somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝিলমিল বাতির দিকে চেয়ে-চেয়ে

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিন আমি আমার আব্বা আম্মা ও আমার ছোট ভাই বাবলু সহ, সিলেটের কোনো এক মেডিক্যালে যাচ্ছি। সেখানে আমার নানী অসুস্থ। তাই উনাকে ভর্তি করানো হয়েছে।
আমরা সবাই যখন রিক্সা থেকে নেমে, গেইট পাস করে, মেডিক্যালের ভিতরে ডোকব। তখন আমি একটি দোকান দেখে থমকে দাড়ালাম। কারণ সেই দোকানের সামনে দেখতে পেলাম। অনেক ঝিলমিল বাতি এক সঙ্গে জ্বলছে আর নিভছে। আমি অনেক্ষণ ধরে দাড়িয়ে-দাড়িয়ে দেখছি।
তখনকার সময়টা হবে––রমজান মাসের কোনো এক দিন।
আমরা এখন প্রায় রমজান মাসে বা অন্যান্ন ধর্মীয় উৎসবের সময় বিভিন্ন হোটেল শপিং মহলের সম্মুখে এক ধরনের ঝিলমিল বাতির আলো নিভে আর জ্বলে। ঠিক যেন––জোনাকিপোকার মতো আলো ছিটিয়ে পড়ে চারিদিকে।
আর এদিকে আমার আব্বা আম্মা ও বাবলু তাঁরা সবাই প্রথম তলা পেড়িয়ে একবারে তিথীয় তলা পর্যন্ত ওঠে গেছেন। হঠাৎ বাবলু আম্মাকে বলল––ভাই কই? ভাইকে দেখছি না তো। আব্বা-আম্মাও বাবলুর কথা শুনে অবাক হয়ে পিছনে তাকালেন। আরে তাইতো সবাই এক সঙ্গে তো এলাম। উজ্জ্বল আবার কই গেল। আব্বা বাবলুকে বললেন––তোমরা দাড়ায় এখানে। আমি তোর ছোট মামাকে নিয়ে আসছি। আমার মামাও এসেছিলেন নানীকে দেখতে।
এখন সবাই মিলে আমাকে খুজতে চারিদিকে খুজাখুজি করছেন। মেডিকেলের এমন কোনো কড়িডোর বাকি নেই যে, আমাকে সবাই খুজেন নি। প্রত্যেকটা তলার, প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে সবাই গিয়ে খুজলেন। আমাকে পেলেন না। মেডিক্যালের আশপাশের প্রতিটি দোকানে-দোকানে গিয়ে পাগলের মত খুজলেন। সবার মনে একটি প্রশ্ন––কোথায় হারিয়ে গেলাম আমি? কোথায় হারিয়ে গেলাম? সবার মধ্যে একটা তমুল উত্তেজনা। আমার মা তো একদম কান্না-কাটি শুরু করে দিয়েছেন।
এদিকে আমি একা-একা দাড়িয়ে আছি। আর পথও ভুলে গেছি। কোন দিকে এসেছি। আর মনে-মনে ভাবছি। সামনের ঐ রাস্তাটার দিকে যাব। কিন্তু সাহসেও কুলাচ্ছে না। আমার ভিতরে-ভিতরে অনেক ভয় করছে। তখন ইচ্ছা করছিল। চিৎকার দিয়ে কেদে ফেলব। তাও পারছিনা। কারন তখন আমি কত রংবেরংঙ্গের বিচিত্র ধরনের মানুষ দেখছি। আমি যে গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছি। সেখান দিয়ে কেউ হাসা-হাসি করে ঢুকছে আবার কেউবা অনেক কান্না-কাটি করে ঢুকছে। মানুষ কত বিচিত্র ধরণের প্রাণি। এটা বিচার-বিবেচনা করার মতো ক্ষমতা বা বয়স আমার ছিল না। কিন্তু আমার এই মন ঠিকই বুজে নিয়েছে। এ-রকম একটা পরিস্থিতিতে কারো কি কান্না পায়। তখন আমার জানা ছিল না। সন্ধা গড়িয়ে পড়ছে। চারিদিকে অন্ধকার। আর যথই অন্ধকার হচ্ছে ততই ঝিলমিল বাতি স্পোষ্ট ঘাড় বর্ণের রং ধারণ করছে। একেকটা বাতি একেকটা রংঙের।
আমার পাশে এক ফেরিওয়ালা বসে কি যেন বিক্রি করছে।
আমাকে অনেক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলল––এই ছেলে এখানে দাড়িয়ে-দাড়িয়ে কী কর? আমি তখন কোনো কথা বললাম না।
সে আমাকে আবার বলল––কোথায় এসেছ?
আমি বললাম––মেডিক্যালে।
তোমার মেডিক্যালে কে?
আমার নানী অসুস্থ।
তোমার নানী কয় তলায় আছেন জান?
জানি না।
তুমি কার সঙ্গে এসেছ?
আমার আব্বা আম্মার সঙ্গে।
তোমার আব্বা আম্মা উনারা কই?
জানি না। সবাই এক সঙ্গে আমরা এসেছি। এখন দেখছি না।
কোথায় গেছেন তুমি জান না?
না।
তোমাকে তারা বলে যাননি?
না।
তখন আমাকে ঐ লোকটি বলল––তুমি এখানে দাড়িয়ে থাক। কোথাও যাবে না। দেখবে তোমার মা-বাবা ঠিক খুজে বের করবেন।
হঠাৎ আমার ছোট মামার চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেলাম। মামা আমাকে নাম ধরে চিৎকার দিয়ে ডাকছেন। আর আমি মামার চিৎকার শুনে পাগলের মতো চারিদিকে উকিঝুকি মারছি। আর একসময় আমার মামাকে দেখতে পেলাম। দেখেই মামাকে দৌড়ে গিয়ে ঝড়িয়ে ধরলাম। এবং মামার পিছনে পিছনে আব্বা আম্মা বাবলু সহ আমার ছোট খালা ছোটে এসেছেন। তখন সবাই ক্লান্তিতে নুয়ে পড়ছেন। মা আমাকে ঝড়িয়ে ধরে আর্তনাৎ করতে লাগলেন। মায়ের আর্তনাৎ দেখে আমি তখন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছি।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:১১
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×