somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

একদিন মাঝরাতে

০৯ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝরাতে গাড়িতে তেল ফুরিয়ে যাচ্ছে অথচ পথ তখনও অনেক দূর। প্রায় একশ ত্রিশ কিলোমিটার যেতে হবে। এর মাঝে পাঁচিশ কিলোমিটারের মতন পার হয়েছি। তারমধ্যে গাড়ির লাল সিগ্যান্যাল দেয়া শুরু করল। তার মানে বেশি হলে পঞ্চাশ কিলোমিটার যেতে পারব। হঠাৎ মনটা শঙ্কিত হয়ে উঠল। আমার কাছে মনে হয় কোন টাকা নাই। এসে ছিলাম বইমেলায়। আনন্দের মাঝে গাড়ির দিকে নজরই দেইনি আগে কতটা গ্যাস আছে হিসাব করা হয়নি।
চলতে চলতেই ব্যাগ খুঁজে দেখলাম ক্যাশ নেই, কার্ডও নেই। কারন বইমেলায় সব খরচ করা হয়ে গেছে ক্যাশ আর ব্যাগ বদলের জন্য কার্ড নেয়া হয়নি। এখন কি করা যায়! দূরের পথের শেষে বাড়ির কাছের গ্যাস স্টেশনটি বন্ধ হয়ে গেছে তখন। বাড়ি ফিরে কার্ড নিয়ে গ্যাস নেয়া যায় সেখান থেকে। কিন্তু ততদূর যাওয়া যাবে কিনা সেটা প্রশ্নবোধক হয়ে আছে মনে। বাড়ি পৌঁছে গেলে রাতে আর সকালে নেয়ায় তফাত হবে না। কথা হলো পৌঁছানো যাবে কিনা অতটা পথ।শেষ রসদ দিয়ে। গাড়ি যখন তেল নেয়ার সিগ্যানাল শো করে তখন কিছুটা তেল থাকে কিন্তু আমার যাত্রা পথ শেষ হবে না।
প্রচণ্ড তাতানো গরম অথচ কিছুটা গ্যাস বাঁচানোর জন্য এসি ছাড়া চলতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারপরও আশংকা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত যদি না পৌঁছাতে পারি। পথে আটকে গেলে কি হবে, যেমন প্রায় থাকে রাস্তায়, দূর্ঘটনা, রাস্তার কাজ আর জ্যামে আটকে থাকা। তেমন না হলে হয় তো উড়াল দিয়ে একটানা পৌঁছে যাওয়া যাবে।
আর কোন উপায় না থাকলে ডাকতে হবে রোড সাইড এ্যাসিসটেন্ট কিন্তু তার জন্য কতটা সময় অপেক্ষায় কাটাতে হবে।
ভাবনার হিসাব নিকাশ মনের খাতায় মাইল আর গ্যাসের অংক কষে, যোগ ফল মিলাতে মিলাতে কিছুটা গতি বাড়িয়ে ব্রেক না চেপে চলার চেষ্টা করছি। প্রতিবার ব্রেক মারা মানে বাড়তি গ্যাস খরচ তবু মাঝে মাঝেই থেমে যেতে হচ্ছে কিছু অর্বাচীন চালকের অদ্ভুত ভাবে এক্সেপ্রেস পথ আটকে চলার জন্য। হাইওয়েতে ব্রেক না করে গাড়ি চালানোর পরীক্ষা পাশ করতে হয় অথচ তারা চলছে থেমে থেমে , অকারণ ব্রেক মেরে।
চারপাশে যখন অনেক গাড়ি তখন আমি আবার জানলা খোলা রাখতে পারি না। হাওয়ায় চুল উড়ে মুখে পরতে থাকলে অসুবিধা হয়। হুড খোলা গাড়িতে কি ভাবে যে মানুষ চলে, ফ্যাশন করে গায়ে ধূলাবালি আর বাতাস মেখে।
ভাবনার গতি কত পথে বিস্তৃত হয় হাইব্রিড গাড়িটাকে না রাখার আফসোসটাও পেয়ে বসছে সুযোগ পেয়ে। গ্যাস নিয়ে ভাবার দরকার ছিল না জ্যামে বসে। তেল বিহীন অপেক্ষা কি অসাধারন ছিল। কত তলানীতে ঠেকানো তেলের ট্যাঙ্ক নিয়ে পেরিয়েছি কত পথ নির্দ্বিধায়। জ্যামে বসে থাকলে কোন গ্যাস পুড়েনা, ব্যাটারিতে সার্ভাইব করে।
" আমার যা ছিল তা গেল ঘুচে যা নেই তার ঝোঁকে–" যা আছে তা প্রচণ্ড গরম। ব্যাস্ত রাস্তা আর তলানীতে ঠেকা তেল নিয়ে পথ চলা আনন্দ উৎকন্ঠা।
হ্যাঁ.. উৎকন্ঠার মধ্যে আনন্দ থাকে। ভাবছিলাম পেট্রোল পাম্প কি ডোনেট করবে পাঁচ, দশ ডলারের তেল হয় তো পরে ফিরিয়ে দেব। এমন ধার নেয়ার সুযোগ আছে কি না!
আর অতি ভাবনায় নিমজ্জিত আমি পেরিয়ে যেতে থাকলাম হাইওয়ে টেনের এক্সিট । এক্সপ্রেস লেফট থেকে চারটা লেইন পেরুতে পারলাম না কিছু স্লথের জন্য সেকেন্ডের জন্য পেরিয়ে গেলাম এক্সিট লেইন। আহা আমার কাঙ্খিত পথ যায় এক দিকে, আমি যাই অন্য দিকে এমনই হবে আমার যখন প্রতি বিন্দু গ্যাস বাঁচানোর চিন্তা মাথায়। পথ আবার আসবে ঘুরে তবে যেতে হবে অনেকটা দূর। সেটা এই রাতে করা যাবে না। ভেবে পরবর্তি এক্সিট নিয়ে বেরিয়ে এলাম। আবার নর্থে যাওয়ার রাস্তাটা খানিক পরেই সামনে এলো। আর ঠিক তখনই মনে হলো যা হয় ভালোর জন্যই তো হয়। ভুল হলেও এই কাজটাই করা দরকার ছিল এতক্ষণ মাথায় আসেনি কেন?
