somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

থ্যাঙ্কসগিভিং লঙ উইকএ্যান্ড

১১ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নতুন ফসল তোলার পরে পারিবারিক ভাবে আনন্দ যোগাযোগ আহার সময় কাটানো যুগযুগ ধরে চলে আসছে। বর্তমান সময়ের ব্যস্ততা বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন এবং একক পরিবারের জীবনে থ্যাঙ্কসগিভিং সময়ে বাড়ি ফিরা মা বাবার সাথে কাটানোর একটা সুযোগ সবার। নবান্ন উৎসবের মতন এই উৎসবকে কেন্দ্র করে পরিবারের মিলন শুধু নয়। পাড়া প্রতিবেশি। গ্রাম গুলোও মেতে উঠে একত্রে আনন্দে।
গ্রামীন পর্যায়ে এখনও সেই পরিবেশ দেশের জীবনযাত্রার মতন। পহেলা বৈশাখের মতন মেলা আনন্দ হুল্লেরে মাতে গ্রামবাসী এক হয়ে। গত কয়েক বছর ধরে আমার সুযোগ হয়েছিল তেমন সবার সাথে আনন্দে মেতে উঠার।
যার মাঠে যে ফসল ফলছে সবাই কিছু নিয়ে আসে। সবার সাথে ভাগাভাগি করে দেয়।
এছাড়া গ্রাণ্ডমা. মা. মাসিদের রেসিপি অনুসরণ করে বানানো হয় কেক, পাই, ছোট ছোট বাইটের কত রকম পিঠাপুলি। নানা ধরনের খাদ্য সম্ভার লম্বা টেবিল জুড়ে সাজিয়ে রাখা হয়। পুড়ানো হয় ভুট্টা মাংস। বারবিকিউর মনমাতানো ঘ্রাণ খাওয়ার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। বড়রা বিয়ারের ক্যান বা ওয়াইনের গ্লাস হাতে হাসি আনন্দ থেকে সুখ দুঃখের গল্পে মাতেন। ছোটরা খেলা ধূলায় ছোটাছুটিতে ব্যাস্ত। অনেক দিন পর অনেকের সাথে দেখা শোনা। অনেকেই এখন গ্রামের সব মানুষ একে অপরকে চেনে না। বাইরে থাকার জন্য। গ্রামে নতুন মানুষ এসেছে অনেক পুরানো মানুষ এ জীবনের যাত্রা পথ থামিয়ে দিয়েছে। অনেকে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন বয়স্ক আবাসনে। তাদের বাড়িতে নতুন মানুষ এসেছে গ্রামে, যারা কিনেছে সেই প্রবীণদের বাড়ি। নতুন করে পরিচয় হয় একে অপরের সাথে। টিন এইজরা একটু আলাদা হয়ে যায় ছোট এবং বড়দের থেকে। কয়েক বছর এই গ্রামীন সংস্কৃতির অংশে যোগদান এবং দেখার আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ হয়েছে আমার।
মনে পরে যায় সেই ছোট বেলা দেখা লিটিল হাউস অন দ্যা প্রেইরি ছবিটা দেখে কি আনন্দ পেতাম। আগ্রহ নিয়ে দেখতাম অন্য সংস্কৃতির মানুষের জীবনযাত্রার গল্প।
হাসি আনন্দ সুখ দুঃখগুলো আমাদের মতনই তাদের জীবনে।
সেই জীবনযাত্রার ভিতরে ঢুকে যেতে পারব একদিন আমিও তাদের অংশ হবো এমনটা মনে হয়নি কখনো। অথচ জীবনের চলার বাঁকে বাঁকে কত বৈচিত্র দেখার থাকে।
তাদের সাথে একই রকম আনন্দে আমিও ফসল তোলার পর থ্যাঙ্কস গিভিংয়ের সময়ে, গাছের আপেলের পাই বা নিজের বাগানের কিছু ফল, সবজি তুলে নিয়ে যেতাম তাদের মাঝে।
গত বছর এই আনন্দ স্থগিত হলো করোনার জন্য। এ বছর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে যেতে থেমে গেলো আবার অনুষ্ঠান আনন্দ। একদম কমে যাওয়া করোনা পরিস্থিতি বেশ বেড়েছে । কিছু প্রভিন্স যেখানের মানুষ রক্ষণশীল তারা নিজের রোগ, মৃত্যু ডেকে আনছে, বিজ্ঞান এবং চিকিৎসকের কথা না শুনে।
