চারপাশে উজ্জল আলো আর ফুলের হাসি। বাতাসে মাথা দুলিয়ে নাচে ফুলগুলো আর ওদের চেহারা, উজ্জল রঙের ছটায় আকর্ষিত হয়ে ছুটে আসে অসংখ্য মৌমাছি, হামিংবার্ড, প্রজাপতি আরো কত কীট পতঙ্গ তাদের মধু নিয়ে যায় নিজের ঘরে। বেঁচে থাকে ফুলের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে। দারুণ এক জীবন চক্র। জানি কিন্ত যখন প্রতিদিন চোখের সামনে দেখি তখন আরো ভালো জানা হয় নিজের অজান্তে। চেনা পরিচয় হয়ে যায় তাদের দিনলিপির সাথে প্রতিদিন ঘুরে ফিরে আসা তাদের সাথে গড়ে উঠে অলিখিত এক সম্পর্ক ভালোবাসার। কদিন ধরে অসংখ্য প্রজাপতি উড়ছে দল বেঁধে। কত রঙ তাদের। হঠাৎ করে এত প্রজাপতি এ সময়ে এমনটা অনেক দিন দেখিনি। অনেক পাখি এর মধ্যে উড়ে গেছে দক্ষিনে। ওদের আর আসতে দেখি না। পাখিরাও কি সুন্দর জানে কোথায় খাবার রাখা আছে উড়ে আসে সেখানে খুঁটে খায় খাবার। আর না থাকলে মন খারাপ করে নিজে জোগার করতে চলে যায়। কখনো যখন ওদের খাবারের ভাণ্ডার ফুরিয়ে যায় তখন তাদের এই সব কাজ কারবার দেখি। উজ্জল ফুলগুলো একটু একটু করে ঝরে পরছে। বুঝিয়ে দিচ্ছে শরতের আগমন বার্তা। এখন ফুলের বিচিগুলো সংরক্ষন করে রাখতে হবে। আমার সারাদিন কেটে যায় এই সব পরিচর্চা করতে।
মাঝে মধ্যে কেউ দল ছুট হয়। সেদিন তেমনি একজনের সাথে দেখা হলো ঠিক সন্ধ্যার কাছাকাছি সময়ে।
নট নড়নচড়ন। একমদ ঠায় বসে আছে জলের আঁধার একটি কাজের মেসিনের উপর গলা লম্বা করে দেখে মনে হলো বড় পাখি। অসুস্থ। আঘাত পেয়েছে তাই বুঝি বসে আছে চুপচাপ। অবাক করা তার চেহারা। দূরে থেকে উড়তে দেখেছি। এত কাছে এমন পর্যবেক্ষণ করা হয়নি আগে। হলুদ কটি ফোটা দেয়া লেজ। ডানার দুপাশে একটা লাল ফুটকি আর চোখ জুড়ে টানা কাজলের রেখা যেন। হালকা ব্রাউন রঙের এই পাখির মাথায় ঝুটিও থাকে। প্রথম দর্শনে কালো চোখের বাহার দেখে মনে করেছিলাম প্যাঁচার বাচ্চা নাকি।
কিন্তু না তার নাম জানা নেই আমার। তবে ও প্যাঁচা না। আকৃতি বেশ বড়সর হলেও ভাবভঙ্গি দেখে বোঝা গেল ও আসলে একটা বাচ্চা। আমি খুব কাছে থেকে তাকে দেখছি অথচ সে নড়ছে না। তখন মনে পরল বিকালে একটা পাখি বিদ্যুতের তারে বসেছিল যেন একা। ক্ষণে ক্ষনে ডাকছিল কাউকে। মা পাখিটা বাচ্চা টাকে হারিয়ে ফেলেছে। বাচ্চাটা হয়তো উপরের বাসা থেকে পরে গেছে।
ওর ভাব গতিক ভালোলাগল না। এমন শান্ত নির্বিকার ভঙ্গির পাখি আমি আগে কখনো দেখিনি।
হাতটা কাছে নিয়ে যেতেই বিশাল লাল টুকটুকে একটা হ্যাঁ করল। তাতেই বোঝা গেল পাখিটা বাচ্চা পাখি নিঃসন্দেহে। এমন পাখি কি খায় কি তাকে খাওয়ানো যেতে পারে। জানি না।
সন্ধ্যা নামছে আর আমি যাচ্ছিলাম গ্রোসারি করতে। তাই তাকে ঘরে এনে রেখে গেলাম একটা ছোট বাক্সে ট্যিসু বিছিয়ে একটা চালুনি দিয়ে ডেকে। সারা ঘর ঘুরে ফিরে হাগু করে ভরিয়ে ফেলুক সেটা কাম্য নয়। আর রাতের বেলা তাকে এভাবে বাইরে রেখে দিলে সে নিশ্চিন্ত কারো পেটে চলে যাবে অন্য কারো খাদ্য হয়ে।
এভাবে আগেও অনেক পাখির ছানা হারিয়ে যেতে দেখেছি।
আগের দিন দেখলাম মা বাবা মিলে যত্ন করছে ভোর বেলা দেখি বাসা খালি । রাতের অন্ধকারে কার খাবার হয়েছে কে জানে। প্রকৃতির জীবন চক্র সবটা দেখা সম্ভব হয় না আমার। কিছুদিন আগে একটা গাছে দেখেছিলাম নীলচে সবুজ চারটি ডিম। পরের দিন গিয়ে দেখলাম পাখির নীড় খালি। যে মা পাখিটা আমাকে ডেকে ডেকে দূরে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল সেও মনের দুঃখে কোন দিকে উড়ে গেছে ডিম হারিয়ে। আমি শুধু ডিমের ছবি তুলে চলে এসেছিলাম। অপেক্ষায় ছিলাম ছানাগুলোর গজানো দেখার। আমারও মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল ডিমগুলো একরাতের মাঝে হারিয়ে যাওয়ায়।
তাই এই পাখিটাকে যত্ন করে ঘরে রাখলাম।
গুগুলে সার্চ করে জানলাম এই পাখির নাম ওয়াকসিং পাখি। ওর খাদ্য পোকা, ফল। রাতে ঘরে ফিরে ওকে ব্লুবেরি খাওয়াম। নিরবে সারারাত ঘুমিয়ে থাকল । আমি কয়েকবার চালুনির ঢাকনি খুলে দেখলাম তাকে, কী সুন্দর ঘুমাচ্ছে পাখি।
আমি ঘুমালাম অনেক রাতে তাই আমার উঠতে বেলা হলো। পাখি জেগে গেছে ভোর বেলা। সারারাতের নিরব পাখি বেশ চেষ্টা করছে এখন বাইরে যাওয়ার। চিঁঁ চিঁঁ শব্দ করে ডাকছে আর ডানা ছাপটাচ্ছে।
তাকে খেতে দিলাম আপেলের টুকরো আর ব্লুবেরি।
বেশ সুন্দর করে খেল। যেন আমার সাথে ওর কত ভাব। হাতে বসে থাকে চুপচাপ। আর খাবার দিলে যায়।
এভাবে সে শিখে গেল উড়া। ওকে রেখে দিলাম বাইরে। গার্ডেন টেবিলের উপর। সেখান থেকে আস্তে উড়ে সে চলে গেলো গাছের ডালে। এখন সে নিজেই বাঁচতে পারবে। মাঝে আমাকে দিয়ে গেল সুন্দর একটা অভিজ্ঞতা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ২:১১