নন্দিনীর সিগারেট
ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসে নন্দিনী পুকুরে গোসল করল অনেক লাফিয়ে, দাফিয়ে । সাতার কাটল । ডুব দিয়ে কতক্ষণ পানির নিচে থাকা যায় তার প্রতিযোগিতা হল । পাতলা কাপড়ে তৈরী তেকোনা হেলনি দিয়ে মাছ ধরার ইচ্ছে ছিল, হেলনি না থাকায় পারেনি। বিকালে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার ইচ্ছা আছে । বাজার থেকে আনা একটা বড়শি, একটু সুতা আর একটা বাঁশের জিংলা পেলেই বড়শি হয়ে যাবে । নন্দিনীর বিশ্বাস, পুকুরে যদি মাছ থাকে আর সে যদি বড়শি ফেলে তাহলে, মাছ ধরা পড়বেই । গোসল সেরে বাসায় বাথরুমে ঢুকে কাপড় পাল্টিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে দেখে আমার সিগারেট-এর প্যাকেট । আমি রুমে সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছি । আমাকে ডেকে বলে সিদ্ধার্থ, দেখো তো সিগারেট খেতে আমায় কেমন দেখায় ? সে দ্রুত পাশে রাখা দেশলাই দিয়ে সিগারেট ধরিয়ে ফেলল । আমি হকচকিয়ে উঠলাম । সে এত সহজে দ্রুত সিগারেট ধরালো কি করে ? সিগারেটের গন্ধ নন্দিনী সইতে পারে না । বাসায় সিগারেট খেতে দেয় না । গ্রামে এসে একটু অসতর্কতায় সিগারেট বের করে ফেলেছি । সেখানে সে এমন মজা করে সিগারেট ধরালো ! নন্দিনী সিগারেটে লম্বা একটা টান মেরে ধুঁয়াগুলো আমার দিকে ছুড়ে বলল, দেখোতো কুন্ডলী পাকাতে পারি কি না, ধুঁয়ায় ডিমের কুসুমের ডিজাইনে কালো কুসুম হয় কি না ? আমি থতমত খেয়ে গেলাম। এবার বলল, তুমি এত অবাক হয়ে কি দেখছ ? তোমার ছেলে-মেয়ে নয়-দশ বছরের পা দিয়েছে । কিশোর-কিশোরীদের কাছে সিগারেট সৌন্দর্য প্রকাশ, ষ্টাইল করা, নিজেকে আলাদা করে প্রকাশ করা, হিরো হিরো ভাব দেখানো, বা একটু এডভেঞ্চার করার মাধ্যম হতে পারে । তুমি কি জানো, কৈশোরে শিশুরা এডভেঞ্চার প্রিয় । কখনো বাবাকে অনুসরণ করতে চায় । তোমার দেখাদেখি ওরাও সিগারেট ধরবে । নেশার পথে আগাবে । আমি উঠে দাঁড়ালাম, ওর হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে প্যাকেটসহ রান্না ঘরের মাটির লাকড়ির চুলায় দিয়ে ওগুলো ধ্বংস করে প্রতিজ্ঞা করলাম, “আর কখনো সিগারেট নয়”।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:১৫