প্রতিদিন খবর মৃত্যুর। অনেক মৃত্যু অনাকাঙ্খিত মৃত্যু কেড়ে নিচ্ছে আমাদের প্রিয়জনদের। প্রিয়জন, ভালোবাসার মানুষ, চেনা স্বল্প পরিচিত। অচেনা মানুষ, বন্ধু, তাদের আত্মিয় স্বজন, গুণিজন বিখ্যাত মানুষ অনেকে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার খবর প্রতিদিন। মানুষের আহাজারি পৃথিবী জুড়ে। ফেসবুক থেকেও হারিয়ে গেলেন কতজন বন্ধু এই মহামারীর তাণ্ডবে। পরিচিত চার পাঁচজন প্রকাশক চলে গেলেন ফেসবুক থেকে, পৃথিবী থেকে।
স্বাভাবিক সময় ফিরে আসছে না পৃথিবীতে। মাঝে মাঝে তাই এখন আর কোন খবর দেখি না। তারপরও সব খবর জোড় করেই যেন সবাই জানাতে চায়। চোখে পরে এই মহা তাণ্ডব থেকে দূরে থাকতে দেয় না। ফেসবুক অনলাইন, টিভি রেডিওর অনেকটা সময় কোভিট ১৯ খবর জুড়ে আছে।
যে কোন কথাবার্তার অনেকটা সময় জুড়ে থাকে করােনা সময়। অদ্ভুত আঁধার নেমেছে পৃথিবীর বুকে। ছায়া ফেলেছে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে। চালচলন জীবন আচরণ বদলে গেছে একটা বছর হলো।
মানুষ আর পরছে না। স্বাভাবিক হতে চায় স্কুল, অফিস, খেলা, কনর্সাট বাজার পার্টি করে মানুষ স্বাভাবিক হতে চায়। মানুষ মানসিক ভাবেও অস্থির হয়ে যাচ্ছে নানা রকম চাপে।
ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকে নিজেকে সুরক্ষিত ভাবছে অথচ ভ্যাকসিনের ব্যাপারেও প্রতিদিন নানা ভাবে নতুন খবর দিচ্ছে বিজ্ঞানীরা।
অনেকে জানতে চান ভ্যাকসিন কতদিন সুরক্ষা দিবে এ ুত্তর এখনো বিজ্ঞনীদেরই জানা নেই। তবে বর্তমানের জন্য কিছুটা প্রতিরক্ষা থাকবে। তবু নাই মামার চেয়ে কানামামা আছে কিছুটা হলেও প্রতিরোধ হচ্ছে। তবে সব কিছু সুরক্ষা প্রতিরোধের ক্ষমতা নেই সব ভ্যাকসিনেরও।
উহানের কোভিড ১৯ পরিবর্তন হয়ে গেছে ভিন্ন রূপে। যাদের নাম দেয়া হয়েছে ইউকে এবং সাউথ আফ্রিকা এবং ব্রাজিল ভেরিয়েন্ট। ভিন্নরকম ভাইরাস বলে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন ধরনের এই রূপ আরো বেশি ভয়ঙ্কর ভাবে আক্রমণ করছে। এরা ধরলে ছাড়তে চায় না। এরা অল্প বয়সীদের ধরছে বেশি।
স্কুল বন্ধ রাখতে রাখতে খুলে দেওয়া হলো, আবার বন্ধ, আবার খোলা আবার বন্ধ। কিছু খোলা কিছু বন্ধ। মিডিয়া বলছে বাচ্চাদের নিয়ে যেন পিংপং খেলা হচ্ছে। বাচ্চারা পিংপং বল।
খেলোয়াররা মাঠে নেমে গিয়েছিল খেলতে। একজন থেকে সব কজন আক্রান্ত এদের বয়স ত্রিশের বেশি না ।
যখন একটি ভাইরাস একটি জনসংখ্যার মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরে এবং অনেক সংক্রমণ ঘটায়, ভাইরাস পরিবর্তনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ভাইরাস যত বেশি ছড়িয়ে পরতে পারে, তত বেশি তার প্রতিরূপ ভিন্ন ভাবে প্রকাশ পায়। অনেক পরিবর্তন হয়। তাদের চরিত্র। বোঝার আগেই তারা অনেক বেশি বদল হয়ে ধরাসায়ি করে ফেলে মানব সমাজকে।
এখন আমরা জানতে পারছি । কি জানি কত আগে কেমন ভাইরাসের প্রার্দুভাবে কত মানব সভ্যতা শেষ হয়ে গেছে। যেমন আমরা খুঁজে পাই অনেক জায়গায় সাজানো শহর। বেশ বোঝা যায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল মানব সভ্যতা সেখানে। কিন্তু কি ভাবে সবটা জানার সুযোগ নাই। কিছু অনুমান কিছু বিজ্ঞান তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছে।
বিজ্ঞানের কত শাখা প্রশাখা, এক এক দল এক এক বিষয় নিয়ে কাজ করে জানিয়ে দিচ্ছেন সঠিক পৃথিবীর ইতিহাস। আদি মানব যখন পৃথিবীতে এসেছিল আর ক্রমাগত পথ চলে, ছড়িয়ে পরেছিল ভিন্ন জায়গায়। বদলের কত রূপ নিয়ে মানুষ অবস্থান করছে বর্তমান সময়ের পৃথিবীতে। তার খুব অল্প আমাদের জ্ঞানে বিজ্ঞানীরা নিয়ে আসেন। যারা জানতে ইচ্ছা করি জানি। কৌতুহল আর জ্ঞান তৃষ্ণা থেকে।
