somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিলায় টিলায় সুশোভিত মনোরম শহর। নিভৃত এক কোণে লাল টিন সেটের লম্বাকৃতি ছাত্রাবাসগুলো জোৎস্নালোকিত িস্নগ্ধ রাত্রিতে যেন এক নতুন শোভা লাভ করেছে। প্রকৃতিকে এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ কখনও বাবুর হয়নি। দুরের পাহাড়গুলোকে কেমন যেন নব-সাজে সজ্জিত জোৎস্নাস্নানে রত মনে হচেছ। আশ্চর্ষ! আজ বছরের উপর হলো বাবু এ ছাত্রাবাসে। চারিপাশের প্রকৃতিকে দেখছে সকাল-সন্ধ্যা তথা সর্বক্ষণ। কিšতু আজকের মতো কখনও দেখেনি।ধরণী যেন নব-বধুর নব-রুপে সুবেশ ধারণ করেছে। ইলেকট্রিসিটি চলে যাওয়ায় রুমটা নিকষ কালো অন্ধকার। বাহিরে দিগন্ত জোড়া জোৎস্না কাচের আরশি ভেদ করে উকি দিচেছ।
মাঝরাতে বাবুর মনে হলো সে চজলে গেছে দীর্ঘ কয়েক বছর পুর্বের স্কুল জীবনে। সে স্মৃতি তাকে বারংবার পীড়া দেয়, সেই যšত্রনাময় অতীতের কাছে। কুয়াশার ধুম্রজাল ছিন্ন করে কৃষ্ণচূড়ায় ঢাকা পুরোণো দেয়ালের বিজ্ঞান ভবনে। অনতিদুরে ধান ভানার একটানা বিরক্তিকর যাšিত্রক ধ্বনি প্রকৃতিকে মাতাল করে তুলেছে। পাশে বহমান নালিকাসম তথাকথিত বাংলার কবি সাহিত্যিকদের ভুবনভুলানো তটিনী, যা আজ মরে ভুত হয়ে গেছে। কলমিলতার মুলগুলো যেন তৃষ্ণায় খা খা করছে। ওপারে কবরস্থানের ধারের বিশাল অশ্বথ্ববৃক্ষ আজ আর হাতছানি দিয়ে ক্লাšত পথিককে ডাকে না।
স্কুলের সুদীর্ঘ করিডোর ধরে ছন্দময় পদে উদাস করা কোনো গানের সুরে বাবুর দিকে এগিয়ে আসছে তমা। গ্রীষ্মের আগমণ ঘোষণা করবে বলে স্বপ্নের এ ভুবণে কৃষ্ণচুড়া যেন তমাকে সাজিয়ে দিয়েছে জোৎস্না প্লাবিত িস্নগ্ধতার মাঝেও এক নৃশঃস রক্তিম আভায় যা মাধুর্য হয়ে ফাঁকি দিয়েছে বাবুকে। একদম পাশাপাশি চলে এসেছে তমা। স্বপ্নের মানুষকে ¯পর্শ করা যায় না- এ ভয়ে স্বপ্ন যেন না ভেঙ্গে যায় তাই অপলক নেত্রে চেয়ে আছে সে তমার দিকে। সহসা ইতালিয় লেন্ডসকেপের সেই অপরুপ ঠোট জোড়া ফাঁক হলো তমার। মধুর সুরে বাবুর কর্ণ কুহরে ক¤িপত হলো- ‘কথাটা আগে বললেই পারতে, আমার কোন দোষ ছিলো না। কেননা, চিরকুটটা পড়ে গিয়েছিলো আমার স্যারের হাতে।’ বাবু ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে উঠলো-‘না! মিথ্যে কথা! আমি বিশ্বাস করি না।’
