ফরেক্স বেসিকস(পর্ব-২)
============
এ পর্বে আমরা কিছু প্রয়োজনীয় টার্ম নিয়ে আলোচনা করবো।
২(১) কি ট্রেড করা হয়?
=============
বিভিন্ন দেশের কারেন্সি। কিছু শক্তিশালী কারেন্সি আছে যেগুলোকে আমরা মেজর কারেন্সি বলি,যেমন- ইউরো, ডলার,পাউন্ড,ইয়েন, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, নিউজিল্যান্ড ডলার, কানাডিয়ান ইয়েন,সুইস ফ্রাঁ। কারেন্সি চিহ্নের তিনটি অক্ষর থাকে, যেখানে প্রথম দুইটি দেশের নাম নির্দেশ করে এবং তৃতীয়টি সেই দেশটির কারেন্সির নাম নির্দেশ করে। যেমন আমেরিকান ডলার বুঝাতে
USD লেখা হয়, প্রথম ২ টি অক্ষর দিয়ে দেশের নাম (ইউনাইটেড স্টেটস) এবং শেষ অক্ষর দিয়ে ডলার বুঝানো হয়েছে।
২(২) কারেন্সি পেয়ার কি?
=============
শেয়ার মার্কেটের নিয়ম হচ্ছে যেকোনো শেয়ারের মূল্য সে দেশের মুদ্রার বিপরীতে নির্ধারিত হবে। যেমন, আমাদের দেশের শেয়ার মার্কেটে কোনো শেয়ারের মূল্য টাকায় নির্ধারিত হয়।
কিন্তু ফরেক্স মার্কেটে এভাবে কোন দেশের মূদ্রা বা কারেন্সির মান নির্ধারণ অসম্ভব। শুধু ইউরো বা ডলারের কোন মূল্য থাকতে পারে না। যেমনঃ ১ ডলার দিয়ে বাংলাদেশী ৮০ টাকা পাওয়া যায়। আবার ১ ডলার দিয়ে মাত্র ০.৭০ ইউরো অথবা ০.৯৩ অস্ট্রেলিয়ান ডলার পাওয়া সম্ভব। আবার যদি জাপানিজ ইয়েনের কথা ধরি, তাহলে ১ ডলার দিয়ে আপনি ৭৬ ইয়েন পাবেন। তাহলে, ডলারর মূল্য আসলে কোনটি? বিভিন্ন দেশের মানুষই তো ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করে, কোন দামে তারা ডলার কিনবে?
এই জন্যই ফরেক্স মার্কেটে সবকিছু কারেন্সি পেয়ারের মাধ্যমে ট্রেড হয়।
যেমন ধরুন, EUR/USD (ইউরো/উএসডি), একটি কারেন্সি পেয়ার। বর্তমানে 1 EUR/USD = 1.3196, এর মানে হচ্ছে ১ ইউরো দিয়ে আপনি ১.৩১৯৬ ডলার পাবেন।
