somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

ফ্রিদা কাহলো এক ব্যতিক্রমী মানুষ : পর্ব চার

১৩ ই জুলাই, ২০২০ রাত ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



টানাপোড়েনের সংসার-

ভালোবাসা প্রেম, বিয়ে এবং জীবন যাপন নতুন এক মাত্রা যোগ হয় ফ্রিদার জীবনে। কিছু করতে না পারা মেয়েটা সুখের সংসার নিয়ে ব্যস্ত হতে চেষ্টা করে। যদিও পূর্ণতা আসে না সংসারে বাচ্চা না পাওয়ায়।
বিভিন্ন এলিট, শিল্পী এবং ভিন্ন পরিবেশকে জানা শোনার মাঝে ঘুরে ফিরে সুখি সংসার জীবন যাপন কাটাতে মন্দ লাগে না ফ্রিদার। এ সময় ব্যস্ততা ছিল পার্টি, আনন্দ হুল্লোর নানান গুনিজনের সাথে চলাফেরা।
আমেরিকাতে তিন বছরেরও বেশি সময় থাকার পরে, ফ্রিদা মরিয়া হয়ে মেক্সিকোতে ফিরে যেতে চাইছিল। দিয়াগো সেখানে যে খ্যাতি এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছিল তা উপভোগ করে এবং ফিরতে চান না মেক্সিকোয়।
ফ্রিদা এ সময় একটি ছবি আঁকে মাই ড্রেস হ্যাংগিং। সাধারনত ফ্রিদার ছবিতে নিজের মুখ থাকে কিন্তু এই ছবিটি ব্যাতিক্রম ।
কেবল বিশৃঙ্খল পটভূমিতে নাগরিক শহরের বিভিন্ন উপাদা এলোমেলো, থৈ থৈ সাগরের অন্যপাড়ে নিজের শহর ঝুলন্ত পোশাক। দেখে মনে হয় শরীর আমেরিকাতে থাকলেও পোশাক ঝুলছে যেখানে সেই মেক্সিকোয় ফ্রিদার জীবন। সাগর পেরিয়ে ছুটে যেতে চাওয়া।
এই চিত্রকর্ম মানসিক ইচ্ছা এবং জীবন যাপনের দ্বন্দ্ প্রকাশ পায়। ফ্রিদা কাহলো আমেরিকান পুঁজিবাদের আধিপত্যবাদ চিত্রিত করার চেষ্টা করছিল। এই পেইন্টিংটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক শিল্প সমাজের আইকনগুলিতে পূর্ণ। তবে বোঝা যায় সমাজটি ক্ষয়িষ্ণু এবং মূল মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস হয়ে গেছে। অথচ এই চিত্রের বিপরীতে, ওর স্বামী দিয়েগো আমেরিকার শিল্প অগ্রগতির রকফেলার সেন্টারে মুরাল তৈরির কাজ করছিল।
১৯৩৪ সালে দম্পতি মেক্সিকো সিটিতে ফিরে আসে অতঃপর।
দিয়াগো মেক্সিকো সিটির বাইরে কান্ট্রি সাইডে আধুনিক ডিজাইনে দুটি পাশাপাশি বাড়ি তৈরি করেছিল। সান এঞ্জলো নামে একটি নীল রঙের বাড়ি ফ্রিডার জন্য একটি গোলাপী রঙের বাড়ি দিয়াগোর জন্য। এই বাড়িটিকে সেতু বাড়ি, ব্রীজ হাউস নাম দেয়া হয়। কারণ নীল এবং গোলাপী বাড়ির মধ্যে একটি সেতু ছিল উপর তলায়। ইচ্ছে হলে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি যাতায়াত করা যায় আবার দরজা বন্ধ করে আলাদা করেও রাখা যায়।
কতটা আধুনিক চিন্তাধারায় দুজন শিল্পীর নিজস্ব প্রাইভেসি রক্ষা করে কাজের জন্য আলাদা দুটো বাড়ি তৈরি করা হয়ে ছিল। আমার মনে হয় আজ পর্যন্ত এমন স্বাতন্ত্র নিয়ে আর কোন দম্পত্তি এক সাথে থেকেও কাজের জন্য আলাদা থাকার সুয়োগ পেয়েছেন বা করে নিয়েছেন। এমন ভাবনা আর কেউ ভেবেছেন বলেও মনে হয় না।
এ সময়ে বিভিন্ন দেশের নামী দামী অনেক ব্যাক্তি ফ্রিদা দিয়াগোর গোলাপী নীল বাড়িতে অথিতি হয়ে আসতো, থাকতো। মেক্সিকোর দুই লিজেন্ডার শিল্পীর সান্নিধ্যে থেকে মেক্সিকোর ঐতিহ্যবাহী শিল্পের সাথে পরিচিত হতেন।
দিয়াগোর সাথে এত ভালোবাসার ভিতর বিষন্নতা মনকষ্ট ছিল ফ্রিডার অশান্তি এবং দুঃখ বিষাদের ছায়া তাকে ঘিরে রাখত। আগুনমুখী এক অন্তঃসলীলা স্রোত তাকে পুড়াত।
