somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Little Boy x Tube light

০৭ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“লিটল বয়”, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে আমেরিকার উৎক্ষেপণ করা প্রথম পারমাণবিক বোমা, যুদ্ধে ব্যাবহৃত প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র। কত শত পরিবার, কত হাজার মানুষ, গোটা একটা শহর এক নিমিষেই শেষ ছোট একটা নামের অস্ত্রে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের “লিটল বয়” সীমাহীন বিষণ্ণতার গল্প হলেও এই লিটল বয় সিনেমা সেরকম বিষণ্ণতার গল্প বলে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সিনেমা হলেও এইটা প্যাসিফিজমে ভরপুর কোনোও গল্প নয়। (যুদ্ধবিরোধী মতবাদ প্যাসিফিজম হিসেবে পরিচিত, যেমনটা মহাত্মা গান্ধী প্রচার করতেন।) গল্পটা অদম্য ইচ্ছাশক্তির, ক্ষুদ্র এক বালকের অদম্য ইচ্ছাশক্তির। যুদ্ধের ভয়াবহতা হয়তো এতে নেই, কিন্ত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির যে বিষণ্ণতা, সেটা যেন দর্শকেরা আচ করতে পারবেন। গল্পটা পিতাপুত্রের অনস্বীকার্য সম্পর্কের যে সম্পর্কের টানে মৃত্যুকেও এক প্রকার জয় করে আসা যায়।
ক্যালিফোর্নিয়ার সাগরপাড়ের ছো
ট একটি শহর O'Hare, এই শহরের ছোট একটি ছেলে পিপার ফ্লিন্ট বুসবি এবং তার স্নেহশীল পিতা জেমস বুসবি। জেমস এবং তার দ্বিতীয় সন্তান পিপারের সম্পর্কটা ঠিক যেন পিতা পুত্রের নয়, বন্ধুর মতোই। জেমস পীপারের মাঝে যেন নিজেকেই খুজে পেতেন। দুইজনই “Ben eagle” নামের এক কমিক ফ্র্যাঞ্চাইজের ভীষণ ভক্ত। এদিকে জেমস এর বড় ছেলে লন্ডন বুসবি ইউ এস আর্মিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও তার “FLAT FEET” এর কারণে মিলিটারি সার্ভিসে যোগ দিতে পারে না। লন্ডনের জায়গায় পিতা জেমস বুসবিকে মিলিটারিতে সার্ভিস দেওয়ার জন্য যেতে হয়। (সে সময় প্রতি পরিবার থেকে একজনকে বাধ্যতামূলক মিলিটারিতে যাওয়ার নিয়ম ছিলো) পিতা পুত্রের বন্ধনে আকস্মাত অনাকাঙ্খিত ছেদ পরে।

পীপারের উচ্চতাজনিত সমস্যার কারণে যখন তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয় এই দেখতে যে পীপারের গ্রোথ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বামুনে পরিণত হবে কি না, তখন ডাক্তার পীপার যাতে ঘাবড়ে না যায় সেজন্য বলেছিলেন আপাতত তাকে “লিটল বয়” ডাকা হবে। সেই থেকে সারা শহরে পীপারের নিকনেইম লিটল বয় হয়ে যায়।

এদিকে একদিন খবর আসে জাপানী সৈণিকদের হাতে বন্দী হয়েছেন জেমস। এদিকে স্থানীয় পাদ্রী পিপারকে শান্তনা দেওয়ার জন্য ভুলিয়ে রাখেন, কিছু ভালো কাজের টার্গেট দিয়ে বলেন এসব করলে জেমস ফিরে আসবে। পাদ্রীর দেওয়া কাজ গুলোর মধ্যে একটা ছিলো আমেরিকাতে নাগিরকত্ব পাওয়া জাপানিজদের সাথে ভালো ব্যাবহার করতে হবে। এই ঘটনাচক্রে হাসিমতো নামের এক প্রবীণ জাপানিজ ইমিগ্র্যান্টের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে পীপার। সেসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আমেরিকার অ্যান্টি জাপানিজ মুভমেন্টের জোরসোর প্রচারণার কারণে জাপানিদের ভালো চোখে দেখতো না আম্রিকানরা। পীপারের ভাই লন্ডন প্রায়শই হাসিমতোকে বিরক্ত করতো এবং তা স্বত্বেও ছোট পীপার হাসিমতোর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে।

একদিন খবরের কাগজে লেখা হয়, জাপান আমেরিকা যুদ্ধ বন্ধ হলেই বন্দীরা মুক্তি পাবে। পীপার একদিন চার্চে বাইবেলের একটি উদ্ধৃতি শোনে, “Truly I tell you, if you have faith as small as a mustard seed, you can say to this mountain, ‘Move from here to there,’ and it will move" (Matthew 17:20)। এই কথা শোনার পর থেকেই নিজের ইচ্ছাশক্তিকে পুজি করেই পিতা জেমসকে ফেরত আনানোর লক্ষ্যে নামে পীপার। একদিন সে নিজের ইচ্ছাশক্তির জোড়ে পাহাড় সরাতে যায় এবং কাকতলীয়ভাবে সেদিনই বিশাল এক ভূমিকম্প হয়। এই থেকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে সে যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করে নিজের অন্তর্নিহির্ত শক্তি দিয়ে যেটা সে নিজে বিশ্বাস করতো। এরপর একদিন খবরে আসে লিটল বয় বোমার আঘাতের পর জাপানের আত্মসমর্পনের কথা। সবাই ছোট পীপারের ক্ষমতার কথা বিশ্বাস করতে শুরু করেও। ছোট পীপার তখনো জানতো না একদিকে সে নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন উদযাপন করছে অন্যদিকে জাপান সাম্রাজ্য বাঁচাতে গুরুত্বপুর্ণ বৈঠকে বসেছেন হর্তাকর্তারা।

পীপার কি আসলেই তার বিশ্বাসের ভিত্তিতে জেমসকে ফেরত আনতে পারে? যুদ্ধের জটিল জটিল সব সমীকরণের ভীড়ে পীপারের সরল বিশ্বাস কি জয়ী হবে?

আমার মতে অসাধারণ একটি সিনেমা। অসাধারণ তার থীম অর্থে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমরা শুধুমাত্র লিটল বয়ের তান্ডবের কথাই জেনেছি। আমাদের মনেও অবচেতনেই হিরোশিমা নাগাসাকির কথা চলে আসে। এখানে পরিচালক বা গল্পকার অন্যপ্রান্তের সময়টাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। অনেকটা চাঁদের পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান অংশের বিপরীত অংশের মতো। পজিটিভ না নেগেটিভ সেটা দর্শকই ঠিক করবেন। আসলে এই সিনেমা নিয়ে সলিড কোনোও মতবাদে আসা যাবে না আমার মতে। যার যার পার্সপেক্টিভ থেকেই বিচার করতে হবে। বিশেষ করে এই সিনেমায় নিউক্লিয়ার ওয়ারফেয়ার নিয়ে সফটকোর থীম উপস্থাপন করাটা কিছুটা তর্কস্বাপেক্ষ হতে পারে, অনেকের মতে এখানে নিউক্লিয়ার অস্ত্রের বিপজ্জনক এবং বিধ্বংসী দিকের আরও প্রচারণা থাকতে পারতো আবার অনেকের মতে সেটা করলে এই সিনেমাটা প্যাসিফিস্ট হয়ে যেতো যেটা এটার থীমের সাথে যায় না।

সিনেমাটোগ্রাফি, মিউজিক অসাধারণ। কালার গ্রেডিং কিছু কিছু জায়গায় অসামাঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়েছে। সব মিলিয়ে অসাধারণ।

অভিনয় সবারই ভালো ছিলো, তবে আমার কাছে বরাবরের মতোই ভালো লেগেছে “The Book Thief” এবং “Chernobyl” খ্যাত এমিলি ওয়াটসনের অভিনয়। পীপারের চরিত্রে অভিনয় করা জ্যাকবও অসাধরণ করেছেন, সেই সাথে হাসিমতো চরিত্রে ক্যারি।

টিউবলাইট

লিটল বয় সিনেমার এডাপটেশন টিউবলাইট সিনেমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট এখানে ব্যাবহার করা হয়েছে চীন-ভারত যুদ্ধের পটভূমি হিসেবে।আরোও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে যেমন এখানে পাহাড়কেন্দ্রিক শহর রাখা হয়েছে, লিটল বয় এ ছিলো সমুদ্র কেন্দ্রিক



এখানে সিনেমাটা খারাপ নয় অবশ্যই, কিন্তু স্ক্রিপ্ট তুলণামূলক দুর্বল। সালমান এবং সোহেল তাদের চরিত্রের জন্য অনেক বেশি বয়স্ক ছিলেন। এবং পুরাণ সমস্যা সালমান একাই সব স্ক্রিনটাইম খেয়ে দিসে। ওম পুরি, যশপাল এবং বিজেন্দ্র কালার মতো অভিনেতারা আরও বেশি স্ক্রিনটাইম ডিজার্ভ করতেন।

অনর্থক গান, এবং কবির খান এতে বজরঙ্গি ভাইজান এর ফ্লেভার আনার অনর্থক চেষ্টা করসেন। এইগুলি সিনেমায় বিরক্তি বাদে কিছুই আনে নাই।

সিনেমায় লিটল বয় এর অনেক সিকোয়েন্সই সরাসরি কপি পেস্ট করসেন, এখানে আউট অফ সিলেবাস কিছু করার উচিত ছিলো। সর্বোপরি যেই লেগেসি থেকে লিটল বয় নির্মিত তার ধারের কাছেও যায় নাই। সালমানের উচিত ছিলো নিজে না করে আরও ইয়াং কাওকে এই চরিত্রে ট্রাই করানো এবং শুধুমাত্র ন্যারেটরের ভূমিকাতেই থাকা। যদিও সালমান নতুন কিছু করার চেষ্টা করসিলেন বেশ। বাট লাভ নাই, সে নিজেও বুঝছে দর্শক তারে রাধে টাইপের রোলেই গ্রহন করবে।

ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বেশ ভালো, জুলিয়াস প্যাকাম ভালো কাজ করেছেন এবং বজরঙ্গি ভাইজানের মতো কিছু না করে আউট অফ সিলেবাস মেলডি ব্যাবহার করেছেন।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:১৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×