somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করাল এ নগরে

০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মধ্যদুপুরের তীব্র আকাশ মাথার ওপর, গাঢ় নীলরঙা। স্থানে স্থানে ঈশ্বরের তামাকের ধোঁয়া শুভ্র মেঘমালা। সে পটভূমিকায় কালো সরলরেখা টেনে উড়ে যায় দুটো পাটকিলে চিল, কিরণ তাই ঘাড় বাঁকিয়ে দেখে। বয়েসী চোখের উত্তল কর্নিয়াবরণে চিলের ক্ষুদ্র ছায়া পড়ে। এদিকে মূল বিম্ব গঠিত হয় অক্ষিকোটরের রেটিনাতে, যেখান থেকে দ্বিতীয় ক্র্যানিয়াল নার্ভ নাম্নী স্নায়ুতন্তু বিম্বটিকে শেষমেশ বয়ে নিয়ে যায় মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসে আর চিলের জন্যে তৈরি কুঠুরিতে জমা হয় আরও একটি নতুন স্মৃতি। অথচ এসবের কিছুই জানেনা কিরণ। তার শুধু মনে পড়ে যায় দূর শৈশবের কথা যেদিন খরস্রোতা মুহুরি নদীর পাড়ে কাশসমুদ্রে দাঁড়িয়ে এমনই চিলেদের উড়ে যাবার দৃশ্য দেখেছিল সে।

চারপাশে ক্লান্ত চোখজোড়া বুলোয় কিরণ। দেখতে পায়, কিছু কাশফুল এখানেও আছে। তবে বেশির ভাগই মরে গেছে। শীত এগিয়ে আসছে। সামনে যে বৃষ্টিটার পর শীত নামবে পুরোপুরি, তাতে বাকিগুলোও মরে যাবে। সম্মুখের নদীটিকে শৈশবের মুহুরি নদী ভাবতে ভাল লাগে তার। যাকে খেলাচ্ছলে পাড়ি দিয়েছিল শতবার। যেখান থেকে সাঁতারাতে শুরু করত সে, উঠতো তার বহু দক্ষিণে- এমনই স্রোত। কৃশকায় এবং প্রায় স্রোতহীন এ তুরাগকে সেই প্রাচীন মুহুরির স্থানে বসাবার কোন সুযোগ নেই। অল্প কিছু জল বুকে নিয়ে ধুঁকছে একটি বিশ্লিষ্ট শাখা- তাই একে ঠিক তুরাগও বলা চলে না। মূল নদীর শরীর ভরাট করে আকাশকুসুম দালানেরা উঠেছে। স্রোতবহের এ অংশটুকু শুধু পূর্বেকার মত্ততার এক পরাজিত পার্শ্বস্মৃতিচিহ্নমাত্র।

কিরণের ভেতর একজন কবি বাস করে। সে নজরুলের শেষ সওগাত পড়েনি, তাই জানেনা- যেদিন কবির ছেলে মারা গিয়েছিল, সেদিনের সেই গাঢ় শোকতপ্ত সাঁঝেও কবি জানালার পাশে ফুটে থাকা হাস্নাহেনার সৌরভে মুগ্ধ হয়েছিলেন। পাশে ছেলের মৃতদেহ নিয়ে, কিরণ মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে রয় প্রকৃতির চিরচেনা স্থিরচিত্রে। দেখে কৃশকায় নদীটির ওপর দিয়ে আড়াআড়ি চলে গেছে ছোট্ট এক সাঁকো। সাঁকোর সবুজাভ বাঁশে এক অসিতবর্ণ ফিঙে বসে আছে। পিতামহীর মুখে শোনা এক উপকথায় সে জেনেছিল, একবার পাখিদের সভায় রাজা বানানো হয়েছিল ফিঙেকে। কেননা পাখিদের বিপদে আপদে সে-ই সবার আগে খণ্ডিতাগ্রপুচ্ছ টানটান করে ছুটে যায়। ফিঙের মতন রাজারা এদেশ থেকে প্রাচীন উপকথার মত মিলিয়ে গেছে কবেই।

