somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

সানসাইন স্টেটে প্রথম দিন

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মায়ামি যাই। যাই ঘুরে আসি উষ্ণতায় লবন জলে স্নান করি।
যাই ঘুরে আসি লবণ পানিতে খেলে আসি। কিছু উষ্ণতা মেখে আসি।
আজকালকার প্লেনগুলো এত হাড়ক কিপটে হয়েছে। তিন ঘন্টার ফ্লাইটে কিছুই দেয় না খেতে । আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে পাঁচ ঘন্টার দূরত্ব কম হলে কিছুই খেতে দেয় না। আমরা অবশ্য ডিনার সেরে ফেলেছি এয়ারপোর্টে।
আপন মনে একটু ঘুমিয়ে নিবো ভাবলাম কিন্তু তারা ট্রলি ঠেলে, ফেরি করে যাচ্ছে খাবার। ঘুম লেগে আসলে, তাদের ফেরি করার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে বারবার। আরাম করে ঘুমোতে পারছি না আবার খেতেও দিল না কিছু।
এক ঘন্টা পরে পৌঁছাব যেহেতু প্লেন এক ঘন্টা পরে উড়েছে। রাতের ঘুমের সময় কমে গেল তাই ভেবেছিলাম ভালো করে বেশ ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিব যাত্রার সময়টা। কিন্তু সেটা ভালো করে হলো না তারপর যখন একটু ঘুমিয়েই পড়লাম তখন ডেকে ছোট একটা গ্লাস জুস ধরিয়ে দিল, যাক তারা মেহমানদাড়ি একটুখানি হলেও করল।
অবশেষে মাঝরাতে যখন তারিখ বদলে গেল তখন পৌঁছলাম অন্য দেশে, ঘুরে বেড়ানোর গন্তব্যে পৌঁছলাম। রেন্ট এ কার থেকে গাড়ি নিয়ে হোটেলে যেতে ঘন্টা দেড় এক সময় লেগে যাবে।
তার মধ্যে দেখলাম যে একটা ভুল হয়ে গেছে। রেন্ট এ কারের গাড়ি এয়ারপোর্টের নয়, এয়ারপোর্ট থেকে একটু দূরে যেতে হবে অথচ আমরা ভুল করে এয়ারপোর্টের ভাড়া গাড়ি এরিয়াতে চলে এসেছি, অনেকটা দূর পথ হেঁটে সাটল ট্রেন ধরে।
এই জায়গা খোঁজার জন্য যখন আমরা এদিক ওদিক দেখছিলাম সারা এয়ারপোর্ট ছিল নির্জন। একজন মাত্র লোক হাঁটছিলেন আমাদের সাথে। উনার গায়ে কমলারঙের একটা ভেস্ট ছিল যা সাধারনত কর্মিরা পরে থাকেন। তিনি আমাদের খোঁজাখুঁজি বুঝতে পেরে, নিজে উপোযাজক হয়ে আমাদের রেন্টে কারে যাওয়ার জন্য শাটল ধরে যেতে হবে সে পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। এবং তিনিও এক মাত্র যাত্রী ছিলেন আমাদের সাথে শাটল ট্রেনে।
শাটল ট্রেনের অভিজ্ঞতাটা ছিল বিশ্রী। ভিতরে ঢুকতেই একটা দূর্গন্ধ নাক বন্ধ করে রাখতে হয়েছিল। তিনচারটা স্টেশন পার হয়ে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে ছিলাম।
