গত বছর যখন দেশে গেলাম অদ্ভুত এক আতংক ছিল। দীর্ঘ সময় হাঁটা চলা না করে নিজের জায়গায় গুটিসুটি মেরে বসে ছিলাম, প্লেনের ভিতর আতংকে। এত লম্বা সময় মুখে মাস্ক চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে টাইট করে রাখার সাথে খুব অনুভব করছিলাম, ডাক্তার নার্সদের কঠিন অবস্থার কথা কি ভাবে এত এত প্রোটেকশনের বর্ম পরে তাদের সারাক্ষণ সাধারন মানুষ নয়, করোনা রোগীদের সাথে থাকতে হচ্ছে।
প্লেনে সব সময় খাবার খুব এনজয় করি, দীর্ঘ যাত্রায় এক এক সময় এক এক মেন্যু হাজির করে। জুস, চা কফি,, দুধ চকলেট মিল্ক নানা রকমের পছন্দের সমাহার। কয়েকবার করে পিছনে হেঁটে গিয়ে শরীরের বসে থাকার আড়ষ্ঠতা কাটাতাম অন্য সময়। চা কফি পানি জুস ইচ্ছা মতন বার থেকে খেয়ে সতেজ হতাম । কিন্তু গতবারের ভ্রমণ ছিল একদম অন্যরকম আড়ষ্ঠ হয়ে বসে থাকা।
কার কাছে করোনা আছে, সেই তার থেকে দূরে থাকার ভয়ে নিজের জায়গায় চুপচাপ বসে থাকা। সারাটা সময় চোখ মুখ ঢেকে।
বৈচিত্রময় খাবার নাই, বারে বারে ঠোঙ্গায় করে একই শুকনো স্যান্ডউইচ ধরিয়ে দিচ্ছিল। দীর্ঘ ত্রিশ ঘন্টা জার্নিতে চারবেলা শুকনো রুটির ভিতর চিজ দু টুকরা হালকা সবজি একটু মাংসের টুকরো, একই মেন্যুর ঠাণ্ডা স্যান্ডউইচ। এক কাপ চা কফি, কিচ্ছু না। বাচ্চাদের ছোট জুসের বক্স একটা ধরিয়ে দিচ্ছিল, প্যাকেটের ভিতর। তবে স্যানেটাইজার প্যাকেট দিচ্ছিল বারে বারে। ওরা হয়তো পরিচ্ছন্ন করে রেখেছে তারপরও নিজের মতন পরিচ্ছন্ন করে নিলাম, নিজের মতন সিট, টিভি স্ক্রিন, রিমোট কন্ট্রোল হাতের কাছের সব কিছু।
এত একা চুপচাপ ইস্তাম্বুলের এয়ারপোর্ট, এর আগে কখনো দেখিনি।
ঘুরে ঘুরে ছোট ছোট স্যুভিনিয়র জিনিস পত্র কিনতে ভালোলাগত। কিন্তু গতবার পেলাম জমজমাট দোকান পাট গুলো সব বন্ধ একা।
এয়ারপোর্টে খাবার খেতেও ভালোলাগে কিন্তু ভয়ে ভয়ে এক কাপ কফি খেলাম শুধু। দীর্ঘ যাত্রার পর বিরতির সময়।
ফেরার সময় প্লেনে চা কফি পাব না জানাছিল তাই এয়ারপোর্টে কফি পান করতে চাইলাম। কিন্তু সেটা সম্ভব হলো না আমার কাছে নগদ অর্থ ছিল না বলে। কোন কারণে আমার ক্রেডিড কার্ড কাজ করছিল না। ফিরে এসে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিকে একটা ঝাড়ি দিলাম। ওরা বলে ও্হ, আমরা ভেবেছিলাম ফ্রড তাই ব্লক করে দিয়েছি। এ সময় তো কেউ ট্রাভল করছে না।
খুব ভালো করেছো তোমরা আমার দীর্ঘ যাত্রায় এক কাপ কফিও তোমাদের জন্য কিনতে পারিনি। এ ছাড়া আর কি বলি। শুনতে হলো তাদের সরি, এ্যাপলজি। তা দিয়ে আর কি করি।
নগদ অর্থ অনেকদিন ব্যবহার করি না। প্ল্যাস্টিক কার্ড সব কাজ করে দেয়। আগে বাইরেও ব্যাবহার করেছি কিন্তু যখন কোন টাকা রাখলাম না সাবধানতায়, তখনই সমস্যা হলো। এখন থেকে সাথে কিছু নগদ রাখতে হবে, অভিজ্ঞতা শিখিয়ে দিল।
ইস্তাম্বুলে ওরা কেন ইউরো ব্যবহার করে তুরস্কের লিরা ব্যবহার না করে। এয়ারপোর্টে সব কিছুর দাম ইউরোতে। ওরা তো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে নাই।
ঢাকা এয়াপোর্টেও দেখলাম অনেক সতর্কতা । দূরত্ব বজায় রেখে চলা।তবে একমাত্র ঢাকাতেই দেখলাম, হাসপাতালের কর্মি ছাড়া অন্যান্য লোকজন পিপিই পরে ঘুরছে।উন্নত দেশে হাসপাতালেরকর্মি ছাড়া, বাইরে আর কেউ পিপিই পরে না। ঢাকা এয়ারপোর্টেও অনেকে ছিল পিপিই পরা। বাংলাদেশে যারা সতর্ক অতিরিক্ত সতর্ক। আবার কেউ পাত্তাও দিচ্ছে না। মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়ানো মানুষ বেশি আবার মাস্ক যাদের আছে তারা আবার ঠিক মতন না পরে মুখে বা কানে ঝুলিয়ে রেখেছে।
অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশ এখনো করোনার ভয়াল থাবা থেকে ভালো আছে। দ্রুত সবাই ভ্যাকসিন পেয়ে যাক। ভ্যাকসিন যথেষ্ট কার্যকরি। যে সব দেশ ভ্যাকসিন পেয়ে যাচ্ছে কমে আসছে আক্রান্তের সংখ্যা। স্কুল খোলার আগে সবাই ভ্যাকসিন পেয়ে গেলে নিশ্চিত হওয়া যেত অনেকটা আক্রান্ত কম হবে।
স্বাভাবিক দিন ফিরে আসুক দ্রুত। সহজ ভাবে এখানে ওখানে যাই। বসে বসে আর কত ভ্রমণের ছবি দেখব । ভ্রমণ আমাকে ডাকছে আয় আয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২১ রাত ১২:৩৩