নদীর এপাড়ে, যেখানে সাঁকোর শুরু, তার কাছেই বিপুল ব্যাঙের ছাতার মত দাঁড়িয়ে আছে এক কড়ই গাছ। এমন বিজন স্থানে এ লোভনীয় বৃক্ষ কি করে এখনও বেঁচে বর্তে আছে সে এক বিস্ময়। বহু আগেই কারো কেটে নিয়ে যাবার কথা ছিল। গাছটা একাকী নয়। সাঁকোর ওপারে অনতিদূরে এমনই আরও দুটো কাষ্ঠল বৃক্ষ আছে। তিনটি বৃক্ষের চূড়ো আড়াআড়ি ভাবে একই সরলরেখায় ধরা পড়ে কিরণের চোখে। চিলের মতন গাছগুলোর ওপরও ঝুলে আছে আশ্চর্য আকাশ। মধ্যাহ্নের ঝকঝকে মধ্যগগনের পটভূমিকায় দু দুটো সরলরেখাকে পেয়ে গিয়ে আপ্লুত হয়ে ওঠে সে। ওয়ানপয়েন্ট পার্সপেক্টিভ কি জানা নেই তার, তবু তার শিল্পীমনটিকে ঐ দুটো সমান্তরাল রেখার ক্রমশ একবিন্দুতে মিলিত হবার জাদুময়তাটুকু দারুণ স্পর্শ করে।

অদূরে ড্রেজিং এর জন্যে শুইয়ে রাখা সারি সারি ধাতব নল। তাদের বেলনাকৃতির দেহের পাশ ঘেঁষে, খাঁজ ঘেঁষে, মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সিকিমানুষ সমান ঘাসেরা। কিরণ দুটো খয়েরী রঙা ফড়িঙ দেখতে পায়। ঘাসেদের অরণ্যচূড়ে ফড়ফড় করে উড়ে বেড়াচ্ছে। চিলও খয়েরী, ফড়িঙও তাই। কিন্তু চিল দেখাচ্ছে কালো, ফড়িঙ স্ববর্ণ।
‘কেন?’
মাথার ভেতর পুত্রের কণ্ঠে প্রশ্নটা শুনে কিরণ চমকে ফিরে তাকায় অসাড় দেহটার দিকে। ক্ষীণ এক অপ্রাকৃত আমোদ তার তলপেটে ক্রমশ খলবলিয়ে ওঠে। ইহজগতকে ছাপিয়ে চোখে ভেসে ওঠে হাশরের মাঠ, ছেলের উজ্জ্বল মুখটা পলকের তরে তখনই দেখতে পায়। হুড়োতাড়ায় মনে হয় যেন আমলনামার ফলকটা ডান হাতেই দেখেছে যদিও নিশ্চিত হতে পারে না। মরচে ধরা ধাতব নলগুলোর ওপর সাবধানে বসে পড়ে সে আর খেয়াল রাখে ঘাসেদের দিকে। কেউ যেন বেঁকেচুরে ছিঁড়ে দলে কষ্ট না পায়।

মৃত ছেলের সাথে হালকা চালে কথোপকথন চলতে থাকে তার।

‘ঐ আরি। চিল ব্যাডা তো বউত ওঁসে দি উয়ের, ন! সুরুজ ত বো’ত দুরুই হ্যাতেগোরও উফ্রে লটকি রইসে, চোখেত্তে ধান্দা মারের হিয়ান তুন, হিল্লাই কালা স’রে। হড়িং হো’ক এগিন ত ঘাসের অ’র কাসেদি। ইয়ানেত্তে হিল্লাই ধান্দা লাগেন্না। বুইজ্জত্তে, বাজান?’
‘উঁ’।
‘বুজি আর কিরবি। অসুইক্কা মা গারে একা থুই ধাইলি। এক্কানা কই গেলিনা এইচ্চা করি বোলাইলাম হিসেদি! অঙ্গা, কিল্লাই যুইজ্ঞা মরা অই হই রইসত?’
‘তোণ্ডারে কইলে তোণ্ডা বুইজতা ন হ্যানেত্তে হিল্লাই কই ন। বাজান আঁই কন’ আকাম সইতাম ন হারি! আকাম সা’ই ঘরেত্তে হুতি থাইকতাম ন হারি! বেজ্ঞিনে ব্যাক লই যার গই, আণ্ডা ক্যান্নে বাঁছি রইসি কনে সা’র!’

