somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

F*ck the বিপ্লব

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



...খুব ইচ্ছে ছিল আমার প্রকাশিত প্রথম বইটিতে ১২টি গল্প থাকবে। কিন্তু প্রকাশকের বেঁধে দেওয়া সময়ের মাঝে ১১টি গল্প তৈরি করতে পেরেছিলাম আর ৩টি নির্মাণাধীন ছিল। চেষ্টা করেও কোনভাবে এই ৩টি শেষ করতে পারিনি। যে গল্পটি শেষ না হওয়া সত্বেও বইতে অন্তর্ভুক্ত করা যেত সেটার নাম ছিল 'F*ck the বিপ্লব'। নাম 'বালের বিপ্লব' ও হতে পারত কিন্তু বাল শব্দটিকে যথেষ্ট রুঢ় মনে হচ্ছিল না।

এই গল্পটি নামের মতনই অত্যন্ত কড়া এবং একটু অ্যানালিটিকাল। ২০১৫ সালে আমি ৭ নভেম্বরের বিপ্লব সংশ্লিষ্ট যেসব তথ্য উপাত্ত যোগাড় করেছিলাম এবং 'নাগরদোলায় উত্থান-পতন' শিরোনামে' যে সিরিজ লেখাটি তৈরি করেছিলাম, তার সূত্র ধরে এই গল্পের শুরু। পেশাগতভাবে একজন risk analyst হবার কারণে আমার চেতন, অবচেতন দুই মনই ৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি ও এর কলাকুশলীদের মূল উদ্দেশ্য, সাফল্য, ব্যর্থতার সরূপ তুলে ধরতে চেয়েছিল। এই বাসনার বহিপ্রকাশ 'F*ck the বিপ্লব' গল্পটি। গল্পের মূল চরিত্র ও দুই বন্ধু যাদের বহুবছর পর ভার্সিটির রিইউনিয়নে দেখা হয়। তাদের মতাদর্শ ছাত্র থাকা অবস্থায় ভিন্ন ছিল তাই এতদিন পর অবাক হয়ে তারা লক্ষ্য করে দুজনেই তাদের নিজ নিজ মতাদর্শ থেকে দূরে সরে এসেছে এবং এখন কর্নেল তাহেরের তথাকথিত সিপাহী বিপ্লবকে অপরিপক্ক ও দেশ বিধ্বংসী ঘটনা হিসেবে মনে করে।

পপুলার কালচার এবং পপুলার লিটারেচারে তাহের এবং জেনারেল জিয়াকে যেভাবে হিরো বলে তুলে ধরা হয় এ দুইজন নেতা আসলে ঠিক তার বিপরীত মেরুর লোক, মনে করে দুই বন্ধু। তাদের মতে, দেশকে পেছনে ঠেলে দেবার প্রক্রিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুরু হয় এবং একে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করা হয় ৭ নভেম্বরের জিয়াকে ক্ষমতার শিখরে তুলে আনার মাধ্যমে।

গল্পের দুই বন্ধুর কথোপকথন চলতে থাকে। জীবনের ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে এখন তারা বুঝতে পারে সমাজ পরিবর্তনের বানী কপচানো, সরকারকে ভারতের দালাল বা তাঁবেদার বলে উৎখাতের চেষ্টা, সাধারন সৈনিকদের দাবী আদায়ের জন্য বিপ্লবের ডাক আসলে বাল-সাল ভণ্ডামি। সব ক্ষমতায় যাবার ধান্দা।