দুই কিলো মিটারের মধ্যে ছেলের বাড়ি তাকে বলি গ্যাস ভরে দিক । তবে কথা হলো, সে এখন আছে কিনা।
দণ্ডনিও অপরাধটি ঝুঁকি নিয়ে করে ফেললাম গাড়ি চালাতে চালাতে ফোন দিলাম। আহা সোনায় সোহাগা মূহুর্তে কথা হয়ে গেল। ছেলে বলল আমি পাঁচ মিনিট পরে নিচে নেমে অপেক্ষা করছি. তুমি আসো। সাত মিনিটেই পৌঁছানোর কথা ওর বাড়ির দরজায়। অথচ আমি লাগিয়ে দিলাম বারো তের মিনিট অন্ধকারে বাড়ি ছেড়ে দূরে চলে গেলাম তারপর মনে হলো বাড়ি থেকে অন্য দিকে চলে যাচ্ছি আবার ঘুরে আসলাম। ও একটা ঝাড়ি দিল এতক্ষন লাগালে। আসছি যে শেষ পর্যন্ত সেটাই ভালো। নয় তো সারা রাত মায়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে। দুজনে মিলে গেলাম গ্যাস স্টেশনে। পুরো ট্যাঙ্ক ফিল করে দিল। আরো পাঁচ ছয়বার আসা যাওয়া করতে পারব শহরে।
গ্যাস নিয়ে ওকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে আবার রওনা হবো। এই এলাকাটায় প্রায় হারিয়ে যাই, তেমন হাতের তালুর রেখার মতন রাস্তাগুলো মুখস্ত নয় বলে। বললাম পথটা বলে দাও। ডান বাম সোজাটা মাথায় এঁকে নেই হাইওয়েতে উঠার পথটা।
জিপিএস দেখো না! আধুনিক মানুষের আধুনিক কথা। জিপিএস দেখে দুবার চক্কর খেয়েছি আসার সময়। চেনাচেনা বলে বের করতে পেরেছি বাড়িটা। সেটা না বলে বললাম, তবু বলে দাও। এই মেশিন ঠিকঠাক মতন কাজ করে না আমার জন্য।
তবু ধারন করে নেই মেশিনে পথটা,এই না ভেবে ফোনটা তুলতে গেলাম অথচ হাত ফসকে চলে গেল সিটের নিচে। বাহ দারুণ! এরপর একটা হালকা সবুজ রঙ ধারন করে বসে থাকল স্ক্রিন। আর কোন সাড়া শব্দ নেই। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবও দেখে শুনে বললেন, গেছে এবার এটা ফেলে দিতে হবে তোমার।
ঠিক আছে ঐ আমার মান্ধাতার আমলের রাস্তা মনে রেখেই চলতে হবে। হাইওয়েতে উঠে গেলে আর সমস্যা নেই। শুধু তার আগের পথটুকু পেরুনো একটু ঝামেলা। না পেলে দু চারবার ঘুরতে হবে তবে শেষে পেয়ে যাব ঠিকই এই কনফিডেন্স আছে আমার, আর এখন তো ফুল ট্যাঙ্ক গ্যাস। ডান বাম বুঝে নিয়ে রওনা দিলাম আমি আর সে মন খারাপ করল, এত রাতে ফোনবিহীন আমার চলায়।
মাথায় এঁকে নেয়া রাস্তা সারা সময়ের সঙ্গী কখনো ভুল পথে নেয় না আর কখনো মেশিনের উপরও নির্ভর করতে হয় না। বেশ চলে এলাম মাথায় গাঁথা রাইট লেফট হিসাব করে হাইওয়ের উপর। এবার আর কোন ভাবনা নেই।
ঘন্টাখানেক পথ চলছি হাওয়ায় হাওয়ায় তারার আলোয়। শহুরে গেঞ্জাম থেকে বেরিয়ে যেতেই আঁধারঘেরা তারার আকাশ সাথে চলছি। ফাঁকা রাস্তার উপর উঠে মোবাইল খানা হাতে নিয়ে পুরানো দিনের রেডিওতে যেমন চড় থাপ্পর দিয়ে চালানো হতো তেমন করে ঝাঁকুনি মারলাম। ওমা কি আনন্দ তিনি দেখি সবুজ রঙয়ের খোলস ভেঙ্গে বেরিয়ে এসে হাসছেন। এক্কেবারে ঠিকঠাক। কি অসুখ করে ছিল মোবাইলটার কে জানে, ডাক্তারখানায় নেয়ার আগেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন নিজে নিজে। সব ভালো তার শেষ ভালো যার। ছেলেকে জানিয়ে দিলাম তিনি ভালো হয়ে গেছেন। আমিও চলছি ঠিক ভাবে আর খানিক পরই বাড়ি পৌঁছে যাব। জোনাকি ও তারারা আলো জ্বেলে অপেক্ষায় আছে আমার জন্য তখনও।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:১১
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিকার !

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:১২



একটা শিকার-
শিকার করবো বলে মনে মনে পুষলেও শেষ পর্যন্ত করিনি স্বীকার!
যে লোহার আকশি দিয়ে শিকার গাঁথবো ভেবেছিলাম
প্রান্তরে নেমে দেখি আকশিরও মুখ ভোতা!
সে নাকি নিজেই কবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি'র লাখ লাখ কর্মী অপেক্ষা করছে, সর্দারের ১ম নতুন ডাকাতীর খবরের জন্য।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩১



আওয়ামী লীগের সময়, যারা ১৭ বছর ডাকাতী করে যা জমায়েছিলো, বিএনপি'র কয়েক লাখ লোজজন তাদের থেকে একটা বড় অংশ ছিনিয়ে নিয়েছে; সেই প্রসেস এখনো চলছে। তবে, বস... ...বাকিটুকু পড়ুন

=জোর যার, ক্ষমতা তার=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৪



কনুইয়ের গুতাতে কার, জায়গাটা দখলে
কে সে, জানো তো সকলে!
ক্ষমতার লড়াইয়ে, বল চাই-
দেহে বাপু জোর চাই
জোর যার, ক্ষমতা তার,
রাজনীতির ছল চাই।

ক্ষমতাটা নিতে চাও, জোর চাই
দেহ মাঝে বল চাই,
ধাক্কায় নির্বল, ফেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি

লিখেছেন মুনতাসির, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

অনেকেই বলেন, ৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি। এই কথাটার সূত্র ধরেই এগোনো যায়। ৫ আগস্টের পর আমাদের কোন কোন পরিবর্তন এসেছে, সেটাই আগে দেখা দরকার। হিসাব করে দেখলাম, বলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×