পুরনো অসাধু আমোদটুকু তার তলপেটে পাক দিয়ে উঠতে থাকে এবং অকস্মাৎ ঠা ঠা রবে তার প্রত্যাশিতপ্রকাশ ঘটে। লাশের দিকে ভীত পায়ে লাফিয়ে এগিয়ে আসতে থাকা চারটি কাকের একটি দলের দলপতি চমকে উড়ে গিয়ে পেছনে সরে যায়। কিরণ থামে না। হাসতে হাসতে তার পিঠ অর্জুনের ধনুকের মত টানটান হয়ে বেঁকে যায়। খয়েরী চামড়ার ওপর কশেরুকার অস্তিত্ব কটকট করতে থাকে। চিতা বাঘের গোঁফের মত শক্ত দু একটা আঁশটে আমোদ তার পাকস্থলী ফুটো করে দেয়। সেখানে পচন ধরে তড়িৎ। সে পচন ছড়িয়ে যায় নিম্নে জননাঙ্গ আর ঊর্ধ্বে হৃদপিণ্ড অবধি। সোজা হয়ে বসে অসহায় উন্মাদ লোকটা। মুখ থেকে হাসির কুঞ্চিত রেখাবলী তখনও মুছে যায়নি।

লুঙ্গির খুঁট থেকে বিড়ি আর দেশলাই এর বের করে সে। একটা বিড়ির সারাগায়ে মৃদু চাপে দু আঙুল বুলিয়ে দুটো টোকা দেয়। কিছু খয়েরী তামাক খসে পড়ে ঘাসে। অতঃপর তা কানের ফাঁকে গুঁজে দিয়ে বসে থাকে। কড়া রোদে পোড়া ত্বকে লেগে থাকা বালুগুলো চিকচিক করে ওঠে। দু একটা কাক এসে লাশের ওপর বসে। সঙ্গে সঙ্গে হিসহিসে চিৎকারের সঙ্কুচিত বাতাস ছুঁড়ে দিয়ে কিরণ ছুটে যায় লাশের দিকে। কাকগুলো খাঁ খাঁ রবে শাপশাপান্ত করে, তথাপি পিছু হটে না। একটা ভাঙা ডাল নিয়ে শপাং শপাং বাতাস কেটে চালাতে থাকে কিরণ। কাকগুলো সামান্য সরে যায় এবার। মানুষের এমন আচরণে বরাবরই অভ্যস্ত তারা, তাই উড়ে পালায় না। কিরণ থেমে গেলে ফের লাফিয়ে এগোয়।

করাল এ শহরের সবকটা জীব আসলে একইরকম। কি মানুষ- কি কাক- কি কুকুর- কি বেড়াল। শুধু আকাশটা কেন যেন এখনও আশ্চর্য সুন্দর। কিরণের মনে হয়, এও আকাশের বিধাতার একটি পরিহাস। চোখে আঙুল দিয়ে বলে যেন, ‘দেখ! আমার আবাসটুকু আমি কি সুন্দর ঝেড়েমুছে সাজিয়ে গুজিয়ে রেখেছি!’ কিরণ দ্বিমতে মাথা নাড়ে। নাহ, এ জমিন তো তোমার আরও বড় আবাস। পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণে তোমার নানা রূপের কত সুরক্ষিত ঘর! লোকে কত সাধের তীর্থযাত্রায় ঘুরে ঘুরে দেখে আসে মক্কা, কাশী। তোমাকে ভাবে আকাশে আর ঘর বানায় মাটিতে, আজব ভাবধারা। না আকাশ না মাটি, তুমি থাকো কোন পাড়া?

