মাগরিবের নামায বা এসার নামাযের প্রথম দুই রাকাতের তুলনায় তৃতীয় রাকাত দ্রুত হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে প্রথম দু'রাকাতে ইমামগণ যত ধীরেসুস্থে সূরা ফাতেহা তেলাওয়াত করেন পরের রাকাতগুলোতে তার স্থিরতা রক্ষা করেন না; উনাদের দ্রুতগতি এটাই প্রমাণ করে। এখান থেকে বলা যায়, এই শ্রেণির ইমামগণ মুসল্লিদের দেখানোর/মনযোগানোর জন্য নামায আদায় করে থাকেন। তা না হলে উনারা প্রত্যেক রাকাতেই স্থিরতা রক্ষা করে নামায পড়াতেন।
অনেক জায়গায় দেখা যায়, ইমাম সাহেব মুসল্লিদেরকে নামায পড়ানোর বেলা যতটুকু সময় অতিবাহিত করেন নিজে নামায পড়ার বেলা ততটুকু সময় ব্যয় করেন না; সেটা অবশ্যই সতর্কতার সাথে। অর্থাৎ, একজন ইমাম সাহেব যখন ইমাম হয়ে নামায পড়ান তখন ৪ রাকাতে ৬ মিনিট সময় ব্যায় করেন কিন্তু নিজে যখন একা একা নামায আদায় করেন, তখন এমন ৪ রাকাত পড়তে গিয়ে সময় ব্যয় করেন ৩ মিনিট।
আমি নিশ্চিন্তে এগুলোকে রিয়া বলতে পারি। রিয়া হচ্ছে লোক দেখানো ইবাদতঃ অর্থাৎ লোক দেখানোর জন্য নেক আমল করা।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “সুতরাং যে লোক তার প্রভুর সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকাজ করে এবং স্বীয় প্রতিপালকের উপাসনায় অন্য কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত না করে।” (সুরা কাহফ্ -১১০) “আমি তাদের কৃতকর্মসমুহের প্রতি মনোযোগ দেব এবং সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবো” (আল ফুরকান-২৩)
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীসে বলা হয়েছে, “নবীজি (স) বলেন: ছোট শিরক থেকে তোমরা সাবধান থাক। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) বললেনঃ ছোট শিরক কি? তিনি বললেনঃ রিয়া-লোক দেখানোর উদ্দেশে নেক আমল করা। যেদিন আল্লাহ পাক স্বীয় বান্দাদের প্রতিদান দেবেন, সেদিন তিনি তাদেরকে বলবেনঃ পার্থিব জীবনে যাদের দেখিয়ে তোমরা নেক আমল করতে, তাদের কাছে গমন করা। দেখ তাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কিনা।” (আহমদ, বায়হাকী ও তাবারানী) “মহান আল্লাহ পাক বলেছেনঃ যে লোক এমন কোন কাজ করে, যাতে আমার সাথে আর আউকে শরীক করে, তার সে কাজ তার জন্য, যাকে সে শরীক করেছে। সে কাজের সাথে আমি সম্পৃক্ত নই।” (মুসলিম, ইবনে মাযা)
“যে লোক (অপরকে) শুনায়, আল্লাহ পাকও তার বেলায় মানুষকে শুনাবেন, আর যে লোক দেখায় (অপরকে দেখানোর জন্য সৎকাজ করে), আল্লাহ পাকও তার সঙ্গে লোক দেখানো আচরন করবেন।” (বোখারী ও মুসলিম) “এমন অনেক রোযাদার আছে, যার রোযায় ক্ষুধা তৃষ্ঞা ছাড়া অন্য কিছু অর্জিত হয় না। আ এমন অনেক রাত জেগে নামায আদায়কারী আছে, যাদের অনিদ্রা বা রাত জাগা ছাড়া কোন ফলই অর্জিত হয় না।” (ইবনে মাযা, আহমদ, তাবারানী ও বায়হাকী)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আমাদের প্রত্যেককে রিয়া থেকে মুক্ত থেকে সহীহ আমল করার তাওফিক দান করুন- আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৮