somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

যেতে যেতে চিহ্ন রেখে গেল

০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সকালে ছিল ঝকঝকে রোদ কিন্তু বাইরে তাকিয়ে দেখি আকাশ কখন হয়েছে অন্ধকার ঘন। তাড়াহুড়ার ঠেলায় বাইরে দিকে তাকানোই হয়নি অনেকক্ষণ । বিশাল একটা শব্দ এবং বিদ্যুৎ চমক চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাল আবহাওয়া একদম বদলে গেছে। মেঘলা কালো আকাশ সাথে করে রওনা দিলাম পথে। যেতে হবে একশ পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে। ত্রিশ কিলোমিটার যাওয়ার পরই এমন ঝমঝম শ্রাবণের বৃষ্টি আকাশ ভেঙ্গে নেমে এলো, দুই হাত দূরে কিছু দেখতে পাই না। সামনের কাঁচ পাশের মিরর সব ঝাপশা। যেন ঘন কুয়াশার ভিতর বসে আছি। দুই লেইনের রাস্তায় অনেক গাড়ির ভিড় সাবধানে চলতে হচ্ছে খুব। এরকম রাস্তায় মাঝেমধ্যে গাড়ির চাকা পিছলে যায় বিশেষ করে শীতকালে। রাস্তায় কোথাও জমা বরফ থাকলে পিচ্ছিল মরণফাঁদ হয়ে থাকে। একটু পিছলে গেলে অন্য গাড়ির সাথে ঠুকাঠুকি লেগে যাবে। দুই পাশে ষোল চাকার বড় বড় ট্রাক। তাদের চাকার বাড়ি খেয়ে পানির ফোয়ারা ছিটকে উঠছে রাস্তা থেকে আর উপরে বৃষ্টির জল ঝরছে মুশলধারায়, দুই জলের ধারা ওয়াইপার হাই স্পিডে চলেও সরাতে পারছে না। ঝাপসা হয়ে থাকছে চারপাশ । দুইপাশের মিররের দিকে তাকিয়ে দেখি কিছুই দেখা যাচ্ছে না ব্লাইন্ড হয়ে আছে ।
সময় গুণে বের হলেও এখন দেখা যাচ্ছে সময়ের মধ্যে পৌঁছানো যাবে না কাজে তাই ফোন করে বললাম, আমার দেরি হবে । তাহলে অন্যদিন করো। আমি আছি মাঝ পথে এখন ফিরে যাওয়াও শুধু অকারণ সময় নষ্ট। কতক্ষণ লাগবে আধ ঘন্টা বেশি তো লাগবেই মনে হচ্ছে যদিও পনের মিনিট বেশি দেখাচ্ছে এখন। দশ মিনিটের পরে আর তোমাকে নিতে পারবো না । কাটায় কাটায় সব কাজ হয় এখানে আমি খুব ভালো জানি তাও অনুরোধ করলাম, দেখো আমাকে কনসিডার করতে হবে । আমি এসেছি মাঝামাঝি জায়গায় এখন ফিরে গেলে আবার তো আরেকদিন আমাকে আসতেই হবে আর এ সময়ের কোন ভরসা নাই কবে ভালো দিন থাকবে।
আজকাল ট্রাফিক খুব বেশি আমি তো কাছে থাকি না অনেকটা দূরের পথ তাই একটু সময় দাও। আর দেরি আমার ইচ্ছাকৃত নয় আমাকে আজকেই কাজটা সারতে হবে।
কনসিডার করল আমার সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্টটা করার পনের মিনিট দেরি হওয়ার কথা সেখানে আধঘণ্টার বেশি লাগল পৌঁছাতে।
অনেকগুলো কাজ একসাথে করে ফেলার চেষ্টা করি শহরে গেলে। সেই হিসেবে আরো তিনটা জায়গা যেতে হবে। এখন খুব বেশি ট্রাফিক জ্যামে পরতে হয়। আর আজকের মতন দিন হলে তো কথাই নাই। আমার এই গ্রামের দিকে পাওয়া যায় না অনেক কিছু তার জন্য কিছুটা সময় ব্যয় হলো গ্রোসারি দোকানে কেনাকাটায়। বাকি কাজগুলো সেরে সাধারণ তো আমি বাচ্চাদের সাথে কাটাই রাত দুপুর পর্যন্ত তারপর বাড়ি ফিরি মাঝ রাতে।
