আকাশটা গত সন্ধ্যায় ছিল হলুদ সোনালি রঙে ঢাকা। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়া সন্ধ্যালগ্নে। সেপ্টেম্বর শুরু হতে না হতেই একক সংখ্যায় নেমে গেছে রাতের উষ্ণতা। সন্ধ্যাবেলা বাগান থেকে সিজনের শেষ সবজিগুলো তুলছিলাম। আর দেখছিলাম স্টারলিং পাখি গুলোর ঢেউ তুলে উড়া আকাশ কাঁপিয়ে।
সারা সময় ধরে অনেক অনেক সবজি তোলার পরও এত সবজি গাছে এখনো পরিপক্ক হবার অপেক্ষা করছে আর ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে দেখলে মায়া হয় গাছগুলো যদি আরো একটু সময় পেত উষ্ণতার সব ফলগুলোকে বড় করে তোলার কিন্তু এবার যেন আগে আগে নেমে আসছে শীতল হাওয়া।
মাত্র সাড়ে নটা বাজে অথচ মনে হচ্ছে অনেক রাত। অথচ এই কদিন আগেও নটা বাজলেও সূর্য ডোবার খবর থাকত না। রাত দশটা পর্যন্ত থাকত সান্ধ্যকালীন মনমুগ্ধকর আলো।
সন্ধ্যা নাগাদ ডিনার শেষ কফির মগে চুমক দেওয়ার পরও শরীর যেন উষ্ণ হচ্ছিল না। মাঝে মাঝে আলসেমিও লাগে। শীত শীত ভাব এই আলসেমির মূল। পোর্টেবল হিটার চালিয়ে বিছানায় বসে একটা বই পড়ছিলাম। হঠাৎ লিভিংরুম থেকে ফায়ার এর্লাম বাজতে শুরু করল। সাথে ঝিলিক দেয়া আলো জ্বলছে অন্ধকার ঘর থেকে। আরামের অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে খুঁজে টুজে ফায়ারের কোন কারণ লক্ষন পেলাম না। কার্বন মনোক্সাইড মতন ঘ্রাণও নেই ঘরে। ঘর জুড়ে ছড়াচ্ছে বেসিল রোজমেরি আর ল্যাভেণ্ডার সুঘ্রাণ।
দরজা খুলে বাইরের সতেজ হাওয়া দিলাম ঘরে। হয়ত বা হিটারের শুষ্কতা কোন প্রভাব ফেলেছে।
বাইরে অন্ধকার আকাশ আর অনেক তারা ঝকঝক করছে । নক্ষত্রের আলোয় ম্লান হয়েছে অন্ধকার। দূরে কোন প্রাণী সরসর শব্দ জাগিয়ে হেঁটে গেলো।
আবারও ফিরে গেলাম বিছানায় বইয়ের পাতায়।
রাত এগারোটা বাজেনি অথচ ঘুমে চোখ জড়িয়ে যাচ্ছে। পড়তে পড়তে কয়েকবার ঘুমে ঢলে পরলাম। আবার জাগলাম আবার পড়ছি। শরীরের আরাম দেখে নিজেই অবাক হলাম। কখনো এই সময়ে বিছানার চৌকাঠ মাড়াইনা অথচ আজ ঠিক ঘুম জড়িয়ে ধরছে আমাকে। এক সময় তবু সাড়ে বারোটার দিকে ঘুময়েই পরলাম। আর ধরফর করে জেগে উঠলাম আবার এর্লামের শব্দে। মোবাই ফোনে এর্লাম বাজছে। একে একে বাড়ির সব গুলো মোবাইল ফোন শব্দ করে আতংক ধরানো শব্দে বাজতে লাগল। কি হলো আবার তবে মনে মনে যা ভেবেছিলাম মোবাইল হাতে নিয়ে তাই পেলাম। আবার একটা বাচ্চা চুরি গেছে।
