somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছোট বেলায় মজার খেলা

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার নানার আর মামাতো ভাই জামেল তাদের ঘর প্রায় এক সাথে শুধু মাঝখান দিয়ে একটি ফাঁকা রাস্তা দেওয়া আছে।এটাকে তেমন রাস্তা বলা যাবে না কারণ! কেউ হয়তো তেমন একটা চলাফেরা করেন না। আমার যখন একা-একা ঘরে বসে থাকতে ভাল লাগেনা তখন তাদের ঘরে চলে যেতাম। জামেলও কোন কোন সময় আমার সাথে খেলতে আসত। বিকেলে আমি আর জামেল মিলে সুনামুল্লার [আমরা বলতাম সুনাউলল্যার] জমিনে খেলা করতে যেতাম। তখন আমাদের পাড়ার সব বন্ধুরা আসত। সবাই আসার পর আমরা এক সাথে খেলা শুরু করতাম। আমাদের প্রধান খেলা ছিল সাত-ছাক্কট। এই খেলার জন্য ছোট ছোট সাতটি সমান ছাক্কট লাগবে। আর একটি ক্রিকেট বল লাগবে বা এই জাতীয় হালকা ছোট কোন কিছু যা ছুরে মারলে অনেক ধুরে ফেলা যেত।
খেলা শুরুতে একটির উপরে আরেকটি ছাক্কট সারি বেধে উঁচু লম্বা করে দাড়িয়ে রাখা হত।তারপর দূর থেকে কেউ একজন, সেই ছাক্কটের উপড়ে সঠিক ভাবে নিশানা করে ছুড়ে মারা।যতক্ষণ না এই ছাক্কটের লম্বা সারি ভেঙে ফেলা না হচ্ছে ততক্ষণ চেষ্টা করে চালিয়ে যেতে হবে। আবার কারো হাতের নিশানা ভাল হলে প্রথমে সঠিক ভাবে সঠিক স্থানে ছুড়ে মারলে ভেঙে ফেলা যায়।যেই মুহূর্তে ছাক্কটের লম্বা সারিটি ভেঙে ফেলা হবে তখন দলের সবাই দূড়ে পালাতে হবে এবং অন্য দলের সবাই থাকে বল দিয়ে তারা করবে।বল দিয়ে তারা করার সময় বলটি দলের কারো সরিলে লাগে তা হলে তিনি এই খেলা থেকে আউট। আর যদি বলটি সরিলে না লেগে অন্য কোথাও গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যায় তখন এই দলের যে কেউ দূড়ে এসে সেই ভেঙে ফেলা ছাক্কটগুলো যথ তাড়াতাড়ি সম্ভব একটির উপর আরেকটি উঁচু করে দাড় করে রাখতে হবে। যদি কাজটি হয়ে যায় তাহলে তদের এই খেলায় জয় হবে।
প্রতিদিন একই খেলা খেলতে-খেলতে আমাদের ভাল লাগে না। তাই আমাদের খেলার প্রধান হচ্ছেন ‘তব’ ভাই [তপু] আমি তপু ভাইকে তব ভাই বলে ডাকতাম। এখন আমার নানার বাড়ির ছোট ছোট ভাই বোনেরা সবাই তপু-ভাইকে তব ভাই বলে ডাকে। তিনি আমাদের খেলা শিখিয়ে দেন। তিনি নতুন একটি খেলা আবিস্কার করলেন। সেই খেলাটির নাম হচ্ছে চারকোণি খেলা। সেই খেলা খেলতে হলে অনেক বড় জমি অথবা খোলা মাঠ হলেই চলে।তাই সুনামুল্লার জমিন অনেক বড় আমাদের খেলতে অনেক সুবিধা হয়। প্রথমে এক কোণে সবাই দাড়িয়ে থাকবে। প্রথম পক্ষের যে কেউ বলিং করবে। আর দ্বিতীয় পক্ষের কেউ ব্যাটিং করবে। ব্যাটিং যিনি করবেন তিনি বলটি অনেক দূরে ছুড়ে দিতে হবে।দ্বিতীয় পক্ষের খেলোয়াড়রা দূরে মাঠের চারকোণে ঘুরে আবার ব্যাটিং করা প্রথম জায়গায় আসতে হবে। এভাবে সবাই আসার পরে গেইম শেষ হয়। এই হচ্ছে আমাদের চারকোণি খেলা।

