""বাড়িয়ে দাও তোমার হাত , আমি এবার তোমার আঙ্গুল ধরতে চাই""
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
কি করে রীধির কাছে ক্ষমা চাওয়া যায় তাই ভাবতে ভাবতে বেলা বারোটার দিকে বাসায় ফিরলাম ... ঘরে ঢুকতে গিয়েই মান্না দে'র মিষ্টি একটা গান শুনতে পেয়ে নিমিষেই মনটা ভাল হয়ে গেলো ... ক্ষাণিকটা শব্দ করে ঘরে ঢুকলেও রীধি বুঝতে পারল না ... ও বিছানায় হেলান দিয়ে বসে একটা উপন্যাস পড়ছে আর গান শুনছে.... দেখে মনে হচ্ছে একটা পরী আমার বিছানায় বসে আছে .... ওকে দেখতে কি-যে মিষ্টে লাগছে তা রবী-ঠাকুরের কবিতা দিয়েও প্রকাশ করা যাবে না....
হঠাৎ আমার দিকে চোখ পড়তেই ও একটু অসস্থিতে পড়ল ... গানটা বন্ধ করে, বইটা হাতে নিয়ে, আমার কাছে এসে ভীত স্বরে বলল, সরি . আপনি বিশ্রাম করেন, বলেই বাইরে চলে গেলো.....
আমি ওর দিকে শুধু তাকিয়েই থাকলাম মুখ দিয়ে কোনো কথা আসছিলো না... ও চলে যাওয়ার পর সরাসরি বারান্দায় চলে গেলাম ..... মনে মনে বললাম, রীধি তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও ... বিয়ের প্রথম রাতেই তোমার সাথে এইরকম বাজে ব্যবহার আমি মন থেকে করি নি ... করেছি মা আর দুষ্টুর উপর রাগ করে.... তুমি একবার আমার হয়ে ভাবো, বিয়ের দশ মিনিট আগে যদি কেও জানে তার বিয়ে তবে তার রাগ উঠাটা কি স্বাভাবিক না... হায়রে !!! এখন এসব মনে করে কি লাভ গত রাতের ব্যবহারে জন্য আমি নিজেই তো নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না আর রীধি কি করে করবে... নিজেকে ভীষণ একা লাগছে ! ভীষণ !!
একটু আগে রীধি যেখানটায় বসে ছিল সেখানটায় এসে বসে টিভি টা ওন করলেও, দেখতে খুব বিরক্ত লাগছে .... আসলে আমি মনে মনে রীধির জন্য অপেক্ষা করছি.. কখন আবার আসবে ও ....
দু-তিন দিনেই ওর রুচির সাথে আমার যথেষ্ট মিল খুজে পেলাম ... স্বপ্নে যেন ওর মত মেয়েকেই চাইতাম জীবনসঙ্গী হিসেবে.... কিন্তু ও আমাকে যথেষ্ট সম্মান করলেও আমি ওর সামনে কিছুই বলতে পারি না....
রাত নয়টা বাজতেই মা ডাইনিং থেকে ডাকল সামায়ন খেতে আয় .... রীধি মায়ের সাথেই ছিল ..... খাওয়ার সময় মা বলল, কাল বউমাকে নিয়ে শ্বসুর বাড়ি থেকে ঘুরে আয় , তোর শ্বসুর বার বার বলছে..... আমি রীধির দিকে তাকাতেই ও মুখটা নিচু করলো .... আমি ওকে অবাক করে দিয়ে বললাম ঠিক আছে যাবো ..... রীধি চোখ ভরা কৌতুহল নিয়ে আমার দিকে তাকালো, ভাবখানা এমন যে ঠিকঠাক শুনেছে তো ....
খাওয়ার পর রীধি ঘরে এসে অতি-আনন্দে ব্যাগ গোছাতে লাগল ..... ওর হাসি মুখটা দেখে আমার কি যে ভাল লাগছে তা বলে বোঝাতে পারব না ... মনে মনে মা-কে ধন্যবাদ দিতে লাগলাম, রীধির মত একটা দামী উপহার আমাকে দেওয়ার জন্য....
হঠাৎ রীধিকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে একটু নড়েচড়ে বসলাম ..... কাছে আসতেই বললাম কিছু বলবে....