যে দেশ ভ্যাকসিন নিয়ে বসে আছে, যে দেশের আশি ভাগ মানুষের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে অথচ বিশ ভাগ মানুষ ভ্যাকসিন নেয় নাই। এই ভ্যাকসিন না নেয়া মানুষ বেশির ভাগ বিজ্ঞান মানে না। এরা আদিম ভাবনার যুগে থাকে। মজার বিষয় এরা অধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিন্তু প্রযুক্তির যত রকম ভুল খবর গুলো ছড়ায়, এরা সে সব বেশি দেখে এবং বিশ্বাস করে। তারা ভ্যাকসিন বিরুদ্ধ মানুষ। বিশাল দেশটার বেশির ভাগ প্রভিন্স টেরিটরির মানুষ যখন ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক সুস্থ স্বাভাবিক মুক্ত জীবনে ফিরে যাচ্ছে, সে সময় মাঝ খানের দুটো প্রভিন্সের হাসপাতালের আইসিইউতে উপচে উঠছে অনেক করোনা রোগী।এক দেশের অন্য প্রভিন্সগুলোর দিকে চোখ মেলে, দেখে শুনেও তারা শিক্ষা নেয় না। তারা ভ্যাকসিন নিলে প্রতিক্রিয়ায় মরে যাবে এই ভয়ে ভ্যাকসিন এড়িয়ে চলে কিন্তু করোনাকে আহ্বান করে।
কাল দূরে বসে খবরে দেখছিলাম কি ভীষণ ভাবে ভাগাভাগি হয়ে গেছে মানুষের পরিবারের মাঝেও । পরিবারেও এখন সবাই এক সাথে আনন্দ উৎসব অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভয় পাচ্ছে। এক পরিবারের যারা ভ্যাকসিন নিয়েছে তারা এক সাথে বসে থ্যাঙ্কস গিভিং ডিনার করবে। স্বাভাবিক আনন্দ করবে। কিন্তু যারা ভ্যাকসিন নেয় নাই তাদেরকে পরিবারের মধ্যেও ডাকা হচ্ছে না।
একই অবস্থা তাদের হোটেল রেস্টুরেন্টে যাওয়ার মধ্যেও সীমাবদ্ধতা । ভ্যাকসিন নেয়ার কার্ড না থাকলেও তারা ঢুকতে পারবে না খাবার খেতে। করোনা যেন একদল মানুষকে ধীরে ধীরে এক ঘরে করে ফেলছে। চাকরির ক্ষেত্রে, ভ্রমণের ক্ষেত্রেও অনেক বাঁধা নিষেধের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ফসল তোলার পর এই নবান্ন উৎসবটা ধর্মের চেয়ে বেশি সামাজিক অনুষ্ঠান মনে হয় আমার কাছে। আমরাও পরিবারের সবাই মিলে ভোজন সারি উৎসবের ছুটি পেয়ে সবাই এক সাথে হই প্রতিবছর। নানা রকম খাদ্য সম্ভারে সাজাই টেবিল।
গতবার হলো না এবারও হলো না। বাড়িতে নাই আমি এবার । শরতের রঙিন মেহদি রাঙ্গা পাতাগুলো উঠানময় উড়ছে আপন মনে। তার উপর হেঁটে যাচ্ছে দল বেঁধে তিতির। প্রতিবারের দেখা চেনা দৃশ্য ভাসছে চোখের সামনে। সাথে বাগানের শেষ ফসলগুলোর কথাও ভাবছি। বেরিয়ে পরার আগে যাদের তুলতে পারিনি। আপন মনে তারা গাছে সঠিক আকৃতি পেয়েছে নিশ্চয়ই এতদিনে। বলে এসেছিলাম প্রতিবেশিকে তুলে নিতে। তারা হয় তো দেখা শোনা করবে ততদিন বাড়ি আমি ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত।
সবার থ্যাঙ্কস গিভিং আনন্দময় হোক।


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:৪৫
১১টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×