বর্তমান সময়ের ভয়াবহ মহামারীর মতন মহামারী আগেও কয়েকবার হয়েছে, মানব সভ্যতার মাঝে। তবে বর্তমান সময়ে আমরা অনেক বেশি বিজ্ঞানমুখি। অনেক বেশি জানি কি হতে পারে , কি ভাবে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সব মানুষের আগ্রহ সমান না ঘরে বসে ভাইরাস দূরে রাখার। তাই নানা ভাবে মহামারীকে আমরা কাছে ডাকছি দূরে রাখার চেয়ে। এক দেশ থেকে পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে যেমন পরল। বদলও হয়ে গেলো তার রূপ। এপর্যন্ত জানা মতে অন্তত আরো তিন রকম ভাবে নিজেকে প্রকাশ করেছে করোনা ভাইরাস, তা আমরা জানতে পেরেছি এখন।
বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন কী ভাবে শুরু হলো করোনা তা খুঁজে বের করতে। সুযোগটা প্রথম অবস্থায় পেলে হয়তো এত দিনে জানা হয়ে যেত। কিন্তু এক বছর পর মূল উহানের বাজারে গিয়ে কতটুকু খুঁজে পেলেন উৎস এখনো বুঝা যাচ্ছে না। রাজনীতি মানুষের অসহায় অবস্থা নিয়ে খেলা করে। এই মৃত্যু উপত্যকা আমাদের পৃথিবী নয়।
কোভিড ১৯ উহান থেকে যা ছড়িয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় যে নতুন রূপের উদ্ভূব হয়েছে তাকে বলা হচ্ছে বি১৩৫১।
বি ১১৭ যা ইউ কে তে নতুন রূপ নেয়। ব্রাজিল থেকে উদ্ভব হওয়া নতুন রূপটির নাম দেয়া হয়েছে পি ১ ।
২০২০ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ পূর্ব ইংল্যান্ডের কেন্টে প্রথম চিহ্নিত হয়, বৈকল্পিক ধরনের এই করোনা কে সনাক্ত করা হয়। কিন্তু নভেম্বরের মধ্যে এটা ব্রিটেনে শুধু নয় দ্রুত বৃদ্ধি হয়ে, সেখান থেকে অন্য দেশেও ছড়িয়ে পরে।
সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম পাওয়া যায় বি ১১৭। চিকিৎসক বলেছেন, এই রূপটি অন্যদের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং মূল স্ট্রেনের চেয়ে কম সময়ে সংক্রমণ করতে পারে।
ব্রাজিল থেকে ফিরে আসা চারজন ভ্রমণকারীদের মধ্যে জাপানে, প্রথম আবিষ্কার করা হয়েছিল পি ১ নতুন রূপটি।
পি ১ ধরনটি কানাডায় আরও মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে এটাকে নাম দেয়া হয়েছে "ওয়াইল্ড টাইপ" এবং কম বয়সীদের মাঝে বেশি ছড়াচ্ছে।
প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ের চেয়ে সব চেয়ে বেশি আক্রান্তর সংখ্যা এখন। হাসপাতালে উপচে পরছে রোগী। আইসি ইউ এ কাকে রাখা হবে আর কাকে বাদ দেয়া হবে এযেন লটারী।
প্রথমবার বলা হয়েছিল অল্প বয়সীদের প্রয়োজনে আইসি ইউ এ রাখা হবে বয়স্কদের বাদ দিয়ে। এখন অল্প বয়স্ক দুজনের মধ্যে কাকে রাখা হবে সে সিদ্ধান্ত নিতে ডাক্তারদের চোখে পানি আসছে।
ফাইজারের কোভিট১৯ এর জন্য আবস্কিৃত ভ্যাকসিন শট নেয়ার পরও দেখা যাচ্ছে পি ১ এর বিরুদ্ধে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কাজ করছে না। প্রথম কোভিট১৯ এর জন্য কাজ করছে।
মহামারী বিজ্ঞানি এপিডেমিওলজিস্ট যাদের নাম অনেক বেশি শুনেছি গত এক বছর ধরে তারা একটা নতুন ধরনের কিছু পাওয়ার সাথে সাথে তার ধরন ধারন নিয়ে জানাচ্ছেন আমাদের। আমার পরিচিত আবুল হাসনাৎ মিল্টন ছাড়া আর কোন এপিডেমিওলজিস্ট কাউকে কখনো চিনতাম না। তাও কবি হিসাবে বেশি তাকে চিনতাম।
