somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোড় ঘুড়িয়ে দেবার ক্ষমতা ভোক্তাদের নেই তবে মুড়ি খাবার সামর্থ আছে

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোক্তারা কি আসলে বাজার নিয়ন্ত্রণ বা একে প্রভাবিত করতে পারে?

আধুনিক অর্থনীতির অন্যতম একটি বড় ক্যাড়া বা সমস্যা হল ভারসাম্যহীন আর্থ-সামাজিক পরিবেশ। এটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পরিস্থিতি এরকম – একদিকে বিশ্ব জনসংখ্যার একটি অংশ প্রতিদিন ব্যাপক পরিমাণ খাদ্য অপচয় করছে আর অন্যদিকে অনেক মানুষ না খেয়ে আছে। বাজার নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব-অর্থনীতির এই সমস্যা মেটাবার জন্য পুঁজিবাদ বলে ভোক্তার চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেয়া হউক, সাম্যবাদ বলে সম্পদের সমবণ্টনময় একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা নেয়া হউক আর ইসলামী অর্থনীতি ব্যবস্থা বলে ভারসাম্য অগ্রাধিকার পাক।



বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে পুঁজিবাদের আধিপত্য বিরাজমান। আর পুঁজিবাদ বাজারে বিশ্বাসী, বাজার বিশ্বাসী ভোক্তার ইচ্ছা ও সামর্থ্যে। কিন্তু ভোক্তার ইচ্ছা ও সামর্থ্য কি বাজার তথা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে? পারলে কতদূর?

পুঁজিবাদ তত্ত্ব অনুসারে, ভোক্তারা তাদের ক্রয়ক্ষমতা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এবং তারা যদি পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য পণ্যে আগ্রহী হয়, তবে তা যোগানে বাজার বাধ্য থাকবে। কিন্তু সমস্যা হলো পুঁজিবাদী অর্থনীতিক ব্যবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে থাকে অনেক সময়। পুঁজিবাদের ফল হিসাবে মাত্র ১০ শতাংশ লোক পুরো বিশ্বের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, একটি সম্প্রদায়ে ১০০ জন লোক আছে, যাদের মোট অর্থ-সম্পদের ৯০ শতাংশ মাত্র দশজনের কাছে রয়েছে। তাহলে ঐ দশজনের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য যোগান দিতে বাজার বাধ্য, কেননা তারা পছন্দের যেকোনো পণ্যের মূল্য পরিশোধে সক্ষম। তাই ঐ দশজন ব্যক্তির চাহিদা অনুসারেই বাজারে পণ্যের জোগান আসবে। বাকি নব্বইজনের পছন্দ এখানে অপাংক্তেয়, তারা গোনাতেই আসে না। মুড়ি খায়।

আবার ধরা যাক, মানুষ তথা ভোক্তারা সাধারনভাবে এমন কোন দ্রব্য কিনতে চায় না, যা ধরিত্রীকে দূষিত করবে। তবুও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক দ্রব্য যদি বাজারে থাকে এবং তা সল্প দামে পাওয়া যায়, তাহলে ভোক্তাদের আর কিছু করার থাকে না। একটি জরিপে দেখা গেছে, ৮২ শতাংশ মানুষই পরিবেশবান্ধব পণ্য কিনতে চায়, কিন্তু তাদের মাত্র ১৮ শতাংশ তা করতে পারে। মানে ৮২ শতাংশ মানুষ মুড়ি খেতে খেতে সেসব পণ্য কেনে এবং ধরিত্রীকে দূষিত করে। তাই বলা যায় যে ভোক্তার বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটি অনেকাংশে সম্পদের পর্যাপ্ততার ওপর নির্ভরশীল।

তাত্ত্বিকভাবে জ্ঞানের মুক্ত অনুপ্রবেশ প্রতিশ্রুতিশীল মনে হলেও বাস্তবে তথ্য ও জ্ঞানের সুযোগ সবার থাকে না। শিক্ষা, অর্থনীতিক সামর্থ্য ও অন্যান্য প্রভাবকের জন্য এক এক সমাজে জ্ঞানের মুক্ত অনুপ্রবেশ এক এক রকম। এই জ্ঞান আবার অনেক সময় অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী হয়ে উঠে, ফলে ভোক্তারা বাজার তথা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করা থেকে আরও দূরে সরে যায়।

ভোক্তাদের রয়েছে কলম, কিবোর্ড ও রাজপথ যা দিয়ে তারা বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে আর বাজারের আছে ঝলমলে বিজ্ঞাপন যা দিয়ে সে ভোক্তাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে ও মুড়ি খাওয়ায়। ঝলমলে বিজ্ঞাপনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ভোক্তারা সহজেই পণ্যের সত্যিকার গুনাগুণ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। প্রচারণার অভাবে যেখানে একটি ভালো পণ্যেরও কাটতি কম হতে পারে, সেখানে জোরদার বিজ্ঞাপন ও প্রচারণায় একটি নিচু মানের পণ্য অধিক বিক্রি হতে পারে। তাতে ভোক্তারা সেই নিচু মানের পণ্য কিনে হাসি মুখে বাড়ী যায় আর বাজার নিয়ন্ত্রণ বা পরিবর্তনে ব্যর্থ হয়।

তাই এটা বলা যায় যে ভোক্তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ বা পরিবর্তনে সক্ষম নয়। ইঙ্গিত দিতে পারে তারা, কিন্তু কোন মোড় ঘুড়িয়ে দেবার ক্ষমতা তাদের নেই। তবে মুড়ি খাবার সামর্থ আছে।

বাংলাদেশের বাজারব্যবস্থা এর ব্যতিক্রম নয়। এবং বাংলাদেশে মুড়ি সুলভ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:১২
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×