শেয়ারবাজার একটি স্পর্শকাতর জায়গা, যেখানে কোন দেশের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ( ফার্স্ট লেডী) অন্তঃস্বত্ত্বা হবার খবর এলে বাজার চাঙ্গা হয়, আবার প্রেসিডেন্টের কুকুরের পাতলা পায়খানার খবরে বাজার পড়ে যায়। একেতো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগন ক্রমাগত বাজার পতনে দিশেহারা এবং চরম আতংকগ্রস্ত তার উপর আজ (১৯-০১-২০১১) বাজার ২ঘন্টা পর শুরু বেলা ১টায় শুরু হবার খবরে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আতংকের মাত্রা বাড়তে থাকে, জানা গেলো এসইসি, ডিএসই,বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থমন্ত্রী মিটিং করছেন। মিটিং করার পর কোন সংবাদ সম্মেলন হল না, ঘোষনা এলো, ইন্ডেক্সের উপর সার্কিট ব্রেকার, ২২৫ পয়েন্ট উঠলে বা নামলে বাজার অটো বন্ধ হয়ে যাবে। ডিএসই'র বাইরে পুলিশ, জলকামান। মিটিং এ এসইসি'র চেয়ারম্যান বলেন যে তারা নাকি তাদের সকল ক্ষমতা ব্যবহার করে ফেলেছেন। ব্যাংলাদেশ ব্যাংক এর গভর্নর বলেন যে। তাদের পক্ষ থেকে যতটুকু তারল্য সহায়তা দেয়া দরকার, তা দেয়া হয়েছে । এর মানে দাঁড়ায়, এসইসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এর যদি আর কিছু করার না থাকে তাহলে ৩৩ লক্ষ বিনিয়োগকারীদের ভাগ্য তারা কিছু লুটেরা এবং হায়েনাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে যা হবার তাই হল। ২ ঘন্টার জন্য লেনদেন এর সুযোগ দেয়া হল। ১ ঘন্টা ২৬ মিনিটেই সূচক সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমা অতিক্রম করায় লেনদেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে গেলো। আগামীকালের জন্য সার্কিট ব্রেকার নির্ধারন করা হয় ২৩৭ পয়েন্ট।আমার মনে হয় আগামীকাল ১৫ মিনিটের মধ্যেই সূচক তার নিম্নতম সার্কিট ব্রেকার স্পর্শ করবে।
এখন রাত ৯টা। সরকার এর পক্ষ থেকে সংকট উত্তরনে এখনো কোন পদক্ষেপ এর ঘোষনা আসেনি। আসার সম্ভাবনাও ক্ষীন। সকল রসুনের কোয়া যে এক জায়গায়। কাল কি হবে তা এখন বলা না গেলেও অনুমান করা যায়। আল্লাহ না করুন, কালকে না আবার আমার কোন ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়। জনগনই নাকি সকল ক্ষমতার মালিক, তারা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না। আর এই জনতাই যখন তাদের ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ের আর্তি জানাতে চান, তখন কেউ শুনতে চায় না, বরং তাদেরকে ভেড়ার পাল বলে গালি দেওয়া হয়। মহোদয়গন, দয়া করে বলবেন কি এই ভেড়ার পাল কে পূঁজিবাজারে কে এনেছে?(ডিএসই এর ওয়েবসাইটে দেখুন, তাদের ভিশন ২০১৩)। গত দুই বাজেটে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের উপর কর রেয়াত কে দিয়েছে? এই মানুষগুলোকে শেয়ার বাজারে কেন এনেছেন আপনারা? তাদের মুখের খাবার কেড়ে নেয়ার জন্য? আর কত টাকা চাই আপনাদের? আমাদের আর কত ধৈর্য ধরতে বলবেন? ইন্ডেক্স আর কত নামালে আপনাদের পেট ভরবে?
মহোদয়দের নাকি আর কিছু করার নাই। ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো কি করছে? প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার তারল্য ও রেপো সুবিধা দেওয়ার পর ব্যাংকগুলো কি করছে? আপনাদের কি ক্ষমতা নেই তাদের কে বলার, যে এই টাকা দিলাম-এটা শেয়ার বাজারে খাটাও। ব্যাংক গুলো যে সরকারের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলো, আর আজ তাদের কে বিনিয়োগ করার জন্য বার বার বলা সত্ত্বেও তারা হাত গুটিয়ে বসে আছে। মহোদয়গন, আপনাদের কি ক্ষমতা নেই বলার, যে এত টাকা বিনিয়োগ না করলে আগের বিধিবহির্ভূত বিনিয়োগকৃত টাকা সীজ করা হবে? গভর্নর সাহেবের কাছে জানতে ইচ্ছা হয়, ৪০০ কোটি টাকা ডিমান্ড লোন দেওয়ার পর আপনার হাত খালি হয়ে গেলো? ফরেক্স এর অতিরিক্ত রিজার্ভ কি দিন দিন ডিম পাড়বে? সোনাও নাকি কিনলেন। কার টাকায় ঘি খাচ্ছেন মহোদয়? সংকোচনশীল মুদ্রানীতি করবেন, ভালো কথা, কিন্তু পাবলিকের চাল ডাল কেনার পয়সাও রাখবেন না? ৩৩ লক্ষ বিনিয়োগকারী যদি একযোগে আপনাদের সুরক্ষিত ভল্টে হামলা চালায়- তখন? কার দোষ দেবেন? আগেতো বলেছেন, ভেড়ার পাল। এবার বলবেন -ডাকাত। মনে রাখবেন যুগে যুগে এই ভেড়ার পালরাই, এই ডাকাতরাই আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




