somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

প্রাণের আনন্দে ঘুম ভাঙ্গা

২০ শে মার্চ, ২০২৪ ভোর ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই ছবিটা আমার আঁকা
আজ বসন্তের প্রথম দিন । অথচ আজ তুমুল বাতাস। তুমুল বরফপাত মেঘলা আকাশ পুরাই শীতের আবহাওয়া। অথচ গত পনের দিন ছিল বসন্ত সময়ের চেয়েও বেশি উত্তাপ। বনভূমির ভিতরে ঘাসের ফুল ফুটেছিল। টিউলিপ, নার্সিসাস মাথা তুলেছে,ঝরাপাতার ফাঁকে। তুমুল বৃষ্টি ছিল বেশ কয়েকদিন বসন্তের আগমনের আগের মতন।



পুরো সপ্তাহ জুড়ে বরফপাত বাতাস আর মাইনাসের ঘরে থাকবে তাপমাত্রা তারপর বৃষ্টি মাখা দিন কাটিয়ে বসন্তের দেখা পাওয়া যাবে ।এপ্রিল শাওয়ার ব্রিং মে ফ্লাওয়ার। সত্যিকার অর্থে ফুলে ফুলে ভরে উঠা বসন্ত সময়।
হোক তুমুল বাতাস ঢেকে যাক বরফে মাঠ আবার তবু বসন্তের গান গাই । বসন্তের প্রথম দিন বলে কথা।
পুরুষ পাখিগুলো অনেকদিন হয় এসে গেছে । তাদের ঘর বানানো চলেছে খরকুটো কুড়িয়ে। গাছের ডালে, ঘরের চালের ফাঁকে নানারকম পাখির বাসায় ভরে উঠছে। তাদের সঙ্গীরা আসবে আর কদিন পরে। তখন তাদের মুগ্ধ করার জন্য ডাকবে সুরে সুরে, এসো এসো আমার ঘরে, বানিয়ে রেখেছি তোমাকে মুগ্ধ করার জন্য। এত্ত যত্নে বানান সে ঘর যে পছন্দ করবে ঢুকে যাবে সেই ঘরে । তারপর তাদের সংসার হবে । আনন্দে গান গেয়ে হুটটোপুটি করতে করতে ডিম দেয়ার সময় আসবে। সাজিয়ে নিবে ঘরটিকে আরো সুন্দর করে এ সময়ে। নীড়ের ভিতরে ডিম দিবে। বর পাখিটি খাওয়ার এনে খাওয়াবে বউ পাখিকে। নয়তো পাহারায় থাকবে ডিমগুলোর পাশে যেন কেউ এসে নষ্ট না করে দেয়। কিছুদিন পর বাচ্চা হবে। বাচ্চাদের বড় করতে করতে আবার তাদের উড়ে যাওয়ার সময় হয়ে যাবে,উষ্ণ ভূমি খুঁজে।
পাখিদের কোন নেভিগেট জিপিএস দরকার হয় না। গুগোল ম্যাপ দেখতে হয় না। তারা নিজেদের ঐ ছোট্ট মাথার এত্তটুকুন মস্তিস্ক দিয়েই জানে কখন আবহাওয়া কেমন হবে কোথায়। কখন কোন ভূমিতে ঘর বাঁধতে হবে। আমি শুধু দেখি এই সময়ে পাখিদের ফিরে আসা। তাদের কলোতান আনন্দ ডানা ঝাপটানো। কখনও তারস্বরে চিৎকারও করে তারা যখন খুব জোড়ে বাতাস বয়। বা কেউ ছিনিয়ে নিতে চায় তাদের এত যত্নের ডিম বা ছানাদের। অথবা যদি ছানারা নীড় থেকে মাটিতে পরে আর আসতে পারে না উড়ে ঘরে তারস্বরে ডাকতে থাকে এদিকে আসো এই এদিকে মা বাবা। পাখিরাও বিপদ বোঝে, বোঝে খুশি হওয়া।


