ছোট গল্প
চন্দ্রবিন্দুর সাথে প্রথম কথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছবি তোলার সময়। আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপর একটা কোর্স করছিলাম। টি ব্রেক-এ ছবি তুলতে দাঁড়ালাম। চন্দ্রবিন্দু আমার পাশে ঘেষে দাঁড়াল। বলল ফারুক, আমি তোমার পাশে দাঁড়াব। আমার কাঁধে হাত দাও। আমি একটু জড়তা নিয়েই ওর কাঁধে হাত রাখলাম। ছবি তুলল। ক্লাশে চন্দ্রবিন্দুর দিকে আমার নজর আগে পড়েনি। এখন ওকে দেখলাম। বললাম, কোন বিপদে ফেলবে না তো আমাকে। তোমার মাথায় কোন প্ল্যান নাই তো। দেখো, আমাকে ফাঁসাইও না। চন্দ্রবিন্দু হা হা করে প্রান খুলে শব্দ করে হাসল। বলল, দেখ চট করে তুমি ফাঁসানো কথা বল্-লা কেন ? তুমি তো ছেলে ভাল না, মেয়েদের সন্দেহ কর। চন্দ্রবিন্দু সত্যি বেশ সুন্দর করে হাসে এবং স্মার্ট মেয়ে। তীক্ষ্ম দৃষ্টি আর স্পষ্ট কথা। বললাম, মাপ চাই, দোয়া-ও চাই, আমার রাতের ঘুম হারাম করো না ম্যাডাম। চন্দ্রবিন্দু বলল, ঠিক আছে, ফারুক, তোমাকে আমি একটু কষ্ট দিব। যখন কষ্টটা দিব তখন টের পাবা, এখন চল, ক্লাশে যাই। ক্লাশে গেলাম। আমরা ৩০ জনের একটি দল কোর্সটি করছি। ক্লাশে নানা প্রশ্ন, গ্রুপ ওয়ার্ক, দলীয় কাজ উপস্থাপনা, ভূমিকাভিনয়, বাড়ির কাজ, রিপোর্ট লেখা, রি-কেপ এসবের মধ্যে দিন কিভাবে যায় আবার আসে টের পাওয়া যায় না। ছোট দলের কাজে, ভূমিকাভিনয়, উপস্থাপনায় চন্দ্রবিন্দু বার বার আমার গ্রুপে পড়েছে, আর আমি ওর কৌশল ও চলার ভঙ্গি দেখে মুগ্ধ হয়েছে। প্রতি বারই ওর ছোট খাট কৌশল-এর কারনে আমাদের গ্রুপ জিতে যেত।
একদিন লাঞ্চ ব্রেক-এ বন্ধু অজপা আসল আমার সাথে দেখা করতে। প্রতি রাতে অজপার সাথে এক ঘন্টা মোবাইল ফোনে কথা বলা একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়ে গেছিল। এর মধ্যে এই কোর্স-এর ব্যস্ততার কারণে কোন রাতে ওর সাথে কথা হয়নি অথবা দশ-পনের মিনিট বা আধা ঘন্টা কথা বলেছি। এই কম কথা বলা আর সপ্তা খানেক দেখা না হওয়ায় অজপা একটু উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে বলে ওর ফোনের কথায় আভাস পেয়েছি। লাঞ্চ করে কোর্সের অন্যদের সাথে অজপার পরিচয় করিয়ে দিলাম। এসময় চন্দ্রবিন্দু নিজেই অজপার সাথে পরিচিত হয়ে নিল। দু'জনের সাথে অল্প সময়েই বন্ধুত্ব হয়ে গেল। এসময় সে অজপা-কে বলল, ফারুক ভাইকে বলেছি একটু কষ্ট দিব। অজপা কথাগুলো কান খাড়া করে শুনেছে, হাসি মুখে হ্যাঁ সূচক অভিব্যক্তি প্রকাশ করে চুপ করে ছিল।