এখন আবার ফিরতে হবে ওদের বাস ধরার জন্য এয়ারপোর্ট এর এরাইভাল এরিয়াতে। সেখান থেকে ওদের বাসে চড়ে রেন্ট এ কার অফিসে যেতে হবে। সঙ্গীরা সেটা আর করতে চাইল না। বুক করা রেন্ট-এ-কার বাতিল করে দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে একটা গাড়ি নিয়ে নিল। প্রথমেই একটা গচ্ছা গেল, লাস্ট মোমেন্টে বাতিল করার জন্য কিছুটা পয়সা দিতে হল তাদেরকে। প্লেন সময় মত উড়লে হয়তো এই সমস্যাটা হতো না। ক্লান্তি কিছুটা কম থাকত আমাদের। রাতও কম থাকত। মাঝ রাতে এত ঝামেলা ছুটাছুটি করার ইচ্ছা নেই কারো। একজন বলেছিল চলো উবারে করে হোটেলে চলে যাই। সেটা অনেক ভালো হতো। কারন পরের দুদিন আমরা আসলে গাড়ি ব্যবহার করিনি। পার্কিংয়ে রেখে দিয়েছিলাম। এবং সেটাও বাড়তি পয়সা পাকিং এর জন্য। আমেরিকার প্রায় জায়গায় এই পার্কিং সমস্যা। রাস্তার উপর পাকিং খুঁজে পার্ক করতে হয় গাড়ি আবার সময় মতন সরিয়ে ফেলতে হয়, নয় তো টিকেট খেতে হয়। বেশির ভাগ হোটেলেও পাকিং নেই। পাশের পাবলিক পার্কিং খুঁজে নিতে হলো। আমি আর কোন মতামত দিলাম না তারাই একটা দোকানের ঝাঁপি খোলা পেয়ে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিল।
বেশি দাম পড়ল এয়ারপোর্টের রেন্ট এ কারের নগদ নেয়ার জন্য। মাঝরাতে ওদের আর ঘোরাফেরা করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
অথচ আমার ইচ্ছে করছে, ফাঁকা রাস্তায় মাঝরাতে সারা শহরটা ঘুরে বেড়াই গাড়ি যখন আছে। কিন্তু সবার ইচ্ছায় ইচ্ছা মিলিয়ে হোটেলের পথে ধরতে হল। সেখানে যেতেও আধ ঘন্টার মতন লাগবে কারন আমরা একদম সমুদ্রতটের কাছে হোটেল নিয়েছি যা এয়ারপোর্ট থেকে অনেক দূরে। মায়ামি শহরেরই একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মায়ামি বিচ। ব্রীজের মাধ্যমে সংযোগ করা তাই বিচ্ছিন্ন মনে হয় না।

গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমে কি যে ভালো লাগলো আধ খানা চাঁদের আলো আঁধারের খেলা নগরীর রাস্তায়। লবণ জলের হাওয়া উষ্ণতা আহা কি মধুর। নারিকেল বনের সারি, শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদের আলো চকচক করছে নারিকেল গাছের পাতায়। অনেকদিন পরে দেখলাম এমন দৃশ্য খুব ভালো লাগছিল ।
শহরে খুব একটা গাড়ির ভিড় দেখলাম না। আমরা মোটামুটি একাই পথ চলছি। অচেনা পথ অচেনা গলি হাইওয়ে। ঘুরে ঘুরে পেরিয়ে গেলাম ডাউনটাউন। নগরীর ব্যস্ততা তেমন একটা দেখলাম না। শহর যেন আলো জ্বালিয়ে নিরবে ঘুমিয়ে আছে হঠাৎ দু একটা গাড়ি দেখা পেলাম।
রাস্তার দুই পাশে জল ছল ছল উর্মি মালা নাচছে শব্দ করছে। জাহাজ, নৌকা ভাসছে মেরিন এরিয়ায়, কত ব্যস্ততা দিনের বেলায় এইসব জায়গায় থাকে। এখন শুধু আলো এবং ঢেউ বাতাসের শীষ।
