এক সন্ধ্যায় ছেলেটি এবং মেয়েটি এসে হাজির। কি ব্যাপার তোমরা হঠাৎ !
অবশ্য আমার বাড়িতে যে কেউ যখন তখনই চলে আসে । রান্না খাওয়া শেষ হলেও আবার রান্না করতে হয় । মেহমান বলে কথা,
সেদিন ওরা এসেছে,গোধূলি লগনে, বেশ খানিকক্ষণ চুপচাপ থেকে, ছেলেটি বলে আমরা বিয়ে করবো আজই । বাড়িতে কি বলেছে,
বিয়ে দিবেনা? দুজনেই মাথা নাড়িয়ে জানালো কোন বাড়িতেই সম্মতি নেই এখন।
ছেলেটি এখনো কিছু করেনা মেয়েটিও না। কিন্তু ওরা ঠিক করেছে নিজেদের সংসার গুছিয়ে নিবে।
হঠাৎ করে বিয়ের আনন্দ, উৎসব লেগে গেল আমার বাড়িতে ওই গোধূলি লগ্নে। দুটি মানুষ বিয়ে করবে যদিও আর কোন মানুষ নেই।ক্যাসেট প্লেয়ারে আমি সানাই বাজিয়ে দিলাম বিসমিল্লাহ খানের। সানাইয়ের সুর বাঁজছে। মেয়েটি বসে আছে আমার বিছানার উপরে।
আমি নিজের সাজের জিনিসপত্র বের করে মেয়েটিকে সাজাতে বসে গেলাম। একখানা শাড়ি হাতে এসেছে । ছেলেটি যেমন আছে তেমনি জিন্স আর শার্ট পরা । সর্বসাকুল্য আমরা বাসার মানুষ চারজন বাচ্চা সহ।
একজন চলে গেল কাজী ডেকে আনতে। মাগরিবের নামাজের পরে কাজী চলে আসলেন। সাথে এলো কিছু মিষ্টি।
পাশের ঘরে কাজী চলে আসার পরে আমিও একটু ঠিকঠাক হয়ে শরবত, খেজুর নিয়ে সবাই মিলে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হলাম ।
কাজী নিয়ম মত দুজনকে কবুল বলালেন।
দুজন মানুষ দুজনের আপন ছিল। নিয়মমাফিক বিয়ের বন্ধনে আপন হয়ে উঠলো।
পাশেই ছিল বিরিয়ানির দোকান, সেখান থেকে বিরিয়ানি আনা হলো। বিয়ের উৎসবে বিরিয়ানি খাওয়া হলো মিষ্টি খাওয়া হলো ।
তারপর ছেলে মেয়ে দুটো নিজেদের মতন চলে গেল, স্বামী স্ত্রী হয়ে।
আমি বা ওদের কোথায় রাখবো বাসর সাজানো ঘর দেব, আমার তো একটুখানি জায়গা । একটা মোটে ঘর তখন।
মাঝে মাঝে আসতো ওরা গল্প করত সময় কাটাতো আমার এখানে।
কিছুদিন পর শুনলাম ছেলেটি বিদেশ যাবে আয়োজন করছে খুব। একদিন শুনলাম সে উড়ে গেল বিদেশে। কিন্তু ছেলেটিকে হিথ্র বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছি । কোন আদমব্যাপারীর পাল্লায় পরেছিল জানি না। যা কিছু সম্বল ছিল সব দিয়ে বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে উড়েছিল। কিন্তু সব খুঁইয়ে ফিরে এলো।
কোনখানে কোন বিদেশে যাচ্ছিল সেখানে আর যাওয়া হলো না বিনীতার চোখে অনেক প্রেম প্রেমের চোখে তাকিয়ে ছিল বিনীতা, উড়ে যাওয়ার শিমুলের দিকে। শিমুল শেষ পর্যন্ত অন্য দেশের স্থায়ী হতে পারল না, ফিরে এলো নিজের দেশে।
সময় চলে গেল অনেক মাঝে মাঝে দেখা হয় মাঝে মাঝে হয় না। দুজন প্রেমে জড়িয়ে আছে এইটুকু ভালো লাগে।
একদিন জানলাম শিমুল খুব অসুস্থ। এরপরই শিমুল একদিন চলে গেল মাত্র কদিনের সংসার।
সংসারটা ভালোমতো গুছিয়ে উঠতে পারল না। আমার কাছে মাঝে মাঝে এসে বলতো এখন বাচ্চা নিব না। একটু গুছিয়ে বসি কয়েকটা বছর যাক । কিন্তু সেটুকু সময় আর তারা পেল না তারপর থেকে ইরা একা। জানতাম না তেমন কোনো খবর অনেকদিন ফেসবুক হওয়ার পরে জানলাম, শিমুলের জন্য একটা পেইজ চালায়। শিমুলের ভাবনায় ডুবে এখনও দিন কাটায় মেয়েটি।
শিমুলের জন্য আছে, শিমুলকে ভালোবেসে দিন কাটিয়ে দিচ্ছে একা একা ।