আরও কিছু কারেন্সি পেয়ারঃ
1 AUD/USD = 1.0543 , এর মানে হচ্ছে ১ অস্ট্রেলিয়ান ডলার দিয়ে আপনি ১.০৫৪৩ আমেরিকান ডলার পাবেন।
1 GBP/USD = 1.6422 , এর মানে হচ্ছে ১ পাউন্ড দিয়ে আপনি ১.৬৪২২ আমেরিকান ডলার পাবেন।
1 NZD/USD = 0.8177 , এর মানে হচ্ছে ১ নিউজিল্যান্ড ডলার দিয়ে আপনি ০.৮১৭৭ আমেরিকান ডলার পাবেনচা
1 USD/JPY = 80.29 , এর মানে হচ্ছে ১ ডলার দিয়ে আপনি ৮০.২৯ জাপানিজ ইয়েন পাবেন।
1 EUR/JPY = 115.91 , এর মানে হচ্ছে ১ ইউরো দিয়ে আপনি ১১৫.৯১ জাপানিজ ইয়েন পাবেন।
1 EUR/USD = 1.4434 কে যদি এভাবে EUR/USD না লিখে USD/EUR লিখি, তাহলে কোনো সমস্যা আছে?
অবশ্যই নেই। তবে মনে রাখবেন, কারেন্সি পেয়ারের প্রথম কারেন্সি নির্দেশ করে তা দিয়ে কি হারে পরের কারেন্সি পাবেন।
1 EUR/USD = 1.3196. এর মানে হচ্ছে ১ ইউরো দিয়ে আপনি ১.৩১৯৬ ডলার পাবেন।
তাহলে, 1 USD/EUR নির্দেশ করবে ১ ডলার দিয়ে আপনি কত ইউরো পাবেন। উত্তর হবে, ঠিক উল্টো, 1/1.3196 বা ০.7578
ফরেক্স মার্কেটে কারেন্সির দাম দশমিকের পর ৪ ঘর ধরা হয় কেন? কারণ, কারেন্সি পেয়ার হচ্ছে দুইটা কারেন্সির অনুপাত। যেমন, EUR/USD এর মানে হচ্ছে ১ ইউরো দিয়ে কত ডলার পাব।ফরেক্স মার্কেটে দশমিকের পর ৪ টা ঘর পর্যন্ত নেয়া হয়েছে কারন ফরেক্স মার্কেটে সাধারনত মুভমেন্ট দশমিকের পরে ৩ আর ৪ নাম্বার ঘরেই বেশি হয়। তাই এটাকে স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়েছে। যেমন গতকাল 1EUR=1.3280 USD ছিলো , আজকে 1 EUR=1.3196 USD তাহলে আজকে ১ ইউরোর দাম (১.৩২৮০-১.৩১৯৬) বা ০.০০৮৪ ডলার কমলো।
২(৩) পিপ ও পিপেটস কি?
==============
PIPS (পিপস):
ফরেক্স মার্কেটে কোন কারেন্সি পেয়ারের দশমিকের পরে ৪থ সংখ্যার প্রতি এক একক পরিবর্তন বা মুভমেন্টকে PIP বা পিপ বলে। PIPS অথবা পিপস হচ্ছে PIP এর বহুবচন, যেমনঃ Market has changed 120 pips today. অর্থাৎ, মার্কেট আজকে ১২০ পিপস পরিবর্তিত হয়েছে। অনেকে পিপস কে পয়েন্ট ও বলে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে pips ই বহুল প্রচলিত। উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাকঃ আপনি ১ টি EUR/USD ট্রেড ওপেন করলেন ১.৩১৯৬ এ, কিছুক্ষণ পর তা ১.৩২৯৯ হল। তাহলে ০.০০০৩ ডলার বা ৩ পিপ বেড়েছে। সহজভাবে হিসাব করার জন্য দশমিক বাদ দিয়ে হিসাব করা যেতে পারে। (৩২৯৯-৩২৯৬=৩)। ফরেক্স মার্কেটের মুভমেন্ট পিপস এর সাহায্যে গণনা করা হয়। প্রায়শই শুনবেন ইউরো/ইউ.এস.ডি আজকে ২০০ পিপস বেড়েছে। মার্কেট খুব মুভ করছে, ৫ মিনিটেই ১০০ পিপস বেড়েছে ইত্যাদি।
Pipettes (পিপেটিস):
কিছু কিছু ব্রোকারে প্রাইস দশমিকের পরে ৫ ডিজিট থাকে। যেমনঃ ১.৪২৫৬১. এই পঞ্চম ডিজিট তাই হল পিপেটি। সুতরাং প্রাইস যদি ১.৪২৫৬১ থেকে ১.৪২৬৬৭ এ যায়, তবে বুঝতে হবে ১০ পিপস ৬ পিপেটিস বেড়েছে অথবা ১০৬ পিপেটিস পরিবর্তন হয়েছে।
২(৪) লট/ভলিউম কি?
