somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রাতের রঙ সূর্যের নাচন

২৭ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




গত পরশু রাতে অরোরা দেখার জন্য রাত দেঢ়টায় বাসা থেকে বেরিয়ে আরো উত্তরে গিয়ে অন্ধকার মাঠে দেঢ় ঘন্টা মতন কাটালাম।
সৌর জগতে ঝড় উঠেছে আর সেই ঝরের তাণ্ডবে আলোর ঝলকানী রঙিন আলো নেমে আসছে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের অনেকটা জুড়ে।
এতটা দক্ষিণে সাধারনত নামে না। কিন্তু এবার নেমে এসেছে। আগের রাতে সৌভাগ্যবান অনেকেই দেখেছেন আমার পাশের মানুষ। ভয়ানক সুন্দর এই আলোর খেলা আকাশে। অথচ আমি সারারাত জেগে থেকেও বসেছিলাম আলোর মাঝে। দুতিন দিন আগের আবহাওয়া বার্তা থাকলেও মনে হলো দূর এত কাছে কখনোই দেখা যায় না। তাই পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজ করছিলাম রাত ব্যাপী আলো জ্বালিয়ে। অথচ সেদিন এত সুন্দর ছিল তার আগমন হয়তো বা বাইরে চোখ রাখলেই দেখতে পেতাম। অথচ আবহাওয়াবার্তায় ঠিক মতন মনোযোগ না দেয়ায়, কাছে পাওয়া সৌন্দর্যকে হারালাম অজানায়।
কি আর করা নিজের বোকামীকে এখন নিজেই বকা দিচ্ছি।
একটু যদি মনোযোগ দিতাম। পরশ পাথর হাতে পেয়েও খ্যাপা যেমন ফেলে দিয়েছিল আমার হলো তেমন অবস্থা। অথচ তাকে দেখার আশায় কত জায়গায় যাওয়ার কথা ভাবি। সে আমার বাড়ির উপর নাচল আর আমি আলো জ্বালিয়ে ঘরে বসে থাকলাম এই দুঃখ কোথায় রাখি। সন্ধ্যাবেলাও আকাশটা ছিল কি অদ্ভুত ছবি তুলেছিলাম।



আরো তিন দিন দেখা যেতে পারে তাই গতরাতে আকাশে মুখ রেখে বসে থাকলাম বাইরে।
মাথার উপর আকাশে তারা দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু চারপাশে গোলাকার দিগন্ত ব্যাপী মেঘের ঘনঘটা। রঙিন আলোর কোন ভাব লক্ষন দেখতে পেলাম না। হয়তো প্রথম ঝড়ের যে তীব্রতা থাকে তা কেটে গেছে।
রাত সাড়ে তিনটায় যখন বাড়ি ফিরে ঘুমালাম বাইরে সুন্দর একটা রাত ছিল। অথচ সকালে উঠে দেখি কি ভয়াবহ কাণ্ড। কখন এত বরফ পরল আর সেই বরফ কঠিন বরফ শীলায় পরিবর্তন হয়ে, গাছে গাছে জড়িয়ে আছে। কিন্তু আমি ঘুম থেকে জেগে উঠতে উঠতে সেই কঠিন শীলা আবার প্রচণ্ড বৃষ্টি, বাতাস আর অল্প উত্তাপে গলে ঝরে পরছে, শীলা বৃষ্টির মতন শব্দ করে। দরজা জানলা, দেয়ালে যখন পরছে বরফগুলো ঝনঝনাঝন অদ্ভুত এক মিউজিকাল ড্রাম বাজছে মনে হয়। তার মাঝে বাতাসের হুম হুম শব্দ ঘুরে ঘুরে যাচ্ছে এক দিক থেকে অন্য দিকে দারুণ কনসার্ট হচ্ছে বাইরে প্রকৃতির মাঝে। গাছ থেকে ডালগুলো ভেঙ্গে ছূঁড়ে দিচ্ছে মাটিতে।
