somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের প্রথম সাসপেক্ট থ্রিলার, আসলেই কি তাই!!

০৪ ঠা মে, ২০২২ রাত ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘদিন লাইমলাইটের বাইরে থাকা বা আরেকটু কটুভাবে বললে ভালো তেমন কাজ পাওয়া আর্টিস্টদের কাজ মাঝে মধ্যে দেখি ইচ্ছে করেই। এর কারণ এসব আর্টিস্টরা তাদের সাথেই কাজ করেন যাদের ভালো বড় মানের অভিনেতাদের কাস্ট করানোর ক্ষমতা নেই বা বাজেট কম থাকে। এক্ষেত্রে এসবের মাঝেও অনেক কাজ চোখে পরে যারা কিছুটা আলোচনা ডিজার্ভ করে। এসব আলোচনা আসলে কন্টেন্ট এর মান কতটুকু ভালো তা নিয়ে নয়, কন্টেন্ট কোন পর্যায়ে যেতে পারতো সেসব নিয়ে, এক কথায় এক্সপ্লোরিং।

সেইরকমই এক্সপ্লোরিং টাইপ সিনেমা, “নির্দোষ”

নির্দোষ এর মানে কি এইটা নতুন করে ব্যাখ্যা করার কিছুই নেই। কেউ সন্দেহভাজন হলে তার ক্ষেত্রে দুইটি প্রধান সম্ভাবনা কাজ করে, এক সে দোষী দুই সে নির্দোষ। আর সিনেমায় এই বিষয়ের আগমন মানেই কিছুটা চোখ বন্ধ করে বলা যায় ইহা অপরাধ বিষয়ক সিনেমা।
ক্রাইম বা অপরাধ বিষয়ক জনরার বেশ কয়েকটি ধারা আছে। এই ধারার মধ্যে সবচেয়ে কমন যে ধারা, সেটার নাম “Who done it” অর্থাৎ কে করেছে? কে খুনি? হত্যাকারী কে? অর্থাৎ হত্যাকারীর সন্ধানেই গোটা গল্প আবর্তিত হয়। এই “Who done it” জনরাতেও আছে বহুবিধ বিচিত্রতা এবং কমন জিনিস, সেটা নিয়ে আরেক জায়গায় আলোচনা হবে হয়তো। আপাতত যেটা বলতে চাচ্ছি, এই সিনেমা “Who done it” জনরার। গল্প আবর্তিত হত্যাকারীর সন্ধানে।

এবার আসি কাস্টিং নিয়ে, লেখার আগেই বলেছি, এই সিনেমা এক্সপ্লোরিং টাইপ। অর্থাৎ দর্শক টানার মতো তেমন কোনও কাস্টিং নেই। মূল চরিত্রে মঞ্জিরি ফেন্ডিস, অস্মিত প্যাটেল, আরবাজ খান, ম্যাহেক চাহাল, মুকুল দেব ইত্যাদি। কাস্টিংদের মধ্যে ম্যাহেক চাহালকে সালমান এর wanted সিনেমার পর আর দেখি নি, মুকুল, মঞ্জিরি মুটামুটি পরিচিত মুখ। অর্থাৎ বড় কোনোও কাস্টিং এই সিনেমায় নাই। ব্যাক্তিগতভাবে আমার নিজের এই সিনেমা দেখার দ্বিতীয় কারণ মঞ্জিরি ফেন্ডিস, প্রিয় অভিনেত্রী।

অভিনয়ে আসি। মঞ্জিরি ফেন্ডিস অসধারণ অভিনয় করেছেন। মঞ্জিরির ফ্ললেস (flawless) টাইপ এক্সপ্রেশন তার অভিনয়কে আরও ফুটিয়ে তোলে। এই সিনেমায় তিনি তেমন নতুন কিছু না দেখালেও তার এই কমন বিষয়টিকেই বেশ ভালোভাবে উপস্থাপন করেছেন। তবে মঞ্জিরি বাদে আর কেউ সেভাবে ভালো করেন নি। সবচেইয়ে বড় বিষয় স্ক্রিন শেয়ারিং নিয়ে অসামাঞ্জস্যতা আছে। মুকুল দেব আরও স্ক্রিন টাইম ডিজার্ভ করতেন এই সিনেমায় এবং একই সাথে মঞ্জিরিও। অতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম পেয়েছেন আরবাজ খান।

