somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

নিউপল্টনের পথে নষ্টালজিক স্মৃতি

২৬ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন পর নিউপল্টনে গেলাম কয়েকদিন আগে। এক সময় নিউপল্টনে অনেক বেশি যাওয়া হতো। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। হলে থাকতাম। মঝে মাঝে ছুটির দিনে আমার বান্ধবীর বাড়ি যেতাম। সারাদিন কাটিয়ে আসতাম ওর সাথে।
আমার স্কুলের বান্ধবীদের অনেকের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল স্কুল পাশের পরে। কারো কলেজের দুই ক্লাস শেষ হতেই। আমরা গুটি কয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন পেয়েছিলাম।
বলছিলাম নিউ পল্টনে বান্ধবীর বাড়ি যাওয়ার কথা। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছটফটে আনন্দময় জীবন। নো চিন্তা ডু ফূর্তি সময়ে আমার বান্ধবী পুরোদস্তুর সংসারি। নিজেকে সামলে ছোট একটা বাচ্চা সামলাচ্ছে । ওর ছোট একটা বাচ্চা আছে তখন। বাড়িতে শ্বশুড় শাশুড়ি আর ওরা আড়ইজন। এছাড়া আত্মিয় স্বজন সবার সাথে খুব হৃদ্যতা ভালোবাসা। সুন্দর করে সব সামলে চলছে সে। নিউপল্টনে বনেদি পুরানো বাড়ি ওদের। ওর শ্বশুড় বাড়ির লোকজন অনেকদিন যাবত ওই বাড়িতে থাকতেন। ও পুরাই গিন্নি তখন। প্রতিদিন নতুন কিছু রান্না শেখা তা পরিবেশন করা, যত্ন আত্মি তদারকি এসব নিয়ে বেশ ব্যস্ত। আমি যখনই যেতাম সারা দুপুর থেকে খেয়ে দেয়ে বিকালে হলে ফিরতাম। তুলে তুলে ঠিকঠাক মতন খাওয়াত। হলে কি খাই না খাই তাই আলাদা মনোযোগ দিত। সবচেয়ে মজা ছিল ও অনেকটা যেন আমার গার্জিয়ান হয়ে উঠত। আমাকে প্রায় হলে পৌঁছে দিতে চাইত, সাবধানতা অবলম্বন করে। অথচ আমরা একই বয়সি।
তবে সব চেয়ে বেশি ভালোলাগত যতই গিন্নী হোক ও আগের মতনই প্রাণখোলা হাসি আর মজার মজার জোকস বলে হাসাত খুব। গল্পের ঝাঁপি খুলে বসলে ওর কথা আর থামত না। আর সে সব কথা সংসার কেন্দ্রিক ছিল না। বাচ্চা স্বভাবটা ওর মধ্যে বেশ ছিল। সেই স্কুল, কলেজ জীবনের আড্ডা জমত। সুখি আনন্দময় জীবনে আছে তাই প্রাণখোলা হাসি আগের মতনই ছিল ।
ওর সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল ক্লাস নাইনে। হঠাৎ গোলগাল ফুটফুটে সুন্দর নতুন একটা মেয়ে ক্লাসে দেখলাম। তারপর কিভাবে যেন আমরা প্রাণের বন্ধু হয়ে গেলাম।
একই পাড়ায় আমাদের বাসা। ছুটির দিনে একে ওপরের বাসায় যেতাম আড্ডা দিতাম। জেনেছিলাম ও ওর চাচার বাসায় থাকে। ওর মা নেই। মাঝে মাঝে বাবার কাছে গিয়ে থাকত।
