লাশ হয়ে ফিরল আরো ১২ শ্রমিক
চলতি বছরে এসেছে ৮৮১টি লাশ
কিসমত খোন্দকার - সমকাল
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরে আসছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এ সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। গতকাল শুত্রক্রবার ১২ বাংলাদেশির লাশ দেশে ফিরেছে। এ নিয়ে মে মাসের প্রথম ৮ দিনেই ৬৪ বাংলাদেশির লাশ ফিরে এলো। চলতি বছরের ৮ মে পর্যন্ত মোট ৮৮১ জনের লাশ দেশে ফিরেছে। এদের মধ্যে ৩২ জন নারী শ্রমিক রয়েছেন।
বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে গতকাল ঢাকায় আসা ১২ লাশের মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে ৩ জন, দুবাই থেকে ২ জন, কুয়েত থেকে ২ জন এবং ওমান, সৌদি আরব, বাহরাইন, দক্ষিণ কোরিয়া ও আমেরিকা থেকে ১ জন করে বাংলাদেশির লাশ দেশে ফিরেছে বলে জানিয়েছে ইমা রিসার্চ ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি প্রবাসে প্রতারিত ও বঞ্চিত শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে।
এ ব্যাপারে গতকাল জিয়া আন্তর্জাবিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ডেস্কের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ডেস্কের ফোন কেউ ধরেননি।
লাশ হয়ে ফিরে আসা শ্রমিকদের নিকটজনের অভিযোগ, একশ্রেণীর রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণার শিকার হয়ে এদের মৃত্যু হয়। তারা জানান, ভিটামাটি বিক্রি করে দালালদের হাতে দুই থেকে তিন লাখ টাকা তুলে দেন এসব শ্রমিক। কিন্তু বিদেশে পৌঁছার পরই এদের কাছ থেকে পাসপোর্টসহ সবকিছু কেড়ে রাখা হয়। ফলে পুলিশের তাড়া খেয়ে এদের পালিয়ে বেড়াতে হয়। অনেক সময় পুলিশি নির্যাতনেরও শিকার হতে হয় এদের। এছাড়াও পালিয়ে থাকা অবস্থায় দিনের পর দিন না খেয়ে থেকে এরা ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অনেকের লাশ ফিরিয়ে আনতেও দেশ থেকে টাকা পাঠাতে হয়।
মৃত শ্রমিকদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা এবং দাফন করাসহ তাদের পরিজনকে ক্ষতিপহৃরণ দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ক্ষতিপূরণ পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ক্ষতিপহৃরণ পায় না।
সূত্র জানায়, গত ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় রিত্রুটিং এজেন্সি ও আউট সোর্সিং কোম্পানির লোকদের হাতে নির্যাতনের শিকার হন মহেশ নামের এক শ্রমিক। মারজান এলাকায় যে ক্যাম্পে তাকে আটক রাখা হয়েছিল সেখানে নির্যাতনের পর চিকিৎসা না পেয়ে ওই বছরের ৬ অক্টোবর তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। দেশে ফেরেন লাশ হয়ে।
তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন সচিব ও বিএমইটির মহাপরিচালকের গাফিলতির কারণে মহেশের পরিবার এখনো ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন মহেশের স্ত্রী ঝরনা সরকার।
ইমা রিসার্চ ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ মাসে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক লাশ হয়ে ফিরেছে সৌদি আরব থেকে। এ সংখ্যা ২৫৪ জন। এরপরই আছে মালয়েশিয়া থেকে ১৫৭, দুবাই থেকে ১ শ’, কুয়েত থেকে ৫৫, ওমান থেকে ৩৪, আবুধাবি থেকে ২৪, কাতার থেকে ২১, আমেরিকা থেকে ২৭, বাহরাইন থেকে ১৭, ইতালি থেকে ১৫, ইংল্যান্ড থেকে ১৬, সিঙ্গাপুর থেকে ১৬, লেবানন থেকে ৬, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১১, গ্রিস থেকে ৫ ও পাকিস্তান থেকে ৬ জন এবং অন্যান্য দেশ থেকে ৫২ জন।
এদের বেশিরভাগের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেথ সার্টিফিকেটে হার্ট এটাক লেখা থাকলেও মৃত ব্যক্তিদের নিকটজনের অভিয়োগ, বেশিরভাগই নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে অবৈধভাবে অবস্থান করার অভিযোগ এনে নিয়োগকর্তারা পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়ে নানাভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। কঠিন কঠিন কাজ করিয়েছে অথচ প্রয়োজনমতো তাদের খাবার দেওয়া হতো না। এভাবেই তারা একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।
View this link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