স্বভাবত দিয়াগো ছিল বহুগামী। মনোগামী এই স্বভাব কন্ট্রোল করার কোন চেষ্টাও তার মাঝে ছিল না।
দিয়াগোর পলিগ্যামি স্বভাব সত্যেও অন্য সব কিছুর উপর ভালোবাসা তাদের এক করে রেখে ছিল। তাদের ভালোবাসা একের অন্যের প্রতি ছিল অনন্য সাধারন। সব কিছুর পরে একে অন্যের উপর প্রবল টান অনুভব করে। তারা কাজে, কথায়, ভালোবাসায় একে অপরের পরিপূরক। ফ্রিদা ভেবেছিল দিয়াগো তার মাঝেই নিবেদিত থাকবে। কিন্তু নারী সঙ্গে সহজ দিয়াগো ফ্রিদার প্রতি প্রবল ভালোবাসা থাকার পরও ভুলে যেত যৌথ জীবনের নীতি আদর্শ। এবং প্রায়ই ভুল করে বসত যা ফ্রিদাকে মন মরা করে রাখত । দুঃখ বোধের সাথে অনৈতিক উশৃঙ্খল আচরণে মেতে উঠে ফ্রিদা নিজেও।
দিয়াগো যার কাছ থেকে ফ্রিদা প্রাণ পায়, তার এই বহু নারী গমন স্বভাব ফ্রিদাকে কুঁড়ে কুঁড়ে মানসিক যাতনায় শেষ করে ফেলছিল
সততা, নৈতিকতার সব ভাবনা ভুলে নিজের জীবনটাও দিয়াগোর মতন করে ফেলতে চায় ফ্রিদা। ক্লাবে পার্টিতে যাওয়া পান এবং হৈ হুলোড়ের মেতে বিভিন্নজনের সাথে সম্পর্কে জড়ানো। খাওয়া ঘুম এবং জেগে উঠে আবার। জড়িয়ে পরে, নানা সম্পর্কে । যেখানে শুধুই যৌনতার সম্পর্ক। নারী এবং পুরুষের সাথে দৈহিক বিষয়টাকে ফ্রিডা বলে এখানে হৃদয় নেই শুধুই ক্ষণস্থায়ি আনন্দ উপভোগ করা। প্রতিদিন নতুন জীবন যেন প্রতিদিনের খাওয়া ঘুমের মতন ব্যাপার।
ক্লাব পার্টি, জাপানী বন্ধু ইসামু নিগুচি এবং অন্য বন্ধুদের সাথে নাচ হৈ হৈ রই রই করে সময় কাটায় ফ্রিদা। যা তার পক্ষে করা সম্ভব না সে তাই করে বেড়াতে চায়। সাথে দিয়াগোর সাথে পাশাপাশি বসবাস। এ সময়ে বিভিন্ন দেশের নামী দামী অনেক ব্যাক্তি ফ্রিদা দিয়াগোর গোলাপী নীল বাড়িতে অথিতি হয়ে আসতো, থাকতো।।
সেই সময় রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু স্টালিনের সমাজতন্ত্র মানুষের চোখে যেমন ছিল। কাছের মানুষের জন্য তেমন ছিল না। ট্রটস্কির জীবন হুমকির মুখে পরে। সে রাশিয়া থেকে পালিয়ে মেক্সিকো তে আসে। ট্রটস্কি এবং তার স্ত্রী নাটালিকে ফ্রিদা নিয়ে আসে তার নীল বাড়িতে। ট্রটস্কি এ সময় দু বছর চব্বিশ ঘন্টার পাহারায় নিরাপত্তায় ফ্রিদার বাড়িতে থাকে। ট্রটস্কি সুন্দরি নারীর প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয় বলে খ্যাত। ফ্রিদার সাথে ট্রটস্কির এ্যাফেয়ার তৈরি হয়ে যায় খুব অল্প সময়ে। ট্রটস্কিকে ফ্রিদা বুড়ো বলেই সম্মোধন করত এবং অচিরেই তার এ প্রেমের প্রতি বিতৃষ্ণাও এসে যায় এবং সম্পর্ক শেষ হয়।
আসলে এই সম্পর্কগুলোও ছিল এক ধরনের প্রতিশোধের বা নিজেকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা। ফ্রিদার প্রকৃত ভালোবাসা ছিল দিয়াগোর সাথে। যার সাথে মনে প্রাণে কাজে জড়িয়ে থেকে সুখি, আনন্দময়ী হতে চেয়েছিল।
কিন্তু দিয়াগোও ফ্রিদার প্রতি ভীষণ ভাবে অনুরক্ত ফ্রিদার অভাবে যন্ত্রনা বিদ্ধ হয়েও নারীসঙ্গে জড়িয়ে পরার স্বভাব থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারত না।
সুখ সমৃদ্ধি ভালোবাসা থাকার পরও এক কষ্ট নদী বুকেই নিয়েই জীবন যাপন চিত্রশিল্পী ফ্রিদার।
চলবে......

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:০৩
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×