মাঝরাতে মায়াবী শহর দেখতে দেখতে আমরা মায়ামি বিচ, এরিয়ায় হোটেল গুড টাইম এ পৌছালাম ভিতরে গিয়ে চেকিং করতে দেখলাম আরেক সমস্যা হয়েছে।
আমাদের বিশাল দুই কুইন বেডের রুমের ঘর না দিয়ে এক রুমের টুইন বেডের একটা রুম দেওয়া হয়েছে। আমাদের বুকিং এবং তাদের দেওয়ার পার্থক্য দেখিয়ে এবং রুমে গিয়ে সেখানে কিছুতেই আমাদের পছন্দ হলো না জানানোর পর, রিসিপশনের ভদ্রলোক মনে হল, আবেগপ্রবণ হয়ে গেছেন এবং আমাদের এই মাঝরাতে ঘুমের ব্যবস্থা না করে দিতে পারলে উনারই সমস্যা। তাই তিনি আমাদের দুই বেডের ঘর দিতে না পেরে দুইটা রুমই বরাদ্দ করে দিলেন একই অর্থে। আহা সব মানুষ যদি এমন ভালো ব্যবহারের হতো। স্প্যানিশ এই লোকটিকে খুবই ভালো লাগলো শুরুতেই তার ব্যবহার দিয়ে আমাদের মুগ্ধ করলেন বিদেশে নতুন একটি জায়গায়।
ফ্যারেল উইলিয়ামসের হোটেল গুড টাইম মায়ামি বিচ।
বিকজ আই এম হ্যাপি ফ্যারেল উইলিয়ামস এর বিখ্যাত এই গানটি অনেকেরই জানা আছে, হোটেলটি এই বিখ্যাত গায়কের।
২০১৪ সালে ফ্যারেল বিশ্ব কে হ্যাপী এই গানটা উপহার দিয়েছিল। ভালো লাগার গানের মাধ্যমে এখনও হিট এই গান। আর আমার খুব আপন লাগে কথাগুলো। যেন ওর সাথে মিলিয়ে আমিও নাচি, গানের কথার কাজগুলো করি ।
প্রতি সন্ধ্যায় এখানে গানের মেলা বসে আর শনিবার রবিবার তো সারাদিনই ব্যাস্ত থাকে মিউজিকের মাঝে হ্যাপি হওয়ার জন্য বিকজ অ্যাই এ্যাম হ্যাপির হোটেলে প্রথম রাতের আবাস হলো আমাদের এবং যে কয়দিন থাকব এখানে উপভোগ করব লাইভ মিউজিক। বারবিকিউ পার্টি। এবং কয়েকটা পুল আছে সেখানে ইচ্ছা মতন সাঁতার কাটা যাবে। এছাড়া আছে ইয়গা করার ব্যবস্থা। লাইব্রেরিতে পড়ালেখা। হোটেল থেকে না বেড়িয়ে নানান কিছু করে সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়।
রাত দুটো পেরিয়ে গেলেও এখানে যেন আনন্দ চলছে। মানুষ আসছে যাচ্ছে কারো চোখে ঘুম নেই। সবাই হ্যাপী। সাজগুজ কি সুন্দর।
সারা দিনরাত খোলা থাকে এমন একটা দোকান পাশেই, আমরা হেঁটে হেঁটে সেখানে চলে গেলাম নির্বিঘ্নে মাঝরাতে। টুকটাক কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস,খাবার দাবার কিনে, ঘুরে ফিরে ছবি তুলে ফিরলাম হোটেলে। মনেই হলো না কোন নতুন জায়গায় গিয়েছি কোন রকম সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আনন্দ মনেই মাঝ রাতের ঘোরাফেরা দিয়ে শুরু করলাম প্রথম রাত ।
তারপর ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে গেলাম তখন মাঝরাতে পেরিয়ে ভোরের প্রহরে পৌঁছে গেছে রাত ।

খুব ভোরে উঠতে না পারলেও ঘুম যখন ভাঙলো তখন কেবল নটা বাজে, অনেক দেরিতে ঘুমিয়ে তেমন একটা দেরি হয়নি জাগতে। আনন্দ করতে এসেছি, ঘুরতে এসেছি তাড়াহুড়ার কোন কিছু নেই শরীরের রিলাক্স দরকার ।