আমি ছোট বেলা তপু ভাইয়ের সাথে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতাম। ছোট একটি হাওড়ের মাঝে পাহাড়ের মত উঁচু হয়ে আছে লাল মাটিতে। আমি আর তব ভাই সেই লাল মাটিকে বলতাম “লাল মাটির পাহাড়” এই নামটি আমার আর তব ভাইয়ের দেওয়া। জানিনা এই নামটি পরে কতঠুকু, এই জায়গার সু-ক্ষেতি লাভ করেছে। তব ভাইয়ের মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে আমাকে নিয়ে তিনি, লাল মাটির পাহারে গিয়ে বসতেন। এবং তিনি মনের সুখে গান গাইতেন। আমি তব ভাইয়ের মুখ থেকে প্রথম এই গানটি শুনেছি–––

“এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া
এত যত্নে গড়াইয়াছেন সাঁই

ছায়া বাজী পুতুল রূপে বানাইয়া মানুষ।
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি পুতুলের কি দোষ”

যদিও বা এই গানটি পরে রেডিও টেলিভিশনে আমি পরে অনেকবার শুনেছি। তারপরেও আমি এখনো বলি এই গানটি তব ভাইর। সব দিনের মত আমি আর তব ভাই লাল মাটির পাহাড়ে গিয়ে বসে ছিলাম। এর মধ্যে আমি একটি জিনিস আবিস্কার করলাম। এই স্বচ্চ সুন্দর লাল দানা দানা আর কিছুটা আটালো মাঠি দিয়ে কী করা যায়। এর মধ্যে মাতায় একটা চমৎকার আইডিয়া এল। এই মাটি দিয়ে যদি খেলনার পুতুল তৈরী করা যেত তা হলে অনেক ভাল হত। রুহি আপা, জামেল, জুমিয়া-কে চমকে দিতে পারতাম। আমি তব ভাইকে বিস্তারিত বললাম, প্রথমে তব ভাই রাজি হন নাই পরে আবার খুলে বললাম তুমিওতো কাগজ দিয়ে কাগজের নৌকা, শার্ট বানাইতে পার। তাহলে মাঠিদিও পারবে। পরে তব ভাই আর আমি মিলে হাতে করে বেশ কিছু মাটি নিয়ে বাড়িতে আসলাম। সব মাটিকে ভেঙে গুড়া করে কিছু পানি ছিটিয়ে পরে আটার মত করে নিলাম। প্রথম দিন আমরা যা তৈরী করলাম। একটি মাটির পুতুল। পরের দিন বেশ কিছু মাটি নিয়ে আসলাম। আস্তে আস্তে তৈরী করতে লাগলাম। মাটির হাড়ি, পাতিল, নৌকা। ইত্যাদি আরো নানান কিছু। আমার এক ছোট মামায় মেলা থেকে একটি মাটির হাতি নিয়ে আনছিলেন। সেটাও দেখে দেখে আমি তৈরী করছিলাম। তখন আমি মাটি দিয়ে শুধু হাতি তৈরী করতাম। এবং বেশ ভালই বানাতাম। বানানো শেষে আমাদের সবগুলো আইটেম রোধে শুকাতে দিতাম। ঘন্টা খানিক পরে গিয়ে দেখতাম প্রত্যেকটা জিনিস রোধে শুকিয়ে একেবারে টনটনে শক্ত হয়ে গেছে।
পরে তব ভাই বাজার থেকে বিভিন্ন রঙ কিনে নিয়ে আসতেন। আমি আর তব ভাই দুজন মিলে সেইগুলোকে রঙ করতাম। রঙ করা শেষে দেখা যেত এক একটা মাটির জিনিস পত্র যেন কুমার নিজ হাতে তৈরী করেছে। আর আমার হাতি যেন, সত্যিকারের হাতির বাচ্চা। দেখে মনে হয় এই বুঝি হেটে-হেটে কোথাও চলে যাচ্ছে। তব ভাই অনার আব্বা-কে অনেক ভয় পেতেন বলে আমরা মাটি দিয়ে যাই বানাতাম সব লুকিয়ে লুকিয়ে। একদিন কোন এক উপায়ে আমাদের এইসব কর্মকান্ড দেখে ফেল্লেন। তিনি মহা খুশি। আমরা এই সব কি ভাবে করতে পারি বা কোথায় থেকে শিখলাম। বিভিন্ন প্রশ্ন আমাদের করতে লাগলেন। পরে বাড়ির সবাইকে ঢেকে এনে আমাদের সব কিছু দেখালেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×