somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেমন হলো "তুম বিন" খ্যাত প্রিয়াংশুর প্রথম হরর জনরার কাজ!!

১৫ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Barun Rai and the House on the Cliff
Genre: Horror.
Duration: Approximately 2 hours.
Platform: Eros Now Original.


এই ওয়েব সিরিজ বা ফিল্ম যাই বলি না কেন, দেখার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে প্রথমত ভিন্টেজ প্লটে ক্রসওভার গল্প, দ্বিতিয়ত প্রিয়াংশু চ্যাটার্জী। বলা যায় এক প্রকার প্রিয়াংশুর প্রতি মুগ্ধতা থেকেই এই সিরিজের প্রতি আকর্ষণ।

প্রথমে প্রিয়াংশু এবং গোয়েন্দা চরিত্র নিয়ে কিছু কথা বলি, যদিও এই সিরিজ গোয়েন্দা কাহিনীর জনরার মতো না, তবে এতে ইনভেস্টিগেটিং ফ্যাক্ট আছে ভরপুর। প্রিয়াংশু এখানে একজন ইনভেস্টিগেটর এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তো যেটা বলছিলাম, গোয়েন্দা চরিত্র নিয়ে। প্রিয়াংশু এর আগে গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কলকাতার সিনেমা “এবং কিরীটি’ তে কিরীটি রায় চরিত্রে। সুলেখক নিহাররঞ্জন গুপ্তের চরিত্রটি নিয়ে বেশি কিছু বলার দরকার নেই হয়তো। কিন্তু দরকার আছে এটা অনুধাবনের যে কিরীটি রায়ের যে বাহ্যিক বর্ণনা লেখক নীহাররঞ্জন গুপ্ত লিখেছিলেন তার গল্পগুলোতে, সেসবের সাথে প্রিয়াংশুর দৈহিক গঠন বেশ ভালোভাবেই মিলে যায়। ছয় ফিট মেদহীন দেহ, নিখুতভাবে কামানো দাড়ি, অন্তর্ভেদী দৃষ্টি এবং অবশ্যই জলদগম্ভীর কন্ঠ। এসব কিছু আবিষ্কার করে প্রিয়াংশুকে দিয়ে কিরীটির রূপায়ন করেছিলেন অনির্বাণ পারিয়া। যদিও তাতে বেশ কিছু মডিফিকেশন করেছিলেন, তারপরও প্রিয়াংশুকে কিরীটি হিসেবে যেন বেশ মানিয়ে নিয়েছিলো। এবং কিরীটি দেখার পরপরই অপেক্ষায় ছিলাম প্রিয়াংশুকে ইনভেস্টইগেটর এর চরিত্রে আবার কখন দেখতে পাই।


ছবিঃ কিরীটি চরিত্রে প্রিয়াংশু
গতবছরের অক্টোবরের ২৭ তারিখ প্রিয়াংশু তার ইন্সটাগ্রামে প্রথমবারের মতো বরুন রায় চরিত্রটির ফার্স্ট লুক প্রকাশ করেন। তখন ক্যাপশনে কিছুই লিখেননি তিনি, তখন ভেবেছিলাম হয়তো আবারও গোয়েন্দা গল্পে অভিনয় করছেন তিনি ইনভেস্টিগেটরের চরিত্রে। সময় গেলে জানতে পারি এটা আসলে একটা হরর জনরার গল্প। প্রিয়াংশু প্রথমবারের মতো এই জনরায় কাজ করছেন এবং দ্বিতীয়বারের মতো ওয়েব প্ল্যাটফর্মে কাজ করছেন। আসলে এই ধরনের আফসোস প্রয়াত ইরফান খানকে নিয়েও ছিলো, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের স্বর্ণযূগে ইরফান খান নিজের চিকিৎসা নিয়ে এতই ব্যাস্ত ছিলেন যে ওয়েবে সেভাবে সময় দিতে পারেন নি। প্রিয়াংশু অসুস্থ না হলেও তাকে ওয়েবে নিয়মিত দেখা না যাওয়ার আক্ষেপটা অনেক দর্শকেরই আছে।


ছবিঃ বরুন রায় চরিত্রের ফার্স্ট লুক।

প্রিয়াংশু যেহেতু এই সিরিজের মূল আকর্ষণ, তাই তাকে ঘিরেই প্রত্যাশাটা বেশি ছিলো এবং উনি স্যাটিসফাইও করেছেন সেই প্রত্যাশাকে। গল্পটিও বেশ ভালো, অন্যরকম। তবে প্রিয়াংশুকে বাদ দিয়ে যদি বিচার করি, সিরিজে সেরকম কোনোও ফিল পাওয়া গেলো না। না ব্যাপারটা এমন না যে ভয় পাইনি, জাস্ট কি যেন নেই এতে। কিছু একটার অভাব আছে। কেন যেন ধাক্কা দিতে পারলো না।
প্রথমত এই সিরিজের অন্যতম দুর্বলতা এর দুর্বল ভিএফএক্স। সিরিজের একদম শুরুতেই আপনার চোখে কিছু একটা ধরা পরবে, কি যেন একটা মেকি মেকি লাগছে। একটা হরর সিরিজের এলিগেন্স নষ্ট করতে এইটাই যথেষ্ট।


ছবিঃ বরুন রায় সিরিজের একটি দৃশ্য।
সবচেয়ে আক্ষেপের বিষয় পরিচালক স্যাম ভাট্টাচার্য একজন ভিএফএক্স আর্টিস্ট। শকুন্তলা দেবীর মতো সিনেমায় কাজ করেছেন লিড ভিএফেক্স সুপারভাইজার হিসেবে। অথচ এই সিরিজে ভিএফএক্স অনেক দুর্বল।