তারপরও ঝটপট তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। শুয়ে ঘরে থাকার কোন মানে হয়না নতুন জায়গায় এসে। রাস্তায় হেঁটে হেঁটেই পছন্দ করলাম সকালের নাস্তা করার জায়গা। সেখানে খেতে খেতে দেখলাম সকালের ফ্লোরিডা মায়ামি শহর।
মানুষের কোলাহল কত রকমের মানুষ সবাই আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, খাওয়া-দাওয়া করছে রেস্টুরেন্টের পেটিওগুলোর খোলা জায়গায় সাজানো পোর্টেবল ট্যানেটের নিচে, কোথাও আবার মাথার উপর কোন আচ্ছাদন নেই। ঘরে বসে খাওয়ার চেয়ে মানুষ খোলা জায়গায় বসে খেতেই পছন্দ করছে।
সকালের নাস্তা করে সাগর সৈকতে বালুকাবেলায় চলে গেলাম। সারাদিন সাগর জলের সাথে খেলা লবণ জল গায়ে মাখা বালুর ভিতরে ঢুকে থাকা, ওজন মাখা, বাতাস আর রোদে ভেজা।

সারাদিন তুমুল বাতাস সারাদিনই লবনজলের হাওয়া উড়ে। নীল জল, সবুজ জল, সাদা ফেনার ঢেউ। আকাশের ছায়ায় কখনো সবুজ কখনো নীল কখনো কালো রঙের গাড় ছায়া মেঘের, পানির ভিতর। আরো আনন্দ যোগ হয়েছিল পূর্ণিমার ঝলক দেখা সমুদ্রের বিশালতায়। সময়টা শুক্লপক্ষোর ছিল।
এই এলাকায় প্রচুর হাঙ্গর, সামুদ্রিক সাপ, আর জেলি ফিস আছে। কিন্তু মানুষ নির্ভিক পানিতে নেমেছে। একা নয় বাচ্চাদের নিয়েও। দলবলে পরিবারের সবাই মিলে। কোথাও রোমান্টিক জুটি পানির ভিতর জাড়িয়ে আছে একে ওপরের সাথে। মগ্নতায় চুমু খাচ্ছে। কোথাও বাচ্চাকে কাঁধে তুলে বাবা চলে যাচ্ছে অনেকটা গভীর সমুদ্রে।
বন্ধুরা মিলে খেলছে বল নিয়ে। কেউ সাঁতার কাটছে তো কেউ পানি ছিটাচ্ছে অন্যকে। তারমাঝে একজন কে দেখলাম পিঠে বাঁধা ব্যাগ। হাতে লম্বা একটা ম্যাগনেটিক যন্ত্র হয়তো ক্যামেরা লাগানো। ডুবুরির বেশে তটের কাছেই এপাশ থেকে ওপাশে ঘুরছে অনেকক্ষণ ধরে তাকে খেয়াল করলাম। গভীর নিমগ্নতায় পানির ভিতর কিছু খুঁজছে, কিছু পেয়েও যাচ্ছে। তারপর ডুব দিচ্ছে তুলে আনছে কিছু একটা,রাখছে পিঠের ব্যাগে।
অনেকেই পানির ভিতর থেকে মূল্যবান হারিয়ে যাওয়া বস্তু খুঁজে পায়। আবার অনেক সময় ফিরিয়ে দেয় মালিককে। প্রচুর ভিডিও দেখেছি এমন। ওদের ভিডিওতে জিনিস দেখেই মালিক যোগাযোগ করে।

কখনও নিজে রেখে দেয় কিছু পছন্দের বস্তু মালিক না পেলে। কখনো বিক্রি করে দেয়। মানুষের কত রকমের শখ থাকে। আবার শখও এখন আয় এবং কাজের পথও হয়ে গেছে। শুধু জানতে হয় এবং সঠিক ভাবে এ্যাপ্লাই করতে হয়।
কিছু মানুষ তীরে শুয়ে আছে। কিছু পা ভিজিয়ে হাঁটছে। আর কিছু মানুষ পানিতে নামবে কি নামবে না ভাবছে।