কিছু ডাঁশা মাছি ছেলেটার মুখের ওপর ভনভন করে উড়তে থাকে। হঠাৎ মাথার ভেতর কিরণ ছেলের কণ্ঠ শুনতে পায় সে।
'বাবা! আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও! কবর দেবে না আমাকে?'
কিছুক্ষণ উদ্ভ্রান্তের মত তাকিয়ে থাকে সে ছেলের আধখোলা ঘোলাটে চোখের দিকে। তারপর হঠাৎ জবাব দেয় নিরক্ষর অপ্রকৃতস্থ শূদ্রব্রাত্যনর, 'কবর? না, তোকে কবর দেব না। ঐ যে আকাশটা দেখছিস? ওটা চোখের ভুলে আকাশ বটে, আসলে মাটি। আর এ জমিনটা হচ্ছে পাতাল। তোর কবর হয়ে গেছে। শুধু তোর না, আমাদের সবার কবর হয়ে গেছে। কবরে কিলবিলে কীটের দল দেহকে কুরে কুরে খায়। এখানে এ জমিনে চেয়ে দেখ, কিলবিলে কবুরে কীটের কি রাজসম্ভার!
ছেলেটা বলে, 'তাহলে আমাকে বরং পুড়িয়ে ফেল!'
কিরণ বলে, 'বোকা। তোকে পোড়াবো সে আগুন কোথায়? এই আমি আশৈশব জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড। এখানে নিরন্তর অভাবের লাকড়িতে দাউ দাউ করে আমার সব কবিতা পুড়ে মারা গেছে। আমার আঁকা ছবির পোড়া ছাইয়ে শতকের পর শতক, বিঘের পর বিঘে ধানী জমি ঢেকে গেছে। পেটের তরল অম্ল আমার সততার অহমপাথরকে শঠতায় গলিয়ে ইহলোকেই নরকাগ্নির জ্বালানি জুগিয়েছে। অথচ অধিকার হননকরে রক্ত চুষে ফুলে-ফেঁপে ওঠা এঁদো-নর্দমার জোঁকেরা পটপট করে পুড়ে শব্দ করে ফাটবে যে নরকের আগুনে, সে আগুন শুধু অপেক্ষাই করে আছে। এ দুই জীবনের অপবিত্র বেঈমান আগুনের একটাতেও তোকে আমি পোড়াতে পারিনা!'

দুপুর ক্রমশ পড়ে আসে। সূর্য তার শাদাটে রঙ হারিয়ে ধীরে লাল রঙ ধারণ করে। পচা মাংসের গন্ধে হাজির হয় একজোড়া কুকুর-কুকুরী। আশপাশে ছোঁক ছোঁক করতে থাকে। হীনবল নেড়ি কুকুর। দাবড়ে দিলেই ঘাসের জমি থেকে দুই লাফে ছিটকে ইট বিছানো রাস্তায় উঠে যায়। নিজেদের ভেতর খানিক খুনসুটি করে আবার ফিরে আসে।

এরইমাঝে কাকের সংখ্যা বেড়ে চতুর্গুণ হয়েছে। কিরণের মনে হয়, এসব ছাড়াও বাতাসে যেন আরও কিছু আছে, লাশের সমাজী। মানুষের চেয়ে অধিক বাস্তববাদী ওরা। কাক কুকুরকে অত ভয় নেই, ওদেরকে যত ভয়। ওরা জানয়ারের ওপর ভর করে। কিরণ ডান হাতে ভাঙা ডাল নিয়ে লাশের পাশে বসে থাকে, সাবধানী। কিছু কাছে এলেই সজোরে বাতাস কেটে চালিয়ে দেয়। ডান হাত ক্লান্ত হয়ে গেলে বাম হাতে তুলে নেয়। বসে থেকে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়লে দাঁড়িয়ে থাকে। এমনি করে, বিকেল গড়িয়ে প্রায় সাঁঝ নামে মর্ত্যে। এ জনবিরল স্থানে অপ্রকৃতস্থ কিরণের তা নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা থাকে না। ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর তার দেহটা ঘুমকে পুঁজি করে এ যাত্রা বেঁচে উঠতে চায়।

