ছাড়া মানুষ দেখেছি যাদের ঘুমানোর জায়গা নেই । এমন ভয়ঙ্কর দুর্ভোগের মানুষগুলি এখানে আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে, এখানে ধনী ব্যক্তিরা দিনরাত্রি আনন্দ করছে এবং হাজার হাজার মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় মারা গেছে। আমি এখানে "হাই সোসাইটি" অপছন্দ করি এবং এই সমস্ত চর্বিযুক্ত বিড়ালের বিরুদ্ধে কিছুটা ক্ষোভ অনুভব করি, যেহেতু আমি হাজার হাজার মানুষকে ভয়াবহ দুর্দশায় দেখেছি। '
যে কিশোরী বয়সে দিক্ষা নিয়েছিল কমিউনিজমের তার কাছে ধনী দরিদ্র, দেশের পার্থক্য পীড়াদায়ক হবে এতে সন্দহে নাই। এবং ম্যাক্সিকোর মানুষের মধ্যে জীবন যাত্রার যে মৌলিক সহজ সারল্য লৌকিকতা, গ্রাম্যতা তেখে অভ্যস্ত ছিল এসব বিষয়গুলো আমেরিকার মানুষের মধ্যে তখন বদলে গিয়ে কৃত্রিমতার প্রভাব পরছিল। যা ওর কাছে ভালোলাগেনি।

শারীরিক ত্রুটি গুলি ঢেকে রাখার জন্য ফ্রিদা নিজেকে সুন্দর ভাবে পোষাকে, অলংকরনে, চুল বাঁধায়, ফুলের সমাহারে দৃষ্টি আকর্ষণীয় করে সাজাতে পছন্দ করত। একজন শিল্পী নিজেকেও একটি পেইন্টিংয়ের মতন করেই শৈল্পিক, নান্দনিক ভাবে উপস্থাপন করত। যে কোন অনুষ্ঠানে ফ্রিদা হয়ে উঠত মধ্যমনি, সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভিতরের দুঃখ উপচিয়ে সুখ সুন্দরের মাঝে জীবন যাপন করতেই ভালোবাসত।
চলবে..........





সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৩৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×