somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার কুরবানির পশুটি জনি সিন নয়তো !

২১ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি নেট ।

এমন কোন বাংলাদেশি নাই যে, পরীক্ষার খাতায় গরু রচনা লিখে নাই। তার সংখ্যা নেহাত কম ই পাওয়া যাবে। গরুর মাথা থেকে লেজ সব খাওয়া যায়। আমিও মেলাদিন পর গরু রচনা লিখতে বসেছি। গরু বন্দনায় মেতেছি।

গরু নিরীহ প্রাণী দের মধ্যে একটি। পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে বড় সুরাটির নাম " বাকারা " মানে গাভী। এখন বুঝতে পারছেন গরু নিয়া গোটা একটা সুরা নাযিল হয়েছে মানে আসমানী কিতাবে এ প্রাণী নিজ মহিমায় গরিমায় জায়গা করে নিয়েছে।

গরু তৃনভোজি প্রাণী। এর মল মুত্র বিশাল কামে কাইজে লাগে। এই করোনাতে তো পুরা ভারতে হিট! এর মুত্র প্রতি গ্যালন পাঁচ থেকে ছয় সাতশ রুপি পর্যন্ত হয়েছে। ভাবা যায়! আর সার হিসেবে বা জ্বালানি হিসেবে তো আছেই।

গরুদের ভিতর মরদ এবং নারী । দুইটা ই আছে। মানুষের মতন।

একবার ছোট বেলায় নানু বাড়িতে থাকতে দেখছিলাম পাল দেয়াতে এক মরদ বা ষাঁড় কে আনা হয়। তখন চার ক্লাসে পড়ি। পাল দেয়া মানে কি অত বুঝতাম না। এখন যেমন ব্যাপারটা পরিষ্কার! তা চলেন পাল দেয়ার সময় কি করা হয় একটু বিস্তারিত জানি।

যে গাভীটিকে পাল দেয়া হয় বা হবে সেইটাকে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁশের খুটির সাথে বেঁধে রাখা হয়। তারপর মরদ কে আনা হয়। মরদ টি কাছে এসে গন্ধ শুঁকে তারপর আরও কাছে আসে আরও কাছে এসে গলা ঘাড়ে মুখ ঘষে শেষ পর্যন্ত উপরে চড়ে তাহার মহত কর্মটি সেরে নেমে পড়ে এবং এ কর্মটি যে করে তা দেখতে প্রচুর মানব সম্প্রদায় উপস্থিত থাকে।খুব ঘটা করে ব্যাপারটা করা হয়। সবার ভেতর বিপুল উত্তেজনা বিরাজ করে।

এখন অবশ্য এ কাম অমন করে হয়না পশু ডাক্তার অথবা পশু অধিদপ্তর এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

গরুর ভেতর মোটা সরু মাঝারি নানান সাইজ আছে। নানান রঙ এর হয়। এখন অবশ্য গরু মোটা তাজা করার দাওয়াই পাওয়া যায়। গরুকে খাওয়ানো হয়।

এমন কি এ দাওয়াই মানুষ শ্রেণীর মধ্যেও চালাচালি বা খাওয়ার প্রচলন লক্ষ্য করা যায় !

বিজ্ঞানের উন্নয়ন এর সাথে সাথে এদের উন্নতি সাধন হয়েছে।যা এখন হাইব্রিড এবং ক্রসিং নামে খুব পরিচিত।

বিলেতি মরদ আর ধরেন দেশী স্ত্রী গাভীর মিলনে একটা নতুন প্রজাতি জন্ম নেয়।মনে করেন মার্কিনী আর বাঙালি মিলে নতুন একটা কিছু অমন আর কি ! এদের শরীরে মাংস থাকে প্রচুর। আর এদের স্ত্রী গাভীর স্তনের বোঁটা অনেক বড় হয় এরা প্রচুর পরিমাণে দুধ দেয় । 

এই যে গরুর দুধ!এর পুষ্টি গত দিক নিয়া লিখলে শেষ হবে না। দুর্বল দুর্বল লাগলে প্রায়ই মনুষ্য শ্রেণী বলতে থাকে দুধ খা দুধ!  বল পাবি !

এ গরু আরেকটি কাজের জন্য বিখ্যাত। এরা কুরবানির সময় সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় বিক্রিত প্রাণীর মধ্যে হিট তালিকায় থাকে। তালিকার শীর্ষে!এর মাংস সারা দুনিয়ায় হিট!