গত দুবছর ধরে এই বাচ্চা চুরি যাওয়ার ঘটনায় ইমার্জেন্সি এর্লাম বাজছে মোবাইল ফোনে। দু হাজার উনিশে কদিন পর পর এর্লাম বাজছিল। মানুষরা রীতিমত বিরক্তও প্রকাশ করে ফেলত কেন এর্লাম বাজিয়ে জানানাে হচ্ছে মাঝ রাতে ঘুম ভাঙ্গানো হচ্ছে। অনেক মানুষ নিজের সুখটুকু নষ্ট হোক চায় না। কিন্তু যার কষ্ট সে জানে। পুলিশ সবার সাহায্য চায় একটা বাচআকে খুঁজে পাওয়ার। অনেক সময় কেউ না কেউ বলতে পারে কিছু খবর। যা পুলিশের কাজে লাগে।
বিশে দু এক বার বেজেছে এমন ইমাজেন্সি এর্লাম। এ বছর এই প্রথম।
এই বাচ্চা হারানোর ঘটনা সাধারনত পারিবারিক সমস্যা থেকে হয়। দুজন মানুষ ভালোবেসে সংসারে সম্পৃক্ত হয় একে অন্যের শরীর জড়িয়ে ভালোবাসে। এই ভালোবাসায় সন্তান হয় কিন্তু সেই কাছের মানুষটার সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয় আর অনেক মা বাবা বিশেষ করে বাবা হিংস্র হয়ে উঠে সন্তানকে কেন্দ্র করে। যদিও নিয়ম আছে সম্পর্ক মা বাবার মধ্যে ছিন্ন হলেও দুজনই সমান ভাবে সন্তানের সাথে দেখা সাক্ষাত করতে পারে। দায়িত্ব পালন করতে পারে। কিন্তু কোন কোন বাবা হয় সন্তানের দেখা শোনা একদমই করে না। আবার কোন বাবা, সন্তানকে মায়ের থেকে আলাদা করে কেবল নিজের কাছে রাখতে চায়। তখনই এই বাচ্চা চুরির ঘটনা গুলো ঘটে। দুজন মানুষ ভালোবাসা থেকে বেরিয়ে পরে রেষারেষির হিংস্র টানাপোড়েনে।
মাত্র দুবছরের বাচ্চা গ্রেস চুরি হয়েছে। একজন যুবকের সাথে বাচ্চাটাকে দেখ গেছে একটা শহরে শেষ বার। গতরাতে পুলিশ সবার কাছে জানাচ্ছিল এমন বাচ্চা সহ কাউকে দেখতে পেলে যেন পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
কয়েক বছর আগে পাঁচ বছরের মেয়েটিকে মায়ের থেকে নিয়ে যায় বাবা তার সাথে দেখা হওয়ার নির্ধারিত দিনে। মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় পেরিয়ে গেলে মা যোগাযোগ করে পুলিশের সাথে । পরে পুলিশ খুঁজে পায় মেয়েটিকে মেরে বাবা নিজেও মরেছে।
কি হতো মায়ের কাছে বাচ্চাটিকে থাকতে দিলে এভাবে তাকে না মেরে ফেলে।
মানুষের মন বড় কঠিন । কোন পশুকে বাচ্চা মেরে ফেলতে দেখা যায় না। মানুষের মন সত্যি বিচিত্র । কেমন ভাবে কখন মন পরিবর্তন হয় কার বোঝা মুশকিল। বাংলাদেশে কয়েকবার এমন খবর দেখলাম আত্মিয় স্বজনকে ফাঁসাতে নিজের সন্তানকে হত্যা করে ফেলেছে। বা সম্পত্তির জন্য সন্তান মেরে ফেলেছে আত্মিয় স্বজন। একটা বাচ্চা কেন যে মানুষের হিংস্রতার হাতিয়ার হয়।
আমার ঘরের এর্লামটা সারারাত আর বাজেনি। তবে এখন আবার বাজছে থেকে থেকে। মনে হয় ব্যাটারি বদলাতে হবে।
আশা করি গ্রেস নামের বাচ্চাটা ফিরে পাবে মা। ভালোবাসায় বড় করবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪৩