লেখতে মন চায় না ইদানিং। আমার পাশে গল্পেরা হেঁটে বেড়ায়। গল্প উপন্যাস কবিতা। আমি ধরতে পারি না তাদের কিন্তু অনুভব করি কিংবা তারাই হদয়কে একটু নাড়া দিয়ে যায়. খানিকক্ষণ তারা হেটে বেড়ায় মনের ঘরকে বিক্ষিপ্ত করে। কিছুটা অন্তর্দহনও ঘটায় কোন গল্পরা। তারপর আস্তে আস্তে তারা হারিয়ে যায় মনের গোপন ঘর থেকে কিংবা মন ই তাকে ভুলিয়ে দিতে চায় সেই দগদগে ঘাঁ এর জ্বালাতন থেকে মুক্তি পেতে। তারপরও কোন কোন গল্প হারায় না কখনো। জীবনে বারবার পুনরাবৃত্ত ঘটনায় তারা ফিরে ফিরে আসে। তেমনি একজন সমাজের তথাকথিত অসুন্দরী (মনের দিক থেকে নিশ্চয় সুন্দর) হার না মানা মহীয়সীর ব্যথায় ব্যথিত হয়ে তার কষ্টটা শেয়ার করছিলাম ব্লগে অনেকদিন আগে। শুধু লিখাতে তাদের প্রতি সমবেদনা না বরং অসুন্দরীদের প্রতি দৃষ্টি ভঙ্গিটা বদলানো দরকার তা মনে করিয়ে দেয়া এই পোস্টে একজন অসুন্দরীর গল্প
যা হোক আজকে আবার কেন সেই পুরনো কথা বলতে এলাম এই জন্য যে অসুন্দরীরা আজ সুন্দরীদের ছুঁয়েছে এক জায়গায়। কিন্তু খুশি হতে পারলাম না তবুও বরং ভয়াবহভাবে আতকে উঠলাম। কেন ? সেই প্রশ্ন বাজছে আজ বিকাল হতে।
বিকালে বইমেলায় গিয়েছিলাম। বইমেলা আমি খুব উপভোগ করি। বই দেখতে পড়তে কিনতে তো ভালো লাগেই তেমনিভাবে ভালো লাগে বই পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখে। যদিও আমাদের হুজুগে বাঙ্গালি জাতির এই ছোটাফেরা শুধু এমাসেই থাকে, তবুও ভালো লাগে , ভালো লাগে--ভাষার প্রতি, দেশের প্রতি আমাদের টান যে শেষ হয়ে যায়নি সেটা ফুটে উঠায়। ভালো লাগছিলো বলেই অনেকক্ষণ থাকলাম। নিজের মত করে বই খুঁজে বই কিনব ভাবছিলাম। তার আগে আমি নতুন লেখকের খোঁজে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ, হ্যা হঠাৎই তাদের চোখে পড়ল। কালো কাপড় হাতে দাঁড়িয়ে আছে কিছু মানবী।
হয়তো কোন মানবিক আবেদন ভেবে আমি এগিয়ে যাই তাদের দিকে। তাদের সামনের কালো ব্যানারে লেখাটা পড়ে থমকে যাই এক মূহুর্তের জন্য । পরক্ষণেই মানুষের নীচতার কথা ভেবে শিউরে উঠি। সেই কালো ব্যানার যাকে আমি কোন মানবিক সাহায্য ভেবে ভুল করেছিলাম সেটা আদতে একটি প্রতিবাদ। প্রতিবাদকারীদের কাউকে রূপসী বলে চালানো যায় না। সেই কথাটা অপ্রাসঙ্গিক বলে যারা ভাববেন তাদেরকে জানাই -- সেই প্রতিবাদ কালো মেয়ে ভালোবাসা বোঝ না নামক বইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। মন বিষিয়ে গেল তাদের প্রতি। কারণ আমার প্রথম ভাবনায় কিংবা বেশিরভাগের প্রথম ভাবনায় আসবে বইটি একবার কেনার কথা এবং আল্টিমেট বেনিফিশিয়ারী লেখক সাহেব স্বয়ং। নিজের বই চালানোর জন্য তিনি নারীদের ব্যবহার করছেন এটা ভেবেই গা গুলিয়ে উঠে। মেয়ে গুলোর দিকে তাকাই। তাদের প্রতি ঘৃণা দেখাতে গিয়ে কুন্ঠিত হই। কেননা আমি জানি তাদের প্রত্যেকের পিছনেই আছে এই নষ্ট সমাজ দ্বারা শোষিত হওয়ার অজানা করুণ নির্মম কাহিনী।
কোন কথা না বলে সামনে এগিয়ে যাই। মেয়েগুলির নিরুত্তাপ সাজানো প্রতিবাদ ঢেকে রেখেছে তাদের মাঝেকার বোবা অব্যক্ত তীব্র প্রতিবাদ। তাদের সেই মুখায়বব আমাকে ব্যঙ্গ করে। তাকে জোড় করে পাশ কাটিয়ে সরে যেতে থাকি আর মনে মনে ভাবতে থাকি -- মডেল নামক শব্দটি ব্যবহার করে অনেক আগেই রুপসী নারীদের পণ্যে পরিণতকারী পুরুষ তান্ত্রিক এই সমাজ এখন তাদের লোলুপ দৃষ্টি হেনেছে নিগৃহীত অরূপসীদের উপরও। ব্যবসায়ের পণ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে যায় তারা, শোষক পুরুষ সমাজের হাজারো প্রতিকূলতার কাছে আত্ম সমর্পণ করে। অসুন্দরী (অরূপসী অর্থে)রা আজ সুন্দরীদের(রূপসী) মতই পন্য হয়ে যাচ্ছে। সমাজ আজ অরূপসীদের রূপসীদের মত একই রকম ভাবে ব্যবসায়িক পণ্য হিসাবে ভাবতে শিখেছে। অসুন্দরীদের সমান ভাবে দেখার ভাবনা ভাবাতে চেষ্টা করা এই আমি নিজেকে ধিক্কার দেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




