আমি বাবলু জুবেল ভাই রুহেল ও এমরান আমাদের বাড়ির সামনে, রেল লাইনের পাশে দাড়িয়ে খেলা করছি। এমন সময় মোগলাবাজার রেল স্টেশন থেকে একটা হালাকা পাথলা লোক একটি বাঁরের গলায় দড়ি লাগানো অবস্থায় নিয়ে আসছে। আমরা সবাই তা ধুর থেকে দেখছি। দেখতে-দেখতে আমাদের সামনে চলে আসল। লোকটিকে ঘিরে আমরা সবাই জড়িত হলাম। এবং আমাদেরকে আনন্দ দেওয়ার জন্য লোকটি বাঁদর খেলা দেখাইতেছে।
অনেক্ষণ আমরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে বাঁদরের খেলা দেখলাম। লোকটির পকেটে ছিল কলা আর বিস্কিট, সেটা বের করে বাঁদরের সামনে দিল। আর বাঁদরটিও এক লাফ দিয়ে কলা বিস্কিট মজা করে খেল। শেষঅব্ধি বাঁদর ওয়ালার হাতে আরেকঠুকরো বিস্কুট ছিল, সেটিও বাঁদরের মুখে দিতে কুড়মুড় কুড়মুড় করে খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে, এক সময় বাঁদর ওয়ালা তার সুজা পথে চলে গেল। আমরাও সবাই বাঁদরের পিছনে-পিছনে চললাম। যাওয়ার মাঝ পথে জুবেল ভাই-কে বাঁদরটি পিছনে থেকে তাড়া করে অনার লুঙ্গি ছিড়ে ফেলল। “জুবেল ভাই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি––তিনি যখন পঞ্চম শ্রেণী পাস করে, ষষ্ট শ্রেণীতে ভর্তি হবেন। তখন বাড়িতে ভর্তির টাকা খুজলেন। আমার মেজো চাচির কাছে অর্থাৎ ‘উনার মা’। তাই চাচি জুবেল ভাইকে ভর্তির টাকা দিলেন। কিন্তু তিনি সেই টাকা দিয়ে স্কুলে ভর্তি না হয়ে। চাচির জন্য একজোড়া প্লাস্টিকের স্যান্টেল নিয়ে বাড়িতে এলেন। পরবর্তিতে চাচি জিজ্ঞাসা করলেন তুই টাকা কোথাও পেলে? জুবেল ভাই বলেলন তুমি যে, টাকা দিয়েছ ভর্তির জন্য সেই টাকা দিয়ে। আরে হতভাগা এই টাকা’তো তুকে দিয়েছি স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য। আর তুই কি-না আমার জন্য জুতো নিয়ে এলে!
সেই দিন কেন জুবেল ভাই স্কুলে ভর্তি হলেন না? কেনই বা ভর্তির টাকা দিয়ে জুতো কিনে নিয়ে এলেন? এই দুটি প্রশ্নের উত্তর আমি আজও জানি না বা জানার আগ্রহ প্রকাশ করি না। এভার এই প্রসঙ্গ থাক। আগের প্রসঙ্গে চলে আসি।
তাই জুবেল ভাই বাড়িতে আসার জন্য রওয়ানা দিলেন। জুবেল ভাইর সঙ্গে চলে গেলে রুহেল ও বাবলু। এবং রয়ে গেলাম আমি আর এমরান।
আবার আমরা বাঁদর ওয়ালার সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। যেতে যেতে এক সময় হরগৌরী ঈদ গাহ্ ময়দান পাড়ি দিলাম। এমন সময় এমরান আমাকে বলল উজ্জ্বল চল হঠাৎ বৃষ্টি চলে আসতে পারে। আকাশের অবস্থা বেশ ভাল নয়। আমি থাকে বললাম আর সামান্য একটু চলল পরে চলে আসব। তাই আমি আর সে বাধরের পিছনে-পিছনে এগিয়ে যেতে লাগলাম। যেতে-যেতে এক সময় একটি অজানা গায়ের রাস্তা বেয়ে চলে গেলাম।
এমন সময় হঠাৎ চলে এল বৃষ্টি। শুধু বৃষ্টি নয়, অজর ধারায় বৃষ্টি। চারিদিকে শুধু অন্ধকার। শাশা করে বাতাস বইছে, আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আর গাছ-গাছালির ঢাল-পালা ভেঙ্গে-ভেঙ্গে রাস্তায় পরছে। এক একটা আকাশ ফাটানো বিদ্যুৎ গর্জনে আমাদের বুকটা কেপে ওঠছে। আমাদের কিছুই করার নেই। শুধু হাঠতেছি আর হাঠতেছি। পিছন দিকে ফিরে যাওয়ারও আমাদের কোন সাহস নেই। রাস্তায় কোন মানুষ গাড়ী কিছুই নেই।
বেশ কিছুটা রাস্তা এগিয়ে যাওয়ার পর একটি হাওড়ের পাশে ছোট একটি একচালা ঘর দেখেতে পেলাম। এ অবস্থায় বাধর ওয়ালা রাস্তা থেকে নেমে হাটু জল বেয়ে সেই এক চালা ঘরের উদ্দ্যেশে নেমে পড়ল। আমি আর এমরানও সেই লোকটির পিছনে নেমে পড়লাম। অনেকটা পানি বেয়ে যেতে যেতে সেই ঘরের বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম। অনেক্ষণ পরে একটা মহিলা ঘর থেকে বাহিরে এল। তার পিছন দিয়ে চলে এল একজন পুরুষ এবং আর একটা ছেলে। ছেলেটাও আমার পরিচিত আমার সাথে ক্লাস থ্রীতে পড়ে। নাম তার মিজান। মিজান-কে দেখে আমার ভিতরে একটু সহসা চলে এল। এ অবস্থায় অনেকটা বৃষ্টি কমে গেছে।
আমি আর এমরান আবার যে দিক দিয়ে চলে এলাম আবার সেই দিক দিয়ে বাড়ির উদ্দ্যেশে রওয়ানা হলাম। অনেকটা রাস্তা আসার পথে দেখতে পেলাম আমার মা জুবেল ভাই বাবলু আমাদের নেওয়ার জন্য কেদে কেদে এগিয়ে আসছেন। আমাদেরকে দেখে সবাই একটা আনন্দের হাসি দিলেন। রাস্তায় কোন কথা না বলে, বাড়িতে নিয়ে গেলেন। বাড়িতে এসে শুনি জুবেল ভাই বাবলু রুহেল নাকি বলছে- আমাকে আর এমরানকে এক বাঁদরওয়ালা বাঁদরের খেলা দেখিয়ে-দেখিয়ে ধরে নিয়ে গেছে। তা শুনে আমার মা আর ছোট খালা কেদে কেদে পাগল পারা। তাই এসব শুনে, কেউ দেরি না করে আমাদেরকে খুজতে রাস্তায় নেমে গেলেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:০৫