হিমু আজকাল অনেক হাঁটে। ঢাকার রাস্তা, মানুষের কোলাহল—সব কিছুই তার চেনা। কিন্তু আজ যেনো হিমুর মনের ভেতরে কিছু একটা অদ্ভুত খেলা করছে। আকাশটা অস্বাভাবিক ধূসর, বাতাসে এক ধরণের অস্থিরতা। কোন দিক থেকে যেনো অজানা এক বিদ্রোহের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
হিমু হাঁটতে হাঁটতে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যায়। একসময় চারপাশে মানুষের ভিড় দেখে থেমে যায়। অনেকের হাতে পতাকা, কারো মুখে স্লোগান। হিমু দাঁড়িয়ে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। একটা বাচ্চা ছেলে পকেট থেকে মোবাইল বের করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে যেতে যায়, হিমু তার হাত চেপে ধরে—"কি দরকার?" ছেলেটা অবাক হয়ে হিমুর দিকে তাকায়।
এমন সময় পেছন থেকে পরিচিত গলা শোনা যায়। "তুমি আবার কি বিপ্লব করতে আসছো, হিমু?" মিসির আলী। হাতের বাঁকানো চশমা ঠিক করতে করতে ধীর পায়ে হেঁটে আসে।
"আমি বিপ্লব করি না, মিসির আলী," হিমু মৃদু হাসে, "আমি দেখি মানুষ কি করছে। আজকাল সবাই বিপ্লব করতে চায়, জানো?"
মিসির আলী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, তারপর বলেন, "বিপ্লব তো হওয়ারই কথা ছিল। এতদিন ধরে জমে থাকা অন্যায়, অবিচার—কোনো না কোনো সময় তো বিস্ফোরিত হবেই। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এর ফলাফল কি হবে?"
হিমু আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, "মানুষ সবকিছু পরিবর্তন করতে চায়, কিন্তু পরিবর্তনের পথে যদি তার নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে যায়?"
"তোমার কথা সবসময়ই জটিল," মিসির আলী হেসে বলে, "আসল কথা হলো, এই যে সরকার পতন হলো, এর পেছনে সত্য কি? এর ভেতরের লুকানো কারণগুলো কি তুমি বুঝতে পারো?"
"সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে, সত্য কেউই জানতে চায় না," হিমু উত্তর দেয়, "মানুষ মিথ্যার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে নেয়।"
এমন সময় হঠাৎ কিছু লোকের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। কেউ একজন বলছে, "সরকার পালিয়ে গেছে! পতন হয়েছে!"
মিসির আলী গভীর দৃষ্টিতে হিমুর দিকে তাকিয়ে বলেন, "তাহলে আমরা কি সত্যের সন্ধান পেয়েছি, নাকি আরো গভীর মিথ্যার ভেতরে ঢুকছি?"
হিমু কিছুক্ষণ চুপ থাকে, তারপর বলে, "সত্যের কোনো অতল নেই, মিসির আলী। আমরা যতই খুঁজি, ততই দূরে চলে যায়।"
মিসির আলী চিন্তিত মুখে তাকিয়ে থাকে। "তাহলে আমরা কি ভুল করছি?"
"ভুল নয়," হিমু হাসে, "আমরা শুধু মানুষ।"
শহরের কোলাহলে আবার তারা হাঁটতে শুরু করে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


