গতকাল রাতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে একটি ঘটনা দেখলাম।এরকম ঘটনা এর আগেও অনেক বার দেখেছি কিন্তু এর আগে আমাকে কখনো এমন ভাবে নাড়া দিতে পারেনি যা গতকাল পেরেছে।হয়ত আগে বিষয়টির গভীরতা বুঝতে পারিনি অথবা মধ্যরাতের নির্জনতা আমার ভেরতের ঘুমন্ত সত্বাকে জাগিয়ে দিয়েছিল।
কাল আমার ছোটবোন ট্রেনে করে দেশের বাড়ি থেকে ঢাকা এসেছে,তাকে আনার জন্যই স্টশনে যাওয়া।ট্রেন আসার কথা সাড়ে এগারটায়, পরে রিক্সা পাব না এই কারনে আমি এগারটার দিকেই স্টেশনে চলে যাই।প্রথমে স্টেশনে বেশ ভালই মানুষজন ছিল কিন্তু রাত বাড়টা বাজতেই মুটামুটি ফাঁকা হয়ে গেল।বাংলাদেশ রেলওয়ে তাই বুজতেই পারছেন কি অবস্থা! সাড়ে এগারটায় ট্রেন আসার কথা থাকলেও রাত বাড়টায় ও সেটা জয়দেভপুরেই পরে রইল।বেশ শীত লাগছিল বলে আমি স্টেশনের এক কর্নারের দিকে গিয়ে বসলাম।বসে বসে বিভিন্ন কথা ভাবছিলাম এর মাঝে দেখি আমার পাশের একটি চেয়ারে বসে একজন লোক মুখ ঢেকে কাঁদছে।লোকটাকে দেখে রাস্তার ভাসমান কেউ মনে হল না তাই জিজ্ঞেস করবনা করব না করেও শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেই ফেললাম যে কি হয়েছে।তারপর সে যা বলল তা আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটছে, আমরা টিভিতে দেখে বা পত্রিকায় পড়ে তেমন কোন গুরুত্বই দেই না।কিন্তু বিষয়টা যে কতটা করুন তা কাল বাস্তবিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বুঝতে পারলাম।
লোকটির বাড়ি সিলেটের কুলাউড়ায়।সেখানের এক আদম ব্যাবসার দালাল তাকে উনেক মিথ্যা প্রোলভন দেখিয়ে ঢাকার এক ভিসা এজেন্সির কাছে নিয়ে আসে।সেখানে তারা তাকে আবুধাবিতে রাজ মিস্ত্রির কাজের ভিসার কথা বলে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।সে জানায় এই টাকা সে তার জমি বিক্রি,বাড়ি বন্ধক ও ধার করে সংগ্রহ করে।গত এগা্রো তারিখ সে আবধাবিতে পৌছলে সেখানে ধরে পড়ে তার ভিসাটা জাল ভিসা, পুলিশ তাকে আটক করে।সেখান থেকে সে বাংলাদেশে ঐ এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানায় সব ঠিক আছে এবং সে যেন কোন চিন্তা না করে আর তারা একদিনের মাঝেই তাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবে।কিন্তু তার পর দুই দিন চলে গেলেও তারা কোন ব্যাবস্থা নেয় না।অবশেষে গতকাল পুলিশ তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।কিন্তু হতভাগ্য তখনো তার পিছু ছাড়েনি- বিমান বন্দরে নেমে তার ব্যাগ নিতে গিয়ে দেখে ব্যাগও হাওয়া হয়ে গেছে।বিমানের লোকজন তাকে উলটা পালটা বুঝ দিয়ে পাঠিয়ে দেয়।তার পর সে যায় ঐ ভূয়া এজেন্সির কাছে সেখানে তার তার সাথে খারাপ ব্যাবহার করে আর উলটো এমন ভাব নেয় যেন ফেরত আসাটা ঐ লোকটির ই দোষ।সে উত্তেজিত হলে তারা তাকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে এবং দারোয়ান দিয়ে জোর পূর্বক বের করে দেয়।এখন সে পুরো নিরুপায় আগে জমিতে যে ফসল আসত তাও বিক্রি করে দিয়েছে,যে বাড়িতে থাকত সেটাও বন্ধক রাখা আর তার উপর পঁচিশ হাজার টাকার ঋন।তার পরিবারে দুই বছরের এক ছেলে, বউ ও বৃ্দ্ধ বাবা মা আছে এখন সে তাদের কিভাবে খাওবে তা সে জানে না!
লোকটির ঘটনা শোনার পর আমি এক বার সুধু ভেবে দেখলাম যে তার অবস্থায় আমি থাকলে আজ কি অবস্থা হত!তখনি বুঝতে পারলাম মানুষ আত্যহত্যা কখন করে!কারন আমি ঐ অবস্থায় নিজেকে ভাবতেই মনে হচ্ছিল আত্যহত্যা ছাড়া আর কোন পথ নেই কারন নিজের চোখে বউ,বাচ্চা,বাবা মা কে না খেয়ে থাকতে দেখার থেকে চলে যাওয়া অনেক সহজ।
লোকটি হয়ত আত্বহত্যা করবে না আর যদি করেও বসে আমি মোটেও অবাক হব না।কিন্তু আমরা কি এভাবে এই সকল দুর্ভাগ্য মানুষ গুলোর হতভাগ্যের খবর শুধু পত্রিকায় পড়ব?কোন দিন কি এই সকল প্রতারকদের বিচারের খবর পড়ব না?প্রায় প্রতিদিনই এমন হাজার প্রতারনার খবর আসে কিন্তু প্রতারকদের বিচারের খবর একটাও আসে না।আমরা এই সব প্রতারকদের বিচার চাই,তার মত হতভাগ্য মানষগুলোর করুন মুখ আমি আর একটাও দেখতে চাই না।কবে আসবে সেই দিন???
বি:দ্রঃ আসুন আমরা যদি আমাদের আশেপাশে কোন ব্যাক্তিকে এরকম বিদেশের সপ্নে বিভোর হতে দেখি,আসুন আমরা একটু চেষ্টা করি তাদের সচেতন করতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৮:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