কথোপকথনের মধ্য দিয়ে গল্পটি এগুতে থাকে। দুই বন্ধুর একজন এক পর্যায়ে বলে বসে কর্নেল তাহেরকে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দোসর বললেও ভুল হবে না। এ কথা শুনে অবাক হয় অন্যজন। যুক্তি খণ্ডাতে যেয়ে প্রথমজন তুলে আনে Lawrence Lifschultz প্রণীত 'Bangladesh, the Unfinished Revolution' বইয়ের কথা। সেই বইতে বর্ণনা করা আছে কর্নেল তাহের ১৫ আগস্ট সকালে বেতার কেন্দ্রে যান এবং খন্দকার মোশতাক আহমদ ও মেজর ডালিমকে পাঁচটি প্রস্তাব দেন। এরপর তিনি মেজর ডালিমকে তাতিয়ে দেন এই বলে যে, ‘বালের মেজর হয়েছো। এখন পর্যন্ত একটা মার্শাল ল’ প্রক্লেমেশন ড্রাফট করতে পারলে না।’ ১৫ আগস্টের খুনীদের সাথে তাহেরের সম্পর্ক ছিল না কিন্তু রশিদ-ফারুক-ডালিম গং বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খন্দকার মোশতাকের ঘাড়ে চেপে ক্ষমতা দখল করার পরই তিনি ছুটে যান বেতার কেন্দ্রে, দেশ শাসনের অংশীদার হবার অভিপ্রায়ে পাঁচ দফা প্রস্তাব রাখেন। আবার ১৭ই আগস্ট সকালে ১১ নম্বর সেক্টরের সহযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর নারায়ণগঞ্জে তাহেরের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কথা প্রসঙ্গে তিনিনঈম জাহাঙ্গীরকে বলেন ‘ওরা বড় রকমের একটা ভুল করেছে। শেখ মুজিবকে কবর দেয়া অ্যালাও করা ঠিক হয়নি। এখন তো সেখানে মাজার হবে। উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া।’

কর্নেল তাহেরকে নিয়ে পপুলার লিটারেচারে আছে যে তার করা বিপ্লবের কারনেই তাকে ফাঁসী দেয়া হয়েছে। এটা যে পরিষ্কার মিথ্যাচার সেটাও 'F*ck the বিপ্লব' গল্পে উঠে এসেছে। বিপ্লবের পরের রাতে বেঙ্গল ল্যান্সারের সৈনিকরা ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সদস্যরা 'অফিসারদের রক্ত চাই' শ্লোগান দিয়ে দিয়ে যে ১২ জন আর্মি অফিসারকে হত্যা করে, তার দায় তাহেরকেই নিতে হয়েছে।

আমার প্রকাশিত গল্পগুলোতে সেই অর্থে টুইস্ট নেই। এই গল্পে একটা টুইস্ট এনেছিলাম তবে একদম শেষে নয়, মাঝামাঝি। তাত্ত্বিক আলোচনা বেশী হয়ে যাচ্ছে ভেবে একটু humor ও রেখেছিলাম। লিখেছিলাম কথোপকথনের এক পর্যায়ে বনানী ১১ নম্বর রোডে অবস্থিত সুইট ড্রিমস নামের দোকানের কথা, যেখানে মহিলাদের আন্ডার গার্মেন্টস বিক্রি হয়, পুরুষদের ঢুকতে মানা, উঠে আসে এবং একজন চটুল মন্তব্য করে- কর্নেল তাহের বা জেনারেল জিয়া কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন? তাহের তো চেয়েছিলেন বৈষম্যহীন সমাজ, চেয়েছিলেন সাম্যবাদ। সুইট ড্রিমস দোকানের অসাম্য নীতি তাকে শোকার্ত করতো হয়তো। আর জেনারেল জিয়া এই অসাম্য নীতি দেখলে হয়তো উত্তেজিত হয়ে আবার খাল কাটা কর্মসূচি শুরু করে দিতেন।

গল্পটি বইতে দেইনি কারন আমার মনে হয়েছিল বইয়ের অন্য গল্পগুলোর আমেজের সাথে এটা খাপ খাবে না। না দেয়াতে লাভ যেটা হয়েছে তা হলো এখন নতুন আরও কিছু সংযোজন করতে পারছি। গত এক বছরে ৭ নভেম্বর সংক্রান্ত আরও কিছু তথ্য পেয়েছি, সেগুলোও গল্পে ঢুকিয়ে দেব।

অনেকে আমাকে বলেছেন 'নাগরদোলায় উত্থান-পতন' সিরিজে আমি নিজের মতামত দিয়েছি যেটা এড়ানো কাম্য ছিল। কিন্তু সে লেখা ছিল ঘটনাবলীর বর্ণনা, আমি শুধু কৌতূহলোদ্দীপক করে উপস্থাপন করেছি। যে সব মতামত আমার বলে মনে হয়েছে সেগুলো আসলে সেই সময়ের মানুষগুলোর মতামত। অন্যদিকে 'F*ck the বিপ্লব' একটি ফিকশন এবং এখানে আমার নিজস্ব মতামত দেবার অবকাশ ছিল, রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×