একদিন কোর্স শেষ হল। আমরা যে যার কাজে চলে গেলাম। যার যার জীবন নিয়ে সে সে ব্যস্ত। হঠ্যাৎ একদিন চন্দ্রবিন্দুর ফোন। ওর বাসায় বেড়াতে যেতে। ঠিকানা অনুযায়ী ওর বাসায় চলে গেলাম অজপাকে নিয়ে। আমি ঘরে ঢুকতেই চন্দ্রবিন্দু আমাকে হাত ধরে নিয়ে গেল ওর মা-বাবার কাছে। আমার পিছন পিছন রয়েছে অজপা। চন্দ্রবিন্দু ওর মা-বাবাকে বলল, তোমাদের ছবি দেখিয়েছিলাম এই সেই ফারুক। আমি ওকে ভালবাসি। আমরা দু'জন বিয়ে করব। তোমরা যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছ, তাকে আমার পছন্দ নয়। আমি তাকে বিয়ে করব না। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। চন্দ্রবিন্দু এত সহজে এই কথাগুলো বলতে পারে, আমি ভাবতেই পারিনি। ওর মা-বাবা আমাকে আর অজপাকে এক সাথে দেখে চন্দ্রবিন্দুর কথা নিজেদের মনে মিলাতে পারেনি। আমরাও ঘটনার আকস্মিকতায় চন্দ্রবিন্দুর কথায় বাধা দিতে পারিনি। এসময় আমার এবং অজপার মনে হয়েছে, সত্য কথাগুলো চন্দ্রবিন্দুর বাবা-মায়ের জানা প্রয়োজন। আর চন্দ্রবিন্দু বিয়ে করতে চাইছে না, তাই বিয়েটা না হওয়া ভাল। ওখানে বসে অজপার বাবা-মায়ের সাথে কথা বললাম। তাঁদের জানালাম আমরা চন্দ্রবিন্দুর বন্ধু মাত্র। চন্দ্রবিন্দু-র বিয়েতে মত নেই, এই বিয়ে না হওয়াই ভাল। তারপর সেখান থেকে আমরা চলে আসলাম। চন্দ্রবিন্দুকে খুঁজে পেলাম না। সে যে কেনো বিয়ে বন্ধের এমন কৌশল নিল বুঝতে পারিনি। তবে সে যে সফল হয়েছে, তা ঠিক।
দু'দিন পর বিয়ে বন্ধ করায় সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে চন্দ্রবিন্দু ফোন করল। এসময় সে ক্ষমা চাইল, এই বলে যে, সে সুরুজ নামে একটা ছেলেকে ভালবাসে। ছেলেটি এখন ইংল্যান্ডে আছে। পড়া শেষে ছয় মাস পর দেশে আসবে, তারপর তারা বিয়ে করবে। মা-বাবা তার এই কথা বিশ্বাস করে না। তারা বিয়ে দেওয়ার জন্য ছেলে ঠিক করে ফেলেছে। বিয়েটা বন্ধ করার জন্য এর চেয়ে ভাল কৌশল তার মাথায় আসেনি। আমি বললাম, আমার দ্বারা তোমার উপকার হয়েছে, এটাই আমার প্রাপ্তি। সুরুজ দেশে আসলে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিও।
মাস ছয় পর চন্দ্রবিন্দু ফোন করল। বলল, ১৫ই নভেম্বরের সাইক্লোনের ক্ষয়ক্ষতির কথা জেনে ওর প্রেমিক সুরুজ বাংলাদেশে এসেছে। ওরা দুজন কিছু রিলিফ নিয়ে মহেশখালী যাবে। আমাদেরকে ওদের সাথে যাওয়ার দাওয়াত দিল। চন্দ্রবিন্দুর আমন্ত্রণ পেয়ে ভাল লাগল। আরো ভাল লাগল, সুরুজের মানবিক সাহায্যে সাড়া দেওয়ার জন্য দেশে আসার খবর শুনে। ইচ্ছে হল ওদের সাথে যাই। অন্যদিকে আমি আর অজপা যে রিলিফগুলো গুছাচ্ছিলাম সে কাজ তখনো শেষ হয়নি। তাই বললাম, তোমরা যাও। আমি আর অজপা দু'দিন পরে তোমাদের সাথে যোগ দিব। সেখানে তোমার প্রেমিক সুরুজ-এর সাথে পরিচয় হবে, কথা হবে এবং একসাথে কাজ করতে পারব।