এদের ও রোগ বালাই হয়। চিকিৎসা দেয়া হয়। একবার "ম্যাড কাউ " নামে এক রোগ দুনিয়ার অনেক দেশে দেখা দিলে প্রচুর গরু হত্যা করা হয়। গরু থেকে এ রোগ মানুষের হতে পারে। এতে করে রোগীর শরীরে মাংস পেশীতে প্রচন্ড খিচুনি হয়।এমন কি রোগী অন্ধ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

সে যাই হোক। আজ যখন কুরবানির সময় তাহলে গরুর ভুমিকা যে বিশাল তা আর বলতে।

এ গরু নিয়ে মনুষ্য শ্রেণী কত কিছু যে করে। ঈদের সময় নাটক হয়। মাঝেমধ্যে সিনেমা হয়। মনুষ্য শ্রেণী নানান ধান্দা শুরু করে।

একবার আমার এলাকায় এলাকার এক নেতা গরুর হাঁট বসালেন। বিশাল আয়োজন। তখন তিনি তার হাঁট টিকে হিট বানাতে তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী কে হুকুম দিলেন আশেপাশের সব হাঁটের চেয়ে যেন তার হাঁটে বেশী গরু থাকে।

এই ক্যাডার বাহিনী অস্ত্রসস্ত্র সহ মহড়া দিতে লাগলো। ধরে ধরে জোর করে গরুর মালিকদের কে হাঁটে নিয়ে আসা শুরু করা হলো।

আমাদের পাশের এলাকায় যে নদী আছে সে নদী দিয়ে যাওয়া প্রতিটি গরুর ট্রলার আটকে সেই হাঁটে আনা হতো।

তো একবার এমন ক্যাডার বাহিনী আর গরুর মালিক দের মতে হাতাহাতি মারামারি শুরু হলে গরু ভর্তি ট্রলার টি ডুবে যায় আর এই বোবা অবলা প্রাণী গুলি পানিতে ডুবে মারা যায়। যা সমস্ত মিডিয়ায় খুব প্রচার হয়েছিল। গরুর মালিক দের সে কি কান্না! স্বাভাবিক কত আনন্দ বেদনার সাথী ছিল এই বোবা প্রাণী গুলি। এগুলি বিক্রি করে তাদের ঈদ হতো যা এখন ধুলা মাটি। এদের সন্তানদের মুখের দিকে তাকানো কি যায়!

সরকার এর উচিত এর একটা বিহিত করা। অবশ্য বহু ফুলের মতন পবিত্র বড় নেতা পাত্তি মাল খায়।তাই কে আর অত ঘাটায়!

আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই অবলা প্রাণী দের নেশা পানি করায় যাতে মোটা দেখা যায়।দাম যাতে একটু বেশী পাওয়া যায়!

একবার এক মুরুব্বির সাথে কুরবানির জন্য গরু কিনতে গেছি। কথায় কথায় উনাকে জিগাইছিলাম " কেমনে ভালো গরু চেনা যায়?  "

সে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বলল, " শোন! যেই গরুর পাছা দেখবা মাংসল আর গোলগাল ঐ টা কিনবা "!

আমি এখনো ঐ ফর্মুলা ফলো করি। আপনি?

প্রতি ঈদে আবার কিছু হিট গরু থাকে এদের নিয়ে মিডিয়া খুব মাতামাতি করে। যেমন এবার ছিল " কালা পাহাড় " সুলতান " এবং জনি সিন "! জনি সিন কে জানতে গুগল করে জেনে নিতে পারেন !

আমি তো এ নাম শুনে হাসমু না কানমু বুঝলাম না। কুরবানী পশুর নাম জনি সিন! ভাবা যায় আমরা কোথায় আছি!

যাদের ধরতে অসুবিধা হচ্ছে তাদের একটা ক্লু দেই।একবার বই মেলাতে এক স্টোর এর নাম ছিল " মিয়া খলিফা এবং জনি সিন ! " এইবার মনে হয় ধরতে পারছেন। না পারলে আপনার দুধ খাওয়ার বয়স শেষ হয় নাই!

এসব কালা পাহাড়, সুলতান, জনি সিন সবাই কিন্তু কিনতে পারে না। যারা কিনে তাদের আয়ের উৎস কি? সে ব্যাপারে দুদক নীরব ভুমিকা পালন করে।কেন করে জানি না। এরা ফুলের মতন পবিত্র দের সাথে উঠাবসা করে অথবা মিলে মিছে থাকে তাই হয়তো !

যাক অনেক দীর্ঘ হয়ে গেল এ গরু রচনা। নিজ দায়িত্বে সময় নিয়ে পড়ে নিবেন। ভুল হলে মাফ করে শুধরে দিবেন।

এখনো বাদ রইল এর চামড়া, শিং, লেজ কতকিছু সে না হয় আরেকদিন।

ভালো থাকবেন এবং সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন। ঈদ মোবারক !

বিদ্র ঃ গরুর রক্ত মল দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন। ইহা একটি অনুরোধ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১১:০৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×