আজ শুনলাম, চলে গেছে ইরা। মনে হল ভালই হলো একা একা আর কতদিন এবার দুজনে হাত ধরে থাকবে অন্য পৃথিবীতে।
কেউ কেউ খুব ভালো কবিতা লিখে কিন্তু সময় তাকে দেয়া হয় না। এই পৃথিবীর বুকে নিজের পদচিহ্ন স্থায়ী করার সময়টুকু পাওয়ার আগেই চলে যায় । একা একা অনেকটা বছর কাটিয়ে দিলো ইরা এখন শিমুলের হাত ধরে হাঁটছে উড়ছে আনন্দে অন্যলোকে।
অরুণ চৌধুরী, ইস্তেকবাল হোসেন, তারিক সুজাত, শ্যামল জাকারিয়া, শিমুল মোহাম্মদ। পাঁচজন তরুণ একসাথে হয়ে একটি বই করেছিল তখন। প্রবিবিম্ব ভেঙ্গে যাও নামে।
তখন সব কিছু এত সহজ ছিল না। পাঁজজনে মিলে ভাগ করে নেয়া কবিতার বই হাতে নিয়ে কি আনন্দ তাদের।
অরুণ চৌধুরীর খবর জানি না কত দিন। ইস্তেকবাল হোসেন অনেকদিন অসুস্থ নিরব হয়ে আছে । কী দারুণ আবৃত্তি করত। এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না - নবারুণ ভট্টাচার্য । শ্যামল জাকারিয়াকে দেখি নাটক সিনেমায়।
তারিক সুজাত নিজেই এখন বিরাট প্রকাশনা এবং আরো অনেক কিছু করেছে।
স্বৈরাচারী শাসকের বুলেরটের নিচে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রাণ হারাচ্ছিল। একক একটি বই ছাপাতে না পারা এই তরুন ছেলেরা গুলি, টিয়ার গ্যাসের বাঁধা না মেনে ছুটত প্রতিবাদে। একটা সুন্দর দেশের স্বপ্নে নিজের জীবন, প্রতিদিন থাকত এদের হাতের মুঠোয়।
৭১-এ তখন আমি অনেক ছোট
মৃত্যু বুঝি, যুদ্ধ বুঝি না
এখন আমি অনেক বড়
যুদ্ধ বুঝি, মৃত্যু বুঝি না।
শিমুল মোহাম্মদ
প্রেমের পর্বটি আজ শেষ হয়ে গেলো । মনে পরে যাচ্ছে কত অসংখ্য স্মৃতি।
আমার সমস্ত অহংকার তুমি ও তোমার দুচোখ
পড়ে থাকবে আমার মমত্ব বিচ্ছেদে
প্রবল আবেগে বাড়ানো দুহাতে
শুধু কাছে টানতে গেলে মুঠোয় উঠে আসবে বিষ-বৃশ্চিক
অচেনা মানুষ আর যন্ত্র-যন্ত্রণায় পাড়ি দেবো পথ
রানওয়ে জুড়ে পড়ে থাকবে আমার অদৃশ্য ছায়া
তুমিও অন্য সব মানুষেরই মতো ফিরে যাবে ঘরে
এক-একটা দিন কষ্ট বিলাবে
বুকের উঠোনে দীর্ঘশ্বাস বড় হবে আরো
প্রতীক্ষা-পলক তোমার দুচোখে ভর করবে একা
অথচ আমি তোমার কাছাকাছি থাকবো না।
একে একে সবাই ফিরবে ঘরে
যে যার মতন প্রিয় মানুষের মুখোমুখি হবে
শুধু আমি দীর্ঘদিন তোমাকে দেখবো না
আমার বোধের ভেতর বেড়ে ওঠা বৃক্ষটা
বারবার তোমার উষ্ণতায় আদর চাইবে।
চোখের পাতায় চুম্বনে কতটা আনন্দ-সুখ
আমি একাকিত্ব লোকালয়ে বুঝে নেব ক্রমে
হলের ঘণ্টাধ্বণি আমার মনের ভেতর বাজবে নিয়ত
শেষবার তোমার আঙুল ছোঁবার প্রেম বহু দিন পাবো না।
ভালোবাসা আমার প্রহরী হয়ে আমাকে জাগাবে
তোমার খুব কাছে ছুটে যাবে মন নির্দোষ প্রত্যাশায়
তোমার শয্যায় তোমারই সাথে ঘুমিয়ে থাকবো আমি
তোমার ঘুমন্ত মুখ স্পষ্ট দেখতে পাবো
তোমার শরীর থেকে সৌরভ নেবো কোনো এক দৈব-স্বপ্নে
তোমার আঙুল ও আঁচলে জড়িয়ে থাকবো রোজ
অতিথি পাখির মতন শীত বসন্ত খোঁজে তোমাতে দাঁড়াবো
হয়তো ঘুমের ভেতর আমাকে পেয়ে
আদুরে কণ্ঠস্বরে ডেকে উঠবে ‘শিমুল’...
আমি রোজ এসে দেখে যাবো স্বদেশ তোমাকে
কতটা ভালো আছো তুমি
কতটা ভালো আছে আমারই স্বদেশ!
স্বপ্নবিদ্ধ বিনতার চোখ - শিমুল মোহাম্মদ এর বিশাল কবিতার খানিক অংশ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