আমি আর জামেল একদিন রাস্তা দিয়ে হাটতেছি। দূর থেকে দেখতে পেলাম আমাদের পাশের বাড়িতে কিছু গাছ কাঠুরে এসে গাছ কাটতেছে। লম্বা একটি ধারালো করাত দিয়ে। আমি আর জামেল অনেক্ষণ দাড়িয়ে থাকলাম। আমাদের সবচেয়ে ভাল যে জিনিসটি লাগল। দুই পাশে দুইজন বসে আছেন। করাতটি গাছের উপরে বসিয়ে। প্রথমে একজন একপাশে টানেন। আর দ্বিতীয় জন তার নিজের দিকে টানেন। গাছিটি আপন তালে করাত-করাত শব্দ করে কেটে শেষ হয়ে গেল। আমরা অনেক্ষণ দাড়িয়ে ছিলাম। পরে জামেল বলল উজ্জ্বল চল অনেক্ষণ দেখা হইসে।
পরে আমরা বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে আসার পর আমার কিছুৃ ভাল লাগতেছেনা। সেই গাছ কাটা বারবার মনে হচ্ছে। আমারও গাছ কাটতে ভিষন ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু আমি কিভাবে সেই ধারালো করাত পাব। আর কি গাছ কাটব বা কার গাছ কাটব। অনেক্ষণ ঘরে বসে রইলাম। পরে মাথায় একটা আইডিয়া এলো। যদি তার দিয়ে গাছ কাটা যেত। আমি দৌড়ে জামেলের ঘরে গেলাম। এবং তাকে বললাম কিছু তার সংগ্রহ করতে। জামেল হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
––আমি তাকে বললাম কি দেখিস। আমার দিকে এমন ভাবে চেয়ে?
––তুকে দেখছি।
––কেন? আমাকে দেখার আবার কি হল?
––তুই তার দিয়ে কি করবে?
––আমি বললাম তার দিয়ে করাত-করাত করে গাছ কাটব।
জামেল কোন কথা আর বললনা। সে আমার দিকে হতভম্বের মত খানিক্ষণ চেয়ে রইল। এখন দেখছি তার চোখ চকচক করছে। পরে আমাকে বলল দাড়া আমি আসছি বলে আমার সামনে থেকে চলে গেল। একটু পরে দেখি অনেকগুলো তার হাতে করে নিয়ে এলো। আমি বললাম হঠাৎ এতগুলো তার তুই কোথায় পাইলে। জামেলের বড় ভাইয়ের রুমে অনেক তার ছিল। সে সেখান থেকে এক বান্ডিল তার নিয়ে আসল। তাপর বেশ কিছু তার একত্রে পেচিয়ে-পেচিয়ে দুটি লম্বা ডাটির মাঝখানের সাথে ঘুড়িয়ে লাগিয়ে নিলাম। বেশ হয়ে গেল আমাদের তারের করাত।
––তারপর আমি জামেলকে বললাম এবার চল।
––কোথায়?
––গাছ কাটতে।
––কার গাছ?
––আমাদের দক্ষিনের ঘরের নানার।
––কার গাছ বললে?
––দক্ষè ঘরের নানার।
––দাদা’য় যদি দেখে ফেলেন?
––আরে বুজবেন না। নানাতো আজ চক বাজারে গেছেন। আর না হলে কোথায় বেড়াইতে গেছেন। বাড়ি থেকে বেরুনো সময় দেখেছিলাম। একটা সাদা পাঞ্জাবী ও পায়জামা পরেছেন। তুই কোনো চিন্তা করিস না। বুজলি।
––আচ্ছা ঠিক আছে! তুই কোন গাছ কাঠবে?
––সুপারি গাছের পাশে যে, একটা লম্বা কাঠাল গাছ আছে না, ওঠা।
––ও আচ্ছা। আমরা যে পাথরের পাশে খেলা করি। সেই পাশের গাছটা কথা বলছিস?
––হ্যাঁ, ঐ গাছটির কথাই বলছি।
আমরা গিয়ে গাছ কাটা শুরু করলাম। জামেল একপাশে আর আমি অন্য এক পাশে। আমার আর জামেলের অনেক ভয় ভয় করছে। যদি কেউ দেখে ফেলে। বার বার এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। অনেক্ষণ ঘষাঘষির করে বেশ কিছু কেটে ফেলেছি। করাত দিয়ে কাঠলে হয়তো খুব তারাতারি কেটে ফেলতাম। কিন্তু অনেক শব্দ হতো। কেউ বা দেখে ফেলেল সর্বনাশ হতো। তার দিয়ে গাছ কাটা একটাই মজা। কোন শব্দ নেই। একটু পরে দেখে গাছটি একদিক দিয়ে হেলে যাচ্ছে। এই মাত্র বুঝি পড়ে যাবে।
––জামেল আমাকে বলল উজ্জ্বল গাছতো পরে যাবে। কি করা যায়?
––পরে গেলে পরে যাবে। আমরাতো দূড়ে পালিয়ে যাব।
জামেলের এখন দেখি আগে থেকে অনেক ভয় করছে। সে আমাকে গাছ কাটা ছেড়ে দিয়ে বলল।
––উজ্জ্বল আমি পারব না।
––আমি তাকে বললাম পারবে না মানে? কি বলিশ এইসব তুই। বেশ অর্ধেকটা তো কেটেই ফেলেছে। আর অল্প একটু বাকী। ধরতো দেখি তার। আর সামান্ন অল্প ঘষা দিলেই পরে যাবে।
সে এবার আমার কোন কথা শুনল না। গাছ কাটতে পারবে না বলে, দাড়িয়ে গেল।
––আমি থাকে বললাম তুই কি সত্তি গাছ কাঠবে না?
––না।
––এখন কি করব? এই ভাবে ফেলে যাব?
––হ্যা।
––আচ্ছা ঠিক আছে! গাছ কাটা দরকার নেই। আমরা এক কাজ করি। এই গাছটি গুড়ায় কিছু মাঠি দিয়ে ঢেকে এখান থেকে চলে যাই। কি বলিশ তুই।
––হ্যা, এটাই ভাল।
তারপর আমি আর জামে কিছু কুড়া মাঠি সংগ্রহ করে এই কাটা গাছটিকে ঢেকে রেখে এখান থেকে চলে যাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:০৩