বাচ্চা বানানোর হাসপাতাল বুঝি এই ভূমি। নির্ভয়ে তারা এখানে এসে কয়েক মাস বংশ বৃদ্ধি করে। আমি তাদের জন্য পানি দেই। খাবার দেই। আর আমার ফলানো ফসল, ফুল থেকে তারাও খুঁজে নেয় নিজেদের পছন্দের খাবার। আমার ফুল ফসলও বংশ বৃদ্ধি করে তাদের ছোঁয়ায়। তারা যে শুধু উপকার করে তা নয় অনেক সময় নষ্টও করে দেয় অনেক কিছু্। কি আর করা মেনে নেই অবুঝ প্রাণী ভেবে।
যেমন কাটবেড়ালি, রেকুন বা পাখি অনেক সময় ঘরের এ্যাটিকে ঢুকে পরে। বাসা বানিয়ে বাচ্চা করার জন্য। কেটে ফেলে বৈদ্যুতিক তারও। তখন আমাকে থাকতে হয় অন্ধকারে। যতই ফাঁকফোকর বন্ধ করি ওরা কি ভাবে যে দাঁতে কেটে ফেলে টিন, স্টিল পর্যন্ত দেখে অবাক হই। আমার ক্ষতি করে কিন্তু ওরা সে সব বুঝে না। ওরা থাকে নিজেদের বাচ্চা বানানোর চিন্তায়।
অনেক সময় ফুলের সব বিচি খেয়ে ফেলে।
এক মাঠ সূর্যমুখির বিচি সব পাখিরা খেয়ে ফেলেছিল। আমি খুব খুশি মনে তাদের আসা যাওয়া উপভোগ করতাম। কিন্তু বিচি যে ফুলে একটাও নাই টের ফেলাম তুলতে গিয়ে।
মাঠে মাঠে কৃষকরা এখন কীটনাশক ব্যাবহার করে। পাখি তাড়ানোর জন্য এমন বীজ ব্যাবহার করে যা থাকে এক ধরনের কোডিং করা তাই পাখিরা সেই বীজ খায় না। আবার ফসল হওয়ার পর পাখি সেখানে যায় না কৃত্রিম বলে। কৃষক খুশি মনে ফসল তোলে কোন ক্ষতি ছাড়া।
ওরা পছন্দ করে আমার অকৃত্রিম ওর্গানিক ফসল। সবটাই যখন খেয়ে ফেলে পাখির দল তখন মন খারাপ হয় কিন্তু সাথে ভাবি পাখির খাবারও কত কমে গেছে মানুষের কারণে তাই ওর্গানিক ফসল পেলে সবটাই তারা সাবার করে ফেলে।
আজকাল প্রায় খবর দেখি পাখিরা সার বেঁধে মরে পরে আছে। এই মরে যাওয়ার করাণ পাখিরা কোন ধরণের বিষ মেশানো খাবার খেয়েছিল। আমাদের ভূমিতে আমরা বিষ মিশাই ফসল রক্ষা করার জন্য। নিজেদের দেহেও তো সেই বিষ খাবারের সাথে কিছু না কিছু যায়।
যার প্রভাবে বিকৃত হয় দেহ অর্গান। এদেশে যদিও কতটা কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে তার একটা নিয়ম আছে। কিন্তু এখন শুনেছি আমাদের দেশে কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে যার নিয়ম কতটা মানা হয় কেউ জানে না। এখানে খুব বেশি পাওয়া যায় এবং সস্তায়
বিশেষ করে চায়নার ফল, সবজীগুলো বিশাল আকারের । দেখলেই আমার ভয় হয়। এদের অনেকদিন ফ্রিজে না রেখে বাইরে রেখে দিলেও পচে গলে নষ্ট হয় না।
শরীরের ভিতর এই কীটনাশক দিয়ে উৎপাদিত সব ফল, সবজী কতটা পরিবর্তন আনে তা দেখতে পাই বেশ কয়েক বছর পরে। যখন নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতে হয়, নানা রকম নতুন উদ্ভুদ শারীরিক সমস্যার কারণে।
যা নতুন আসে বাজারে খুব ব্যবহার হয় তার অপকারিতা জানা যায় বেশ কবছর পর যখন এর বিরুপ প্রভাব পরে মানুষের শরীরে এবং প্রকৃতির পরিবেশে। প্রাণী, পোকা কীট পতঙ্গ এবং এবং মাঠ জমিন নদীর উপর। নতুন করে বন্ধ হওয়ার আগে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।