============
লট/ভলিউমঃ
লট ব্যাপারটি অনেক সহজ। কিন্তু আপনি যখন ইউনিটের হিসাবে যাবেন, তখন তা আপনার কাছে জটিল মনে হবে। তাই আমরা এখানে ইউনিটের হিসাবে যাব না বরং সহজ ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করবো।ফরেক্স মার্কেটে আমরা প্রতি পিপস মুভমেন্টে লাভ করতে পারি। অর্থাৎ প্রাইস ১.১৭১০ থেকে ১.১৭২০ এ গেলে আমাদের ১০ পিপস লাভ বা লস হবে। লট/ভলিউমের মাধ্যমে আমরা নির্ধারণ করে দিবো যে প্রতি পিপস আমাদের অনুকূলে বা প্রতিকূলে গেলে আমাদের কি পরিমান লাভ বা লস হবে। সাধারণতঃ ১ স্ট্যান্ডার্ড লট ১ লক্ষ ইউনিট কারেন্সির সমান। অর্থাৎ ১ লট ইউরো/ ডলার= ১ লক্ষ ইউরো, প্রতি ইউনিটের মুল্য ১.৩১০০ হলে ( 1 EUR/USD= 1.3100) , ১ লট ইউরো বা ১ লক্ষ ইউনিট ইউরো কিনতে লাগবে ১,৩১,০০০ ডলার। লটের মূল্য এত বেশি হবার কারণে ক্ষুদ্র ট্রেডারদের সুবিধার্থে মিনি লট(১০,০০০ ইউনিট বা স্ট্যান্ডার্ড লটের ১০ ভাগের ১ ভাগ) এবং মাইক্রো লট ( ১০০০ ইউনিট বা স্ট্যান্ডার্ড লটের ১০০ ভাগের ১ ভাগ) এর প্রচলন করা হয়েছে। ১ স্ট্যান্ডার্ড লটে ১ পিপ পরিবর্তিত হলে তার মূল্য দাঁড়ায় ১০ ডলার। ( ১ পিপ= ০.০০০১ ডলার, তাহলে ১ লক্ষ ইউনিটে ১,০০,০০০X ০.০০০১ ডলার বা ১০ ডলার)। মিনি লটে ১ পিপ এর মূল্যমান দাঁড়ায় ১ ডলার আর মাইক্রো লটে ১ পিপ এর মূল্যমান ০.১০ ডলার। আপনি স্ট্যান্ডার্ড লট ব্রোকারে যদি ১ লটের একটি ট্রেড ওপেন করেন এবং ১০ পিপস আপনার অনুকুলে যায় তবে আপনার লাভ হচ্ছে $১০x১০=$১০০. অনুরুপ লস হলেও $১০০ হবে। আপনি মিনি লট ব্রোকারে যদি ১ লট দিয়ে একটি ট্রেড ওপেন করেন এবং ১০ পিপস আপনার অনুকুলে যায় তবে আপনার লাভ হচ্ছে $১x১০=$১০. অনুরুপ লস হলেও $১০ হবে।আর, মাইক্রো লট ব্রোকারে যদি ১ লট দিয়ে একটি ট্রেড ওপেন করেন এবং ১০ পিপস আপনার অনুকুলে যায় তবে আপনার লাভ হচ্ছে $০.১x১০=$১. অনুরুপ লস হলেও $১ হবে।
স্ট্যান্ডার্ড লট ব্রোকারেঃ
১ স্ট্যান্ডার্ড লট = $১০/পিপস
০.১ স্ট্যান্ডার্ড লট = $১/পিপস
০.০১ স্ট্যান্ডার্ড লট = $০.১০/পিপস
১০ স্ট্যান্ডার্ড লট = $১০০/পিপস
মিনি লট ব্রোকারেঃ
১ মিনি লট = $১/পিপস
০.১ মিনি লট = $০.১০/পিপস
০.০১ মিনি লট = $০.০১/পিপস
১০ মিনি লট = $১০/পিপস
মাইক্রো লট ব্রোকারেঃ
১ মাইক্রো লট = $০.১০/পিপস
০.১ মাইক্রো লট = $০.০১/পিপস
০.০১ মাইক্রো লট = $০.০০১/পিপস
১০ মাইক্রো লট = $১/পিপস
নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন স্ট্যান্ডার্ড লট, মিনি লট এবং মাইক্রো লটের পার্থক্য। ব্রোকাররা তাদের সুবিধা মত লট সাইজ ঠিক করে।
অধিকাংশ ব্রোকার আপনাকে সর্বনিম্ন ০.০১ লটে ট্রেড করতে দিবে। অর্থাৎ, স্ট্যান্ডার্ড লট ব্রোকারে আপনি সর্বনিম্ন পিপ ভ্যালু নিতে পারবেন ১০ সেন্ট। কিন্তু মিনি লট ব্রোকারে আপনি সর্বনিম্ন পিপ ভ্যালু নিতে পারবেন ১ সেন্ট। আর মাইক্রো লট ব্রোকারে আপনি সর্বনিম্ন পিপ ভ্যালু নিতে পারবেন ০.১ সেন্ট। সুতরাং আপনার ক্যাপিটাল যদি কম হয়ে থাকে, তাহলে আপনি মিনি লট বা মাইক্রো লট ব্রোকারে কম রিস্ক নিয়ে ট্রেড করতে পারবেন।
শুধু যে আপনি ১ লট, ০.১ লট অথবা ০.০১ লটে ট্রেড করতে পারবেন তাই নয়, আপনি চাইলে ২.৫ লট, ১.৩ লট এরকম কাস্টম লটেও ট্রেড করতে পারেন।
২(৫) লিভারেজ কি?
