০০০আজ ১৩ই আগস্ট। আমার ছেলে আদিল আহনাফ জারিফ এর প্রথম শুভ জন্মদিন।
গত বছর এই দিনে তাঁর এই পৃথিবীতে আগমন ঘটে। আমি তাকে আদর করে তন্ময় বলে ডাকি। কারন ওর মায়ের নামের প্রথম অক্ষর ত দিয়ে। তানিয়া। হাস্যোজ্জ্বল মুখ করে তানিয়াকে শুভেচ্ছা জানালাম আজ কাক ডাকা ভোর সকালে। মনে পড়ে গেল তন্ময় যখন জন্মেছিল তখনকার অনুভুতিগুলো। এমনি এক উজ্জ্বল আলোকিত দুপুর। ঐ দিনের সময় একটা ত্রিশ মিনিট। আমাদের কোলকে আলোকিত করে সুতীব্র চিৎকারের মাধ্যমে। তার আগমনের বার্তা জানিয়ে দিলো পৃথিবীকে। এখনো আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে তাঁর ঐ চাঁদ মুখটিতে প্রথম স্পর্শ প্রথম চুমু। যেন, একটি অদ্ভুত স্বর্গীয় অনুভূতি। টোলপড়া তাঁর গাল, ঠোঁটের কিনারে মিষ্টি বাঁকা হাসির দৃশ্য দেখে তখন হৃদয়ে শত ক্ষত শুকিয়ে অনাবিল অসীম শান্তি এসেছিল।
দেখতে দেখতে কী ভাবে যে আরেকটা তের আগস্ট চলে এল। আর একটি বছর কেটে গেছে তা টের পাওয়া যায়নি।
এখন সে দেওয়াল ধরে দাঁড়াতে পারে এবং দু একটি কথাও তাঁর মুখে ফুটেছে। তার সাথে সাথে বাড়ছে দুষ্টুমীর পরিমান। সবসময় ওর মাকে জ্বালায়। তবুও ওর মা বিরক্ত হয় না। বরং সন্তানকে নিয়েই তাঁর মায়ের শ্বাসত আকাংক্ষা। সোনা মুখখানি দেখে দেখে মায়ের মন ভরে ওঠে। একে নিয়েই তাঁর জীবনের সকল পূর্ণতা সকল তৃপ্তি।
অবসরে সন্ধার পর যখন আমি শুয়ে বুকের উপর বই রেখে পড়তে বসি। তখন আমার ছেলে পাশে থাকলে তাঁর হাতেও একই ভাবে, বই একটি চাই। বই পড়ার সময় আমি একটু তাকে শুনিয়ে উঁচুস্বরে পড়ি। তখন দেখা যায়। সে আমার মত শব্দের প্রতিবিম্ব করে কী সব অদ্ভুত ভাষায় পড়ার চেষ্টা করে।
তবে ইদানিং কাল আমি আর ওর মা একটা জিনিস আবিস্কার করলাম। ছেলেকে ফ্লোরে বসাইয়া রাখলে। তাঁর বইয়ের তাকের দিকে মনোনিবেশ থাকে। হাত বাড়িয়ে বইয়ের মধ্যে কিছু একটা খুঁজার চেষ্টা করে।
এবং আরেকটা জিনিস খুব খেয়াল করলাম। খেলনা জাতীয় যেমন প্লাস্টিকের হাতি গাড়ি ঘোড়া পুতুল ইত্যাদি সামগ্রী খেলতে দিলে ঐগুলা ভেঙ্গে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তার আসল কারন হয়তো। এ সব জিনিস মিত্যা। যা দিয়ে কখনো খেলা হয় না। আমার ছেলের আজকাল খেয়াল করছি সে বিড়াল পেলে বড্ড খুশি। হাত দিয়ে ধরার চেষ্টা করে। হয়তো সে বিড়াল ভালবাসে। বিড়ালের সাথে খেলতে ভালবাসে। এবং দেয়ালে টিকটিকি দেখলে, টিকটিকিকে হাত নেড়ে সাবাস টা-টা ইঙ্গিত প্রকাশ করে। টিকটিকিকে সে এখন তিক তিক বলে। সে মনে করে এসব তাঁর আন্দের পরিপূর্ণ বাস্তবতার জীবন্ত খেলনা। বাড়িতে তাঁর সমবয়সী আরো দুটো চাচাতো বোন আছে, আমি দেখেছি এদের মধ্যে সে একটু ব্যতিক্রমী। এতঠুকু বয়সে তাঁর মনের জগতের চিন্তা আলাদা।
যে কেউ তাঁর দুরন্তপনা চোখের এক পলক দেখে নির্দ্বিধায় বুঝতে পারবে আমার ছেলেটা চঞ্চলমতি।
আমার সবসময় মনে হয় আমি একদিন বুড়ো হয়ে যাব। তখন আর এই মধ্য বয়সী জীবন আর ফিরে পাব না, জানি। হয়তো তখন আমার ছেলের মধ্যে একদিন নিজেকে খুঁজে পাব। আবার হয়তো বা আমি মরে গেলেও সন্তানের মধ্যে আমার অন্তরআত্মা বেঁচে থাকবে বহুদিন। আমি তাঁর মধ্যে রঙিন ভবিষ্যতের উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখি।
সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। জীবনটা যেন তারার মতোই উজ্জ্বল হয়।
আর আজকের এই দিনে সবার প্রতি শুভ কামনা রহিলো।
শুভ জন্মদিন ও অনেক অনেক ভালবাসা তোমায়। আমার লক্ষ্মীসোনা আমার প্রাণের বাবা।০০০
©
#কালো_মানব!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৩