~ রীধি খুব আস্তে আস্তে বলল , জী বলছিলাম যে আপনি কি সত্যিই কাল আমার সাথে যাবেন ?
- হে যাবো .....
কৌতুহল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, একটা অনুরোধ করব রাখবেন ....
- বিশ্বাসী কন্ঠে বললাম , করো (আর মনে মনে ভাবলাম, এই প্রথম আমার নিজের বউ আমাকে একটা অনুরোধ করবে আর আমি রাখবো না এ হয় কখনো ... করেই দেখো না....)
~ আপনি যে আমাকে বউ হিসেবে মেনে নিতে পারেন নি এর জন্য আমার কোন কষ্ট নেই , কিন্তু প্লীজ আমার মা-বাবার সাথে একটু ভাল ব্যবহার করবেন, উনারা যেন কিছু বুঝতে না পারে, তা-নাহলে উনারা খুব কষ্ট পাবে, আমি যে উনাদের একমাএ আদরের মেয়ে ... এই বলে রীধি শত চেষ্টা করেও চোখের পানি আড়াল করতে পারল না .... আমার উত্তরের আশা ছেড়ে দিয়ে বারান্দায় চলে গেলো .....
আমার এখন সত্যি নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে ... রক্ত চলাচল যেন কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো ..... ওর প্রতি এক অজানা মায়া আমাকে ঘিরে ধরলো....
সকাল আট টা বাজতেই আমি আর রীধি গাড়ী নিয়ে রেল-স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম.... গাড়ী তে উঠার সময় খেয়াল করলাম দুষ্টু ওর ভাবীকে বলছে সাবধানে থাকতে আর তাড়াতাড়ি চলে আসতে ....
স্টেশন-মাষ্টার কে কিছু টাকা বকশিস্ দিয়ে পাশাপাশি দুইটা টিকিট কেটে ট্রেনে উঠলাম ..... রীধি বসল জানালার পাশে আর আমি ওর পাশে .... আমি রীধির পাশে বসে যাচ্ছি এটা ভাবতে ভাবতেই অনেকটা সময় পার হয়ে গেলো ..... ট্রেনের ঝকঝক শব্দ ছাড়া সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে আমাদের মধ্যে .....
হঠাৎ রীধির মাথাটা আমার কাধের উপর পড়ল .... আমার শরীরের শীতল রক্ত প্রবাহটা যেন আচ করতে পারলাম ..... ও আমার কাধে মাথা রেখে নিশ্চেন্তে ঘুমাচ্ছে দেখে নিজের চোখকে পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারছি না....
এই প্রথম রীধি আমাকে স্পর্শ করল এই ভেবেই আমার নাকের পাশ দিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করল .... বাতাসে ওর কিছু চুল উড়ে উড়ে আমার মুখ স্পর্শ করছে ... ওর মুখটা আমার খুব ছুয়ে দেখতে ইচ্ছা করছে!!! খুব ইচ্ছা করছে!!! খুব!!! এ এক অন্য রকম অনুভূতি যা কখনো হয়নি আগে ..... জানিনা এই অনুভূতিটাকেই ভালবাসা বলে কিনা ..
ট্রেন এসে থামল রাজশাহী স্টেশনে , ব্যাগ হাতে নিয়ে গেটের দিকে যাচ্ছি, আমার পিছু পিছু রীধিও আসছে ....
ট্রেন থেকে নেমে রীধির দিকে চেয়ে আছি আর ভাবছি ইস্ ও যদি এখন ওর হাতটা বাড়িয়ে দিতো তাহলে ধরে অতি-যত্নে নামাতাম ...
ও আমার দিকে তাকিয়ে, আমাকে অবাক করে দিয়ে, ওর হাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো ...
চোখটা ঝাপসা হয়ে গেলো পানিতে... প্রাণ দিয়ে ভালবাসলে বোধহয় এমনি হয়,,,সবকিছু মুখে বলতে হয়না ...
উৎসর্গ ::: সকল ব্লগারবৃন্দ ....
১ম পর্ব : আমি যে চোখের বালি ... কি করে রীধি কে বলি...
১৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা
সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১
নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়
সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।
হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই
সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন