somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিমদের অবদানঃ শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) - পর্ব ০৩

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ)

ড. মুশতাক আহমদ





১ম অধ্যায়

সমকালীন পরিস্থিতি ও সংগ্রাম-সূত্র

ইংরেজ শাসনপূর্ব ভারতবর্ষ





তিন



ভারতীয় জনগোষ্ঠী ইসলামে দীক্ষিত হলে ক্রমে মুসলিম শাসনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। ধর্মপ্রচারকগণের ক্রমাগত প্রচারাভিযান সেই ক্ষেত্রকে আরো উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় করে তোলে। ফলে শতাব্দীকালের মধ্যেই (৭১২ খ্রি:) উপমহাদেশের পশ্চিম-উত্তর সীমানায় উড্ডীন হয় মুসলিম শাসনের বিজয় পতাকা।



( ড. তারা চাঁদ, প্রাগুক্ত (ভারতীয় সংস্কৃতিতে ইসলামের প্রভাব ( ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৯১ )), পৃঃ ৪১-৪২ )





এ ব্যাপারে মুসলিম রাজন্যবর্গের চেয়ে ইসলাম প্রচারকগণের অবদান বেশী ছিল। বস্তুত রাজন্যবর্গ ধর্মপ্রচারকগণের দ্বারা যতটুকু উপকৃত হয়েছিলেন ধর্ম প্রচারকগণ রাজন্যবর্গ দ্বারা ততটুকু উপকৃত হননি। ইউরোপে মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠা কোথাও তরবারীর জোরে হয়ে থাকলেও ভারতের অবস্থা ছিল ভিন্ন। এখানে তরবারীর চেয়ে ইসলামী আদর্শের প্রতি মানুষের নিখুঁত আকর্ষণবোধই বেশী কাজ করে।



( সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী, হিন্দুস্তানী মুসলমান এক তারীখী জায়িযা (লক্ষ্ণৌঃ মজলিসে তাহকীকাত ওয়া নশ্‌রিয়্যাতে ইসলাম, ১৯৯২), পৃঃ ৩২-৩৪ )



অনুরূপে শ্রেনীবৈষম্য ও অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি কারণে অতিষ্ঠ শূদ্র ও নীচকূলজাতের লোকেরা প্রধানতঃ ইসলাম কবুল করেছিল - এ কথাও যথার্থ নয়। ভারতীয়দের সত্যানুরাগ তাদেরকে ইসলামের দিকে ধাবিত করে। রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে তাদের চরিত্রে আদিকাল থেকে ধার্মিকতা, মানবতাবোধ ও সরলতার যেই বৈশিষ্ট্য ছিল, ইসলাম গ্রহণে সেই বৈশিষ্ট্য তাদের সাহায্য করে। কালিকটের রাজা জামেরীনের ইসলাম গ্রহণপূর্বক নিজে দাওয়াতের কাজে অংশ গ্রহণ করা,



( ড. তারা চাঁদ, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৩ )



আরাকানের রাজা বঙ্গোপসাগরে নিমজ্জিত বাণিজ্যতরীর মুসলিম বণিকদের ধর্মবিশ্বাসে মুগ্ধ হওয়া এবং তাদেরকে নিজ দেশে স্থায়ীভাবে বসতির ব্যবস্থা করে দেওয়া এরই ইঙ্গিত বহন করে।



( ড. কাজী দীন মুহম্মদ, বাংলাদেশের উৎপত্তি ও বিকাশ, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৮২ )



নতুবা অবস্থাপন্ন ও সবল লোকদের তুলনায় দরিদ্র ও দুর্বল লোকদের কাছে যে কোন ধর্মের দাওয়াত অধিকতর সমাদৃত হওয়া শুধু ভারত উপমহাদেশের বেলায় নয়, বিশ্বের সর্বত্রই এমনটি ঘটেছে।



মুসলিম প্রচারকবৃন্দ ভারতে প্রবেশ করে ভারতীয়দের সাথে একান্তভাবে মিশে যান। তাঁরা ভারতবাসীর সাথে ঘনিষ্ঠ মেলামেশার মাধ্যমে ইসলামের অমিয় বাণী, আখলাক ও দৈনন্দিন জীবন বিধানের দাওয়াত ও শিক্ষা দেন। তাঁরা সাধারণতঃ কোন গ্রাম কিংবা নগরকে নিজেদের কর্মক্ষেত্ররূপে বেছে নিয়ে সেখানে খানকা ও প্রচারকেন্দ্র গড়ে তুলতেন। ভারতের মাটি, মানুষ, প্রকৃতি ও পরিবেশকে তাঁরা এত বেশী আপন করে নিয়েছিলেন যে, অনেকে নিজ জন্মভূমিতে আর ফিরে যাননি বরং এখানেই সমাধিস্থ হন।