কথা মত আমরা কিছু রিলিফ নিয়ে দু'দিন পর মহেশখালীতে পৌছালাম অনেক কষ্ট করে। যাওয়ার পথ, থাকা-খাওয়ার জায়গা, রিলিফগুলো নিজেদের সাথে নিরাপদে রাখা অনেক কষ্টের ব্যাপার। সহজেই বুঝলাম রিলিফ নেওয়া এবং দেওয়া অনেক নিয়ম-নীতি-পদ্ধতির কাজ। পরিকল্পনা ও স্থানীয় প্রশাসনের অংশগ্রহণ জরুরী। অন্যথায় ভুল বোঝাবুঝি, বিশৃংখলা ও অসন্তোষ হতে পারে।মহেশখালীতে পৌঁছে একটু স্থির হয়ে বসতে না বসতেই চন্দ্রবিন্দুর ফোন। সাগরের পাড় দিয়ে নৌকায় করে সুরুজ রিলিফ নিয়ে যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে গেছে। এখন কি করবে সে ? আমি ওর লোকেশন জেনে অজপাসহ চন্দ্রবিন্দুর কাছে রওনা দিয়ে দিলাম সাথে সাথে। ঘটনা স্থলে গিয়ে যা জানলাম তা হল, সুরুজ ভাল সাঁতার জানে। কিন্তু প্রবল স্রোত আর উত্তাল ঢেউয়ে নৌকা, মানুষ বা ত্রাণ কোন কিছুরই হদিস মিলছে না। সমূদ্রের যে ঘূর্ণীপাকে নৌকা ডুবেছে সেখানে ডুবে যাওয়া কোন কিছু এর আগে ফিরে পাওয়া যায়নি। চন্দ্রবিন্দু আর সুরুজ কাজ ভাগ করে সুরুজ গেছে নৌকায় সমূদ্র পথে আর চন্দ্রবিন্দু গেছে নৌকায় ডুবন্ত মুলভূমির পথ ধরে। খবর পেয়ে সে এখানে এসেছে। আমরা পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত চন্দ্রবিন্দু স্থির বসেছিল। ত্রাণ বিতরণে এসে নিজের নিরাপত্তা মেনে কাজ করার কৌশল তারা ভুলে গেছে। অজপাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে পিষে ধরে ফোঁপাতে লাগল। আমি কুল-কিনার কিছু ভাবতে পারছি না। জানি না সুরুজকে দেখতে পাব কি না?
চন্দ্রবিন্দুর সাথে প্রথম কথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছবি তোলার সময়। আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপর একটা কোর্স করছিলাম। টি ব্রেক-এ ছবি তুলতে দাঁড়ালাম। চন্দ্রবিন্দু আমার পাশে ঘেষে দাঁড়াল। বলল ফারুক, আমি তোমার পাশে দাঁড়াব। আমার কাঁধে হাত দাও। আমি একটু জড়তা নিয়েই ওর কাঁধে হাত রাখলাম। ছবি তুলল। ক্লাশে চন্দ্রবিন্দুর দিকে আমার নজর আগে পড়েনি। এখন ওকে দেখলাম। বললাম, কোন বিপদে ফেলবে না তো আমাকে। তোমার মাথায় কোন প্ল্যান নাই তো। দেখো, আমাকে ফাঁসাইও না। চন্দ্রবিন্দু হা হা করে প্রান খুলে শব্দ করে হাসল। বলল, দেখ চট করে তুমি ফাঁসানো কথা বল্-লা কেন ? তুমি তো ছেলে ভাল না, মেয়েদের সন্দেহ কর। চন্দ্রবিন্দু সত্যি বেশ সুন্দর করে হাসে এবং স্মার্ট মেয়ে। তীক্ষ্ম দৃষ্টি আর স্পষ্ট কথা। বললাম, মাপ চাই, দোয়া-ও চাই, আমার রাতের ঘুম হারাম করো না ম্যাডাম। চন্দ্রবিন্দু বলল, ঠিক আছে, ফারুক, তোমাকে আমি একটু কষ্ট দিব। যখন কষ্টটা দিব তখন টের পাবা, এখন চল, ক্লাশে যাই। ক্লাশে গেলাম। আমরা ৩০ জনের একটি দল কোর্সটি করছি। ক্লাশে নানা প্রশ্ন, গ্রুপ ওয়ার্ক, দলীয় কাজ উপস্থাপনা, ভূমিকাভিনয়, বাড়ির কাজ, রিপোর্ট লেখা, রি-কেপ এসবের মধ্যে দিন কিভাবে যায় আবার আসে টের পাওয়া যায় না। ছোট দলের কাজে, ভূমিকাভিনয়, উপস্থাপনায় চন্দ্রবিন্দু বার বার আমার গ্রুপে পড়েছে, আর আমি ওর কৌশল ও চলার ভঙ্গি দেখে মুগ্ধ হয়েছে। প্রতি বারই ওর ছোট খাট কৌশল-এর কারনে আমাদের গ্রুপ জিতে যেত।
