
লোকে ধানমণ্ডি-৩২ ভেঙ্গেছে, ইট'স ওকে। তবে এটি ৫ থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে হলে ভাল হত। তখন দেশে কোনো রাজা ছিল না। এখন হওয়ায় এর যদি ক্ষতিকর কোনো দিক থাকে, তা হলো নৈরাজ্য তথা রাজার নিয়ন্ত্রণের অভাব, রাজার দুর্বলতা প্রকাশ। নৈরাজ্য বহুবিধ সমস্যার জন্ম দেয়। জনগণ শান্তি চায়, গা-জোয়ারি কেউ চায় না। যদিও এদেশে রাজনীতি মানেই গা-জোয়ারি এবং কারো সীমিত মাত্রায় পেশিশক্তি না থাকলে জনগণ তাকে গুণায় ধরে না।
এই ঘটনার মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধীরা বিজয়ের ছয় মাস পরেও তাদের শক্তির জানান দিল। এই শক্তিপ্রদর্শন দরকার ছিল নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা থামানোর জন্য। পেশিশক্তিহীন রাজনৈতিক দল সাধারণত এদেশে জনসমর্থন পায় না, পায় শুধু বিদ্রুপ। অবশ্য এই ভাঙ্গার যজ্ঞে বিএনপি-জামাতসহ বিভিন্ন দল-মতের লোক ও কতিপয় দল-হীন জনতা শামিল হয়েছে।
এঁরা মব তথা উচ্ছৃঙ্খল জনতা না। এঁরা সংগঠিত বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীসমূহ। আওয়ামী ফ্যাসিবাদে ত্যক্ত, বিরক্ত, নিপীড়িত এই গোষ্ঠীগুলো ফ্যাসিবাদকে দমন করতে গিয়ে নিজেরাই ফ্যাসিস্ট হয়ে যাচ্ছে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। চূড়ান্ত দমন-নিপীড়ন-হত্যা-গুম চালিয়ে যেমন জামাত-বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা যায় নি, বরং তারা অধিকতর জনসমর্থন পেয়ে ফিরে এসেছে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের ক্ষেত্রেও তা ঘটবে না, তা কে জানে! সেটা হলে জুলাই-অভ্যুত্থান হবে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
অভ্যুত্থান সার্থক করতে হলে তিনটা কাজ জরুরি:
১) সিস্টেমেটিক্যালি সকল অপরাধীর দ্রুত বিচার করে শাস্তি বিধান করতে হবে। এক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদের যে লাখ লাখ কর্মী-সমর্থক, তাদের গণহারে পাকড়াও করার চাইতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয়দের, ধরেন টপ ১০০০ জনকে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া অধিক কার্যকর বলে আমার ধারণা।
২) রাষ্ট্র সংস্কার দ্রুত শেষ করতে হবে। একদিকে মধ্যযুগের ঔপনিবেশিক বিধি ও ব্যবস্থায় রাষ্ট্রটা ভঙ্গুর হয়ে আছে, অন্যদিকে প্রশাসন ও পুলিশের রন্দ্রে রন্দ্রে ফ্যাসিবাদের দোসররা ঘাপটি মেরে আছে। ছাত্রজনতার অভূতপূর্ব অভ্যুথানে যে বৈষম্যহীন কল্যাণমুখী রাষ্ট্রকল্পের চেতনা কাজ করেছে, তার রূপায়নের জন্য অপরিহার্য সংস্কারগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদের আগমনের পথ যথাসম্ভব রুদ্ধ করে দিতে হবে।
৩) সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করে নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সসম্মানে বিদায় নিতে হবে। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ছাত্র, জনতা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বুকের রক্ত ও অকুণ্ঠ সমর্থনের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতা অধিকার করার যে ম্যান্ডেট দিয়েছে ৫ আগস্টের পরপর, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে তারা সেই ম্যান্ডেট হারাবে। তখন সমস্যা আরো গভীর হবে। আমাদের শখের ইউনুস সরকার জাতির ক্রান্তিকালে যে গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন, তা সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করে সকলের ভালবাসা, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা নিয়ে অবিসংবাদিত থেকে বিদায় নিন, এই কামনা রইল।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



