সেদিন স্পীডব্রেকারে এসে চোখ পড়ে গ্যালো সামনের মাইক্রোবাসে। একজন মানুষ, বিছানার চাদরে মোড়া, শেষযাত্রা করছে। গতি কমালাম। আমি আমার গন্তব্য রেখে এম্বুলেন্সের পিছুপিছু কয়েক কিলোমিটার গেলাম। তারপর ইউটার্ণ নিয়ে আবার চলে এলাম। এরকম আমার বহুবার হয়েছে। একসময় টিউশনি সেরে লাস্ট বাসটায় বাড়ি ফিরতাম। দিনক্ষন মনে নেই। ঋতুকাল মনে আছে। ছাতিমের গন্ধ বাসের জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ছে। আমি বাসের জানালা দিয়ে মুখ বের করে আছি। বাসের মধ্যে FM রেডিও ছাড়া ছিল। গায়কীর বিষন্নতা, মৃদু ড্রামিং আমাকে আচ্ছন্ন করে দিল। মনে হল আমার কোন গন্তব্য নেই। কয়েক স্টপেজ পার হয়ে আমার ঘোর কাটে। পকেটে তখন সিগারেটের টাকা ছাড়া কোন টাকা ছিলনা। প্রায় ১০ কিলোমিটার হেটে ঐ রাতে আমি বাড়ি ফিরি।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে আমার মনে হয়েছিল আমি পাড় মাতাল, একটা সঘনঘন বৃষ্টির দিনে আমি ঘরে ফিরছি। কানে বাজছে "দ্য নাটশেল"। আমার সব অনুভূতি রেডিয়ামের হরফ হয়ে উড়ছে।
কিছুদিন আগে জাহাজ বদলে ফেলেছি। আপাতত মেডিকেল কলেজের আশেপাশে কোন এক সাততলা জাহাজের নাবিকী করছি। মাঝরাত্রে যখন বারান্দায় এসে দাড়াই তখন এম্বুলেন্স ছাড়া কিছুই দেখিনা। চিন্তাভাবনা এম্বুলেন্স কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। স্মৃতির যে অংশ পাড় মাতাল নয়- সেই অংশ থেকে বের হয়ে আসে অগনতি ঘটনা যার সবই এম্বুলেন্স কেন্দ্রিক। স্মৃতিচারণ করতে করতে এক ঘটনা থেকে আরেক ঘটনাতে ঢুকে পড়ি। কথা, শব্দ, বা গল্প এমনই জাদুকর। কোন ফ্রেম রেট নাই। পিকচার টু পিকচার ডাইভার্সন করে অতীতের একটা এসপেক্ট রেশিও তৈয়ার করে দিবে।
ধরুন আপনি আর তুমি দাঁড়ায়ে আছো একটা মিরপুর। একটা গাছের নিচে। এখন একটা কুহু ডাক লিখে দিলাম, বসন্ত নামলো, শব্দ এমনই জাদুবাজ। আমার আপনি আর তুমি যেন থাকো বসন্তে, নিয়ন দৃশ্যমান আলো হাওয়ায় অনন্ত দিন, এখানে নামছে ভোর।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৫৯