সারাদিন সারারাত ধরে কি মহাব্যাস্ততা বাতাস, বৃষ্টি মেঘের। গোমড়া আকাশ, থকথকে কাদা বৃষ্টির সাথে মনটাও কেমন থমকে থাকল কাল সারা দিন।
যে পাখি গুলোকে দেখেছিলাম বেশ আনন্দ করছিল পরশু কাল তাদের পুচ্ছটিও দেখতে পেলাম না সারাদিন। কোথায় নিজেদের লুকিয়ে রেখেছে পাতাহীন গাছের মধ্যে । কেমনে যে তারা সার্ভাইব করে এত সব দূযোর্গে, নিজেদের ছোট্ট মস্তিকের বুদ্ধি দিয়ে, ভাবনাটা ভাবলে অবাক হই। তারা কারো কোন সাহায্য চায় না। অভিযোগ করে না। নিজেদের শক্তি সামর্থে বাঁচে।
আর আমরা মানুষ, বুদ্ধির জাহাজ হয়ে খালি অভিযোগ করি। কত কিছুর জন্য অভিযোগ আমাদের। অন্যের উপর দোষ চাপানো কখনো শেষ হয় না।
তুমুল বাতাসের শব্দ শুনে একটা কবিতা মনে পরছিল, উড়ানির চড় উড়ে যেতে চায় হাওয়ার টানে। এখানে বাতাস যখন প্রচণ্ডবেগে বাড়ি ঘর ঘিরে উড়ে, মনে হয় কে যেন ভীষণ কান্না করছে। কান্নার শব্দটা বড় মনে লাগে।
এই শব্দ শুনতে শুনতে গত রাতে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিলাম আধুনিক প্রযুক্তির চ্যাট জিপিটির সাথে কথা বলে।
যা ভাবতে জোগাড় করতে আমাদের দিনের পর দিন চলে যায় অথচ আমাদের মানুষের বুদ্ধি দিয়ে বানান এই মেশিন মাত্র পয়ত্রিশ সেকেন্ড সব তথ্য সামনে এনে দিচ্ছে।
যা জিজ্ঞেস করি তার জাবাই দেয়। কিছু মনপুত না হলে বলি তুমি ঠিক বলনি তখন আবার সরিও বলে। এত সম্ব্রমে কোন মানুষও কথা বলে না।
প্রযুক্তি ভালো কিন্তু এই প্রযুক্তির আনন্দ আমাদের মানুষের জন্য কোন দূর্ভোগ না ডেকে আনে তাও ভাবছি। অনেক কিছুতেই কাজ করার জন্য আর মানুষের প্রয়োজন হবে না। মানুষ এখন কাজ কোথায় পাবে। সবাই তো বুদ্ধিভিত্তিক কাজ করতে পারবে না। শ্রমিকদের কাজগুলো করার মেশিন সেতো অনেকদিন থেকেই আবিস্কার হয়ে গেছে। আরো হচ্ছে। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের কাজগুলো অনেকদিন ধরেই মেশিন করে দিচ্ছে। এখন যদি প্রফেশসাল কাজ গুলো করতেও মানুষের করার দরকার না হয় তাহলে কি হবে মানুষের জীবিকা।
কত লোক অনলাইন ভিত্তিক কাজে টাকা কামাই করবে। সব কাজ যদি যন্ত্র করে মানুষ কি করবে।
একটা সময় রাস্তা হারালে মানুষকে জিজ্ঞেস করতাম। এখন সেটা করলে বলবে তোমার ফোন নাই? ফোনে দেখো।
কোন অফিসে ফোন করলে আগে মানুষ কথা বলত এখন মেশিন কথা বলে, মানুষের চেয়ে ভালো ভাবে সব তথ্য দেয়। যারা এখনও অভ্যস্ত নয় তারা হয় তো বিরক্ত হয় কিন্তু এক সময় অভ্যস্থ হয়ে উঠে, এই সিস্টেম ভালোবাসতে শুরু করবে।