আরবাজ খানের অভিনয় নিয়ে আরেক প্যারায় আসতে হলো। আগেই বলেছি স্ক্রিন টাইম উনি বেশি পেয়েছেন, কিন্তু পার্ফমেন্স হতাশাজনক। ব্যাপারটা এমন নয় আরবাজ খান অভিনেতা হিসেবে উচ্চমানের, এখানে এক্সপেকটেশনের কারণ এর আগে “Stoneman murders” সিনেমায় আরবাজ খানের পার্ফরমেন্স। কেউ যদি স্টোনম্যানের এক্সপেকটেশন থেকে আরবাজ খানকে এই সিনেমায় দেখেন, আশাহত হবেন। সাধরণত “Who done it” জনরার গল্পে ইনভেস্টিগেটর থাকেন একজন ধুরন্ধর ক্ষুরধার মস্তিষ্কের ব্যাক্তি। এখানে ইনভেস্টিগেটর খালি পাঞ্চ মারেন কথায় কথায়, আর কথায় কথায় অ্যারোগেন্স আর এনকাউন্টারের ভয় (ইন্ডিয়ান সিনেমায় সবচেয়ে কমন)।

মুকুল দেবের জন্য নেগেটিভ রোল বিষয়টা উপভোগ্যকর ছিলো, উনাকে দেখে মনে হলো অনায়াসেই করেছেন কাজটা। আরেকটু স্ক্রিন টাইমিং দেওয়া যেতো তাকে। অবশ্য অধিকাংশ “Who done it” জনরার সিনেমায় ভিক্টিম, মানে যিনি খুন হন, তিনি পর্যাপ্ত স্ক্রিন টাইম পান না। এইটা সব জায়গাতেই লক্ষ্যনীয়।

ম্যাহেক এর অ্যাপারেন্স, সত্যি বলতে প্রয়োজন ছিলো না, যেভাবে তার রোল উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে একটা বিষয় কি এখানে ম্যাহেক যেই রোলটি প্লে করেছেন, আদাহ, রোলটি এরকম বম্বেতে অভিনেত্রী হওয়ার জন্য এক মেয়ে আসে কিন্তু আট বছরেও তেমন কিছু করতে পারে না। এই রোলটা বেশ রিলেটেবল তার নিজের সাথেও। এটা লক্ষ্যনীয়। যেটা আগেও বলেছি, সালমান এর সাথে wanted সিনেমায় ছোট একটি রোলে কাজ করার পর তিনিও সেভাবে লাইমলাইটে আসেন নি। “নির্দোষ” এর পর আর কোনোও সিনেমাতেও কাজ করেন নি।

গল্পে আসি। মুটামুটি সিম্পল। একজন খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত এক মহিলা, সব প্রমাণ তার বিপক্ষে কিন্তু সবার দাবি তিনি নির্দোষ, মহিলা মিডিয়ার কর্মী হওয়ায় মিডিয়াও তার ফুল সাপোর্টে, মার্ডার ওয়েপন গায়েব, কেইস হ্যান্ডেল করছে ক্রাইম ব্রাঞ্চ। এখানে বাইরের দেশের ক্রাইম নভেলের ছাপ অনেক স্পষ্ট, সিনেমার গল্পে একাধিক ক্রাইম নভেলের ছাপ আছে। যারা বিদেশি বই নিয়মিত পড়বে তারা ঠিকই বুঝে নিবে। হোক, তারপরও গল্পটা পটেনশিয়াল ছিলো। এতে অনেক ভালো কাজ করার, কাজ দেখানোর সুযোগ ছিলো। কিন্তু এর বদলে তাড়াহুড়ো করে কাজটা করা হয়েছে। “Who done it” জনরায় হলেও এতে “courtroom mystery” আছে ভরপুর। সবচেয়ে ভালো হতো একে ওয়েব সিরিজ বানালে। সিনেমা বানিয়ে শর্ট টাইমে গল্পের পটেনশিয়ালিটি ধরে রাখার চ্যালেঞ্জে পরিচালকগণ ব্যার্থ হয়েছেন। অথচ স্বল্প বাজেট এবং এক ঝাক আন্ডাররেটেড আর্টিস্টদের নিয়ে উনারা একটা সুন্দর কাজ উপহার দিতে পারতেন।

বলিউডে “Who done it” জনরার কাজ যে খুব বেশি হয়নি ব্যাপারটা এমন নয়। যেমন দৃশ্যম, কাহিনি ইত্যাদি। ষাট থেকে সত্তরের দশকে হলিউডের হরর দেখে যেমন রামাশ্রে ভ্রাতাদ্বয় বলিউডে হরর সিনেমা বানাতেন, সেরকমই হলিউডের মিস্ট্রি দেখে অনেক মিস্ট্রি সিনেমাই বলিউডে নির্মিত হয়েছে। তবে একজন ইনভেস্টিগেটর তদন্ত করে শেষে জাস্টিস করে দেন, এইটাইপ কাজ হাতে গোণা। যেগুলোও আছে তাতে সাইকলজিক্যাল থ্রিলার জনরা কিছুটা মিশ্রিত। জনরার দিক থেকে এইটা অসাধারণ এক কাজ।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০২২ রাত ১১:২০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×