চিরবহমান ধারায় একের পর এক স্মৃতিগুলো আজ কোন এক অদৃশ্য ইঙ্গিতে বাবুর স্বপ্নিল হলোগ্রাফিকস্ স্ক্রিনে ডিসপ্লে হয়ে চলছে। আনন্দ-বেদনায় ঘেরা এসব দিনগুলো কেন জানি আজ এত দ্রুত একে একে সরে পড়ছে কোন এক অপরিচিত সুপার ক¯িপউটারের ডাটাবেসে। ক্ষণিকেই দুটো বছরের তত্ত্বপুর্ণ অতীত বিলীন হয়ে গেলো সিলিকন চিপতেতে। তারপর আবার ভেসে উঠলো সেই শৈল চুড়ার বরফের মত শুভ্র, নিবিড় সৌন্দর্যের দিনগুলোর কয়েক টুকরো। বনানী ঘেরা পাহাড়ের মাঝের পিচডালা পথ বেয়ে এগিয়ে চলেছে গাড়িখানা হালকা মিউজিক ‘ও-লে-ও’ ছড়িয়ে। আসার সময় তমা কালকে টিভিতে দেখা অব্ধলি ছবির গানটি গেয়েছিলো ‘তোমাকে দেখিলে একবার, মরিতে পারি শতবার’। তমা এখন পিছনে মুখ বুজে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার সর্বশেষ রিভাইজকৃত প্রশ্নউত্তরগুলোতে। বাবু বসে আছে সামনে প্রিয় বন্ধুদের হাত ধরে। স্ক্রিন আবার ঝাপসা হয়ে গেলো। খুব দ্রুত চলছে রেকর্ডিং। মাঝে মাঝে অদৃশ্য সে হাতখানা প্লে-তে বোতাম টিপে নরমাল করে দিচেছ দৃশ্যগুলোকে। প্রতি ঈদে তমাদের বাড়িতে দলবেধে যাওয়া, মাঝে মাঝে উপন্যাস ধার করা, ম্যাগাজিন দেয়া প্রভৃতি একের পর এক দৃশ্য যেন ছুটে পালাচেছ স্ক্রিনে হুড়মুড় করে।
কিšতু হঠাৎ করে স্ক্রিণটা ম্লান হয়ে গেলো। বিরাট আকারের লেখাগুলো থেকে যেন অগ্নিস্ফুলিংগ নির্গত হচিছলো। সারা স্ক্রিন জুড়ে বড় বড় লেখা রক্তাক্ত তারপর যখনই ৯৬ ভেসে উঠলো তখন বাবু আর সে লেখার প্রখর আলোকরশ্মি সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পড়লো। কিšতু মুহুর্তেই সে জ্ঞান ফিরে পেলেও নির্মম নিয়তি তখন বিদ্রুপের অুহাসিতে ফেটে পড়েছেন। আর সে হাসির বিষাক্ত উর্ধশ্বাসে এক প্রচন্ড বিস্ফেরোণ ঘটে গেলো কল্পিত সেই যšত্রাংশগুলোতে। কুন্ডলী পাকিয়ে ধোয়া চোখ ঝলসিয়ে দিলো। অশ্রুবন্যা প্লাবিত করে ফেলেছে পারিপার্শ্বিকতাকে। বাসে বসে বসে অনেকবার ‘ কাচা ইট পাকা হয় পোড়ালে তা আগুনে’ কবিতার বা¯তব রুপ দর্শনে সমর্থ হলেও আজকের ধোয়া যেন চিমনির সেই গগণ ছোয়া ধোঁয়ার কাছে হার মানালো। বাবুর পৃথিবীতে ক্রমশঃই যেন অক্সিজেন ফুরিয়ে আসছে আর ভারী কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে ত্রিভুবন।রুদ্ধশ্বাসে পালাচেছ সে। কিন্তু কোথায় ছুটে পালাবে? সর্বত্রই যে অমাবশ্যার বিভিষিকা, বিষাক্ত বায়ু আর সহস্র শতাব্দীর নিরাশার নৈরাশ্য। একে একে সবগুলো যেন গ্রাস করছে তাকে।
না! না! না! গগণবিদারী চিৎকারে শুধু রুমমেটেরই নিদ্রা ভঙ্গ হয়নি বরঞ্চ পাশের রুমগুলোর তন্দ্রাচছন্ন বোর্ডাররাও ছুটে না এসে পারেনি। লজ্জা ঢাকা দিতে বাবুকে তষনকার মতো রুমত্যাগ করতে হলো। রাতজাগা পাখির ডানা ঝাপটানো আজ আর ভালো লাগছে না। কেন জানি বার বার ভয়ঙ্কর সেই নিশিস্বপ্নের কথা বারংবার মনে পড়ছে। দুরে টিলার আড়ালে চাদের আলোকে এখন কেন জানি কান্নার মতো মনে হচেছ।
বার বার মোঘের আড়ালে চলে যাচেছ চাঁদ। বাবু হেটে চলছে অজানায়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×