মিল্টন বাংলাদেশে আর্সেনিক নিয়ে এক সময় অনেক কাজ করেছিলেন জানতাম। তবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না সে সময় এই এপিডেমিওলজিস্ট এর কাজ, অত মনোযোগ দিয়ে শোনার মতন। ভালো কাজ করছেন একটা জনগোষ্টি আর্সিনিকে ভোগছেন এর মূল আবিস্কার করে সমাধান দেয়ার চেষ্টা, খুব ভালো কাজ। অথচ এখন পৃথিবী ব্যাপী কোন এপিডিমিয়লজিষ্ট কখন কি বলছেন, তা শোনে বোঝার চেষ্টা করি, কি মানতে হবে কি করতে হবে, কোন অবস্থা এড়িয়ে যেতে হবে । কি করতে হবে। তাদের নির্দেশগুলাে শুনে চললেই এখন কিছুটা আলোর সন্ধান পাওয়া যাবে। সাথে আরো শুনি এয়ার র্বান স্পেসালিস্ট, ইফেক্টিয়াস ডিসিস স্পেশালিস্টরা কি বলছেন। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার নতুন নির্দেশনা। কতগুলো নতুন মুখ প্রতিদিন তাদের কথা জানা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল কেমন করে। আরো কত বিষয় বাদ দিয়ে।
পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত ২০৫৬৯৩৮ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন কোভিট ১৯ ভাইরাসে। এই সময়ে তৃতীয় ঢেউ উঠেছে যা অনেক বেশি আগ্রাসী, আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ আবার অসুস্থ হচ্ছেন অনেক দেশে। সাবধানতা অনেক বেশি জরুরী এখন অসুস্থ না হওয়ার জন্য এবং অন্যকে অসুস্থ না করার জন্য সবারই সতর্ক থাকা দরকার।
যারা এসিম্পটোমেটিক নিজেরা বুঝতে পারছেন না তাদের ভিতর ভাইরাস আছে। কারণ তাদের কোন রকম সমস্যা হচ্ছে না। তারা সব জায়গায় যাচ্ছেন নিজেকে সুস্থ ভেবেই আর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে আক্রান্ত করছেন প্রিয়জনদের । তাদের থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে অনেকের মাঝে এ জন্য সবার থেকে দূরে থাকা আর মাস্ক পরা খুব জরুরী সাথে হাত ধুবেন ।
ভ্যাকসিন এসেছে অনেকেই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এবং মাস্ক না পরে নিজেকে সুরক্ষিত ভেবে স্বাভাবিক জীবন শুরু করেছিলেন। কিন্তু না এখনও সময় আসেনি মাস্ক ফেলে দেয়ার হাত ধোয়া এবং দূরত্ব রাখার অভ্যাস ছেড়ে দেয়ার। বরং এখন ডাবল মাস্ক পরার কথা বলা হচ্ছে।
যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন নতুন রূপের বি ১১৭, বি ১৩৫১ এবং পি ১ এ। আগের জনা কোভিড ১৯ তো সাথে আছেই। কে জানে এর ভিতর আরো কোন রূপে নিজেকে বদলে ফেলেছে কিনা ইতমধ্যে । তবে বেশ মিতালী পাতিয়েছে বি ১১৭ আর
বি ১৩৫১ মিলে শক্তি সঞ্চয় করে। চোরে চোরে মাসতুতো ভাইর মতন তারা একে অপরকে চিনে নিচ্ছে বেশ। ফাইজার মের্ডনা ভ্যাকসিনের সুরক্ষা বুহ্য ভেদ করে সাউথ আফ্রিকার ভেরিয়েন্ট ঢুকে পরছে মানুষের শরীরে। এস্ট্রজনিকা বি ১১৭ র জন্য কিছুটা কাজ করছে।
বিদ্যমান ভ্যাকসিনগুলির কার্যকারীত হ্রাস পাচ্ছে অন্য ভেরিয়েন্টের বেলায় , ভিন্ন ধরনের ভেরিয়েন্টের সাথে যুদ্ধ করতে পারছে না শত ভাগ।তাছাড়া শতভাগ মানুষেরও ভ্যাকসিন শট নেয়া হয়নি।
মিউটেশনগুলি রোধ করতে ভাইরাসটির বিস্তার বন্ধ করতে বিজ্ঞানীরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। এখন তারা ভাবছেন আগেই খুঁজে নিতে আরো নতুন যে ভাবে আসতে পারে সে রূপটি আর ভ্যাকসিন শক্তিশালী করতে হয়তো এক ডোজ দুই ডোজের শটের পর আবার বোষ্টার ডোজ নিতে হবে।
অবশেষে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগটা বন্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। প্লেন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে। অবস্থা যখন বেশ খারাপের দিকে।
পৃথিবীর সাতশ কোটি মানুষ আজ ভাইরাসের কাছে অসহায়। তবে এ থেকে প্ররিত্রাণ হবেই। অচিরেই এই ভাইরাস পালাবে বীলিন হবে মানব সভ্যতার কাছে পরাজিত হয়ে ।
বাংলা নতুন বৎসর আসুক হাসুক নতুন সুন্দরের বার্তা নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৫৮