আমাদের দেশে শীতকালের সবজি গুলো গরমকালে পেতাম না। গরমকালের সবজী, ফল শীতকালে পেতাম না। বিদেশে এসে সব ধরনের সবজী ফল সব সময় পাই। কিন্তু স্বাদ, গন্ধ এবং আকৃতি প্রকৃতি কোন মিল নাই। স্বাদ বলতে কিছু নেই। যদিও আছে সব রকমের খাবার। তাই আমি বসন্ত আগমণের অপেক্ষায় থাকি যখন নিজে কিছু ফল সবজী ফলিয়ে খেতে পারি, অকৃত্তিম জিনিস অকৃত্তিম স্বাদে এবং গন্ধে, অকৃত্তিম ভালোবাসায়। সাথে যোগ হয় নিজের ফলানো ফসল পাওয়ার আনন্দ।
প্রাকৃতিক নিয়মগুলো আমরা নিজেরা নষ্ট করে ফেলছি নানারকম উদ্বভাবনির মাধ্যমে। আমরা মেরে ফেলি প্রকৃতির প্রয়োজনীয় পোকা মাকড়, পাখি, প্রাণী বিরক্তিকর ভেবে।
কিন্তু তারাও যে নিরবে, নিভৃতে আমাদের অনেক উপকার করে যাচ্ছে তার খবর আমরা রাখি না।
এ বছর ঘর ভর্তি হয়ে আছে কিছু লেডিবাগ নামাক পোকা দিয়ে। যেহেতু আমি বনে জঙ্গলে থাকি। শীতকাল শুরু হলে ঘরে কিছু তাপ রাখতে হয় নিজেদের প্রয়োজনে। পোকামাকড় সেই তাপে বিভ্রান্ত হয়ে নিজেদের থাকার আবাস গড়ে নেয় আমার ঘরে। তারা যে কিভাবে ঘরের ভিতরে ঢুকার পথ পায়! আমি খুঁজে পাই না কিন্তু তারা ঠিক খুঁজে পায় পথ, আপ্যায়ন ছা্ড়াই আমার ঘরে ঢুকে পরার। যেদিন উষ্ণতা বাড়ে বাইরে সেদিন দেখি তারা চিপায় লুকিয়ে থাকা অবস্থা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে।
লাইন দিয়ে হাঁটে জানালায়। জানালায় আসে আসলে ওরা বেরিয়ে যেতে চায় ঘর থেকে বাইরে। কাঁচ জিনিসটা ওরা বুঝতে পারে না। পাখিদেরও দেখি জানালায় এসে বাড়ি খায়, প্রায় সময় উড়তে উড়তে। কাঁচের আবরণ ওরা দেখতে পায় না।
অনেকে বলেন জানালায় এক দুটো ছবি স্টিকার লাগিয়ে রাখতে।
পাখিরা যাতে কাঁচের সাথে ধাক্কা খেয়ে মারা না যায় সেজন্য সতর্কতা। লেডিবাগের এই দল বেঁধে ঘরে ভিতর হাঁটা চলা দেখে খুব বাজে লাগছে কিন্তু এদের নিয়ে কি করব এখনকার টিচার ইউটিউবে দেখলাম কেউ মেরে ফেলে না এদের। ভ্যাকুম দিয়ে ক্লিন করে বাইরে ছেড়ে দিচ্ছে তাদের।
এরা প্রায় পাঁচশ প্রজাতির ছোট পোকা খায় যা আমাদের ফসলের জন্য ক্ষতিকর।
ঘরে থাকা এরা হয়তো শীতের প্রয়োজনে ঘরে ঢুকেছিল নিজেদের বাঁচাতে উত্তাপ পেতে কিন্তু ঘরে খাবার না পেয়ে অনেকেই মরে যাচ্ছে হাঁটতে হাঁটতে।
আমি যাদের ধরতে পারছি ছেড়ে দিচ্ছি বাইরে ।


লালটুকটুকে হয়ে যায় এই গাছের ডালকাণ্ড সব শীতের শেষে। মাঠ ভরা এমন লাল টুকটুকে বউ দেখতে বেশ ভালোলাগে।

প্রকৃতির সাথে মিলে মিশে এই সময়টা বেশ কাটে পাখির গানে তাদের খেলা দেখে, প্রাণীদের শীত ঘুম থেকে জেগে উঠে তাদের ব্যস্ত সময় দেখে।


এমন ফুলে ফুলে গাছ ভরে উঠা প্রজাপতির আগমনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো এক মাস।
সবগুলো ছবি আমার নিজস্ব
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×