============
লিভারেজ বা মার্জিন লোন হচ্ছে আপনার ক্যাপিটাল এর উপর সর্বোচ্চ কত গুন লোন আপনার ফরেক্স ব্রোকার আপনাকে দিবে।
ধরুন, আপনার ব্যাল্যান্স বা ক্যাপিটাল হচ্ছে ১০০ ডলার । আপনি যদি ১:২০০ লিভারেজ ব্যাবহার করেন, তাহলে আপনি ট্রেড করার সময় আপনার ব্রোকার আপনাকে সর্বোচ্চ ২০০ গুন পর্যন্ত লোন দিবে। সুতরাং, ১০ ডলার দিয়ে ১০x২০০=২০০০ ডলার ট্রেড করতে পারবেন। বিভিন্ন ব্রোকার ১:১ থেকে শুরু করে ১:১০০০ পর্যন্ত লিভারেজ দিয়ে থাকে। আপনি কত লিভারেজ নিবেন এটা আপনার উপর নির্ভর করছে। আপনি নিশ্চই ভাবছেন, ভালোই তো .... যদি ২০০ গুন পর্যন্ত লোন পাই, তাহলে নিবো না কেন? স্টক মার্কেটে তো ১:২ লোনই দিতে চায় না।
ধরুন, আপনি ১০ ডলার ডিপোজিট করলেন, ঠিক করলেন লিভারেজ ব্যাবহার করবেন, ১:১ , মানে কোন লোন নিবেন না। সেক্ষেত্রে, ব্রোকার আপনাকে বড় সাইজের কোন ট্রেড ওপেন করতে দিবে না। ওই ১০ ডলার দিয়ে যতটুকু বড় ট্রেড ওপেন করা যায়, ঠিক ততটুকুই ট্রেড ওপেন করতে দিবে। সেক্ষেত্রে, মার্কেট আপনার অনুকুলে ৫০ পিপস মুভ করলে হয়ত আপনার ১ ডলার লাভ হবে। সাধারনত বিভিন্ন কারেন্সি পেয়ার প্রতিদিন ১০০-৩০০ পিপস মুভ করে।
তো আপনি ভাবলেন, লোন নিবেন ও আরও বড় ট্রেড ওপেন করবেন যাতে লাভ বেশি হয়। আপনাকে যদি কোন ব্রোকার ১:২০০ লিভারেজ অফার করে, তাহলে আপনি ইচ্ছা করলে ১০ ডলার দিয়ে ২০০০ ডলার ট্রেড করতে পারবেন। আর তাই, আগে যা লাভ হতো, এখন তার থেকে ২০০ গুন বেশি লাভ হবে। একইভাবে, আগে যা লস হতো, আপনি যদি ১:২০০ লিভারেজ এর পুরো ব্যাবহার করেন, লসও তার ২০০ গুন বেশি হবে। যদি আগে মার্কেট আপনার অনুকুলে ৫০ পিপস মুভ করলে ১ ডলার লাভ হতো, এখন তাহলে ২০০ ডলার লাভ হবে।
ব্রোকার লোন আপনাকে ঠিকই দেবে। লাভ হলে তো ভালোই, লস এর ক্ষেত্রে আপনার লস যদি কোন সময় আপনার ক্যাপিটাল এর সমান হয়, তাহলে সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ট্রেড ক্লোজ হয়ে যাবে। ব্রোকার কোন অবস্থাতেই আপনার যা ক্যাপিটাল আছে, তার থেকে বেশি লসে আপনার ট্রেড চলতে দিবে না। এটাকে ফরেক্সে মার্জিন কল বলে, বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে বলে ফোর্সড সেল।
বেশি লিভারেজ ব্যাবহার করে ট্রেড ওপেন করতে গিয়ে আমার লস যদি ক্যাপিটাল এর সমান হয়, তাহলে কি ফতুর হয়ে যাব নাকি?সোজা বাংলা কথায়, হ্যা! সুতরাং, লিভারেজ যাই সেট করুন না কেন, ট্রেড খোলার সময় কখনই ব্যালেন্স এর অনুপাতে বেশি বড় ট্রেড খুলবেন না। কিছু মানুষ বলে যে ফরেক্স নাকি একদিনেই ক্যাপিটাল দুই গুন, তিন গুন করা সম্ভব । ভাগ্য থাকলে অবশই সম্ভব।এভাবে ট্রেড করা জুয়া খেলা বা বাজী ধরার মত। ১/২ বার আপনি সফল হতে পারেন কিন্তু অল্প সময়েই আপনার পুঁজি হারিয়ে যাবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