কিন্তু আবহাওয়া, বৃষ্টির কারণে মনে হল কখন আবার হুট করে চৌদ্দ উত্তাপ মাইনাস চৌদ্দতে নেমে যাবে আর পিছলে যাব রাস্তার উপর গাড়ি নিয়ে তার চেয়ে বরঞ্চ দিনের আলো থাকতে আজ ফিরে যাই বাড়ি যাতে রাস্তায় শুয়ে থাকা ব্ল্যাক আইস চোখে দেখতে পারি।
তুমুল বৃষ্টির ঝাপটায় ভিজতে ভিজতে কাজগুলো সারা হলো। সন্ধ্যা বেলা একটুখানি কমলো বৃষ্টি। কিন্তু রাতের বেলা আবার ঝমঝমিয়ে নামল মনে হচ্ছে ঘরদোর বুঝি ধুয়ে দিবে ভালো করে। রাত পেরিয়ে সকাল থেকেও তুমুল বৃষ্টি চলছে সাথে বিদ্যুৎ চমক আর করকড়াৎ বাজ পড়ছে। দুপুরের মধ্যে বদলে গেল বৃষ্টি বরফে, উড়ছে বরফ তুমুল ঝড়ো বাতাসে। এবং গতকালকের বৃষ্টির পানি গুলো জমে বরফ হয়ে একটা মৃত্যু ফাঁদ হয়ে অপেক্ষা করবে মানুষের পা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার জন্য। কত যে দূর্ঘটনা ঘটে। এই দেশে আছে আর বরফে পিছলে গিয়ে হাত পা কোমর, ভাঙ্গেনি এমন নিখুঁত মানুষ পাওয়া ভাড়।
অনেক আবার রাস্তায় পরে গেলে স্যু করে দেয় শহর তদারককারীদের উপর। এবং বেশ ভালো ডলার আদায় করে নেয়। এ জন্য বেশ কিছু উকিল কাজ করে। ক্লায়েন্টের পয়সা পাইয়ে দেয়ার সাথে নিজেদের বানিজ্যও তারা করে নেয়। তবে নিজের বাড়িতে বা আঙ্গিনায় পরে গেলে আর কাউকে দোষ দেয়ার উপায় থাকে না। পরদিন উনত্রিশ ফেব্রুয়রি দারুন সুন্দর দিন ঝড়ো হাওয়া বরফ, বৃষ্টি কিচ্ছু নেই। সুন্দর দিনটি উপভোগ করতে পারলাম না দেশের খবরে।
ফেব্রুয়ারির একটা দিন বেশি পাওয়া গেল এ বছর কিন্তু তাও হয়ে রইল ভাড় হয়ে। আগুনে পুড়ে শিক কাবার হয়ে গেল এত্তগুলো মানুষ। করোনা কালে একদিন এই দালানে ঢুকেছিলাম মনে পরে।
আমি কিছু খাইনি কারণ আমি বাইরের খাওয়া খাই না কিন্তু আমার সঙ্গি সাথিরা খেয়েছিল আমাদের কেনাকাটায় দুপুর হয়ে যাওয়ায়।
এমন ঘরের মধ্যে বাজার বসানো এখন বাংলাদেশের ফ্যাশন হয়ে গেছে। আবাসিক এলাকা বলে কিছু নেই আর। সব জায়গায় সব কিছু মিলে মিশে আছে।
নগরায়নের ভিড়ে দেশের চরিত্র, বৈশিষ্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গ্রামে গঞ্জে আগে হাট বসত সপ্তাহে একদিন বা দুদিন। এখন হাট নেই প্রতিদিন বাজার বসছে ঘরের ভিতর। যা শুরু হয়েছিল ঘরের ভিতর ইংলিশ স্কুল, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি করার মাধ্যমে।