একদিন লাঞ্চ ব্রেক-এ বন্ধু অজপা আসল আমার সাথে দেখা করতে। প্রতি রাতে অজপার সাথে এক ঘন্টা মোবাইল ফোনে কথা বলা একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়ে গেছিল। এর মধ্যে এই কোর্স-এর ব্যস্ততার কারণে কোন রাতে ওর সাথে কথা হয়নি অথবা দশ-পনের মিনিট বা আধা ঘন্টা কথা বলেছি। এই কম কথা বলা আর সপ্তা খানেক দেখা না হওয়ায় অজপা একটু উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে বলে ওর ফোনের কথায় আভাস পেয়েছি। লাঞ্চ করে কোর্সের অন্যদের সাথে অজপার পরিচয় করিয়ে দিলাম। এসময় চন্দ্রবিন্দু নিজেই অজপার সাথে পরিচিত হয়ে নিল। দু'জনের সাথে অল্প সময়েই বন্ধুত্ব হয়ে গেল। এসময় সে অজপা-কে বলল, ফারুক ভাইকে বলেছি একটু কষ্ট দিব। অজপা কথাগুলো কান খাড়া করে শুনেছে, হাসি মুখে হ্যাঁ সূচক অভিব্যক্তি প্রকাশ করে চুপ করে ছিল।
একদিন কোর্স শেষ হল। আমরা যে যার কাজে চলে গেলাম। যার যার জীবন নিয়ে সে সে ব্যস্ত। হঠ্যাৎ একদিন চন্দ্রবিন্দুর ফোন। ওর বাসায় বেড়াতে যেতে। ঠিকানা অনুযায়ী ওর বাসায় চলে গেলাম অজপাকে নিয়ে। আমি ঘরে ঢুকতেই চন্দ্রবিন্দু আমাকে হাত ধরে নিয়ে গেল ওর মা-বাবার কাছে। আমার পিছন পিছন রয়েছে অজপা। চন্দ্রবিন্দু ওর মা-বাবাকে বলল, তোমাদের ছবি দেখিয়েছিলাম এই সেই ফারুক। আমি ওকে ভালবাসি। আমরা দু'জন বিয়ে করব। তোমরা যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছ, তাকে আমার পছন্দ নয়। আমি তাকে বিয়ে করব না। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। চন্দ্রবিন্দু এত সহজে এই কথাগুলো বলতে পারে, আমি ভাবতেই পারিনি। ওর মা-বাবা আমাকে আর অজপাকে এক সাথে দেখে চন্দ্রবিন্দুর কথা নিজেদের মনে মিলাতে পারেনি। আমরাও ঘটনার আকস্মিকতায় চন্দ্রবিন্দুর কথায় বাধা দিতে পারিনি। এসময় আমার এবং অজপার মনে হয়েছে, সত্য কথাগুলো চন্দ্রবিন্দুর বাবা-মায়ের জানা প্রয়োজন। আর চন্দ্রবিন্দু বিয়ে করতে চাইছে না, তাই বিয়েটা না হওয়া ভাল। ওখানে বসে অজপার বাবা-মায়ের সাথে কথা বললাম। তাঁদের জানালাম আমরা চন্দ্রবিন্দুর বন্ধু মাত্র। চন্দ্রবিন্দু-র বিয়েতে মত নেই, এই বিয়ে না হওয়াই ভাল। তারপর সেখান থেকে আমরা চলে আসলাম। চন্দ্রবিন্দুকে খুঁজে পেলাম না। সে যে কেনো বিয়ে বন্ধের এমন কৌশল নিল বুঝতে পারিনি। তবে সে যে সফল হয়েছে, তা ঠিক।