( সাধারণতঃ বলা হয় যে, এক হাতে কুরআন আর অপর হাতে তরবারি নিয়ে পৃথিবীতে মুসলিম অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে এ কথা সত্য নয়। তবে মুসলিমগণের দেশবিজয়ের সাথে সাথে ইসলাম ধর্মেরও প্রসার ঘটেছে। উল্লেখ্য করা যায় যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) - এর জীবনকালে মুসলিমদের সাথে অমুসলিমদের যে সব ধর্মযুদ্ধ হয় তার প্রায় সবগুলোই ছিল আত্নরক্ষামূলক। এমনকি যুদ্ধে পরাজয়ের পরেও শত্রুপক্ষকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা হত না। রসূলুল্লাহ (সঃ) - এর জীবনকালে এবং তাঁর ওফাতের পরেও ইসলামের এ মূল শিক্ষা অব্যাহত থাকে। যুগে যুগে এরই অন্তর্নিহিত ঐক্য ও সাম্যের আদর্শের প্রতি সকলকে আহবান করা হয়েছে। এ উদার মনোভবের কারণেই ইসলাম সহজে বিশ্বব্যাপী প্রসার লাভ করেছিল। ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার সম্পর্কে একই কথা প্রযোজ্য। ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে এখানে কোথাও জবরদস্তি করা হয়েছে বলে প্রমাণ নেই। মুখ্যত সূফী-দরবেশ ও উলামায়ে কিরামই ইসলামের প্রচার ও প্রসারের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁরাই মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেন। প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৮২ )



দশম হিজরীতে বিদায় হিজ্জ ( ২৩ জানু ৬৩২ খ্রিঃ ) এর সময় রসূলুল্লাহ (সঃ) - এর সাথে প্রায় সোয়া লক্ষ সাহাবী উপস্থিত ছিলেন।



( বিদায় হিজ্জে রসূলুল্লাহ (সঃ) - এর সাথে হজ্জ সম্পাদনকারী সাহাবীগণের সংখ্যা ছিল ৯০ হাজার, মতান্তরে ১ লক্ষ ১৪ হাজার কিংবা আরো বেশী। ( ইদ্‌রীস কান্ধলবী, সীরাতুল মুস্তফা, দেওবন্দঃ আশরাফী বুক ডিপো, তা.বি, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৪৯ ) )



তাঁরা ইসলামের মহান আহ্বান নিয়ে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার নির্দেশ পেয়ে সকলে এমনভাবে ছড়িয়ে গিয়েছিলেন যে, ঐ সোয়া লক্ষ সাহাবীর এক-দশমাংশের সমাধিও আরব ভূখণ্ডে পাওয়া যায় না।

( শাহ্‌ মুহম্মদ ইউসুফ কান্ধলবী, হায়াতুস সাহাবা, ( নয়াদিল্লীঃ ইদারায়ে ইশাআতে দীনিয়াত, তা. বি.), ৯ম খণ্ড, পৃঃ ২৪২-২৪৩ )


এই প্রচারকগণই দেশে দেশে ইসলামের বাণী পৌঁছিয়ে দেন এবং সর্বত্র ইসলামী শাসনের উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরী করে দেন। উপমহাদেশের মুসলিম শাসনের সূচনা করেন উমাইয়া সেনাপতি মহাবীর মুহাম্মদ ইব্‌ন কাসিম (৯৩/৭১২ - ৯৬/৭১৫)। তারপর যথাক্রমে সুলতান মাহমুদ গযনবী আল ফাতিহ (৯৯৭ - ১০৩৩ খ্রিঃ), সুলতান মুহাম্মদ ঘোরী (১১৭৩ - ১২০৬ খ্রিঃ) ও সুলতান কুতুবুদ্দীন আয়বেক (১২০৬ - ১২১০ খ্রিঃ) বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন। অবশেষে সুলতান আলাউদ্দীন শাহ্‌ খালজী (১২৯৬ - ১৩১৬) - এর সময়ে সমগ্র ভারত উপমহাদেশ মুসলিম শাসনের আওতাভুক্ত হয়। মুসলিম শাসনের এই ধারা মোঘলদের পতন ( ১৮৫৮ খ্রিঃ) পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।



এক নজরে এই পর্বে যে সব কিতাবের সাহায্য নেওয়া হয়েছেঃ

১। ড. তারা চাঁদ, ভারতীয় সংস্কৃতিতে ইসলামের প্রভাব ( ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৯১ )

২। সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী, হিন্দুস্তানী মুসলমান এক তারীখী জায়িযা (লক্ষ্ণৌঃ মজলিসে তাহকীকাত ওয়া নশ্‌রিয়্যাতে ইসলাম, ১৯৯২)

৩। ড. কাজী দীন মুহম্মদ, বাংলাদেশের উৎপত্তি ও বিকাশ

৪। ইদ্‌রীস কান্ধলবী, সীরাতুল মুস্তফা, দেওবন্দঃ আশরাফী বুক ডিপো

৫। শাহ্‌ মুহম্মদ ইউসুফ কান্ধলবী, হায়াতুস সাহাবা, নয়াদিল্লীঃ ইদারায়ে ইশাআতে দীনিয়াত

২য় পর্বঃ

http://www.somewhereinblog.net/blog/Tarek000/29794436



( চলবে ইনশাআল্লাহ )
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×