একদিন নিউপল্টনে ওর বাসায় গিয়ে হাতের কাছে একটা বই পেলাম। ও যখন রান্নায় ব্যস্ত আমাকে খাওয়াবে বলে, তখন এক বসায় আমি সব গুলো কবিতা পড়ে তার প্রেমে পরে গেলাম। সৈয়দ শামসুল হকের লেখা অন্য ধরনের কবিতার বই। বইটার নাম পরাণের গহীন ভিতর। ওর সাথে আলোচনা করলাম কবিতাগুলো দারুণ। আমাকে এই বই একটা কিনতে হবে।
বিকালে নিউমার্কেটে গেলাম আমরা। নিউমার্কেটে সেই সময় অনেকগুলো বইয়ের দোকান ছিল আড্ডা ছিল লেখকদের। লাইব্রেরীর সব গুলো দোকানে ঢুকে জিজ্ঞেস করছে, পরাণের গহীন ভিতর আছে? খুঁজে কোথাও একটা পরাণের গহীন ভিতরে পাওয়া গেল না। আমি বললাম, বাদদে আমি পরে কিনে নিব। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা শেষ দোকানে পাওয়া গেল একটা বই। সেটা কিনে লিখে আমাকে দিয়ে তবেই ওর শান্তি হলো।
ওর ননদ ছিলেন আমেরিকায়। উনি ওদের স্পন্সর করে ছিলেন। খুশি ছিল ও ছেলে মেয়ে নিয়ে আমেরিকা চলে যাবে। বাচ্চাদের বিদেশে পড়ালেখার সুযোগ পাওয়ার জন্য ও বেশি খুশি ছিল। নতুন জায়গায় গিয়ে কিছু একটা করে জীবনটাকে কি ভাবে গোছাবে পরিকল্পনার গল্পগুলো করেছিল। জাতিয় ক্রিকেটার, ক্রিকেট কোচ থেকে সাংবাদিক জগতের সাথে জড়িত ওর স্বনামধন্য স্বামী কয়েক দিনেই হাঁফিয়ে উঠলেন, আমেরিকার জীবনে মাঠের ছেলেদের রেখে তাঁর ভালো লাগে না। ছেলেকে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়ে চলে এলেন, স্বামী স্ত্রী, মেয়ে কে নিয়ে দেশে।
তখন আমি দেশেই জীবন যাপন করতাম। ফিরে আসার পর এক দুবার ওর সাথে দেখা হয়ে ছিল। ছেলের জন্য মন খারাপ করত। তারপর কেমন করে যেন আমি চলে গেলাম বিদেশের জীবনে। অনেকদিন যোগাযোগ রইল না। কয়েক বছর আগে শুনলাম রোজার সেহরী খাওয়ার পর হঠাৎ করে বুকে ব্যাথা বলতে বলতেই এ জীবনের সব খেলা সমাধান করে ফেলে। খুব মন খারাপ ছিল। ফিরে এসে দেখা করার সুযোগটা দিল না। হারিয়ে গেল চিরতরে।
আর এবার এসে শুনি ওর স্বামীটিও গত মাসে চলে গেছেন তার কাছে অবশেষে, অনেকদিন একাকী জীবন কাটিয়ে।
নিউ পল্টনে যাওয়ার আর কেউ রইল না। আন্তরিকতায় যে হাসতে হাসতে কত কত গল্প করবে।

আরো একজনের বাসায় যেতাম নিউপল্টনে। তিনি ছিলেন হুমায়ুন আজাদ। উনার কাছে যেতে হতো খুব প্রয়োজনীয় কিছু কাজে। একটা সময় স্যার কিছু বিষয়ে আমাকে অনেক সাহায্য করে ছিলেন। সন্ধ্যা সকালে উনার বই ভর্তি ড্রয়িং রুমে যেতাম কিছু পরামর্শ কিছু কাগজ পত্রের সাইন নেয়ার জন্যে। জরুরী কথা বলার জন্য। উনি আন্তরিকতায় কাজ করে দিতেন। কাজের বেলায় উনি সব সময় আন্তরিক ছিলেন।
অনেকদিন পর সেই পথে গিয়ে মনে পরে গেল অনেক কথা।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:২৮
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×