কিরণের বয়েসী ক্লান্ত চোখ তন্দ্রায় বুজে এলে হঠাৎ কেউ যেন পুরু চোখাল কিছু সুঁচ ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে বসিয়ে দেয় ডান পায়ে! যন্ত্রণায় বিহ্বল গলা চিরে চিৎকার বেরিয়ে আসে তার। চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চায়। নিজের হৃদপিণ্ডের হড়বড়ে ধুকপুক স্পষ্ট শুনতে পায় সে। সর্বশক্তিতে শূন্যে লাথি কষায় তৎক্ষণাৎ। মাংসল কিছু একটা ভোঁতা শব্দে লুটিয়ে পড়ে ঘাসে। ঘাড় ফিরিয়ে কুকুর-কুকুরী জোড়ার পুরুষটিকে দেখতে পায় সে। লুটিয়ে পড়বার পরক্ষণেই তড়াক করে উঠে দাঁড়ায় ওটা। দাঁত খিঁচিয়ে ভয়াল ভেংচি কাটে। নিছক ভয় যে দেখাচ্ছে না, তার প্রমাণ একটু আগেই দিয়েছে। কিরণের সারা পৃথিবী করাল ক্ষোভে ফেটে পড়তে চায়। সে পাগলের মত ইট পাথর, নিদেনপক্ষে এর কাছাকাছি ক্ষমতাধর একটা কিছু খুঁজতে শুরু করে। পেয়েও যায় লাল ইটের দশাসই এক টুকরো। প্রথম সুযোগেই জানোয়ারটার মাথা থেঁৎলে দেয়ার কথা ভাবে সে, শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়! চিৎকার করে সর্বশক্তিতে ছুঁড়ে দেয় ইটটাকে!

লাফ দিয়ে সময়মত সরে যায় ধূর্ত সারমেয়। দূর অতীতে এরা ভয়াল নেকড়ে ছিল। আক্রমন-প্রতিআক্রমন মধ্যবর্তী সাবধানতা, ক্ষীপ্রতা, দক্ষতা এদের মজ্জাগত। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য কিরণ আহত পা টা নিয়ে কুকুরটার পেছন পেছন ছুটতে শুরু করে সে। ইটের রাস্তায় নখরের বিশ্রী শব্দ তুলে খুব দ্রুত তার সম্ভাব্য আয়ত্তসীমার বাহিরে চলে যায় ওটা।
হঠাৎ নেকড়ে প্রজাতির চিরায়ত কৌশল মনে পড়ে যায় তার। মস্ত ভুল হয়ে গেছে। পেছনে তাকিয়ে দেখে দলের কুকুরীটা এরই মাঝে নাইলনের বস্তাটাকে ধারালো দাঁতে ফেড়ে ফেলেছে, যাতে করে তার ছেলে খুব ধীরে ভেসে এসে ভিড়েছিল ঢোল কলমির ঝাড়ে, এক মোক্ষম পূর্বঘোষণা অনুসারে। ছেলেটার নগ্ন লাশ পুরোপুরি বেরিয়ে পড়েছে। একপল সময় ক্ষেপণ না করে লাশের প্রায়গলিত নরম পেটে দাঁত বসিয়ে হ্যাঁচকা টান দেয় কুকুরীটা। হড়হড় করে হলদেটে নাড়ীর জট বেরিয়ে আসে। কাকেদের একটা দল মুখের ওপর বসে প্রবল আক্রোশে নাকচোখ ঠুকরে চলে। একটা বোকা কাক শক্ত খুলিতে ঠুকরে ব্যাথা পেয়ে শেপে চিৎকার করে ওঠে,
খাঁ! খাঁ! খাঁ!

অদৃশ্য কিছু একটার টানে ক্রমশ হেঁচড়ে জলের দিকে চলতে থাকে লাশটা। হঠাৎ সময়ের লুকিয়ে থাকা শব্দজঠর হতে উঠে আসে বহুকাল আগের এক পড়ন্ত বিকেলের মর্মনাদ। সকল তন্ত্রী কাঁপিয়ে দিয়ে কিরণের আকাশে বাতাসে ভাসতে থাকে তার ভিনগেঁয়ে স্ত্রীর কালের অতলে বিস্মৃত আকুল কণ্ঠস্বর,
‘বাবুরে যাইতে দিওনা কুয়ার ধারে!’
সেদিনও এমনি করে ভয়াল এক জলাধারের দিকে এগিয়ে চলেছিল পুত্র তার।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১:৩৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×