ছবিঃ বরুন রায় সিরিজের একটি দৃশ্য।
সিরিজটির শ্যুটিং ইংল্যান্ডের একটা ফার্ম হাউসে হয়েছে, Little Tawney Hall Farm, Romford, Essex, England, UK. শুধুমাত্র ক্লিফ এর অংশটায় ভিজুয়াল আর্টস এর প্রয়োগ করা হয়েছে। পরিচালকের যে পরিকল্পনা সেটা ভালো ছিল, শুধুমাত্র ভিএফক্স আরেকটু আনপ্রেডিক্টেবল হলে এই দিকটায় কমতি থাকতো না।


ছবিঃ বরুন রায় সিরিজের একটি দৃশ্য।
গল্পে আসি, গল্পের প্লট অনেকটা এরকম; ১৯৩০ এর সময়কাল। ভারত থেকে এক দম্পতি ইংল্যান্ডের ছোট একটি শহর Corvid’s head এ শিফট হয় এবং ক্লিফ এর উপরে একটি পরিত্যাক্ত বিসাল একটি বাড়ি কেনে। সেই ক্লিফ থেকে রহস্যজনক কারনে একের পর এক সুইসাইডের ঘটনা ঘটতে থাকে, সেই দম্পত্তিদের জীবনেও উপদ্রব শুরু হইয় এবং ঘটনাচক্রে ডাক পরে বরুন রায়ের।


ছবিঃ Little Tawney Hall Farm, Romford, Essex, England, UK এবং সিরিজে চিত্রিত বাড়ি।
গল্পটা শুনতে ভালো লাগলেও পরিচালক সিকোয়েন্স থিক রাখতে পারেন নি। রহস্যের শুরু যেদিক থেকে সেখানে খুব একটা স্পটলাইট ধরে রাখতে পারেন নি। ওই জায়গাটায় বরুন রায়ের ইন্ট্রোডাকশন না রেখে গল্পের রহস্যটাকে আরও ঘনীভূত করা যেতো।
কিছু কিছু জায়গায় গল্প কোনোও সেন্সই মেক করে নি। হরর জাতীয় কোনও কিছুতে লজিকটা দর্শকদের কাছে ক্লিয়ার না হলে সেটার গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়।
ভিন্টেজ সময়কালে বিশাল বড় পুরোনো বাড়িতে ভুতের উপদ্রব এবং শয়তানের উপদ্রব নিয়ে গল্প মুটামুটি বেশ কমন। এই সিরিজের এই কমন গল্পে আনকমন জিনিস হচ্ছে সমস্যার সমাধানকারী হিসেবে এক মধ্যবয়সী বাঙালী গোয়েন্দার আবর্তন।বলা যায় এই একটা দিক থেকে সিরিজটা আনকমন। এবং খুব সম্ভবত এইটা কিছুটা তাড়াহড়ো করে বানানো হয়েছে। সিরিজের শেষের দিকে বলা হয়েছে বরুন রায় নতুন কেস নিয়ে ফিরবেন অর্থাৎ দ্বিতীয় সিজন আসবে। আশা করি সেটা তাড়াহুরো না করে বেশ সময় নিয়ে ভালোভাবে এবং বড় ডিউরেশন নিয়ে নির্মাণ করা হবে যেরকমটা প্রথম সিজনে করলে ভালো হতো।


ছবিঃ বরুন রায় চরিত্রে প্রিয়াংশু
প্রিয়াংশু গোটা সিরিজেই মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন, পাশাপাশি নায়রা ব্যানার্জি, সিড মাক্কার বেশ ভালো করেছেন। নায়রা ছিলেন এক কথায় flawless. স্ক্রিন টাইম আরও বেশি হলে সবার জন্যই ভালো হতো। কস্টিউম মুটামুটি ভালো ছিলো। ৭০ এর ট্রেন্ড এর সাথে মিল রেখে। প্রিয়াংশুকে এখানে অলমোস্ট শার্লক হোমস এর মতো লাগছিলো।


ছবিঃ বরুন রায় চরিত্রে প্রিয়াংশু
সিরিজে মিউজিক নিয়ে কোনও কম্প্রোমাইজ করা হয় নি। সোহেইল সেন ছিলেন মিউজিকে, সাউন্ডট্র্যাক বেশ ভালো ছিলো। মুহিত চৌহানের একটা হালকা চালের গান ক্রেডিট সিনে ব্যাবহার করা হয়েছে।
একটা মজার ফ্যাক্ট দিইয়ে শেষ করি, হুড খোলা গাড়িতে প্রিয়াংশুকে দেখলেই তুমি বিন সিনেমাটার কথা মনে পরে। মনে হয় জগজিত সিংয়ের গাওয়া গান ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে আর প্রিয়াংশু হুড খলা মার্সিডিজ চালাচ্ছেন। এইস সিরিজটি দেখার সময়েও বেশ কয়েকবার তুম বিন এর সাথে রিলেট করে ফেলেছিলাম।


ছবিঃ বরুন রায় চরিত্রে প্রিয়াংশু

সব মিলিয়ে খুব একটা খারাপ না, তবে তেমন একটা ভালোও ছিলো না, অসাধারণ কিছু করা যেতো দুর্ভাগ্যবশত সেটা হয় নি। দ্বিতীয় সিজনে ভালো একটা কামব্যাক হবে আশা রাখি।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:৫৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×