সাগরের জল পেলে আমাকে পায় কে আমি তার সাথে ভাব করতে ব্যাস্ত থাকলাম। আর প্রচুর রোদের আলোয় ভিটামিন ডি গায়ে নিলাম প্রকৃতির ওষধ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা ঠিক না। বালুতে গা ডুবিয়ে শুয়ে শুয়ে দেখলাম। জলের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে একজন পুরুষ সারা জীবনের সঙ্গী হওয়ার প্রপোজ করছে একজন নারীকে। তাদের এই বিশেষ মূহূর্তের সঙ্গী হয়ে গেলাম আমরাও। ভালো কাটুক তাদের বাকি জীবন এক সাথে।

মানুষের মাঝে বসে থাকাটা খারাপ লাগছিল না। কত রকমের মানুষ কত দেশ থেকে এসেছে, ঘুরতে, আনন্দ করতে। মায়ামি বিচ খুব সমৃদ্ধ জনপ্রিয় একটি জায়গা। তবে খুব বিরক্ত লাগছিল। একটু পরপর বিজ্ঞাপন নিয়ে উড়ে যাওয়া হেলিকাপ্টার দেখতে। শুধু হেলিকাপ্টর নয় ছোট প্লেন এবং বেলুন উড়ছিল নানা রকম বিজ্ঞাপনের সম্ভার দেখাতে। সাথে চোখের সামনে জলের উপরও চলে যাচ্ছিল ছোট ছোট জাহাজ, নৌকা। এরাও বিজ্ঞপন করছে ঘুরে ঘুরে। আমাদের চোখের দৃষ্টি আটকে দিয়ে তাদের বিজ্ঞপন সম্ভারে।
এদের শব্দ এবং চোখের সামনে দিয়ে বারেবারে আনাগোনা বড়ই বিরক্তিকর ছিল। শব্দ দুষনের সাথে প্রকৃতি উপভোগের জন্য বাঁধা দেয়া যন্ত্রনাদায়ক কার্যক্রম। বানিজ্য দখল করে নিচ্ছে এখন প্রকৃতির প্রায় সবটুকু।
একটু দূরে হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট। প্রত্যেকটা পাশাপাশি কিন্তু প্রত্যেকের ভিন্ন রকম আয়োজন মনরঞ্জনের থাকা খাওয়ার পাশাপাশি।

আজ দুপুরে আমাদের ব্রাঞ্চ খাওয়ার নিমন্ত্রণ ছিল ভার্সা ম্যানসনে। ভার্সা ম্যানসন, ইটালিয়ান একটি রেস্টুরেন্ট। পুরানো ঐতিহ্যবাহী দালানে এই রেস্টুরেন্টটি। সুন্দর ভাবে খাবার সার্ভ করার সাথে দালানের ভিতরের কারুকাজ খুব আকর্ষণীয়।
সাধারনত পর্যটকরা মায়ামী বিচে গেলে ভার্সা ম্যানসনে একবার খেতে যায়। প্রচুর ভীড় থাকে সেখানে সেজন্য। আগে থেকে সিট রির্জাভ করে না রাখলে সেখানে টেবিল পাওয়া খুব মুসকিল। কিন্তু সকালে দেরি করে উঠে নাস্তা করে এখন সাগরপাড়ে কাটাতেই ভালোলাগছে। খাওয়ার মতন ক্ষুদার্থও হইনি। ব্রাঞ্চে সেট ম্যনেুতে অনেকগুলো খাবার একটার পর একটা পরিবেশন করে যা খেতে খেতে লাঞ্চের চেয়েও বেশি খাওয়া হয়ে যায়। তাই আমন্ত্রণটা পরে করা যায় কিনা জানতে চাইলাম। এবং সেভাবেই আবার পরের দিন প্রোগরাম করা হলো। ঠিক করলাম সকালে আর কিছু খাব না সেদিন, একবারে ব্রাঞ্চ শুরু করব এবং অনেকক্ষণ ধরে মজা করে খাব তবে দুদিন পরে।
সাগরের কুলে অনেক সময় কাটিয়ে এক সময় চারপাশটা দেখার জন্য হাঁটতে শুরু করলাম।
খানিকটা দূরে হেঁটে গিয়ে দেখা পেলাম আর্ট গ্যালারীর। বিখ্যাত সব আর্টের প্রদর্শন হয় এখানে। একদম সাগর সৈকত লাগোয়া ভিন্ন স্টাইলে তৈরি করা বিল্ডিং। তার ভিতর প্রর্দশন হচ্ছে অনেক শিল্পীর আঁকা ছবি ।
কয়েক বছর আগে এই গ্যালারীর একটি আর্টের খবর প্রচার হয়েছিল মনে আছে হয় তো আপনাদের। একটি সত্যিকারের কলা স্কচটেপ দিয়ে সেটে দিয়ে আর্ট বানিয়ে ছিলেন একজন আর তার আর্টের কলাটি খেয়ে নিয়ে ছিলেন আরেক শিল্পী। বেশি না মাত্র একশ বিশ হাজার আমেরিকান ডলার দাম ছিল সেই আর্টটির।
ভিতরে ঢুকে সেই ঘটনা মনে পরছিল খুব। খুঁজছিলাম যদি কোন কলা বা আপেল লাগানো ছবি পাই আমি খেয়ে ফেলব খুলে ফল কিন্তু পাওয়া গেল না তেমন কিছু।
আর খুঁজছিলাম ফ্লোরিডার আম । কিন্তু সময়টা আমের নয় তাই পাওয়া গেল না। জুলাই মাসে আমের উৎসব হয় ফ্লোরিডার আমের ফার্মে। এবার ফ্লোরিডার আম খাওয়া না হলেও আমি ফ্লোরিডার আম খেয়েছিলাম অনেক বছর আগে।
সেবার এ্যানারবান গিয়েছিলাম আমার এক খালার বাসায় দেখলাম বিশাল ঝুড়ি ভর্তি রাজশাহীর মালদই, ফজলী আমের মতন বড় বড় আম। খালা বলেছিলেন ফ্লোরিডা থেকে নিয়ে এসেছিলেন, কয়েকদিন আগে ওখান থেকে এসেছেন তারা। খুব মজার সেই আম দেশের আমের মতনই মজা ছিল। খালু এক সময় নাসাতে কাজ করতেন।
কিন্তু আমি যখন গেলাম তখন আমি আম পেলাম না। যদিও আমের দেশে মেয়ে হিসাবে আমি জানি আম গ্রীষ্মকালের ফল। তবে মাত্র ষাট মাইল দূরে কিউবাতে আমি এক আম গাছে ফল এবং ফুুল ধরতে দেখেছিলাম জানুয়ারিতে। তাই ভাবনায় ছিল হয় তো সারা বছর আম পাওয়া যায়।
আসলে না ঘুরলে না দেখলে অভিজ্ঞতা তেমন হয় না বই পড়ে বা ছবি দেখে। যতটুকু পড়ি বা দেখি সেটা তো নির্ভর করে যিনি লিখছেন উনার অভিজ্ঞতার উপর। ইদানিং আবার অনেকে লিখেন কিন্তু ঠিক বেঠিক নিজের মতন করে বুঝে নিতে হবে আপনাকে। অনেকে গুগল থেকে লেখা নিয়ে সেই তথ্য কপি করে ফেলেন, সঠিক কিনা যাচাই না করে। গুগলে যেমন সঠিক তথ্য আছে তেমন ভুলও আছে প্রচুর। তাই তিনি কি দেখেছেন সেটা বুঝতে, নিজের বুদ্ধি কাজে লাগাতে হবে। সবাই সবটা আবার বলেন না। বলেন তার পছন্দ মতন।
বিচে ঘুরে বেড়ানোর মজা হলো, যেমন আছো তেমন ভাবেই চলা যায়। কেউ টা্ওয়েল জড়িয়ে চলছে তো পাশে একজন দেখা যায় ভয়াবহ রকম ফ্যাশন দূরস্ত, পার্টি ড্রেসে। কেউ সাঁতার কেটে ভেজা গায়ে ফিরছে, কেউ খালি গায়। আসলে নির্ভর করে কে কি করছে এর উপর। কেউ কিছু মনে করছে না পাশের মানুষ দেখে। সেটা যে কোন সময়ই হোক। সাথে পথে বসে থাকতেও দেখলাম অনেককে। যারা সারাদিনই কোন দালানের খাঁজে নিজেদের আবাস পেতেছে। সেখানে তাদের জীবন যাপন। কয়েকদিন ধরে এমন বসে থাকা কিছু লোকের সাথেও দেখা হলো।