পুরান ঢাকার বানিজ্য ভিত্তিক শহর ছড়িয়ে পরেছে নতুন ঢাকার কোনা গলি সব খানে। মার্কেট নামের আলাদা কোন স্পেস এখন নাই। সাথে নেই আবাসিক এলাকা। আগের স্মৃতিতে ভাসে ঢাকার কি সুন্দর আবাসিক এলাকা ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান, উত্তরা। আলাদা মার্কেট বায়তুল মোকাররম,নিউমার্কেট।
রাজধানীকে অনুকরন করে ছোট শহর গ্রাম গঞ্জেও গজিয়ে উঠছে অপরিকল্পতি ভাবে সব বাজার এবং বাসা বাড়ি এক সাথে। সেফটি শব্দটি একদম অপরিচত বাংলাদেশে । বাড়িঘর বানানো, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা রাস্তা চলাচলে সেফটির কোন প্রয়োজন বোধ করে না কেউ। শুধু আরো বেশি ব্যবসা করার তাগিদ। আরো জোড়ে যাওয়ার ভাবনা। সাথে এই সব দেখাশোনয় জড়িত লোকরা চোখ বন্ধ রাখে নিজেদের স্বার্থে।
ঢাকার রাস্তায় বড় বড় দালানের ভিড়ে চিকন একটু রাস্তা যেখানে দুটো গাড়ি পাশাপাশি ক্রস করতে পারে না ভালোভাবে।
কাঁটাবনের ঢালের ভিতর দিয়ে একদিন হাঁটতে গিয়ে কিভাবে যে আমি নীল ক্ষেতে এসে পৌঁছালাম আমি এখনও বুঝতে পারি না। আমার দুপাশে ছিল সারি সারি খুপড়ি দোকান। অথচ রাস্তাটা ছিল আমার পরিচিত খোলামেলা। কিছু বাড়ি ছাড়া কিচ্ছু ছিল না সেখানে এক সময়।
যাদের দায়িত্ব নগর সুন্দর করার। নগর পরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলার। তারা সব জায়গায় সব কিছু করার অনুমতি দেয় নিজের স্বার্থে। অথবা তারা নিজেদের কাজ গুলো করে না ভালো মতন। দেখেও না দেখার ভান করে থাকে ।
কয়েক বছর আগে ধানমন্ডি লেকের উপর থেকে একটা বিশাল বাড়ি ভেঙ্গে সরিয়ে দেয়া হলো সৌন্দর্য রক্ষায় । অথচ খুপরি খুপরি মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে গড়ে উঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন দায়বদ্ধতা নেই। কোন জবাব দিহিতা ছাড়া চলে বছরের পর বছর। কেউ দেখে না বলে।
এইসব অনিয়ম নিয়ে কথা বলা হয় কিছুদিন যখন রানা প্লাজা ধ্বসে পরে। বঙ্গ বাজারে আগুন লাগে। পুরান ঢাকায় ক্যামিকেল কারখানায় আগুন লাগে বা এই এখন বেইলিরোডে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় আগুন লাগল।
তারপর সব চলবে আবার আগের মতন স্বাভাববিক। পরিচিত আত্মিয় স্বজন, বন্ধু মারা যাবে অস্বাভাবিক দূর্ঘটনায়। আমরা বলব মৃত্যু এভাবেই লেখা ছিল তাদের। কিন্তু এমন মৃত্যু, বন্ধ করার জন্য নিব না কোন সঠিক উদ্যোগ। বন্ধ করা হবে না সব অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
অথচ এখনই সময় নতুন করে ভাবার সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার, ভুলগুলো ঠিক করে ফেলার।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ২:২৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×