somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রথের মেলা

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০০০তখন কার সময়ে পৌষ কিংবা মাঘ এর কোন এক দিন। হিন্দুদের রথ মেলা হতো। আর আমি ছোট বেলা মনে করতাম। রথ মেলা মানে–বিশাল কোন এক মেলা।
আমার নানার বাড়ির, বাদশাই টিলা স্কুলের সম্মুখে বিশাল একটা খোলা মাঠ ছিল। আর সেই মাঠে রথ উদযাপন উপলক্ষে মাঠির তৈরী হাতি-ঘোড়া, বিভিন্ন রংঙ্গের প্লাস্টিক ও কাঁচের চুরি পাওয়া যেত। আরো পাওয়া যেত প্লাস্টিকের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কাঁচা মাঠির হাঁড়ি, কড়াই ইত্যাদি। আর আরেকটা ছিলা উচুঁ কাঠের নাগর দোলা। সেই নাগর দোলায়। হিন্দু ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন বয়সী-পুরুষ মহিলা তারা সবাই মিলে উপর থেকে কলা, কালো তিলু, সাদা তিলু ছিটিয়ে নিচে ফেলছে। আমরা ছেলে মেয়েরা সেই কলা আর তিলুর লোভে নাগর দোলার চাঁর পাশে ঘুরাঘুরি করি।

এরকম এমন একদিন রথ মেলাতে, আমার বড় মামা আমাকে দু’টাকা দিলেন, রথ মেলাতে যাওয়ার জন্য। সেই দু’টাকার নোট’টি ছিল–চকচকে। আমার আজও মনে আছে। আমি সেই টাকা হাতে পেয়ে মনে হল আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে গেছি। আমি যা ইচ্ছা তাই কিন্তে পারি।
বিকেলের দিকে গোসল করে, হাফ পেন্ট ও একটি সাধা গেঞ্জি পড়ে একা-একা বেড়িয়ে পড়লাম রথ মেলার উদ্দেশ্যে। অনেকটা রাস্তা ছোট-ছোট পায়ে হেটে-হেটে উপস্থিত হলাম মেলা প্রাঙ্গনে। এখানে এসে দেখি চারিদিকে বিশাল সমাহার। লোকসমাগমের ভরপুর। আমার বয়সী আরো অনেক ছোট-ছোট ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে, তাদের বড়রা হাতে ধরে ঘুরাঘুরি করছেন। চারিদিকে লোকলোকারণ্যের হৈচৈ। বিভিন্ন শব্দের পে-পু পে-পু বাশির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।
হঠাৎ এমন একটি দোকান চোখের সামনে পড়ল। দৌড়ে গিয়ে দেখি দোকান ওয়ালার সামনে সারি-সারি প্লাস্টিকের খেলনার মোবাইল, ট্রেন ও বাস গাড়ি। আমি দোকান ওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলাম–এই গাড়ির দাম কত? দোকান ওয়ালা আমার দিকে একপলক চোখ বাকা করে ভ্রুকুচকে তাকাল। আমি আবারো জিজ্ঞাসা করলাম–এই গাড়িটির দাম কত? সে আমার কথা তার কানেও নিল না। কারণ; হয়তো এ ধরনের প্রশ্নে সে প্রায় অব্যস্থ। তারা হয়তো ভালো করে জানে। আমার মত আরো অনেক ছোট-ছোট বাচ্চারা এটার ওটার দাম জিজ্ঞাসা করে কিনে না। তাহলে খামোখা এদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন কি।
আমার এই ছোট্ট একটি দেহের, ছোট্ট একটি মন। আর এই মনে পড়দের কাছে কোন ধরনের চাপা হ্যাওপতিপন্নতার কোন স্থানই আমার মনের মনি কোঠায় চাপা সৃষ্টি করতে পারে নাই। তাই এই দোকানি ওয়ালা, আমার কথার জবাব না দেওয়াতে আমি কিছু মনে করি নি। আমি সুবোধ ছেলের মত এই দোকানের সামনে থেকে চলে গেলাম।
আরো অন্য আশপাশের খাবার দোকানের সামন দিয়ে ঘুরাঘুরি করছি। আইসক্রিম ওয়ালারা বিভিন্ন রং এর লাল সাধা হলুদ আইসক্রিম বিক্রি করছে। আমি এ রকম একটি আইসক্রিমের গাড়ির সামনে দাড়াতে, আইসক্রিম ওয়ালা আমাকে বলল কিরে আইসক্রিম খাবে? আমি মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করলাম। পরে একটি লাল রং এর আইসক্রিম বেড় করে দিল। আমি কোনো সংকোচ না করেই, হাতে নিয়ে নিলাম। পুরো একটি আইসক্রিম আমি চকচক করে চুষে শেষ করে ফেললাম। আইসক্রিমের শেষ ডাটাটা পর্যন্ত আমি চিবিয়ে ফেলে দিলাম। হঠাৎ আমার বুক ও পেটের দিকটাতে ঠা-া লাগাতে চেয়ে দেখি। আইসক্রিমের রস হাত মুখ বেয়ে সাধা গেঞ্জি টকটকে লাল রংগের হয়ে গেছে।
এখন আঁধার নেমে আসছে। তাতে বুজা যাচ্ছে সন্ধা গড়িয়ে পড়ছে। কয়েক ঘন্টা আগে যখন দেখছি। লোকসমাগম ধিরে-ধিরে যে ভাবে বাড়ছে। এখন দেখছি ধিরে-ধিরে সেইভাবে কমে যাচ্ছে। সেইসাথে শিশুপ্রহর যারা এসেছিল তাদের মা-বাবার সাথে তারাও চলে যাচ্ছে। দোকানিওয়ালারা তাদের দোকানের মালামাল গুছিয়ে নিচ্ছেন। আমিও যখন মেলা প্রাঙ্গন থেকে বেড়িয়ে পড়ব। তখন দেখি রাস্তার মুড়ে, বস্তার উপড়ে বসে একটি দোকানি তাল গুছাচ্ছে। আমি সেখানে গিয়ে আমার বড় মামার দেওয়া দু’টাকা দিয়ে একটি তাল কিনে নিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম।

আজ অনেক দিন পর। আমাদের মোগলাবাজারের হাজিগেঞ্জ এক রত মেলাতে আসলাম। কিন্তু ছেলেবেলায় রত মেলাতে গিয়ে আমরা যা-যা পেতাম। এখন আর সেই অনেক কিছু আর নেই। এখন বড় হয়ে দেখছি রথ আছে। মেলাও আছে। শুধু বদলে গেছে মেলার সেই চরিত্র। এখন আগের মত রথের মেলার সেই আনন্দই আজ নেই। আর সেই দিনের স্মৃতি মনের ভেতরে গহীনে এখনো গেঁেথ আছে।
আমার বন্ধুরা সবাই হাঠতে আমিও হাঠছি। আর মনে-মনে খুজছি। কোথাও যদি একটি তালের দোকান পাওয়া যেত।০০০
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×