প্রচন্ড গরম। গ্রীষ্মকালের তখন ভরা যৌবন। যৌবন যার, তান্ডব তার। রহমত, বরকত আর মাগফেরাত নিয়ে রমজান হাজির। জাহান্নামের তাপদাহের আচ লাগছে যেন। আল্লাহ সহায়, রোজা বর্ম।
ঢাকার মিরপুরে তখন এক মেসে থাকতাম আমরা ছয়জন। একই এলাকার পোলাপাইন। অন্যরকম আনন্দ। বিল্ডিং এর এই পাশে আমরা আর অন্য পাশে থাকতেন বাড়ীর মালিকেরা। বাড়ীর মালিকের দুই ছেলে মেয়ে। প্রিয়ম আর প্রীতি। প্রিয়ম তখন ক্লাস এইটে পড়ত আর প্রীতে মনে হয় ক্লাস থ্রীতে। খুবই মেধাবী ছাত্র, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ত। আমাদের একজনকে আন্টি এসে ধরলেন ওকে প্রাইভেট পড়ানোর জন্যে। আর আরেকজন প্রায়ই প্রিয়মের কম্পিউটারে কোন সমস্যা হলে গিয়ে ঠিক করে দিয়ে আসত। সেই সুবাদে উনাদের সাথে ভালই সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রতি মাসেই বাড়ী ভাড়া দিতে আমাদের দেরী হলেও কখনই কটুবাক্য শুনতে হয় নি। বাড়িওয়ালা আঙ্কেল প্রায়ই আমাদের খোজ খবর নিতেন। উনারা খুব ভাল মানুষ। কল্পনার বাইরে। তো আন্টি রমজানের দিনগুলিতে প্রত্যেকদিন বড় এক বোতলে করে ঠান্ডা পানি পাঠিয়ে দিতেন। কোন দিন কাজের মেয়েকে দিয়ে নয়ত কখনো প্রিয়ম অথবা প্রীতি কে দিয়ে। সেই সঙ্গে ইফতারী ত ছিলই। আমাদের মেসে ফ্রিজ ছিল না। সেই বোতলের ঠান্ডা পানি গুলো যেন ঠিক অমৃতের মতন লাগত। আর মনের গভীর থেকে উনাদের জন্য দোয়া চলে আসত। আল্লাহ যেন উনাদের হাউজে কাওসারের পানি দান করেন। আন্টি খেয়াল করে আমাদের কাছ থেকে পানির বোতল গুলো চেয়ে নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতেন। কোন দিন বাজার একটু বেশি হয়ে গেলে আমরা আন্টি কে বলে উনাদের ফ্রিজে রেখে দিতাম। কখনোই আন্টি না বলেন নি। যতদিন ওই মেসে থেকেছি মায়ের মমতাই পেয়ে গেছি। বাড়ি থেকে দূরে থাকার কষ্ট মনেই আসেনি।
২০১০ সালে ওই মেস ছেড়েছি। তারপর তিন রমজান পার হয়ে এখন চতুর্থ রমজান চলছে। কত মিষ্টি শরবত আর কত আইস ওয়াটার খেলাম। কিন্তু আন্টির দেয়া বোতলের ঠান্ডা পানিগুলোর সুমিষ্টতা এখনো জিহবায় লেগে আছে। আর হৃদয়ে ত আছেই। জানি না আঙ্কেল আন্টি কেমন আছেন। দোয়া করি আল্লাহ যেন উনাদের অনেক অনেক ভাল রাখেন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