অনেক কিউবান, ম্যাক্সিকান মানুষের সাথে দেখা হলো। খাবারের দোকান গুলো এবং সেফ তারাই। ফ্লোরিডা কিউবার অংশ ছিল এক সময়।
ঘোরা ফেরা করে হোটেলে ফিরে পোষাক বদলে সেখানে পুলপার্টিতে অংশ নিয়ে। গান বাজনা শোনে ,খাওয়া দাওয়া করে সন্ধ্যার আগে আবার আমরা বেরিয়ে গেলাম। রাতের ঝকমকে আলোয় দিনের রোদেলা প্রকৃতি অন্য রকম সাজে এখন, বড় বেশী আকর্ষণীয়, মোহমনীয় সৌন্দর্যে উত্তাল। পার্টি ড্রেসে বেশির ভাগ মানুষ। রাতের ডিনার করতে বা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছে।
আমরা আবার বিচে চলে গেলাম। রাত দশটা পর্যন্ত বিচে থাকা যায় আমরা সেখানে কাটাব। সমুদ্র সৈকত এখন অনেক শান্ত দিনের বেলার হৈ চৈ মানুষের ভীড় ততটা নেই। বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের মতন জলের কলতান শুনতে পছন্দ করে।
আকাশে বিশাল একটা চাঁদ উঠছে তার প্রতিছবি জলে ঢেউয়ে ভাঙ্গছে। পেছনে শহরের অনেক আলো থাকলেও সমুদ্র তটে যেন চাঁদের আলো উপচে পরছে। দু একজন মানুষ এই অন্ধকারেও জলে নেমেছে এদের সাহস আছে বলা যায়। সন্ধ্যা বেলা হাঙ্গর খাবার খোঁজে বেশি। তটের দিকে চলে এলে এরা খাবার হয়ে যেতে পারে।
বড় বড় জাহাজ গুলো যা এক একটা কয়েকতলা এ্যাপার্টমেন্টের সমান। এই জাহাজ ভর্তি আলো। দিনের বেলা যারা মায়ামি শহরে ঘুরে বেড়িয়েছে বিভিন্ন দেশের মানুষ, তারা এখন জাহাজে চড়ে ভাসতে ভাসতে চলে যাবে অন্য কোন জায়গায়। একটার পর একটা ক্রজ জাহাজ আলোর বন্যায় সেজে চলেছে জলের উপর দিয়ে। যেন জাহাজের রেলি চলছে । যদিও তাদের যাত্রা পথ ভিন্ন কিন্তু বন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়র পথ হয় তো এদিকেই। তাই অনেকগুলো জাহাজ এক সাথে দেখতে পাচ্ছি।
ঘন্টা দেঢ়েক পরে জাহাজ গুলো দৃষ্টির অগোচরে চলে গেলে। সমুদ্রে শুধুই ঢেউ চাঁদের আলোর ঝলকানি রয়ে গেলো। বাতাস শরীর জড়িয়ে ধরছে আর শরীরের চামড়ায় একটা মসৃনতা উপভোগ করছি। সমুদ্র পারে বসে থাকলে আমার মনে হয় বেশ কিছু শক্তি পান করলাম। এনার্জি পাই অনেক বেশি। মাঝে মাঝেই আমি সমুদ্রের কাছে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে যাই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৪৫
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু রাজনীতির মাঠে বিরাট শূন্যতা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৯

 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দলটির হাল ধরেন। সেনানিবাসে গড়ে উঠা দলটাকে রাজপথে বেড়ে উঠতে গৃহবধূ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×