
কবিতাটি আমার বাবা কে নিয়ে লেখা। উনার একটা নীল রঙের সোয়েটার ছিল। যা আমার মা খুব যতনে বুনেছিলেন। আজ বাবার দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী। সবাই দোয়া করবেন দয়া করে। দুনিয়ার সমস্ত পিতামাতা সুখী হোক।
বাবার একটা নীল রঙের সোয়েটার ছিল
ভি নেকের
না,
না,
সোয়েটারটিতে অমন বিশেষ দামী উল
অথবা কারুকাজ ব্যবহার হয়নি
একদম সাদামাটা সাধারণ ।
মায়ের হাতের বোনা
তাই উহা সব কিছুর উর্ধ্বে
অসাধারণ।
আমি তখন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র
প্রেম বলতে বুঝতাম
বাকের ভাই, মুনা
অমিতাভ, রেখা।
একদিন রোদ মরা বিকেলে
বাবা শুয়েছিলেন
আমি আয়নার সামনে নিজেকে নিয়ে মহা ব্যস্ত।
মা ঘরে ঢুকেই
বললেন,
উঠেন তো আপনার মাপ নেই
কিছুটা আদেশ সুচক বাক্য।
বাবা,
আহ!
এ অবেলায় কেন করছ বিরক্ত?
মাপ নিয়েই মা
ঘুমন্ত বাচ্চার মতন শান্ত
মুখে হাসি
মায়ের প্রতি বাবার
অভিযোগ নেই বিন্দুমাত্র।
মা,
দুপুরে ঘুমভাতের সময় গুন গুন গান করতেন
আর উলের গুটি, ফ্রেম নিয়ে মউজে থাকতেন
রাতে যখন সবাই মিলে টিভির সামনে
দেখছি সাপ্তাহিক নাটক
মা তখনও সোয়েটার বোনায়রত
মাঝেমধ্যে তাকায় বাবার দিকে
বাবা,
সুবর্না মুস্তফা,
আসাদুজ্জামান নুরের ভক্ত ।
প্রায় দিন পনেরোর মাথায়
সোয়েটার বোনা শেষ
যেন রাজা সলোমনের জন্য
বিলকিস রাণীর উপঢৌকন
বা
এর চেয়ে বেশী তার রেশ।
বাবা পড়েই বললেন,
মাপটা ঠিক হয়েছে তো
বেশ ফিট
মায়ের মুখে আঁচল
লাজে প্রায় খুন !
বাবার শের শায়েরী পেশ।
বাবা প্রায়ই বৃষ্টি বাদল নামলে
একটু ঠান্ডা পড়লে
সোয়েটারটি পড়তেন যে কোন অজুহাতে
শীতে তো শার্টের নীচে রোজ।
আজ বাবার নীল রঙের সোয়েটারটি
ঠিকই আলমারির সেলফে
বাবা নেই
বাবা নেই
এমনি করে মাঝপথে ছেড়ে যাওয়া
এই কি জীবন?
বলা নেই
কওয়া নেই
একলাই পথ চলা সুদুরে।
ক্লান্ত পথিকের মতো ফিরবার পথ চেয়ে
মা আছেন একলা
নিশ্চয়ই মা আরেকটা
হ্যাঁ,
আরেকটা নীল রঙের সোয়েটার বুনে চলেছেন গোপনে গোপনে
বাবাকে পড়াবেন
রোদ জ্বলা পৌষের দুপুরে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