দু'দিন পর বিয়ে বন্ধ করায় সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে চন্দ্রবিন্দু ফোন করল। এসময় সে ক্ষমা চাইল, এই বলে যে, সে সুরুজ নামে একটা ছেলেকে ভালবাসে। ছেলেটি এখন ইংল্যান্ডে আছে। পড়া শেষে ছয় মাস পর দেশে আসবে, তারপর তারা বিয়ে করবে। মা-বাবা তার এই কথা বিশ্বাস করে না। তারা বিয়ে দেওয়ার জন্য ছেলে ঠিক করে ফেলেছে। বিয়েটা বন্ধ করার জন্য এর চেয়ে ভাল কৌশল তার মাথায় আসেনি। আমি বললাম, আমার দ্বারা তোমার উপকার হয়েছে, এটাই আমার প্রাপ্তি। সুরুজ দেশে আসলে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিও।
মাস ছয় পর চন্দ্রবিন্দু ফোন করল। বলল, ১৫ই নভেম্বরের সাইক্লোনের ক্ষয়ক্ষতির কথা জেনে ওর প্রেমিক সুরুজ বাংলাদেশে এসেছে। ওরা দুজন কিছু রিলিফ নিয়ে মহেশখালী যাবে। আমাদেরকে ওদের সাথে যাওয়ার দাওয়াত দিল। চন্দ্রবিন্দুর আমন্ত্রণ পেয়ে ভাল লাগল। আরো ভাল লাগল, সুরুজের মানবিক সাহায্যে সাড়া দেওয়ার জন্য দেশে আসার খবর শুনে। ইচ্ছে হল ওদের সাথে যাই। অন্যদিকে আমি আর অজপা যে রিলিফগুলো গুছাচ্ছিলাম সে কাজ তখনো শেষ হয়নি। তাই বললাম, তোমরা যাও। আমি আর অজপা দু'দিন পরে তোমাদের সাথে যোগ দিব। সেখানে তোমার প্রেমিক সুরুজ-এর সাথে পরিচয় হবে, কথা হবে এবং একসাথে কাজ করতে পারব।
কথা মত আমরা কিছু রিলিফ নিয়ে দু'দিন পর মহেশখালীতে পৌছালাম অনেক কষ্ট করে। যাওয়ার পথ, থাকা-খাওয়ার জায়গা, রিলিফগুলো নিজেদের সাথে নিরাপদে রাখা অনেক কষ্টের ব্যাপার। সহজেই বুঝলাম রিলিফ নেওয়া এবং দেওয়া অনেক নিয়ম-নীতি-পদ্ধতির কাজ। পরিকল্পনা ও স্থানীয় প্রশাসনের অংশগ্রহণ জরুরী। অন্যথায় ভুল বোঝাবুঝি, বিশৃংখলা ও অসন্তোষ হতে পারে।মহেশখালীতে পৌঁছে একটু স্থির হয়ে বসতে না বসতেই চন্দ্রবিন্দুর ফোন। সাগরের পাড় দিয়ে নৌকায় করে সুরুজ রিলিফ নিয়ে যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে গেছে। এখন কি করবে সে ? আমি ওর লোকেশন জেনে অজপাসহ চন্দ্রবিন্দুর কাছে রওনা দিয়ে দিলাম সাথে সাথে। ঘটনা স্থলে গিয়ে যা জানলাম তা হল, সুরুজ ভাল সাঁতার জানে। কিন্তু প্রবল স্রোত আর উত্তাল ঢেউয়ে নৌকা, মানুষ বা ত্রাণ কোন কিছুরই হদিস মিলছে না। সমূদ্রের যে ঘূর্ণীপাকে নৌকা ডুবেছে সেখানে ডুবে যাওয়া কোন কিছু এর আগে ফিরে পাওয়া যায়নি। চন্দ্রবিন্দু আর সুরুজ কাজ ভাগ করে সুরুজ গেছে নৌকায় সমূদ্র পথে আর চন্দ্রবিন্দু গেছে নৌকায় ডুবন্ত মুলভূমির পথ ধরে। খবর পেয়ে সে এখানে এসেছে। আমরা পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত চন্দ্রবিন্দু স্থির বসেছিল। ত্রাণ বিতরণে এসে নিজের নিরাপত্তা মেনে কাজ করার কৌশল তারা ভুলে গেছে। অজপাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে পিষে ধরে ফোঁপাতে লাগল। আমি কুল-কিনার কিছু ভাবতে পারছি না। জানি না সুরুজকে দেখতে পাব কি না?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৬