somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলোকিত নেতা মওদূদী (রহ:) : শিক্ষা জীবন

১৭ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“জ্ঞান মুসলমানদের হারানো সম্পদ, যেখানেই তা পাবে কুড়িয়ে নেবে”-হাদীসের এ বাণীটি মওদূদী (রহঃ)-এর জীবনে প্রভাব ফেলেছিল কিনা তা জানা যায় না, তবে শিক্ষার প্রতি তার ছিল আজন্ম অনুরাগ।

মাদরাসায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণের পূর্বেই তার বাবা তাকে নিয়ে যান এক আদর্শ শিক্ষক ওস্তাদ মাওলানা আবদুস সালাম নিয়াযীর (মৃতু্য ১৯৫৪ ইসায়ী) কাছে।

কথিত আছে আরবী ভাষা ও ব্যাকরণ (নাহু ও সরফ), মা’কুলাত, মায়ানী ও বালাগাত বিষয়ে তার সমকক্ষ কোন পন্ডিত সে যুগে ভারত বর্ষে ছিলেন না। কুরআন, হাদীস ও আরবী ভাষায় তার জ্ঞান-গরিমা ছিল অদ্বিতীয়। অত্যন্ত স্বাধীন চেতা পন্ডিত ছিলেন তিনি এবং এ কারনেই কখনো কোন চাকুরী গ্রহণ করেন নি বরং আতর বানিয়ে ও তার ব্যবসা করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। অর্থের প্রতি নির্মোহ এই পন্ডিত জ্ঞান দানের বিনিময়ে কখনো কারো কাছ থেকে কোন অর্থ গ্রহণ করেন নি।

ওস্তান নিয়াযী মওদূদীর (রহঃ) বাসার দেড় মাইল দূরে দিল্লীর তুর্কমান দরজার কাছে কুচা পন্ডিত এলাকায় বসবাত করতেন। মওদূদী (রহঃ) বাবা আরবী শিক্ষক হিসেবে ওস্তান নিয়াযীকেই নিযুক্ত করেন। কখনো তিনি পারিশ্রমিক নেন নি বরং পারিশ্রমিকের কথায় তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘আমি ইলম বিক্রি করি না’।

মওদূদী (রহঃ) ওস্তাদ নিয়াজীর কাছ থেকে শিক্ষা লাভের পরে ঐতিহ্যবাহী ইসলামি শিক্ষা ও পাশ্চাত্য আধুনিক শিক্ষার সমন্বিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদরাসা ফুরকানিয়ায় ভর্তি হন। মাধ্যমিক স্তর পেরিয়ে তিনি ভর্তি হন হায়দ্রাবাদের দারুল উলুম মাদরাসায়। কিন্তু বাবার অসুস্থতা এবং ইন্তেকালে আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলেই তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটে।

কিন্তু শিক্ষার প্রতি যার আজন্ম অনুরাগ জ্ঞানার্জনে কোন কিছুই কি তার প্রতিবন্ধক হতে পারে, না পেরেছে কোন কালে? গত শতাব্দীর বিশের দশকের মধ্যেই তিনি আরবী, ফার্সী, ইংরেজী এবং মাতৃভাষা উদর্ুতে এতোটা বুৎপত্তি অর্জন করেন যে নিজেই স্বাধীনভাবে বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়ন করা শুরু করেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে অধ্যয়নের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন প্রথিতযশা পন্ডিতদের সাহচর্যে জ্ঞানার্জনে ব্রতী হন। এমনকি জমিয়ত পত্রিকার সম্পাদক হবার পর কিছু জটিল বিষয়ে জ্ঞানার্জনের জন্য তিনি আবার ওস্তান নিয়াজীর শরনাপন্ন হন। জ্ঞানপিপাসু মওদূদী (রহঃ) ফজরের আজানের মুহূর্তে পায়ে হেটে চলে যেতেন দেড় মাইল দূরে ওস্তাদ নিয়াযীর আস্তানায়। যেদিন ওস্তান অসুস্থ থাকতেন সেদিন আবার ফিরে আসতে হতো তালিম না নিয়েই।

এভাবেই তিনি জ্ঞানার্জনকে তার ব্রত হিসেবে নিয়ে ওস্তাদের স্নেহভাজনে পরিনত হন। তাইতো তার ওস্তান তাকে “সাইয়েদ বাদশা” বলে সম্বোধন করতেন।

মওদূদী (রহঃ) সম্পর্কে ওস্তাদের এতটা অগাধ আস্থা ছিল যে দেশ বিভাগের পর ওস্তাদের এক সাগরেদ দিল্লী থেকে লাহোর হিজরত করলে তিনি তাকে উপদেশ দেন, “লাহোরে প্রথমেই আমার সাগরেদ মওদূদীর কাছে যাবে, অতপর লা-ইলাহা ইল্লাহু-এর অর্থের উপর মনোনিবেশ করবে।”

মওদূদী (রহঃ) দেওবন্দ, মাযহারুল উলুম বা কোন দারুল উলুম কিংবা আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চতর গ্রাজুয়েশন বা উচ্চতর ডিগ্রী নিতে পারেন নি বলে অনেক ওলামা তাকে আলেমে দ্বীন হিসেবে মেনে নিতে পারেন নি। আর প্রগতিশীলদের তো কথাই নেই। মওদূদীকে তারা মুর্খ ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই নারাজ। অথচ এরা আরজ আলী মাতুব্বরকে ঠিকই পন্ডিত মনে করে, এদের প্রগতিশীল পত্রিকাগুলো ঠিকই হাস্যকর রাশিচক্র ছাপে, তখন তা আর প্রগতিহীন মনে হয় না।

তবে মজার ব্যাপার হলো মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহঃ)-এর অসাধারন লেখা, তার চিন্তাধারা এবং তার প্রতিষ্ঠিত আন্দোলন ও সংগঠনের উপর বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে, ছাত্ররা ডক্টরেট করছেন আর তৈরী হচ্ছে বড় বড় গবেষণাপত্র। আসলে গুটিকয়েক হিংসুটে আলেমের সার্টিফিকেট দিয়ে তো আর কারো মর্যাদার কমবেশী হয় না বরং সম্মানিত ব্যক্তির সম্মান আল্লাহই বাড়িয়ে দেন, অল্ল্লাহই তাকে সবার শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত করে
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×