বিদেশে একটা জিনিসের অভাব মানুষের সাথে কথা বলার। এখন সেটা আরো কমে যাচ্ছে। মেশিন যদি সব কথা বলে দেয়। তবে মানুষকে কি দরকার। অবশ্য দেশেও যে খুব কথা বলার সময় আছে মানুষের এখন তা নয়। সবাই মোবাইলে চোখ দিয়ে থাকে বেশির ভাগ সময়।
ইতমধ্যে আরো নতুন খবর দেখলাম, দূরে থাকা দম্পতি দেখে কথা বলার সাথে একটি ঠোঁটের মতন ডিভাইস ইউজ করে স্পর্শের সাধ পাবে। মাত্র এক মাসের মধ্যে উদ্ভাবিত এই যন্ত্রের বিক্রি অনেক। অনেক আগে পড়া একটা বইয়ের গল্প ছিল এক সময় মানুষকে রান্না খাওয়ার জন্য সময় ব্যয় করতে হবে না। ছোট একটা ওষুধের গুলি খেয়ে নিলেই ক্ষুধা মিটে যাবে। শরীরও যথাযথ পুস্টি পেয়ে যাবে। তেমন দিনের দিকেই কি আমরা চলেছি।
প্রযুক্তির সাথে কথা বলতে বলতে আবার বাইরে দেখলাম, আজকে রাতের কি অবস্থা।
উত্তরের আকাশে মনে হলো একটা আলোর রেখা লম্বা হয়ে আছে যা মেঘ নয়। তবে কি অরোরার আলো এলো আমাকে দেখা দিতে। গাছগাছালির আড়াল থেকে ভালো দেখতে পাচ্ছিলাম না। বাইরে যেতে দরজা খুলে দেখলাম উপায় নাই। প্রবল বাতাস। তবে অন্ধকার আকাশে অদ্ভুত একটা আলো এখন চারপাশে জোছনার মতন। যেটা গতকালও আমি দেখেছিলাম। তৃতীয়া বা চতুর্থ দিনের চাঁদ তো সন্ধ্যা রাতেই ডুবে গেছে তবে এমন আলো কেন চারপাশে মাঝরাতে, যেখানে কোন আলো নেই বিদ্যুতের। অন্ধকার রাতে চোখ সয়ে যাওয়া আলো আমার চেনা আছে কিন্তু এই আলো ছিল অন্যরকম, অনেক বেশি জোছনার মতন ঝকঝকে। দোতালায় গিয়ে বাইনোকুলার লাগিয়ে উত্তরের আকাশের আলোটাকে কাছে এনে অনেকক্ষণ পরখ করলাম। এক সময় ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে লাগল আধঘন্টা পরে। বাইরে যেতে পারলাম না ঝড় হাওয়ার জন্য এজন্য মন খারাপ হলো। আবারো অপেক্ষা থাকল একদিন ভালো করে আলোর নাচন দেখার।
দুদিন ধরে অনেকের অরোরা দেখার ছবি দিতে দেখছি আর মনে হচ্ছে আহা এই সৌন্দর্য আমি কেন দেখার সুযোগ পাচ্ছি না। আমি চেষ্টা করলাম একটা ছবি তুলতে, ঘরের ভিতর থেকে আর দূর থেকে তেমন ভালো কিছু হলো না। অন্ধকারে ছবি তোলার টেকনিকও তেমন জানা নেই আমার।
রঙের সন্ধ্যার ছবিটা সেদিন সন্ধ্যায় আমার তোলা। প্রথম ছবি এখানকার পত্রিকা সংবাদিকের তোলা। অন্যটা এসময়ের অরোরার ছবি অন্য শহরে তোলা । প্রথম দুটো ছবি বৃহস্পতিবার তেইস মার্চের রাতের ছবি। এমন সৌন্দর্য যখন বাইরে তখন তাকে না দেখে কি ঘরে থাকা যায়, বারে বারে তাই ছুটে ছুটে যাই অন্ধকারে আলোর নাচন দেখতে।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ৭:৪৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×