somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাষ্ট্রধম ইসলাম ও অসাম্প্রদায়িকতার বাংলাদেশ।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা জানি যে, ধর্ম নিরপেক্ষ বা অসাম্প্রদায়কি শব্দের সহজ সরলার্থ হলো, সকল ধর্মের মানুষদের সমান দৃষ্টিতে দেখা। তাহলে কোন তত্বের ভিত্তিত্বে আদালতে বাংলাদেশকে ইসলামী রাস্ট্র ঘোষণা করা হইল এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের খাঁটো করা হইল। এই দেশে ইসলাম ধর্মের লোকজনের পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টিয়ান সম্প্রদায়ের লোকজনও বসবাস করে। তাহলে কেন তাদের বঞ্চিত করা হইল ? এটাই কি ধর্ম নিরপেক্ষতা বা অসাম্প্রদয়কিতার চেতনা ?
আমরা জানি যে, ১৯৮৮ সালের ৭ই জুন, মিলিটারি স্বৈরশাসক লেঃ জেঃ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে সংসদে পাশ করা হলো সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী বিল যার মাধ্যমে ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ২০১১ সালে দাখিল করা এক সম্পূরক আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ওই বছরের ৮ জুন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা সংবলিত সংবিধানের ওই সংশোধনী কেন অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পরে একই বছরের ২৫ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখেই সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে কিছুটা সংশোধনী আনা হয়। ওই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে সে বছরই হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন করা হলে হাইকোর্ট ওই বছরের ১ ডিসেম্বর পৃথক রুল জারি করেন। উভয় রুলের ওপর শুনানির জন্য রিট আবদনকারী পক্ষ হাইকোর্টে একটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করার জন্য আবেদন করে গত বছর। প্রধান বিচারপতি রিট আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য তিন সদস্যের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন। ২৯ ফেব্রুয়ারি এ বেঞ্চে রুলের ওপর শুনানির জন্য কার্যতালিকাভুক্ত হয়। ২৮ মার্চ মহামান্য আদালত রিটটি খারিজ করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখেন। সেই থেকে ইসলাম এখনও বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল আছে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে রাস্ট্রের কোন ধর্ম ছিল না, ১৯৮৮ সালে সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদ ইসলাম ধর্মকে সংবিধানে রাস্ট্র ধর্ম হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করে। ১৯৯১ সালে বিএনপি, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ, ২০০১ এ চার দলীয় ঐক্যজোট, ২০০৭/৮ তত্বাবধায়ক, ২০০৯ এর ৬ই জানুয়ারি থেকে এখনো পর্যন্ত ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু কোন সরকারই রাস্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করার কোন উদ্দোগ গ্রহন করেনি। বাংলাদেশের সমস্ত সংখ্যালঘুরা ভেবেছিল শেখ হাসিনা যেহেতু অসাম্প্রদায়িক নেত্রী হয়তোবা তিনি রাস্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করবে। কিন্তু না তিনি তা করেননি বরং দেশের সমস্ত সংখ্যালঘু ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসীদের মনে কুঠার আঘাত করে নিজেদের আজ্ঞাবহ আদালতের মাধ্যমে রাস্ট্রধর্মকে আরও পাকাপোক্ত করে। তাছাড়াও , আওয়ামী লীগ ১৯৮৮ সালে সংবিধানে ইসলাম ধর্ম সংযোজনকারী সেই এরশাদের সাথে জোট বেঁধে ২০০৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বরে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়। আবার ২০১৪ সালের ৫ ই জানুয়ারি ভোট বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে সেই এরশাদকেই পছন্দের মানুষ হিসাবে বিরোধী দলের আসনে বসিয়ে তার স্ত্রী রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেত্রী ও এরশাদকে মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ দূত হিসাবে নিয়োগ দেন।
যখনই দেখেছি দুই স্বৈরশাসক জোট বেঁধেছে, তখনই মনে শঙ্কা হয়েছিল তারা বাংলাদেশের বারটা বাজাবে। যেমনটা ভেবেছিলাম ওরা তার চেয়ে বেশি করে ফেলেছে। তারা দেশের সমস্ত সংখ্যালঘুদের সাথে বড় ধরনের প্রতারণা করেছে। জাতি তাদেরকে চিরকাল প্রতারক হিসাবেই জানবে। এবং ইতিহাসে তাদের নাম জাতীয় প্রতারক হিসাবেই লেখা থাকবে।
কেন পাঠ্যপুস্তক হইতে হিন্দু লেখকদের বিশেষ বিশেষ গল্প, কবিতা গুলো তুলে দেওয়া হইল ? প্রশ্ন হলো যে, আগে যারা হিন্দু লেখকদের গল্প, কবিতা পড়ে শিক্ষিত হয়েছে ,তারা কি মানুষ হয়নি ? নাকি জঙ্গি বা অমানুষ হযেছে ?
সোনালী ব্যাংকের ২০১৫ সালের ক্যালেন্ডারে বান্দরবনের যুদ্ধ ধাতু জাদি (স্বর্ণ মন্দির) মন্দির ও দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দিরের ছবি থাকায় ছয় লাখ ক্যালেন্ডার বিতরণ বাতিল করেছেন এবং একই সাথে নতুন করে ক্যালেন্ডার ছাপানোর নির্দেশ দিয়ে দেশের প্রায় ২ কোটি টাকা ন্ষ্ট করেছেন, আপনাদের জানা দরকার ছিলো এই ২ কোটি টাকার আসল মালিক জনগণ এবং জনগণের টাকা অপচয়ের অধিকার তাদের নেই। এখন প্রশ্ন হল যে, সোনালী ব্যাংকে কি হিন্দুরা টাকা জমা রাখেনা ? নাকি যারা টাকা রাখে, তাদের কাছ থেকে কোন ফি কেটে রাখেনা ? আমি সোনালী ব্যাংকের প্রতিটি কর্মী (যারা ক্যালেন্ডার বাতিলের জন্য আন্দোলন করেছিলো) এবং হাসিনাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, তাদের মুজুরির উৎস কি, নাকি তারা বিনা বেতনে কাজ করে ? যদি বেতনে নিয়েই কাজ করে থাকে তবে তাদের বেতনে কি হিন্দুদের ট্যাক্স-ভ্যাটের টাকা আছে ? যদি হিন্দুদের দেওয়া ট্যাক্স-ভ্যাটের টাকা থেকে থাকে তবে ক্যালেন্ডার কেন বাতিল করা হইল ?
তাছাড়া শেখ হাসিনা, রাস্ট্রের ৮,৭২২ কোটি ৫ লক্ষ ৮ হাজার টাকা খরচ করে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্দোগ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে ১১ টি মডেল মসজিদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমি মনেকরি, যেহেতু বাংলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষ, অসাম্প্রদয়কি ও গণতান্ত্রিক দেশ সেহেতু সকল ধর্মের মানুষদের জন্যই সম-পরিমান ধর্মীয় উপাসনালয় স্থাপন করা উচিৎ ছিলো। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা করেনি, বাংলাদেশের একজন মুসলমান যেমন সরকারকে ট্যাক্স ও ভ্যাট দেয় ঠিক তেমনই একজন সংখ্যালঘুও সরকারকে ট্যাক্স ও ভ্যাট দেয়। উপরেরর আলোচনা থেকে আমরা স্পষ্ট ধারনা পাই যে, সরকার প্রধানই সাম্প্রদায়িক তাহলে সংখ্যালঘুরা কোথায় যাবে।।। বাংলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষ, অসাম্প্রদয়কি ও গণতান্ত্রিক দেশ কোন দিন হতে পারবে না।।।।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ২:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×