শেষ কয়েক দিন যাবত একটা অপরিচিত আইডি বারবার ফলো দিচ্ছে আবার আনফলো দিচ্ছে। প্রথম প্রথম খুব একটা গায়ে মাখিনী। যখন দেখলাম ব্যাপার টা নিয়মিত ঘটছে তখন কিছুটা খটকা লাগে।
একটু ইচ্ছে করেই প্রোফাইল টা তে ঢু মারি। নিষ্পাপ একটা মুখ সাথে গুটিগুটি করে লেখা 'রাইসা মাহমুদা '। মেয়েটা কে আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হয়না। আবার কোন মিউচুয়াল ফেন্ড ও নেই। অবাক করা ব্যাপার হলেও কেন জানি আর আগ্রহ পাইনি। তাই হয়তো আর আগ বাড়িয়ে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি।
ব্যাপার টা একরকম ভুলেই গেছিলাম। সত্তি বলতে কি একরকম বাধ্য হয়েই ব্যাপার টা দূরে ফেলে দিয়েছি। কাওকে ফলো করা বা না করা সম্পূর্ণ মেয়েটার ব্যক্তিগত। আমিই বা আগ বাড়িয়ে বলার কে?
জানুয়ারি মাস। একটু মনে হয় বেশিই ঠান্ডা। প্রায়শই মাঝরাতে ঘুম ভাঙার সমস্যা। তবে ফেসবুক থাকতে চিন্তা কিসের। আমার মতো যাদের চ্যাট করার কেও নেই তাদের ভরসা হচ্ছে হোমপেইজ। অকারনে বারবার লোডিং। এতো রাতে নক করার মতো কেও নেই তারপরেও একটা মেসেজ। হয়তো কারো দরকার। আমাকে কেও আবার দরকার ছাড়া মনে করেনা। গুটিগুটি করেই লেখা
_ কেমন আছেন?
ঃ জ্বী ভালো। আপনি?
_ ভালো। তবে এখন একটু বেশি।
ঃ হুম। ভালো...
আগ বাড়িয়ে কেন জিজ্ঞেস করাটাই আধিখ্যেতা। এ আর কেও না। রাইসা বলেই একটু ভয় পেয়ে গেছি।
_ আপনি কি কম কথা বলেন?
মেয়ে তুমি তো আমার পাল্লায় পড়নি। তাই মনে হচ্ছে কম কথা বলি। কাওকে তো আর এমন করে বলা যায়না, তাই হয়তো রিপ্লাই...
ঃ :-) :-)। না এমনিতেই আর কি...
_ বুঝে ফেলেছি। আপনার আর মুখ ফুটে কিছু বলতে হবে না। আচ্ছা আমি কি আপনাকে রিকু দিলে এক্সসেপ্ট করবেন?
ঃ আচ্ছা দিন। করবো... :-)
তারপর থেকে প্রায় নিয়মিত বার্তা আদান প্রদান হতো। সবচেয়ে বড় কথা মেয়ে ভিকারুননেসা তে পড়ে সেকেন্ড ইয়ারে। মাস পাঁচেক কারো সাথে টানা চ্যাট হলে যা হয় আরকি। নিজেদের অনেক কথাই শেয়ার করা হয়। পরিচয় টা একটু একটু করে গভীরতম হচ্ছে। আমি চাচ্ছিলাম দেখা করবো। তবে চক্ষুলজ্জা র কারনে বলতে পারছিলাম না।
জুলাই এর শেষ নাগাদ। শরীর টা একটু কেমন জানি নড়বড়ে। তাই আর ক্লাসে যাইনি। সকাল সকাল ফেবু তে লগইন করেই দেখি রাইসা র মেসেজ
_ Can you meet with me?
ঃ Okey. but why?
_ I need to talk that's y.
ঃ Where?
_ Dhanmondi 27. Opposite of the lake. You just here exactly 5:30pm. okey?
ঃ ohhh. okey.
রাইসা র পছন্দ মতো রেড শার্ট পড়েছি। কিছুটা এক্সাইটেড তাই হয়তো পাঁচটা ত্রিশ এর আগেই চলে এসেছি। তবে রাইসা এখনো আসেনি। ঠিকঠাক জায়গায় বসে আছি তবে জায়গা টা আমার পছন্দ হয়নি। যথেষ্ট দিনের আলো থাকা সত্ত্বেও অন্ধকার মনে হচ্ছে। তবে যাই হউক রাইসা আসছে তবে সাথে কি কেও আছে??
ঃ কেমন আছো??
পাশে থাকা ছেলেটা বুক বরাবর লাথি মারতেই আমি পড়ে যাই। সাথে রাইসার শব্দ শুনতে পাই। পাশে থাকা ছেলেটা কে বলছে " শালার পুত দেখা করতেই আট মাস লাগাইছে। এই প্রথম একটা পোলার লাইগা এতো সময় নষ্ট করছি। শালারে মাইরা লুলা বানা। পকেট এ কি আছে তারাতারি বের কর হারামজাদা। "
সত্তি বলতে আমি কিছুটা বিহ্বল। একটা মানুষ এতটা নামতে পারে কিভাবে?
ছেলেটা যখন পকেট এ কি আছে দেখার জন্যে টেনে উঠাচ্ছিলো তখন আর দেরি করিনি। হাতটা মুঠো করে নাক বরাবর মারি। ছেলেটা পড়ে যেতেই আমি কোনমতে উঠে দৌড়। আমি নিশ্চিত উসাইন বোল্ট ও আমার কাছে ফেইল মারতো। তবে সে যাত্রায় বেঁচে গেছি।
রাতের বেলা যখন ফেবু তে বসি তখনো আইডি টা নীল হয়ে ছিলো। আমি সুন্দর করে একটা পাপ্পি রিপ্লাই সাথে গুটিগুটি করে লিখে দিলাম Baby I love u. U make my day.. :-D
তারপরে আর আইডি টা নীল দেখিনি। পুরোপুরি ব্লাস্ট হয়ে গেছে।
এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। অনেক ঘটনাই আমাদের অগোচরে। আমি বেঁচে গেছি তাই বলে এর মানে এই না যে আপনিও বেঁচে যাবেন। ভালো থাকুন তবে সবকিছুর চাইতে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।।।